জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-২৪শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি-২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রচলিত নির্বাচন: শরীয়া দৃষ্টিকোণে

প্রচলিত নির্বাচন: শরীয়া দৃষ্টিকোণে

 

শেখ আরিফ বিল্লাহ আজিজী

লেখক: তাকমীল ফিল হাদীস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া চট্টগ্রাম

 

নির্বাচন

আধুনিক ভোটব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে বিপ্লবের পর রাজনৈতিক ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে চলে যায়। পার্লামেন্টে ১৮৩২ সালে প্রথম সংস্কার আইনে সমস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ভোটাধিকার দেয়। ১৯৫০ সালের মধ্যে ব্যালট প্রথা প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

নির্বাচন নিয়ে ফতওয়া

নির্বাচনের ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের অবস্থান অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। দারুল উলুম দেওবন্দের ফতওয়া হল:

مسلمان کے لیے الیکشن میں کھڑا ہونا شرعًا ناجائز نہیں ہے۔ قوم وملت کی خدمت کرنے کی ترغیب خود احادیث کثیرہ میں آ ئی ہے۔ البتہ مسلمان لیڈر کو چاہیے کہ وہ الیکشن میں کھڑے ہوکر جائز وناجائز کی پرواہ کیے بغیر عمل نہ کرے، جھوٹ فریب دھوکہ اور جھوٹے وعدے سے کلی اجتناب کرے، محض مالی منفعت، دنیاوی لذت،نیز جاہ طلبی کے جذبہ سے کھڑا نہ ہو، کسی سے دب کر غیر اسلامی طریقہ کو اختیار نہ کرے، فرقہ پرست عناصر اور بدکردار لوگوں سے گٹھ جوڑ نہ رکھے، اس کا مقصد صرف اور صرف قوم وملت کی خدمت کرنا، مظلوموں کی امداد کرنا، ناجائز مقدمات میں پھنسے لوگوں کو باعزت بری کرانا ہو وغیرہ۔ (۲) (۳) ووٹ کی شرعی حیثیت کم ازکم شہادت کی ہے، اس کو محض سیاسی ہارجیت کا ذریعہ قرار دینا سخت نادانی ہے، قرآن وسنت کی رو سے واضح ہے کہ نااہل، ظالم، فاسق اورغلط آدمی کو ووٹ دینا گناہِ عظیم ہے، اسی طرح ایک اچھے نیک اور قابل آدمی کو ووٹ دینا ثواب بلکہ ایک فریضہ شرعی ہے، قرآن کریم میں جیسے جھوٹی شہادت کو حرام قرار دیا ہے اسی طرح سچی شہادت کو واجب اور لازم فرمایا ہے، ارشاد باری ہے: [كُوْنُوْا قَوّٰمِيْنَ لِلّٰهِ شُهَدَآءَ بِالْقِسْطِٞ ۰۰۸] {المائدة: 8} اور دوسری جگہ ہے: [كُوْنُوْا قَوّٰمِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِۚ ۰۰۱۳۵] {النساء: 135} ان دونوں آیتوں میں مسلمانوں پر فرض کیا کہ سچی شہادت سے جان نہ چرائیں، اللہ کے لیے ادائیگی شہادت کے لیے کھڑے ہوجائیں، تیسری جگہ سورہٴ طلاق میں ارشاد ہے: [وَاَقِيْمُوا الشَّهَادَةَ لِلّٰهِؕ ۰۰۲] {الطلاق: 2} یعنی اللہ کے لیے سچی شہادت قائم کرو، ایک آیت میں ارشاد فرمایا کہ سچی شہادت کا چھپانا حرام اور گناہ ہے، ارشاد ہے: [وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ١ؕ وَمَنْ يَّكْتُمْهَا فَاِنَّهٗۤ اٰثِمٌ قَلْبُهٗؕ ۰۰۲۸۳] {البقرة: 283} یعنی شہادت کو نہ چھپاوٴ اور جو چھپائے گا اسکا دل گنہ گار ہے۔

حاصل یہ ہے کہ مسلمانوں کو ووٹ ضرور ڈالنا چاہیے، البتہ ووٹ ڈالنے جس امیدوار کے حق میں ووٹ ڈال رہا ہے اس کے حق میں گویا یہ خود ہی گواہی دے رہا ہے کہ یہ امیدوار میرے علم کے مطابق سب سے زیادہ مستحق اور دیانت دار ہے، اس لیے چند امور اس کو ملحوظ رکھنے چاہئیں:

  • ووٹ ڈالنے میں احتیاط سے کام لے، غلط جگہ مہر وغیرہ نہ لگے، اس کا خیال رکھے ورنہ اس کا ووٹ ضائع ہوجائے گا جو کہ بڑا نقصان ہے۔
  • باہم مشورے سے خوب سوچ سمجھ کر ووٹ دے، محض اپنے تعلقات یا غیرشرعی دباوٴ سے متأثر ہوکر ہرگز ووٹ نہ دے۔
  • جو امیدوار اس کے علم کے مطابق ووٹ کا زیادہ مستحق ہے دیانۃً اسی کو اپنا ووٹ دے۔
  • جس امیدوار سے نقصان پہنچنے کا غالب اندیشہ ہو اس کو ہرگز ووٹ نہ دے۔
  • اگر تمام امیدواروں کے حالات یکساں ہوں تو پھر جس سے زیادہ فائدہ کی امید اور کم نقصان کا اندیشہ ہو اس کو ووٹ دے۔
  • روپیہ یا کوئی مال لے کر کسی کو ووٹ نہ دے یہ بدترین رشوت اور حرام فعل ہے۔
  • ووٹ کی حقیقت کو سامنے رکھا جائے تو اس سے مندرجہ ذیل نتائج برآمد ہوتے ہیں۔

‘মুসলমানদের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া শরীয়তে নাজায়েজ নয়। জাতির খেদমত করার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীসে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। তবে মুসলমান নেতার জন্য জরুরি হলো, তিনি যেন নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জায়েজ এবং নাজায়েজ বিষয়ের খেয়াল না করে কোনো কাজ না করেন। মিথ্যা, ধোঁকাবাজি এবং মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করা থেকে অবশ্যই তিনি বেঁচে থাকবেন। সম্পদ, দুনিয়াবি ইজ্জত এবং খ্যাতির মোহের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। ইসলাম সমর্থন করে না এমন কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করবে না। অসৎ লোকের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক রাখবে না। তার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে মানুষের খেদমত করা, মজলুমদের সাহায্য করা, অন্যায়ভাবে যারা মামলায় ফেঁসে গেছে, তাদের মুক্তি করা ইত্যাদি। ভোটের শারয়ী দৃষ্টিভঙ্গি অন্তত পক্ষে শাহাদত তথা সাক্ষী প্রদানের মতো। ভোটকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক জয়-পরাজয় মনে করা চূড়ান্ত পর্যায়ের বালখিল্যতা বৈ কিছুই নয়। কুরআন-হাদীসের আলোকে একথা সুস্পষ্ট যে, অযোগ্য, অত্যাচারী, ফাসিক এবং ভুল ব্যক্তিকে ভোট প্রদান করা মারাত্মক গুনাহ। কুরআনে যেভাবে মিথ্যা সাক্ষীকে হারাম ঘোষণা করেছে, এমনভাবে সঠিক সাক্ষী প্রদানকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

كُوْنُوْا قَوّٰمِيْنَ لِلّٰهِ شُهَدَآءَ بِالْقِسْطِٞ ۰۰۸

‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে।’[1]

অন্য জায়গায় এসেছে,

كُوْنُوْا قَوّٰمِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِۚ ۰۰۱۳۵

‘তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো, আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সংগত সাক্ষী প্রদান করো।’[2]

এ আয়াতে মুসলমানদের জন্য সত্য সাক্ষী প্রদানকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করা হয়েছে। এমনভাবে সূরায়ে তালাকে বলা হয়েছে,

وَاَقِيْمُوا الشَّهَادَةَ لِلّٰهِؕ ۰۰۲

‘তোমরা আল্লাহর জন্য সাক্ষী প্রদান করো।’[3]

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ١ؕ وَمَنْ يَّكْتُمْهَا فَاِنَّهٗۤ اٰثِمٌ قَلْبُهٗؕ ۰۰۲۸۳

‘তোমরা সাক্ষী গোপন করো না। যে সাক্ষী গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে।’[4]

মূলকথা হলো, মুসলমানদের জন্য অবশ্যই ভোট দেওয়া জরুরি। বাকি আপনি যাকে ভোট দিচ্ছেন, মূলত তার ব্যাপারে সাক্ষী দিচ্ছেন। এজন্য আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যাকে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী এবং আমানতদার মনে করবেন, তাকে ভোট প্রদান করবেন।

ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন। প্রথমত ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। যেন আপনি ভুল জায়গায় ভোট না দেন। এটা খেয়াল না করলে আপনার ভোট নষ্ট হয়ে যাবে। এটি অত্যন্ত খারাপ বিষয়। দ্বিতীয়ত পরস্পর পরামর্শ করে খুব চিন্তা ভাবনা করে ভোট দেবেন। শুধু সম্পর্কের কারণে শরীয়তসম্মত নয় এমন কাউকে ভোট দেবেন না। যাকে ভোট দিলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে, তাকে কখনো ভোট প্রদান করবেন না। কারও থেকে টাকা পয়সা নিয়ে তাকে ভোট প্রদান করবেন না। এটি ঘুষ এবং স্পষ্ট হারাম। ভোটের মূলকথাকে সামনে রাখলে এ বিষয়টি সামনে স্পষ্ট হয়।’[5]

এমনভাবে অসংখ্য প্রার্থী থেকে আপনি কাকে ভোট দেবেন, ভোটপ্রদানের ক্ষেত্রে আপনি কোন কোন বিষয়ের খেয়াল রাখবেন? সে ব্যাপারেও দারুল উলুম দেওবন্দের ফতওয়ায় স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের নির্বাচনে আরেকটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়। অনেকে বিভিন্ন প্রার্থী থেকে দুনিয়াবি সুবিধা লাভ করে তার পক্ষে কথা বলেন। তাকে ভোটপ্রদান করেন। ভোটের আগে কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে দেওয়া কোনো উপহার রাখা যাবে কিনা? আসুন এ ব্যাপারে আমরা দারুল উলুম দেওবন্দের ফতওয়া দেখে আসি। বলা হয়েছে,

لیکشن کے موقع پر امیدوار،لوگوں کو جو مٹھائیاں، پکوڑیاں وغیرہ کھلاتے ہیں، اُن کی دعوت کرتے ہیں یا انھیں کچھ دیتے ویتے ہیں، اِس میں اُن کا مقصد بہ ظاہر ووٹ کے لیے راہ ہموار کرنا ہوتا ہے کہ لوگ انھیں ووٹ دیں،اگرچہ وہ زبان سے اپنے لیے ووٹ نہ مانگیں یا یہ کہہ دیں کہ ووٹ جس کو چاہو دو، اور ووٹ شریعت کی نظر میں بعض پہلووٴں سے شہادت کی حیثیت رکھتا ہے۔ اور شہادت پر کسی قسم کا کوئی معاوضہ لینا جائز نہیں؛ اس لیے الیکشن کے موقع پر کسی امیدوار کی کوئی مٹھائی وغیرہ نہیں کھانی چاہیے اور نہ ہی اس طرح کی دعوت میں شریک ہونا چاہیے بالخصوص علما، صلحا، ائمہ مساجد اور اہل مدارس کو، یہ صریح رشوت نہ ہو تو کم از کم اس میں رشوت کا شائبہ ضرور ہے۔

‘নির্বাচনের সময় প্রার্থীর পক্ষ থেকে যে মিষ্টি কিংবা উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়, সেটার উদ্দেশ্য একেবারে স্পষ্ট। এগুলো দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, আপনি যেন তাকে ভোট প্রদান করেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট শাহাদাত তথা সাক্ষী প্রদানের অন্তর্ভুক্ত। আর সাক্ষী প্রদান করে কোনো বিনিময় নেওয়া জায়েজ নেই।[6] এজন্য ভোটের সময় কোনো প্রার্থীর মিষ্টি খাওয়া, তার দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা কিংবা কোনো হাদিয়া গ্রহণ করা বিশেষত আলেম, ইমাম এবং পুণ্যবান মানুষদের জন্য এড়িয়ে চলা জরুরি। কারণ এটা স্পষ্ট ঘুষ না হলেও ঘুষের সম্ভাবনা থেকে মুক্ত নয়।’[7]

আল্লামা ইউসুফ বানুরী (রহ.) প্রতিষ্ঠিত জামেয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া উপমহাদের একটি বিখ্যাত দীনী প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে ووٹ کی شرعی حیثیت (ভোট কী শারয়ী হাইসিয়াত) নামে একটি বিশাল প্রবন্ধ রয়েছে। আমরা সে প্রবন্ধের উল্লেখযোগ্য অংশ আপনাদের সামনে পেশ করছি। সেখানে বলা হয়েছে,

ووٹ امانت ہے اور اس کا صحیح استعمال اسلامی فریضہ ہے۔ اگر اہلِ وطن اس دینی امانت اور اسلامی فریضہ کی ادائیگی میں ہمیشہ کی طرح سُستی اور کاہلی برتتے رہے تو نہ ملک کا کوئی طبقہ محفوظ رہے گااور نہ ہی کوئی مقام۔اگر ووٹ کا استعمال اسلامی فریضہ کی بجائے اپنے ذاتی مفادات کو مد نظر رکھتے ہوئے کیا جاتا رہاتو خدا نہ کرے یہ ملک ہی باقی نہ رہے گا۔ اہل وطن کی یہ روش جو ملک میں چل پڑی ہے، اگر یکسر تبدیل نہیں کی جائے گی تو ملک سے بد امنی ، غربت و افلاس ، بے روزگاری کا خاتمہ نا ممکن ہوگا۔

‘ভোট হলো আমনাত। এটি সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করা অবশ্যই আপনার দায়িত্ব। যদি দেশবাসী এ পবিত্র আমানত এবং ইসলামি দায়িত্ব আদায়ে আগের মতো আলসেমি প্রদর্শন করে, তাহলে রাষ্ট্রের কোনো স্তর এবং জায়গা অবশিষ্ট থাকবে না। ভোটের ক্ষেত্রে যদি আপনি শারয়ী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি খেয়াল না করে নিজের ব্যক্তি স্বার্থের প্রতি খেয়াল করেন, তাহলে আল্লাহ না করুন এ দেশ অবশিষ্ট থাকবে না। বর্তমানে যেভাবে রাষ্ট্র চলছে, সেটার পরিবর্তন না হলে রাষ্ট্র খেয়ানত এবং দরিদ্রতায় ভরে যাবে। এটার সমাপ্তি কোনোভাবে সম্ভব হবে না।’

এরপর ভোট সম্পর্কে শারয়ী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে শেষে বলা হয়েছে,

  • آپ کے ووٹ اور شہادت کے ذریعے جو نمائندہ کسی اسمبلی میں پہنچے گا، وہ اس سلسلہ میں جتنے اچھے یا بُرے اقدامات کرے گا، اُن کی ذمہ داری آپ پر عائد ہوگی، آپ بھی اُس کے ثواب یا عذاب میں برابر شریک ہوں گے۔
  • اس معاملہ میں یہ بات خاص طور پر یاد رکھنے کی ہے کہ شخصی معاملات میں کوئی غلطی بھی ہو جائے تو اس کا اثر بھی شخصی اور محدود ہوتا ہے، ثواب بھی محدود، عذاب بھی محدود ،لیکن قومی اور ملکی معاملات سے پوری قوم متاثر ہوتی ہے۔
  • سچی شہادت کا چُھپانا از روئے قرآن حرام ہے، اس لئے کسی حلقۂ انتخاب میں اگر کوئی صحیح نظریہ کا حامل اور دیانت دار نمائندہ کھڑا ہے تو اس کو ووٹ دینے میں کوتاہی کرنا گناہ کبیرہ ہے۔
  • جو امیدوار نظریۂ اسلامی کے خلاف کوئی نظریہ رکھتا ہے، اس کو ووٹ دینا ایک جھوٹی شہادت ہے، جو گناہ کبیرہ ہے ۔
  • ووٹ کو پیسوں کے معاوضے میں دینا بد ترین قسم کی رشوت ہے اور چند ٹکوں کی خاطر اسلام اور ملک سے بغاوت ہے۔ دوسروں کی دُنیا سنوارنے کیلئے اپنا دین قربان کردینا کتنے ہی مال و دولت کے بدلے میں ہو، کوئی دانشمندی نہیں ہو سکتی۔ رسو ل پاک ا نے فرمایا ہے کہ: «وہ شخص سب سے زیادہ خسارے میں ہے جو دوسرے کی دنیا کے لئے اپنا دین کھو بیٹھے»۔

‘আপনার ভোট পেয়ে যে প্রার্থী সংসদে যাবে, সে যত ভালো এবং মন্দ কাজ করবে, সেগুলোর দায়ভার আপনার ওপরও আসবে। সাওয়াব কিংবা শাস্তির ক্ষেত্রে আপনিও শরিক থাকবেন। ভোটের ক্ষেত্রে একটি কথা ভালো করে স্মরণ রাখবেন। ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে ভুল করলে সেটার ক্ষতি ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু সামষ্টিক কোনো বিষয়ে ভুল করলে সেটার ক্ষতি সকলকে বহন করতে হয়। সত্য সাক্ষীকে গোপন করা কুরআনে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। কোনো জায়গায় যদি বিশুদ্ধ চিন্তা লালনকারী, আমানতদার প্রার্থী দাঁড়ায়, তাহলে তাকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি করা কবীরা গুনাহ। যে ব্যক্তি ইসলামী আদর্শ লালন করে না, এমন ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো, মিথ্যা সাক্ষী প্রদান করা। যেটা হলো কবীরা গুনাহ। ভোটের বিনিময়ে কারও থেকে টাকা নেওয়া নিকৃষ্ট পর্যায়ের ঘুষ। কিছু দিক থেকে সেটা স্পর্শকাতর এবং রাষ্ট্রের সাথে বিদ্রোহের অন্তর্ভুক্ত। অন্যের দুনিয়াবি উন্নতির জন্য নিজের দীন উৎসর্গ করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। রসুল (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মাঝে রয়েছে, যে অন্যের দুনিয়ার জন্য তার দীন বিক্রি করে দেয়।”[8]

পাকিস্তানের মুফতীয়ে আযম মুফতী শফী (রহ.) তার জগদ্বিখ্যাত কিতাব জাওয়াহিরুল ফিকহের পঞ্চম খণ্ডে ভোট কী শারয়ী হাইসিয়ত নামে একটি রিসালা লিখেছেন। সেখানে তিনি ভোট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার আলোচনার সারাংশ দারুল উলুম দেওবন্দের ফতওয়ায় চলে এসেছে। এজন্য পুনরায় আর উল্লেখ করলাম না। আগ্রহী পাঠকরা চাইলে সে পুস্তিকাটি অধ্যয়ন করতে পারেন। আশা করি আপনার মনের কোণে জমে থাকা অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন।

বর্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমদের একজন শায়খুল ইসলাম জাস্টিস আল্লামা তকী উসমানী (হাফি.)। ভোটের ব্যাপারে তাঁর একটি লেখা ইনতেখাবাত মেঁ ভোট কী শারয়ী হাইসিয়ত নামে ছেপেছে। জাওয়াহিরুল ফিকহের দ্বিতীয় খণ্ডে সে রিসালাটি ছেপেছে। সে বইয়ে তিনি ভোটের ব্যাপারে অনেক মৌলিক কথা লিখেছেন। শুরুতেই তিনি কিছুলোকের সন্দেহের অপনোদন করেছেন। তিনি লিখেন,

پہلی غلط فہمی تو سیدھے سادے لوگوں میں اپنی طبعی شرافت کی وجہ سے پیدا ہوئی ہے اس کا منشا اتنا برا نہیں، لیکن نتائج بہت برے ہیں۔ وہ غلط فہمی یہ ہے کہ آج کی سیاست مکر و فریب کا دوسرا نام بن چکی ہے۔ اس لیے شریف آدمیوں کو نہ سیاست میں کوئی حصہ لینا چاہیے، نہ الیکش میں کھڑا ہونا چاہیے اور نہ ووٹ ڈالنے کے خرخشے میں پڑا چاہیے۔ یہ غلط فہمی خواہ کتنی نیک نیتی کے ساتھ پیدا ہوئی ہو۔ لیکن بہ ہر حال غلط اور ملک و ملت کے لیے سخت مضر ہے۔ ماضی میں ہماری سیاست بلا شبہ مفاد پرست لوگوں کے ہاتھوں گندگی کا ایک تالاب بن چکی ہے، لیکن جب تک کچھ صاف ستھرے لوگ اسے پاک کرنے کے لیے آگے نہیں بڑھیں گے۔ اس گندگی میں اضافہ ہی ہوتا چلا جائے گا، اور پھر ایک نہ ایک دن یہ نجاست خود ان کے گھروں تک پہنچ کر رہے گی۔ لہذا عقل مندی اور شرافت کا تقاضا یہ نہیں ہے کہ سیاست کی اس گندگی کو دور دور سے برا کہا جاتا رہے، بلکہ عقل مندی کا تقاضا یہ ہے کہ سیاست کے میدان کو ان لوگوں کے ہاتھ سے چھیننے کی کوشش کی جائے جو مسلسل اسے گندا کر رہے ہیں۔

‘কিছুলোকের অন্তরে ভোটের ব্যাপারে সংশয় তৈরি হয়েছে তাদের ভদ্রতার কারণে। মূলত তাদের নিয়ত খারাপ নয়। তাদের এ ভুল চিন্তা লালনের কারণ হলো, বর্তমানে রাজনীতির ধোঁকাবাজির অপর নামে পরিণত হয়েছে। এজন্য সম্মানী লোকেরা রাজনীতি করে না, নির্বাচনে প্রার্থী হয় না এবং ভোট দিতে চায় না। নেক নিয়ত থেকে এ সংশয় তৈরি হলেও সেটা ভুল। রাষ্ট্রের জন্য এবং ধর্মের জন্য অনেক ক্ষতিকর বিষয়। অতীতে আমাদের রাজনীতি খারাপ লোকদের দ্বারা কলুষিত হয়েছে। এখন কিছু পুণ্যবান মানুষ এগিয়ে না আসলে পরিবর্তন সম্ভব নয়। এভাবে চলতে থাকলে একদিন দেখা যাবে, নাপাক নিজের ঘর পর্যন্ত চলে এসেছে। এজন্য বুদ্ধিমানের কাজ নয় রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া। বরং বুদ্ধিমানের কাজ হলো এ ধরনের অপবিত্র লোকের হাত থেকে রাজনীতি থেকে ছিনিয়ে আনা।’[9]

[1] আল-কুরআন, ৫ (সূরা আল-মায়িদা): ৮

[2] আল-কুরআন, ৪ (সূরা আন-নিসা): ১৩৫

[3] আল-কুরআন, ৬৫ (সূরা আত-তালাক): ২

[4] আল-কুরআন, ২ (সূরা আল-বাকারা): ২৮৩

[5] দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট, ফতওয়া: ৪৩০৯৪, দেখুন:

https://darulifta-deoband.com/home/ur/others/43094

[6] মুফতী মুহাম্মদ শফী, জাওয়াহিরুল ফিকহ, মাকতাবায়ে যাকারিয়া দেওবন্দ, ইউপি, ভারত, খ. ৫, পৃ. ৫৩৫-536

[7] দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট, ফতওয়া: ১৭৭৭৬৩, দেখুন:

https://darulifta-deoband.com/home/ur/halal-haram/177763

[8] বিস্তারিত দেখুন:

www.banuri.edu.pk/bayyinat-detail/ووٹ-کی-شرعی-حیثیت

[9] তকী উসমানী, ইনতেখাবাত মেঁ ভোট কী শারয়ী হাইসিয়ত, পৃ. ২

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ