বুধবার-২১শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি-১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জমিনে ব্যস্ত, আসমানে খালি…

আজকাল আমাদের সম্পর্ক মসজিদের চেয়ে যেন মোবাইল স্ক্রিনের সাথেই গভীরতর। দীনের কাজ যতটা না বাস্তবে হয়, তার চেয়ে বেশি হয় সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের খাতায়। কাজের চেয়ে প্রচার বেশি হলে সেখানে সততার ভারসাম্য রক্ষা করাও হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য। অনেক সময় কাজ যতটুকু করা হয়, তা আরও রঙিন করে তুলে ধরা হয় মানুষের সামনে।
আমরা যতোই অনলাইনে যুক্ত হচ্ছি, ততোই ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি একাগ্রতা থেকে—যিকরে, তিলাওয়াতে, নামাযে, দুআয়। নিজের সংশোধনের আগেই অন্যের সংশোধনে মনোযোগ। যোগ্যতা অর্জনের আগেই মঞ্চে ওঠার প্রবণতা—এইসব যেন নতুন স্বাভাবিকতা। আর যে নির্জনতা একসময় আল্লাহওয়ালাদের প্রিয় ছিল, তা আজ আমাদের জন্য একঘেয়ে বলে বিবেচিত।
অভ্যন্তরের গোপন গুনাহগুলো আমাদের আমলের বরকতকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আমাদের দৌড়ঝাঁপ, আমাদের ব্যস্ততা, সবকিছু যেন বাইরের চাকচিক্যের জন্য। অন্তরে সেই আমলের শীতলতা, প্রশান্তি নেই। মিডিয়ার হাত ধরে দ্রুত পাওয়া প্রশংসা আমাদের মনে আত্মতৃপ্তির ভুল ছবি আঁকে। আর নিজের ভুলগুলো চোখে পড়ে না। জামাত ছুটে যাওয়া, ফজর কাজা হয়ে যাওয়া, বারবার গুনাহে জড়ানো—এসব যেন এখন তেমন পেরেশানিই নয়।
আজ ব্যক্তি জীবনের ইস্তিকামাত দুর্লভ হয়ে পড়েছে। আত্মসমালোচনা (মুহাসাবা), আত্মশাসন (মুআকাজা), দৃঢ় প্রতিজ্ঞা (মুআহাদা), এবং আত্মচিন্তার গভীরতা (মুরাকাবা)—এসব চর্চা যেন হারিয়ে গেছে প্রযুক্তির কোলাহলে। আমল মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে বারবার, অথচ আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার ভাবনা অনুপস্থিত।
বাহ্যিক ঝলকানিতে অভ্যস্ত এই দুনিয়া আমাদের অন্তরের দুগর্ন্ধ আড়াল করে রেখেছে। নিজের সাথে সময় কাটানো, কুরআনের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অবস্থা যাচাই—এসব হারিয়ে যাচ্ছে।
আজ এমন সব আমল, যেগুলো একটু কষ্টসাধ্য—রাত্রিকালীন ইবাদত, নির্জনে যিকর—তা যেন আমাদের কাছে বিস্মৃত কোনো স্মৃতির মতো। আর এ কারণেই হৃদয়ের গভীর তাপ, আল্লাহর ভয়ে কেঁদে ফেলার সেই অনুভূতি, চোখের পানি—সবই দুর্লভ হয়ে গেছে। কথার চটুলতা, আবেগময় উপস্থাপনার পেছনে ছুটে চলেছে মানুষ। হৃদয়ভাঙা কিছু নিরহংকার কথা আজ শুনতে চায় না কেউ।
জামাতের গুরুত্ব, তাকবীরে উলার প্রতি যত্ন, মসজিদে সময় কাটানো, নির্জনে যিকরের খোঁজ, দীর্ঘ রাকআতে ইবাদতের অভ্যাস—সব যেন এখন স্মৃতির পাতায়।
হে রব্ব! তুমি একটু করুণা করো। ভিতরের অন্ধকারে আলো জ্বেলে দাও। যিকরে সেই মিষ্টতা ফিরিয়ে দাও। চোখে একটি অশ্রুবিন্দু দাও তোমার ভয় ও ভালোবাসায়। গাফেল হৃদয়কে দাও অনুশোচনার চাবুক। আমাদের অন্তরকে আবার সেই আলোয় আলোকিত করে দাও।

জামিয়ার দুই প্রবীণ মুরুব্বির ইন্তেকাল : শোক ও সমবেদনা
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সাবেক সদরে মুহতামিম, আল্লামা আমিনুল হক রহ. এবং অত্র জামিয়ার সাবেক প্রবীণ সিনিয়র শিক্ষক, মাওলানা আব্দুল মান্নান দানিশ রহ. সম্প্রতি পরম প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চিরদিনের জন্য দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তাঁরা জামিয়া পটিয়ার বাগানে ইলম ও দীনের বুনিয়াদ গড়ে তোলার জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তাঁদের অবদান এ প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লিখে রাখার যোগ্য।
তাঁদের ইন্তিকালে আমরা গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি এবং তাঁদের পরিবার-পরিজন, ছাত্র-শিক্ষক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি জানাচ্ছি।
আল্লাহ তাআলা তাঁদের ইলমী ও দীনী খেদমতসমূহ কবুল করুন। রহমতের চাদরে আচ্ছাদিত করুন এবং জান্নাতে সুউচ্চ মাকাম দান করুন।
আমরা তাঁদের জন্য প্রাণভরে মাগফিরাত ও জান্নাতুল ফিরদাউসের দুআ করছি।

-কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ