নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তিমুহূর্ত
এহতেশাম আনাস : ৫ এপ্রিল, ২০২৫। শনিবার। দিনটি ছিল আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত। নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রমের সূচনা ঘটেছিল এ-দিন। তবে তার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্ঞানপিপাসু ছাত্রদের আকর্ষণ যেন সৃষ্টি করেছিল অবর্ণনীয় এক দৃশ্যের। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু না হলেও, জামিয়ার ক্যাম্পাসে বিরাজ করছিল এক আধ্যাত্মিক আবহ। ইলমপিপাসুদের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে, দেশের নানা অঞ্চল থেকে হাজারো ছাত্রের আগমন তৈরি করেছিল এক অপার বিস্ময়।
ইলম আহরণে ছাত্রদের এমন আবেগময় উচ্ছাস ছিল আশাজাগানিয়া। প্রকৃতিতে এখনো ঈদ ঈদ খুশবো। চুলায় বসানো ঈদের বাহারি খাবারের রান্না। নতুন পায়জামা-পাঞ্জাবি গুলো গা থেকে নামে নি। পকেটে ঈদ-সালামির চকচকে নতুন টাকার বান্ডিলগুলো এখনো অগোছালোই আছে। একটু জিরিয়ে ঈদটা মন থেকে রাখার সে সময়টাও যায় নি। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, পাহাড়-পর্বত, সাগর – নদী থেকে নিয়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আদৌও ঈদ উদযাপনের মিছিল চলছে; এতসব আয়োজন পিছনে রেখে ঘরবাড়ির আরাম-আয়েশ ত্যাগ দিয়ে এ ছাত্রগুলো ইলমে ওহীর প্রেমে ছুটে এসেছে।
এ প্রেম কোনো কৃত্রিমতা বা লোকদেখানো নয়, বরং একান্ত রবের ভালোবাসা ও তাঁর প্রিয় নবীজির প্রেমে নিঃস্ব হওয়ার বাস্তবতা। দুনিয়ার নানা মোহে মানুষ প্রেমে অন্ধ হলেও, মহান প্রতিপালক ও তাঁর প্রিয় হাবিবের প্রেমে ক’জনই-বা নিঃস্ব হতে পারে! এ ছাত্রদের মধ্যে তাই রব ও নবীর প্রকৃত আশেকের চিত্র ফুটে উঠেছে। নবীজির দেহ রইল না, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া ইলমে ওহীর মধ্য দিয়ে তাঁদের প্রেমের সোপান পানে এগিয়ে চলেছে এক ঝাঁক স্বপ্নচারী তরুণ।
ফেতনাভরা দুনিয়ায় অমাবস্যার আঁধারে সবাই যখন মস্তি আর অবৈধ ফুর্তি নিয়ে ব্যস্ত, তখন এমন ছাত্রগুলো দুনিয়াবিমুখতা দেখিয়ে রবের দরবারেই ন্যস্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ছাত্রদের কারো সাথে কারোর পরিচয় নেই। অচেনা এতো মুখ। কিন্তু সবার মাঝে পরষ্পরের আচরণ বুঝিয়ে দিচ্ছে, তাঁদের মধ্যখানে এক জীবন পরিচয়ের সময় কেটেছে। কারো কিছুর প্রয়োজন হলে দ্বিতীয়জনের কাছে চেয়ে নেয়। থাকা-খাওয়ার বিষয়ে সাহায্য লাগলেও আদায় হচ্ছে। ভর্তির বিষয়ে বা জামিয়া-সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে জানার থাকলে একে-অপরের সহযোগিতায় সম্পন্ন করছে। নতুন ছাত্রদের কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা বা ঝাপসা দেখা দিলে, পুরাতন ছাত্রদের সাথে আলোচনায় বসে চুকিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রদের মাঝে পরষ্পরের এমন সুন্দর আচরণ যারপরনাই মুগ্ধ করেছে সবাইকে।
৫ এপ্রিল। শনিবার। জামিয়ার ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলে ভর্তি ফরম গ্রহণ করে হাজার হাজার ছাত্র। সকাল কি সন্ধ্যা—কোনো তফাত নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে সবাই হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় আনন্দের সাথে অর্জন করে নিচ্ছে যার যার নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি ফরম। এক অফিস থেকে ফরম গ্রহণ করে অন্য অফিসে জমা করছে।
নতুন ছাত্র হলে ভর্তি পরীক্ষার প্রসেসও খুব সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে যথাযথ মার্ক অর্জন করে ফরম জমা দিচ্ছে। ফরমগুলো কর্তৃপক্ষের সাক্ষরিত হয়ে দারুল ইকামার অফিসে পৌঁছালে যে যার যার মতো সিট গ্রহণ করছে। সিট নেওয়ার পরে হোস্টেলে খাবারের টিকিটের কাজ সম্পন্ন এবং জামিয়ার পাঠাগার থেকে স্ব স্ব শিক্ষাবর্ষের কিতাব সংগ্রহের কাজ—এভাবে বিভিন্নভাবে প্রসেসিং হয়ে ছাত্ররা নিজেদের ফরম দিয়ে জামিয়ার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা অর্জন করে নিচ্ছে।
টানা পনেরো দিন জামিয়ার ভর্তি কার্যক্রম চলমান ছিল। নির্ধারিত কোটা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় অনেক ছাত্রকে আগ্রহ প্রকাশ করলেও এডমিশন দিতে অক্ষমতা জানিয়েছেন জামিয়ার কর্তৃপক্ষ। যারা এডমিশন নিতে পারে নি, তাদের আগামীতে ভর্তি হতে সর্বোচ্চ আশানুরূপ বার্তা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামীতে জামিয়া আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ভর্তি কার্যক্রম উপহার দিবে বলে আমরা আশাবাদী। আপনারাও আসবেন, জামিয়ার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি আপনাদের নিকটে।
ইফতিতাহি দারস
২৬ এপ্রিল বুধবার জামিয়ার জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য বর্ণীল অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান রূপ নেয় নতুন শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠনের মেলবন্ধন তৈরির অনন্য মাধ্যমে। অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় নতুন শিক্ষাবর্ষের ইফতিতাহি দারস প্রদানের লক্ষ্যে।
পূর্বঘোষিত এ অনুষ্ঠানের উপস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত আবেগ দেখা দেয় ছাত্রদের। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল যোহরের নামায আদায়ের পরপর মুহূর্তে। কিন্তু আমরা দেখেছি, যোহরের আযান ধ্বনিত হওয়ার আগ থেকেই জামিয়ার মসজিদ কানায় কানায় ভরে গেছে। দু’চোখ যেদিকেই ঠেকছে, বাহারি কাপড়ে সজ্জিত নববী ইলম আহরণে অন্তঃপ্রাণ পুষ্পসমূহ। ফরযের আগে সুন্নত আদায় করে কাতারে বসে ফরযের জন্য অপেক্ষা করছে সবাই। এতো এতো সজ্জায় মসজিদ কী যে দারুণ প্রাণবন্ত হয়েছে—তা প্রকাশের ভাষা রাখে না কলম। ঢের দৃষ্টিনন্দিত লাগছে আজকের মসজিদ।
একটু পরে মুয়াযযিন ইকামত বললে জামাত নামাযে দাঁড়িয়ে গেছে। নামায শেষ হলে ইমাম সাহেব এ’লান করলেন—“পূর্বঘোষিত এ’লান মতে নতুন শিক্ষাবর্ষের ইফতিতাহি দারস অনুষ্ঠিত হবে।”
নামাজ শেষ করে সবাই প্রস্তুত—বছরের প্রথম দারস গ্রহণ করবে। মসজিদজুড়ে নীরবতা। সাড়া নেই, নেই হট্টগোল। শব্দের উচ্চারণই যেন আজ হারিয়ে গেছে। এ নীরবতা দুঃখের না; এ নীরবতা আশার। আনন্দের। কিছু অর্জন যে নিশ্চুপ শ্রদ্ধাশীল হয়ে গ্রহণ করতে হয়, তন্মধ্যে পড়ে এ অর্জন। দামি কিছু অর্জনে চুপচাপ অপেক্ষা করবে এটাই নিয়ম। সে নিয়মের মধ্য দিয়েই আজ জামিয়ার পুষ্পরা অজস্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে অপেক্ষাকৃত সময় অতীত করছে কাঙ্ক্ষিত আনন্দ গ্রহণ করে নিতে।
নববী জ্ঞানে কী যে অপার আনন্দ, তা তাদের বেশ পরিচিত। ইতোমধ্যে মসজিদের অগ্রভাগে মঞ্চ তৈরি হয়েছে। ধবধবে সাদা কাপড়ে দারুণ সেজেছে মঞ্চটা। আজ ইফতিতাহি দারস প্রদান করছেন জামিয়ার সম্মানিত শায়খুল হাদীস, দেশের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বি ও সুবিখ্যাত মুফতী, উপমহাদেশের প্রথিতযশা আলেমে দীন আল্লামা হাফেজ আহমাদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ।
সম্মানিত শায়খুল হাদীস মঞ্চ অলঙ্কিত করেছেন। হযরতের আগমনে পুরো অনুষ্ঠানস্থল যেন প্রাণ ফিরে পেল। এক আবেগময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল উপস্থিত শ্রোতাদের মাঝে। এক মনোমুগ্ধকর নীরবতা নেমে এলো চারপাশে। মনে হচ্ছে, প্রতিটি নিঃশ্বাস অপেক্ষায়—শুধু তাঁর কণ্ঠস্বর শুনবে বলে। সবার চোখেমুখে কৌতূহলের দীপ্তি। পরিবেশে এক ধরণের ভাবগম্ভীরতা। প্রতিটি মুহূর্ত যেন আলোয় ভরে উঠল তাঁর উপস্থিতির ছোঁয়ায়।
সবার মনে এক আশাজাগানিয়া দীপ্তি। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি উপস্থিত। সবার লক্ষ্য এখন মঞ্চের দিকে। নিস্তব্ধ অনুষ্ঠানস্থল অধীর আগ্রহে ব্যাকুল হয়ে আছে শায়খুল হাদীস হাফিজাহুল্লাহ এর মুখনিঃসৃত আলোচনা শোনার জন্য। বিরাট মসজিদ ঘিরে বড় আয়োজনের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে সবার দৃষ্টি কেবল একটা মনিষীতেই সীমাবদ্ধ। সব আবেগ-অনুভূতি আজ এ একটা মানুষকে ঘিরে। আজকের দারস আরম্ভ হলো হাদীসের মহাগ্রন্থ বোখারী শরীফের আলোচনার মধ্য দিয়ে। তাকমীল জামাতের এক ছাত্রের বোখারী শরীফ-এর ইবারত পাঠে অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত। ইবারত শেষ হলে জামিয়ার শাইখুল হাদীস এর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুরু হয়।
চারিদিকে নীরবতা। একজনই কথা বলছেন। আবেগঘন ভালোবাসার দৃষ্টি দিয়ে তাঁকে খুউব শুনছেন সকলেই। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় উঠে আসা বিভিন্ন পয়েন্ট নোট করতেও দেখা গেছে। শায়খুল হাদীস-এর মুক্তোঝরা দারসের মাধ্যমে জামিয়ার নতুন শিক্ষাবর্ষের সূচনা হয়েছে।
আলোচনা শেষ হলে শায়খুল হাদীস হাফিজাহুল্লাহ সকলের সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য দুআ-মুনাজাত করেন।
পটিয়া শহরে মার্চ ফর গাযা
ফিলিস্তিনে বিদ্যমান হত্যাযজ্ঞা ও অনৈতিক নিপীড়নের কথা সারাবিশ্বে আজ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে একটা জাতির ওপর করা ইসরায়েলী বর্বরতা কেবল ইসলামের দৃষ্টিতেই মন্দ না; মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলেও এমন আচরণ মানবতার স্পষ্ট লঙ্ঘন। নরপিশাচদের নিষ্ঠুরতার কবল থেকে রেহাই মিলছে না শিশুদেরও। মায়ের কোলে নবজাতক শিশুর মৃতদেহ। মা-শিশু দু’জনেই বিধ্বস্ত দালানের চাপাপড়া হালতে। বিধ্বংসিত দেয়াল উঠালে দেখা মিলে অগণিত মৃতদেহ। দেহগুলো প্রাণশূন্য করে ক্ষান্ত হয় নি ইসরায়েলী হায়েনারা। কোনো দেহে হাত থাকলে পা নেই। মাথাবিহীন খণ্ডিত অংশগুলো দেখলে চেনাই মুশকিল হয় যে, এ দেহ কোনো মানুষের ছিল। ফিলিস্তিনের অলিগলিতে এখন মানুষের খুঁজে পায়চারি করলে মানুষ না মিললেও বেশ মৃতদেহের হাত-পা মিলবে। হাত-পাগুলো দেখে মনে হবে এ অবয়বগুলো তাদের বাকি অংশগুলোর খোঁজে খুউব ক্লান্ত।
জনপদগুলো জ্যান্ত-জনতা হারিয়ে এখন একাকিত্বে ভীষণ কাতর। প্রকৃতির বাতাসে স্নিগ্ধতা নেই। আছে গোলাবারুদের বিশ্রী গন্ধ। সূর্য এলেও আলো আসে না। হরহামেশাই বোমাবর্ষণের ধোঁয়াটে চিত্র। মিসাইল ও ভারি ক্ষেপণাস্ত্রের বিকট শব্দে ঝাঁঝরা হয় অসংখ্য কান। শিশুসন্তানেরা মায়ের গলাতেই ঝুলে থাকছে বোমাবর্ষণের ভয়ে। আমাদের শিশুরা মৃত্যু না চিনলেও সেখানকার শিশুগুলো মৃত্যুর সাথে বেশ পরিচিত। অকস্মাৎ চোখের সামনেই হাজার হাজার জ্যান্ত দেহ লাশ। বারুদের আঘাতে মা’ জর্জরিত, কিন্তু সন্তানের নির্ভরতার ছায়া সরতে সেকেন্ডের জন্যও রাজি না। আঘাতে পঙ্গু হলেও পঙ্গুত্ব নিয়ে সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রাণপণ ব্যস্ত মায়েরা। এতো যত্নের মধ্যেও মা ব্যর্থ হয় সন্তানকে আগলে রেখে বাঁচাতে। কিছুক্ষণ জীবিত সময় অতীত হলেও বাঁচে না আর।
তাঁদের জন্ম হয় যেন মৃত্যুর জন্য। সবার জন্ম মৃত্যুর জন্য হলেও ফিলিস্তিনিদের জন্মগুলো কেমন জানি জম্মই নয়। তারা জন্ম হয় মৃত্যুর কাফনে। মায়ের সামনে সন্তানের লাশ। শিশুসন্তানের চোখে মায়ের নাই হয়ে যাওয়া—এ-সবই এখন ফিলিস্তিনের নিত্যদিনের ঘটনা। এমন অমানবিক নিষ্ঠুরতা—কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা দেখলে মনে হবে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞে কারো কোনো দ্বিমত নেই। নীরব দর্শকের ভূমিকা পালনে ব্যস্ত আজ মানবতাবাদী বিশ্ব। এ চুপ মেরে থাকা যেন এখন তাদের নিষ্ঠুরতার সাপোর্ট।
ফিলিস্তিনে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে যখন সবাই নীরবতার আশ্রয় নিয়েছে, তখন সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ঈমানী চেতনা ফিরে এনেছে আমাদের বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের ওপর করা বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার ব্যবস্থাপনায় ১৩ এপ্রিল 2025 ইং, রবিবার পটিয়া শহরে বিক্ষোভ, প্রতিবাদী মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বিপুল সংখ্যক তাওহীদি জনতা অংশ গ্রহণ করেছেন।
১৩ এপ্রিল রোববার যোহরের নামায আদায় করে জামিয়ার ক্যাম্পাস থেকে দলবদ্ধ হয়ে স্লোগানে মুখরিত মিছিল নিয়ে বের হয় জামিয়ার ছাত্র-শিক্ষকরা। পটিয়ার ডাকবাংলো থেকে পটিয়া উপজেলার ইন্দ্রপুল বাইপাসের চত্বর পর্যন্ত চলেছে মিছিলে মিছিলে ইসরায়েলী হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ। শহরের কেন্দ্রস্থলে অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলী আগ্রাসন ও অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আয়োজিত মিছিল ও সমাবেশ ছিল এক আবেগঘন ও সাহসী জনসচেতনতার প্রকাশ।
ছাত্র-জনতা ছাড়াও বিপুলসংখ্যক মানুষ—বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার, বয়স ও মতাদর্শের—এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে এক অভূতপূর্ব একতা প্রদর্শন করে।
মিছিলটি শুরু হয় শান্তিপূর্ণভাবে। হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে প্রতিবাদী স্লোগান, এবং হৃদয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বোধের আগুন। সবার কণ্ঠে একটাই দাবি—ফিলিস্তিনের মানুষদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধ হোক। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।
মিছিলের কর্মসূচি শেষ হলে পটিয়া শহরের ঐতিহাসিক ডাকবাংলো চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জামিয়ার প্রবীণ শিক্ষকগণ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। সকলেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও দ্বিমুখী নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁরা ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে উঠে আসে মানবতা, ন্যায়বিচার এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের গুরুত্ব।
এই আয়োজনে বিশেষভাবে চোখে পড়ে তরুণ সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ—যারা সোশ্যাল মিডিয়া ও মাঠের আন্দোলন— উভয় মাধ্যমেই দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। সমাবেশ ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ, মানবিক মূল্যবোধে পরিপূর্ণ এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর। এই মিছিল ও সমাবেশ ছিল নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এক শক্তিশালী বার্তা। এটি শুধু প্রতিবাদ নয়; বরং মানবতার পক্ষে এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে এক নির্ভীক অবস্থান। আমরা আশা ব্যক্ত করছি—অচিরেই ফিলিস্তিনে স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন হবে। ফিলিস্তিনি জনতা তাদের স্বকীয়তা ফিরে পেয়ে প্রশান্তচিত্তে জীবন যাপিত করবেন।
—এহতেশাম আনাস
শিক্ষার্থী : তাকমীল জামাত
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।