[মুফতি ড. ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক হলেন একজন বিখ্যাত মুসলিম শিক্ষাবিদ, ইসলাম প্রচারক ও বক্তা, যিনি মুফতি মেনক নামে অধিক পরিচিত। তিনি বর্তমানে জিম্বাবুয়ের ‘গ্র্যান্ড মুফতি’। তিনি জিম্বাবুয়ের মুসলিম জনসংখ্যার শিক্ষার চাহিদা সরবরাহের জন্য প্রতিষ্ঠিত দারুল ইলম (ইসলামিক এডুকেশনাল সেন্টার)-এর প্রধান পরিচালক। মুফতি মেনক বিশেষত পূর্ব আফ্রিকায় বিপুল জনপ্রিয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মুসলিম মোটিভেশনাল-বক্তা হিসেবে পরিচিত মুখ। মুফতি মেনকের ক্ষমতায়িত শব্দ প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের মধ্যে আশা জাগায়, পথ দেখায়, জীবনের গভীরে রেখাপাত করে, শক্তিশালী বার্তা দেয়, ইতিবাচক পরিবর্তনে প্রেরণা জোগায়]
চাইলে আপনি আপনার মনকে পরিবর্তন করতে পারেন
মুফতি ড. ইসমাইল মেনক
লেখক: জিম্বাবুয়ে, আফ্রিকা
হৃদয় যা মুছে দিতে পারে না মন তা স্মরণ করে। তাই আপনি হৃদয়ে যা কিছু রাখেন সে বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করুন। আপনার স্রষ্টার স্মরণ করে মাঝে মাঝে এটিকে নির্মল করুন।
অন্যের মধ্যে সবচেয়ে খারাপটি দেখতে যাবেন না এবং তারা আপনার মধ্যে সেরাটি যেন দেখতে পায় সেই প্রত্যাশা করুন। অন্যকে বিচারের কাটগড়ায় দাঁড় করাতে যাবেন না এবং তারা আপনার পাশে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশাই করুন। জীবনটা সে রকম নয়!
কেউ কেউ আপনার সাথে অন্যায় করবে আর চোখাচোখি হবে না। তারা কিভাবে এতটা নির্দয় হতে পারে তা আপনাকে বিরক্ত করতে পারে। তবে সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানান। অন্তত আপনার একটি ভালো হৃদয় আছে!
যখন কেউ আপনাকে সমালোচনা করে অথবা আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করে, তখন তা থেকে আপনার হৃদয়ে ঘৃণা তৈরি হতে দেবেন না। ঘৃণার অনুভূতি থেকে পরিত্রাণ নিন। এটাকে বাড়তে দেবেন না।
আপনি যাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তাদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখুন। আপনার প্রিয়জনদের বলুন যে, আপনি তাদের ভালোবাসেন। যারা আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তাদের ক্ষমা করুন। এটি আপনার হৃদয়ের জন্য সহজ!
পরিস্থিতির সব সময় পরিবর্তন হয়। কিছুই টিকে থাকে না। সুতরাং ক্ষমার জন্য বিলম্ব করবেন না। ক্ষমা করে দিন। আপনি যা পারেন তা দিন। আনন্দ ছড়িয়ে দিন। ঘটনা ঘটতে দিন।
আপনার ভেতরে যা আছে একজন ব্যক্তি হিসেবে তার অনেক কিছুই আপনার কাজে প্রতিফলিত হয়। অন্যদের আপনাকে বিচার করতে, ভুল বুঝতে এবং দোষারোপ করতে দিন। সম্মানের সাথে আপনি নিজে এসবের ঊর্ধ্বে থাকুন।
আমরা অন্যের সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটির কারণে হাল ছেড়ে দিতে বেশ তাড়াহুড়া করি। অথচ প্রতিবার আমরা যখন ভুল করি তখন সর্বশক্তিমান আমাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করেন।
আমরা অন্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারি। এটি ঠিকই আছে। আমরা মানুষ। তবে এটি ঘৃণার কোনো কারণ হতে পারে না। আমাদের অনুভূতিগুলো আমাদের নিজেদেরই প্রতিচ্ছবি। অন্যদের নয়।
অন্যরা যখন কোনো রকম ভুল করে থাকে তখন আমরা অন্যের নিন্দা করি অথচ একই ভুল যখন আমরা করি তখন কী হয়? মানুষের বিচার করার ক্ষেত্রে এটা এক ধরনের দ্বিচারিতা বা ভণ্ডামি। এর পরিবর্তে, সর্বশক্তিমানের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করুন।
প্রত্যেকেই কোনো না কোনো রকমভাবে একে অন্যকে কষ্ট দিচ্ছে। আসল বিষয়টি আমরা কখনোই জানতে পারি না। একমাত্র সর্বশক্তিমানই তা জানেন। সুতরাং বিনয়ী ও সহানুভূতিশীল হন।
আপনি যদি শুধু অন্যকে ক্ষমা করার পুরস্কার সম্পর্কে জানতেন তবে আপনি তা সহজেই করতেন। ক্ষমা করুন এবং পরম করুণাময় আপনাকে ক্ষমা করবেন। তিনি আপনাকে পুরস্কৃত করবেন। তিনি আপনাকে ভালোবাসেন!
বাহ্যিক সৌন্দর্য, ত্বকের রঙ, উপাদানগত জিনিস, দৃশ্যমান পছন্দ আর উপরি কাঠামোর বাইরে কী আছে তা দেখতে শিখুন। সর্বশক্তিমান আমাদের সমস্ত হৃদয়কে ঘৃণা ও ক্ষোভ থেকে মুক্তি দিন এবং তাঁর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে প্রতিবেশী হিসেবে গ্রহণ করতে আমাদের সহায়তা করুন।
আপনি যা কিছু করেন তার মধ্যে শান্তি খোঁজার চেষ্টা করুন। আপনি যদি সর্বশক্তিমানকে আপনার অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন তাহলে এটি পারবেন। ভালো ও সদয় হন, ক্ষমা করুন, অনুশোচনা করুন। তিনি যা পছন্দ করেন তার সবটা করুন।
আপনার কারো সাথে বিরোধ দেখা দিলে তাড়াতাড়ি বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করে ফেলুন। আপনি কারো প্রতি অন্যায় করেছেন জেনে সম্ভবত শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন না।
আপনার অতীত থেকে শিখুন; কিন্তু এটিকে সেখানে ছেড়ে দিন। অতীতের পেছনে যাবেন না। এটি আপনার ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করবে। সর্বশক্তিমান আজ আপনাকে যা দিয়েছেন তা নিয়ে বেঁচে থাকুন।
কখনোই ভাববেন না আপনি খারাপ লোক। শয়তানকে আপনার মাথায় এমন ভাবনাচিন্তা তৈরি করতে দেবেন না। আমরা প্রায় প্রতিদিন ভুল করি। শুধু আরও ভালো করার চেষ্টা করুন।
বিনয়ী হোন। আপনার অধিকারে যা আছে সেগুলো যেন আপনাকে এমন কথা না ভাবায় যে তারা চিরকাল আপনার কাছে রয়ে যাবে। আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ছিলো এমন অনেক মানুষেরই এখন কিছুই নেই। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।
‘আল্লাহ যদি তার অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হওয়াকে নিষিদ্ধ করেই থাকেন, তাহলে যেসব মানুষ আপনার মাঝে হতাশা সৃষ্টি করে তাদের দ্বারা আক্রান্ত হতে নিজেকে প্রশ্রয় দেবেন না।’
‘যে কিছুই অর্জন করেনি তার প্রতি কেউ ঈর্ষান্বিত হয় না। যদি আপনার চারপাশে ঈর্ষার পরিমাণ বেশি হওয়া টের পান, বড় একটা হাসি দিন এবং আল্লাহকে ধন্যবাদ জানান যে আপনার এমন কিছু আছে যা অন্যদের নেই।’
‘সবাই আপনার দুঃখ দেখে দুঃখী হবে না এবং সবাই আপনার সুখ দেখে সুখী হবে না। সুতরাং খেয়াল রাখুন কার কাছে আপনি আপনার ব্যক্তিগত কথাগুলো বলছেন।’
‘আপনি যখন একাকীত্ব অনুভব করবেন তখন নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেবেন, আল্লাহ অন্য সবাইকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন যেন তখন আপনার অন্তরে শুধু তিনি থাকতে পারেন।’
অন্যের কি আছে অথচ আমাদের নেই এ বিষয়টা আমরা খুব দ্রুত লক্ষ্য করি। কিন্তু আমরা এটা বুঝতে চাই না কতটুকু আমাদের আছে অথচ তাদের নেই। কৃতজ্ঞ হতে চেষ্টা করুন।
আপনি হতে পারেন আশেপাশের সবচেয়ে সুদর্শন এবং সবচেয়ে আকর্ষনীয় ব্যক্তি, কিন্তু আপনার মানসিকতা এবং ব্যক্তিত্ব যদি কুৎসিত হয়ে থাকে, তাহলে তা সবকিছু ধ্বংস করে দেবে।
যখন কিছু আপনার মন মতো হয় না, হতাশ কিংবা ক্রুব্ধ হবেন না। এটাকে অধ্যবসায় এবং অনেক ধৈর্যের সাথে গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন এটা তাঁরই পরিকল্পনার অংশ।
আপনি কি এমন অনুভব করেন যে আপনার উদ্বেগ বা সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য কেউ নেই? সবকিছুর শ্রবণকারী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রোতার সাথে কথা বলতে শিখুন। এটা করুন!
আমরা ক্ষুদ্রতম বিষয় নিয়ে বিরক্ত হয়ে যাই। তাদের কথা ভাবুন, যাদের আমাদের যা আছে তার কিছুমাত্র অংশ আছে এবং তা সত্তেও তৃপ্ত। ছোট খুশিগুলো হারাবেন না।
কেউই পরিপূর্ণ জীবনযাপন করে না। আমাদের প্রত্যেককেই কিছু পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এই জীবনে বেশি নিমজ্জিত হয়ে যাবেন না এবং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যর্থ হবেন না।
বন্ধু আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা অবচেতনভাবে তাদের জীবনযাত্রার ধরন এবং অভ্যাস অবলম্বন করি। তাই বিজ্ঞতার সঙ্গে আপনার বন্ধু নির্বাচন করুন।
মোনাজাতে শুধু নিজের জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে স্বার্থপর হয়েন না। অন্যের জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে নিজের চাওয়াগুলো কবুল হওয়ার সুযোগ করে নিন।
যেখানেই যান, মানুষের সাথে সহৃদয় ব্যবহার করুন। কিন্তু এর বদৌলতে কৃতজ্ঞতা কিংবা কোনোকিছু আশা করবেন না। পুরস্কারটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসুক।
আমরা অনেক কিছুই আগামীকাল করতে চাই; বাজে অভ্যাসগুলো ত্যাগ করুন, একজন ভাল মানুষে পরিণত হন এবং সর্বশক্তিমানের প্রতি আরও নিকটবর্তী হন। কি হবে যদি আগামীকালই আর কখনো না আসে?