বুধবার-২১শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি-১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল্লামা আমিনুল হক সাহেব রহ. : জীবনরেখার দীপ্ত জ্যোতি ও কর্মময় আখ্যান

মাওলানা আবিদ সিদ্দিকী


 

আকাশে যেমন নীরব-নিভৃতে একেকটি নক্ষত্র জ্বলে, ঠিক তেমনি পৃথিবীর মানচিত্রেও কিছু মহৎ প্রাণ আলো ছড়িয়ে যান। তারা শুধু নিজেদের জন্য নয়, অগণিত হৃদয়কে আলোকিত করেন, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সত্য ও কল্যাণের পথ দেখিয়ে যান। তাঁরা নিজেদের অস্তিত্বকে বিলিয়ে দিয়ে গড়ে তোলেন এক দীপ্ত অধ্যায়, যার আলো যুগ থেকে যুগান্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

আল্লামা আমিনুল হক রহ. ছিলেন তেমনি এক জাজ্বল্যমান দীপ্তি—এক নীরব আলোকবর্তিকা, যাঁর জীবন ছিল ইলম, আমল ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্ত ধারার মোহনা। তিনি ছিলেন এমন এক সৌরভময় প্রাণ, যার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল রবের সন্তুষ্টির আকাঙ্ক্ষায় আবদ্ধ। তাঁর চলাফেরা, কথা, দৃষ্টি—সবকিছুতেই ছিল খাঁটি ইখলাসের প্রতিচ্ছবি।
পটিয়ার জমিনে, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার আকাশে তিনি ছিলেন দীর্ঘ সাত দশকেরও অধিক সময়ের এক দীপ্তিমান নক্ষত্র। তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, ছিলেন ইলমী বিশুদ্ধতার এক জীবন্ত মূর্তি; ছিলেন আখলাকের এক আদর্শ নমুনা। তাঁর দারস ছিল জ্ঞানের ঝরনা, যার প্রতিটি শব্দ থেকে নিঃসৃত হতো মাধুর্য, নীরবতা আর গভীরতা। তাঁর উপস্থিতিই ছিল যেন জামিয়ার বাতাসে এক বিশেষ সুবাস, শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে এক বিশেষ আলো।

জন্মসূত্র : সম্ভ্রান্ত বংশের উত্তরসূরী
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার আলমদার পাড়া গ্রামে, ধুলোমলিন গ্রামীণ পথে, সূর্যের কোমল কিরণের মতো জন্ম নেন এক আলোকপ্রতিম শিশু—সেকালের শিশু আমিনুল হক। তাঁর রক্তে ছিল সম্ভ্রান্ততার স্বাক্ষর; পিতা হাজী মনুমিয়া ছিলেন এলাকার খ্যাতনামা জমিদার, সমাজের আদর্শ এক রাহবার। শৈশব থেকেই আল্লামা আমিনুল হক চৌধুরী রহ. ছিলেন স্বভাবতঃ শান্ত, গম্ভীর এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন। প্রাতঃভ্রমণের শিশিরভেজা ঘাসের মতো নির্মল ছিল তাঁর হৃদয়, আর চিন্তার গভীরতায় ছিলেন সমুদ্রের মতো বিপুল। হযরত রহ. এর নাম ‘আমিনুল হক চৌধুরী’ হলেও, নীতি-নৈতিকতার স্বচ্ছতা ও সফেদ বর্ণের আলোকোজ্জ্বল পুরুষ হওয়ায় প্রসিদ্ধ নাম ছিল “ফেরেস্তা হুজুর”। আমরা হযরত রহ.কে ‘ফেরেস্তা হুজুর’ নামেই চিনতাম।

ইলমের অগ্রযাত্রা : প্রথম কদম
তার শৈশব কৈশোর বলতে সব পড়ালেখারও ইতিহাস। জ্ঞানার্জনের পথে তাঁর যাত্রা শুরু হয় জন্মের ছয় বছর বয়স থেকে। দুই গুণী সাধক, মাওলানা আবদুল মালেক রাউজানী ও মাওলানা আবুল কাশেম (রহ.)-এর স্নেহময় তত্ত্বাবধানে। তাঁর কচি কণ্ঠে উচ্চারিত হতো কুরআনের আয়াত, মধুর ঝরনার ধারা হয়ে।
এরপর বয়সের সপ্তম বছরে পটিয়ার আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া—যা তখন ছিল দীনি শিক্ষার এক আলোঝলমলে দীপ্তি—সেখানে ভর্তি হন জামাতে দাহুমে। মেধা, অধ্যবসায় আর তাকওয়ার সম্মিলনে তিনি প্রতিটি জামাতে উচ্চতর স্থান অধিকার করে এগিয়ে যান দাওরায়ে হাদীসের চূড়ান্ত স্তম্ভের দিকে।
১৩৮২ হিজরিতে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি জামিয়া পটিয়া থেকে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন, শিরোপা হয় তাঁর কপালে এক প্রভাময় অর্জন। তিনি বানিয়ে জামিয়া কুতবে আলম, আল্লামা মুফতী আযিযুল হক রহ. এর সরাসরি ছাত্র হোন।

উচ্চতর সাধনা: পাকিস্তানে ইলমের এক নিরন্তর অভিযাত্রা
বিদ্যার পিপাসায় তিনি দেশের সীমারেখা পেরিয়ে ১৩৮৩ হিজরিতে গমন করেন পাকিস্তানে। সেখানে তিনি আশ্রয় নেন হাদীসের দিগ্বিজয়ী মনীষী আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রহ. ও মুফতী ওয়ালী হাসান টুনকী রহ.-এর ইলমী ছায়ায়। বুখারী শরীফের গভীরতম ব্যাখ্যা, তিরমিযীর সুক্ষ্ম মর্ম, এবং হাফেজুল হাদীস আল্লামা আবদুল্লাহ দরখাস্তী রহ. থেকে কুরআনের তাফসীর—এসবের আলোয় তিনি নিজেকে নির্মাণ করলেন এক দীপ্ত মহীরুহে।
জ্ঞান ও আত্মার সমন্বিত সাধনায় তিনি হয়ে উঠলেন উম্মাহর এক অমূল্য সম্পদ।

শিক্ষকতা : সুবাতাসের মতো স্নিগ্ধ বিস্তার
১৩৮৪ হিজরির শেষের দিকে তিনি পুনরায় আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় ফিরে আসেন শিক্ষক রূপে, ঠিক যেন প্রভাতী আলোর মতো। নাহু-সরফের দুরূহতা, বালাগাতের সূক্ষ্মতা, মানতিকের গভীর দর্শন, তাফসীরের আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনা, ফিকাহ ও হাদীসের নিবিড় ব্যাখ্যা—প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ নাবিক। তাঁর ভাষায় ছিলো কোমলতা, বক্তব্যে ছিলো নির্যাস, আর পাঠদানে ছিলো অন্তর্ভেদী প্রজ্ঞার ছোঁয়া।
আমরা হযরতুল উস্তাযকে পেয়েছি একদম শেষ সময়ে। সে সময়েও তাঁর সব গুণাগুণ অক্ষত ছিল। প্রাঞ্জল তাকরীর আমাদের যারপরনাই মুগ্ধ করতো।
ছাত্রদের মনকাবায় স্থাপিত হয়ে সাত দশকের কাছাকাছি দীর্ঘকাল তিনি জামিয়ার ন্যায়দীপ্ত দরবারে শিক্ষকের আসনে সমাসীন ছিলেন। আমরাসহ তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে সহস্র আলেম, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুবাল্লিগ—যারা আজও তাঁর গুণগানে আকাশভরা চিঠি লেখে।

তিনি আমারও উস্তাদ, আমার মুহতারাম বাবারও
হযরতুল উস্তায রহ.-এর জবান থেকে আমরা পড়েছি জগত বিখ্যাত সিহাহ সিত্তার অনন্য কিতাব ‘সুনানে নাসায়ী’ শরীফ। আমার ওয়ালিদে মুহতারাম হযরত মাওলানা মাহমুদুল হক হাফি. পড়েছেন দারসে নেজামীর বেশ কঠিন কিতাব ‘কাফিয়া’।

সদরে মুহতামিম : নেতৃত্বের দীপ্ত অধ্যায়
পটিয়ার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করে তিনি জীবনের ক্ষণকালে সদরে মুহতামিমের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
দায়িত্বের মর্ম তিনি অনুভব করতেন আত্মার গভীরে; শাসনে ছিল মাতৃহৃদয়ের মমতা, নীতিতে ছিলো খলীফার দৃঢ়তা, ভালোবাসায় ছিলো আধ্যাত্মিক পিতার সীমাহীন ঔদার্য।
উল্লেখ্য যে, ২০২৩ এর দিকে, হযরত রহ. সদ্য প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামস্থ ‘জামিয়াতুন নূর আল আলমিয়্যাহ বাংলাদেশ’ এরও সদরে মুহতামিম ও সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
আধ্যাত্মিক উজ্জ্বলতা : আত্মার নির্মল জলধারা
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আধ্যাত্মিক পথের যাত্রী। মুফতী আযিযুল হক রহ.-এর সোহবতপ্রাপ্ত আল্লামা আমিনুল হক সাহেব রহ. প্রথমে হাজী ইউনুস (রহ.)-এর হাতে প্রথম বাইআত গ্রহণের মাধ্যমে অন্তর্দ্বার খুলে দেন আত্মিক উন্নতির। পরবর্তীতে মহিউস সুন্নাহ শাহ আল্লামা আবরারুল হক রহ. ও ফক্বিহে মিল্লত মুফতী আবদুর রহমান রহ.-এর ইজাযত ও খিলাফতের মাধ্যমে তাঁর অন্তরজগত পেয়েছিল পূর্ণতার দীপ্তি।
চরিত্রের অলংকার :
আমানতদারিতার জীবন্ত প্রতিমা
জামিয়া পটিয়ার হিসাব বিভাগে দীর্ঘকাল তিনি দায়িত্ব পালন করেন নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার এক উজ্জ্বল মানদণ্ড হয়ে। খেয়ানত কী জিনিস—তা কখনো তার হাত দিয়ে ঝরেনি। তিনি ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠতার এমন এক বাতিঘর, যাঁর চারপাশে ভরসার আলো বিচ্ছুরিত হতো।
তিনি আদর্শের উজ্জ্বল স্মৃতি:
হযরতের দারস প্রদানকালে এক অনন্য দৃশ্য। আমরা জানি যে, আল্লামা আমিনুল হক রহ. যখন হাদীসের দারস দিতেন, তখন তাঁর দারসের আসর যেন হয়ে উঠত এক আধ্যাত্মিক উদ্যান। কখনো উচ্চকণ্ঠে নয়, বরং সংযত, ভারী অথচ হৃদয়স্পর্শী কণ্ঠে তিনি হাদীসের ব্যাখ্যা করতেন।
একবার এক ছাত্র কোনো জটিল মাসআলার প্রশ্ন করায়, তিনি বিন্দুমাত্র বিরক্ত না হয়ে মৃদু হাসলেন এবং বললেন—”ইলমের দ্বারে যারা প্রশ্নের চাবি দিয়ে কড়া নাড়ে, তাদের জন্য আল্লাহ রহমতের দুয়ার খুলে দেন।” এরপর তিনি সেই মাসআলা এত গভীরভাবে ব্যাখ্যা করলেন যে, শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি ছাত্র অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল তাঁর প্রজ্ঞার ঝরনাধারার দিকে।
হযরতের কথায় আত্মসমালোচনার শিক্ষা
একবার এক মজলিসে এক ছাত্রের ভুলের ব্যাপারে সবাই সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লে, হযরত রহ. বলেছিলেন—
“নিজের অন্তরের আয়নায় আগে নিজেকে দেখো; অপরের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ মুছে ফেলাই মুত্তাকিদের কাজ।”
এই উক্তি সেদিন ছাত্রদের অন্তরে এমন গভীর রেখাপাত করেছিল, যা তাঁরা সারাজীবন বহন করে বেড়াবেন।
ছাত্রের কলমে : হযরত রহ.-এর এক মধুর স্মৃতি
“হুজুরের কাছে প্রথমবার যখন ‘শরহে আকায়েদ’ পড়তে বসলাম, মনে হয়েছিল যেন মেঘের কোলে সূর্য লুকোচ্ছে।
প্রথমেই তিনি বললেন—’এই ইলম শুধু মুখস্থের নয়, অন্তরের খাদ্য বানাতে হবে।’
হুজুরের প্রতিটি শব্দ ছিলো মধুর অথচ জ্বালাময়, যে শব্দে পুড়ে পুড়ে পরিশুদ্ধ হতাম আমরা।
তিনি যখন তাফসীর বুঝাতেন, মনে হতো যেন আয়াতের শব্দ থেকে ফুলের ঘ্রাণ বেরোচ্ছে।”
আরেক ছাত্র বলেন, “হুজুরের চোখে আমরা দেখতাম সততার দীপ্তি, জবানের প্রতিটি শব্দে ছিলো ইখলাসের স্নিগ্ধতা।
তিনি ছিলেন আমাদের যুগের এক জীবন্ত আল কুরআন।”
অলৌকিক পূর্বাভাস
মৃত্যুর পূর্বক্ষণে তিনি স্বীয় বন্ধু আল্লামা আব্দুল মান্নান দানিশ (রহ.)-এর জানাযায় যেতে অপারগতার কথা বলেছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমার জানাজার প্রস্তুতি নাও।”
কথামতো, দানিশ সাহেব রহ.-এর জানাজার পূর্ব মুহূর্তেই ইন্তেকাল করেন তিনি।
এ যেন মৃত্যুরও এক নীরব আত্মসমর্পণ, এক অলৌকিক পূর্বাভাসের চিরন্তন সাক্ষর।
পরিণতিস্থল : আলবিদার বিষাদসন্ধ্যা
২৬ এপ্রিল ২০২৫। শনিবার সকালে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালের নিবিড় এক ঘরে, সকাল ১০:৩০ মিনিটে, অগণিত মেহনত, ইবাদত ও শিক্ষাদান সমাপ্ত করে, আল্লামা আমিনুল হক (রহ.) মহান প্রভুর সান্নিধ্যে ফিরে যান। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
মৃত্যুকালে তিনি জন্মদাতা তিন ছেলে-দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য রুহানী সন্তান, মুহিব্বীন, মুতাআল্লিকীন ঈসালে সওয়াব করার জন্য রেখে যান। হযরত রহ. এর বড় সন্তান ও সহধর্মিণী হযরতের মৃত্যুর অনেক আগে ইহকাল ত্যাগ করে মহান আল্লাহর মেহমান হয়ে যান।
হযরত রহ.-এর জানাযা ও দাফন: সৃষ্টির শ্রদ্ধাঞ্জলি
রাত ৯টার সময়, পটিয়ার আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে হাজার হাজার ছাত্র, ভক্ত, মুহিব্বীনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর জানাযা। জানাযার ঐতিহাসিক মাকবারায়ে আযীযীর বুকে রা’হাতের জন্য শুইয়ে দেওয়া হয়—সেখানেই তাঁর মাটির শরীর নিস্তব্ধে শুয়ে আছে, আর তাঁর দ্যুতিময় আত্মা উড়ছে ফেরদাউসের আকাশে।
সময়ের দর্পণে তাঁর প্রতিচ্ছবি:
এখন যখন পটিয়ার বাতাসে তাঁর অনুপস্থিতির হাহাকার ধ্বনিত হয়, তখন অনুভূত হয়, যুগের শ্রেষ্ঠ আলোকিত কিরণময় এক আলো নিভে গেছে, কিন্তু সেই আলো থেকে জন্ম নিয়েছে হাজারো দীপ্ত দীপশিখা, যারা ছড়িয়ে পড়বে সময়ের গগনে—চিরভাস্বর হয়ে, চিরজীবন্ত হয়ে।
রব্বে কারীম! তাঁর সকল খেদমাত কবুল করুন, তাঁর জীবনের নেক আমলগুলোকে জান্নাতের ফুল করে দিন, তাঁর কবরকে জান্নাতের উদ্যান বানিয়ে দিন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।

লেখক : ফাজেল, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া।
উস্তাজুল হাদীস: মারকাযুল উলুম আল-মাদানিয়াহ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ