বুধবার-২১শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি-১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্ধকালীন সময়ে ছাত্রদের করণীয় মুফতী তকী উসমানী (হাফি.)-এর বিশেষ উপদেশ

বন্ধকালীন সময়ে ছাত্রদের করণীয়

মুফতী তকী উসমানী (হাফি.)-এর বিশেষ উপদেশ

[মহান আল্লাহ পাকের অসংখ্য শুকিরয়া; যিনি আমাদেরকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে একটি বছর অতিবাহিত করার তাওফীক দান করেছেন, আল-হামদু লিল্লাহ। বার্ষিক পরীক্ষা সমাপ্ত হয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই জামিয়া পটিয়াসহ ইত্তিহাদভুক্ত মাদরাসাসমূহে ছুটি ঘোষিত হবে। তবে মনে রাখতে হবে, আমাদের জীবনে বন্ধের দিনগুলোর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়; বরং মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত-সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আল্লাহর কাছে দিতে হবে। কাজেই হিসাব দেয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাব নিয়ে আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সৌভাগ্য ও সফলতার পরিচয়। হযরত ওমর (রাযি.) বলেন, ‘তোমার থেকে হিসাব নেওয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাব নাও, আর আমলনামা ওজন করার আগে নিজেই নিজের আমল ওজন করে নাও।’ আমরা হলাম নবীর ওয়ারিস। তাই বন্ধের দিনগুলি হেলায়-খেলায়, আনন্দ-ফূর্তিতে কাটানোর সুযোগ আমাদের নেই। উপরন্তু আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের অনুভূতি জাগ্রত করে সর্বদা আমাদেরকে পুরোদমে কাজ করতে হবে। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! দারুল উলূম করাচি, পকিস্তানে বিগত ১৪৪৩-১৪৪৪ হিজরী শিক্ষাবর্ষের সমাপনী দরসে আল্লামা মুফতী তকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ ছাত্রদের উদ্দেশ্যে একগুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। অতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, কিন্তু খুবই মূল্যবান। সেই বক্তব্যের সরল অনুবাদ মাসিক আত-তাওহীদের শিক্ষার্থীদের পাত ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো—বিভাগীয় সম্পাদক]

 সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমি

লেখক: বিভাগীয় সম্পাদক, শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ

আল্লামা মুফতি তাকী ওসমানী (হাফি.) বলেন, আমাদের দারুল উলূমের সাবেক প্রধান পরিচালক মরহুম আল্লামা রফী উসমানী (রহ.) বলতেন, শিক্ষার্থীরাই দারুল উলূমের সৌন্দর্য। ছাত্র থাকলে দারুল উলূমকে পুষ্পভরা একটি মনমুগ্ধকর বাগান মনে হয়। যেন বুলবুলির কলতানে এই পুষ্পোদ্যানে মুখরিত থাকে। দরুল উলূমে যখন ছুটি ঘোষিত হয়, ছাত্ররা যখন দারুল উলূম ছেড়ে চলে যায়, তখন দারুল উলূমে এক বিরাট শূন্যতা বিরাজ করে। দারুল উলূম বন্ধ হলে আমরা ছাত্রদের সেই সৌন্দর্যের অপূর্ণতা ভীষণভাবে অনুভব করি।

কিন্তু যেকোনো শিক্ষাব্যবস্থায় ছুটির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে মনে রাখতে হবে, ছুটির অর্থ হলো, কাজের ধরন ও নিয়ম পরিবর্তন করা। মাদরাসা খোলা অবস্থায় নিয়মিত কাজের চাপে যে কাজগুলো করার সুযোগ হয়ে ওঠে না, ছুটির মধ্যে তা যেন কিছু কিছু হলেও বাস্তবায়ন করা যায়, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

যেমন, যে সকল শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা কার্যক্রম এখনো সমাপ্ত হয়নি, যাদেরকে আরও কিছু দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে, তাদের নিকট আমার নিবেদন থাকবে, তারা যেন ছুটির দিনগুলো অনর্থক নষ্ট না করে। ছুটির দিনগুলোকে কাজে লাগাবে। নিজের ইলমী ও আমলী জীবনে যে অপূর্ণতা রয়ে গেছে , তা পূর্ণ করতে ছুটির দিনগুলোর সদ্ব্যবহার করবে।

কিছু শিক্ষার্থী এমন আছে, যারা অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিকভাবে পড়ালেখা করেছে, কিন্তু যোগ্যতার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়ে গেছে। ইলমী দৃঢ়তা এখনো সৃষ্টি হয়নি। তারা ছুটির দিনগুলো অনর্থক নষ্ট না করে কোনো উস্তাদের তত্ত্বাবধানে কিংবা নিজ নিজ অধ্যয়নের মাধ্যমে সেই অপূর্ণতাকে পূর্ণতায় রূপ দেয়ার চেষ্টা করবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা য়ায়, যদি কারও তাজবীদে দুর্বলতা থাকে, তাহলে এই সময়কে কাজে লাগিয়ে তাজবীদ ঠিক করে নিবে। যদি কারও আরবি লেখালেখি কিংবা কথপোকথনে দূর্বলতা থাকে, তাহলে তা উন্নত করার চেষ্টা করবে। আর যদি কারও নাহু-সরফে দূর্বলতা থাকে, তাহলে সে এই ছুটিতে তা দূরীভূত করার চেষ্টা করবে।

আরেকটি বিশেষ আবেদন, আপনারা যখন নিজেদের বাসা-বাড়িতে যাবেন, মাতা-পিতার নিকট যাবেন, আত্মীয়স্বজনের কাছে যাবেন, তখন এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে নিবেন যে, তারা যেন আপনার মধ্যে বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখতে পায়।

এই অনুভব যেন সৃষ্টি হয় যে, আমাদের পরিবারের এই সদস্য পূর্বে জামাত সহকারে নামায আদায়ের পাবন্দ ছিলো না, বর্তমানে সে জামাতের পাবন্দ হয়ে গেছে। পূর্বে সে তাকবীরে উলার পাবন্দ ছিলো না, বর্তমানে সে তাকবীরে উলার পাবন্দ হয়ে গেছে। পূর্বে তার মুখ থেকে মিথ্যা কথাও বের হয়ে যেতো, এখন তার মুখ থেকে মিথ্যা কথা বের হয় না। পূর্বে তার স্বভাব একজন ভালো মুসলিমের স্বভাব ছিলো না। সে খুবই রাগ করতো। এখন সে দারুল উলূম থেকে পড়ে এসেছে, তাই তার স্বভাবে পরিবর্তন এসেছে। সে এখন অপরের প্রতি দয়াশীল হয়ে গেছে।

সে পূর্বে মাতা-পিতার খেদমতের প্রতি যত্মবান ছিলো না, বর্তমানে সে পড়ালেখা করে এসেছে, তাই তার মধ্যে মাতা-পিতার খেদমতের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

পূর্বে সে বড়দেরকে সম্মান করতো না, এখন সে বড়দেরকে সম্মান করতে শিখেছে। পূর্বে ছোটদেরকে স্নেহ করতো না, তাদের উপর রাগান্বিত হতো, তাদেরকে প্রহার করতো, কিন্ত সে এখন শিক্ষাদীক্ষা অর্জন করে এসেছে, তাই এখন সে ছোটদেরকে স্নেহ করতে ভালোবাসে। অর্থাৎ আপনার পরিবার-পরিজন যেন আপনার স্বভাবে পরিবর্তন অবলোকন করতে পারে, এমনভাবে চলার চেষ্টা করবে। আর ছুটির দিনগুলোতে নিজের জীবনকে একজন সহীহ ও খাঁটি মুসলমানে ন্যায় অতিবাহিত করবে।

আমার আব্বাজান হযরত মুফতী শফী (রহ.) বলতেন, এমন যেন না হয় যে, جاء حمار صغيرًا ورجع حمار كبيرًا (ছোট অবস্থায় ছোট গাধা হিসেবে এসেছিলে, আর এখন বড় হয়ে বড় গাধা হিসেবে ফিরে যাবে।)

এজন্য আল্লাহর ওয়াস্তে বলছি, ছুটির দিনগুলো নিজের তালীম-তরবিয়ত ও শিক্ষাদীক্ষার উন্নতি-অগ্রগতির জন্য ব্যবহার করবে। নিজের চরিত্র উন্নত করার লক্ষ্যে ব্যয় করবে। বিশেষত পিতা-মাতার খেদমতে নিয়োজিত থাকবে। তাঁরা তো অনেক ত্যাগ-কুরবানি দিয়ে আপনাকে সারা বছর পড়ালেখায় ব্যস্ত রেখেছেন। তাই এখন যেহেতু তাদের সান্নিধ্যে যাওয়ার সৌভাগ্য হবে, তাহলে আপনার উপর বড় দায়িত্ব ও হক হলো, আপনি তাদের সেবা-শুশ্রুষায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। তাঁরা যেন বুঝতে পারেন যে, আমাদের সন্তান উত্তম চরিত্রের অধিকারি হয়ে আমাদের কাছে ফিরে এসেছে।

পরিশেষে বলবো, আপনারা যা কিছু অর্জন করেছেন, যে শিক্ষাদীক্ষা হাসিল করেছেন, আপনি নিজেই এর বাস্তব চিত্র হয়ে ঘরে ফিরবেন। আপনাকে দেখলেই যেন মানুষ আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। আপনার আচার-উচ্চারণে যেন আপনার অর্জিত ইলম ও তরবিয়ত, আখলাক ও চরিত্র এবং শিক্ষাদীক্ষার প্রভাব দৃশ্যমান হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমল করার তওফিক দান করুন, আমীন।

বন্ধকালীন সময়ে ছাত্রদের করণীয়

মুফতী তকী উসমানী (হাফি.)-এর বিশেষ উপদেশ

[মহান আল্লাহ পাকের অসংখ্য শুকিরয়া; যিনি আমাদেরকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে একটি বছর অতিবাহিত করার তাওফীক দান করেছেন, আল-হামদু লিল্লাহ। বার্ষিক পরীক্ষা সমাপ্ত হয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই জামিয়া পটিয়াসহ ইত্তিহাদভুক্ত মাদরাসাসমূহে ছুটি ঘোষিত হবে। তবে মনে রাখতে হবে, আমাদের জীবনে বন্ধের দিনগুলোর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়; বরং মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত-সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আল্লাহর কাছে দিতে হবে। কাজেই হিসাব দেয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাব নিয়ে আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সৌভাগ্য ও সফলতার পরিচয়। হযরত ওমর (রাযি.) বলেন, ‘তোমার থেকে হিসাব নেওয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাব নাও, আর আমলনামা ওজন করার আগে নিজেই নিজের আমল ওজন করে নাও।’ আমরা হলাম নবীর ওয়ারিস। তাই বন্ধের দিনগুলি হেলায়-খেলায়, আনন্দ-ফূর্তিতে কাটানোর সুযোগ আমাদের নেই। উপরন্তু আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের অনুভূতি জাগ্রত করে সর্বদা আমাদেরকে পুরোদমে কাজ করতে হবে। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! দারুল উলূম করাচি, পকিস্তানে বিগত ১৪৪৩-১৪৪৪ হিজরী শিক্ষাবর্ষের সমাপনী দরসে আল্লামা মুফতী তকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ ছাত্রদের উদ্দেশ্যে একগুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। অতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, কিন্তু খুবই মূল্যবান। সেই বক্তব্যের সরল অনুবাদ মাসিক আত-তাওহীদের শিক্ষার্থীদের পাত ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো—বিভাগীয় সম্পাদক]

 

 সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমি

        লেখক: বিভাগীয় সম্পাদক, শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ

আল্লামা মুফতি তাকী ওসমানী (হাফি.) বলেন, আমাদের দারুল উলূমের সাবেক প্রধান পরিচালক মরহুম আল্লামা রফী উসমানী (রহ.) বলতেন, শিক্ষার্থীরাই দারুল উলূমের সৌন্দর্য। ছাত্র থাকলে দারুল উলূমকে পুষ্পভরা একটি মনমুগ্ধকর বাগান মনে হয়। যেন বুলবুলির কলতানে এই পুষ্পোদ্যানে মুখরিত থাকে। দরুল উলূমে যখন ছুটি ঘোষিত হয়, ছাত্ররা যখন দারুল উলূম ছেড়ে চলে যায়, তখন দারুল উলূমে এক বিরাট শূন্যতা বিরাজ করে। দারুল উলূম বন্ধ হলে আমরা ছাত্রদের সেই সৌন্দর্যের অপূর্ণতা ভীষণভাবে অনুভব করি।

কিন্তু যেকোনো শিক্ষাব্যবস্থায় ছুটির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে মনে রাখতে হবে, ছুটির অর্থ হলো, কাজের ধরন ও নিয়ম পরিবর্তন করা। মাদরাসা খোলা অবস্থায় নিয়মিত কাজের চাপে যে কাজগুলো করার সুযোগ হয়ে ওঠে না, ছুটির মধ্যে তা যেন কিছু কিছু হলেও বাস্তবায়ন করা যায়, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

যেমন, যে সকল শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা কার্যক্রম এখনো সমাপ্ত হয়নি, যাদেরকে আরও কিছু দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে, তাদের নিকট আমার নিবেদন থাকবে, তারা যেন ছুটির দিনগুলো অনর্থক নষ্ট না করে। ছুটির দিনগুলোকে কাজে লাগাবে। নিজের ইলমী ও আমলী জীবনে যে অপূর্ণতা রয়ে গেছে , তা পূর্ণ করতে ছুটির দিনগুলোর সদ্ব্যবহার করবে।

কিছু শিক্ষার্থী এমন আছে, যারা অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিকভাবে পড়ালেখা করেছে, কিন্তু যোগ্যতার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়ে গেছে। ইলমী দৃঢ়তা এখনো সৃষ্টি হয়নি। তারা ছুটির দিনগুলো অনর্থক নষ্ট না করে কোনো উস্তাদের তত্ত্বাবধানে কিংবা নিজ নিজ অধ্যয়নের মাধ্যমে সেই অপূর্ণতাকে পূর্ণতায় রূপ দেয়ার চেষ্টা করবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা য়ায়, যদি কারও তাজবীদে দুর্বলতা থাকে, তাহলে এই সময়কে কাজে লাগিয়ে তাজবীদ ঠিক করে নিবে। যদি কারও আরবি লেখালেখি কিংবা কথপোকথনে দূর্বলতা থাকে, তাহলে তা উন্নত করার চেষ্টা করবে। আর যদি কারও নাহু-সরফে দূর্বলতা থাকে, তাহলে সে এই ছুটিতে তা দূরীভূত করার চেষ্টা করবে।

আরেকটি বিশেষ আবেদন, আপনারা যখন নিজেদের বাসা-বাড়িতে যাবেন, মাতা-পিতার নিকট যাবেন, আত্মীয়স্বজনের কাছে যাবেন, তখন এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে নিবেন যে, তারা যেন আপনার মধ্যে বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখতে পায়।

এই অনুভব যেন সৃষ্টি হয় যে, আমাদের পরিবারের এই সদস্য পূর্বে জামাত সহকারে নামায আদায়ের পাবন্দ ছিলো না, বর্তমানে সে জামাতের পাবন্দ হয়ে গেছে। পূর্বে সে তাকবীরে উলার পাবন্দ ছিলো না, বর্তমানে সে তাকবীরে উলার পাবন্দ হয়ে গেছে। পূর্বে তার মুখ থেকে মিথ্যা কথাও বের হয়ে যেতো, এখন তার মুখ থেকে মিথ্যা কথা বের হয় না। পূর্বে তার স্বভাব একজন ভালো মুসলিমের স্বভাব ছিলো না। সে খুবই রাগ করতো। এখন সে দারুল উলূম থেকে পড়ে এসেছে, তাই তার স্বভাবে পরিবর্তন এসেছে। সে এখন অপরের প্রতি দয়াশীল হয়ে গেছে।

সে পূর্বে মাতা-পিতার খেদমতের প্রতি যত্মবান ছিলো না, বর্তমানে সে পড়ালেখা করে এসেছে, তাই তার মধ্যে মাতা-পিতার খেদমতের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

পূর্বে সে বড়দেরকে সম্মান করতো না, এখন সে বড়দেরকে সম্মান করতে শিখেছে। পূর্বে ছোটদেরকে স্নেহ করতো না, তাদের উপর রাগান্বিত হতো, তাদেরকে প্রহার করতো, কিন্ত সে এখন শিক্ষাদীক্ষা অর্জন করে এসেছে, তাই এখন সে ছোটদেরকে স্নেহ করতে ভালোবাসে। অর্থাৎ আপনার পরিবার-পরিজন যেন আপনার স্বভাবে পরিবর্তন অবলোকন করতে পারে, এমনভাবে চলার চেষ্টা করবে। আর ছুটির দিনগুলোতে নিজের জীবনকে একজন সহীহ ও খাঁটি মুসলমানে ন্যায় অতিবাহিত করবে।

আমার আব্বাজান হযরত মুফতী শফী (রহ.) বলতেন, এমন যেন না হয় যে, جاء حمار صغيرًا ورجع حمار كبيرًا (ছোট অবস্থায় ছোট গাধা হিসেবে এসেছিলে, আর এখন বড় হয়ে বড় গাধা হিসেবে ফিরে যাবে।)

এজন্য আল্লাহর ওয়াস্তে বলছি, ছুটির দিনগুলো নিজের তালীম-তরবিয়ত ও শিক্ষাদীক্ষার উন্নতি-অগ্রগতির জন্য ব্যবহার করবে। নিজের চরিত্র উন্নত করার লক্ষ্যে ব্যয় করবে। বিশেষত পিতা-মাতার খেদমতে নিয়োজিত থাকবে। তাঁরা তো অনেক ত্যাগ-কুরবানি দিয়ে আপনাকে সারা বছর পড়ালেখায় ব্যস্ত রেখেছেন। তাই এখন যেহেতু তাদের সান্নিধ্যে যাওয়ার সৌভাগ্য হবে, তাহলে আপনার উপর বড় দায়িত্ব ও হক হলো, আপনি তাদের সেবা-শুশ্রুষায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। তাঁরা যেন বুঝতে পারেন যে, আমাদের সন্তান উত্তম চরিত্রের অধিকারি হয়ে আমাদের কাছে ফিরে এসেছে।

পরিশেষে বলবো, আপনারা যা কিছু অর্জন করেছেন, যে শিক্ষাদীক্ষা হাসিল করেছেন, আপনি নিজেই এর বাস্তব চিত্র হয়ে ঘরে ফিরবেন। আপনাকে দেখলেই যেন মানুষ আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। আপনার আচার-উচ্চারণে যেন আপনার অর্জিত ইলম ও তরবিয়ত, আখলাক ও চরিত্র এবং শিক্ষাদীক্ষার প্রভাব দৃশ্যমান হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমল করার তওফিক দান করুন, আমীন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ