دَارُ الافتاء جامعہ اسلاميہ پٹیہ، چاٹگام
ফতওয়া বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
ইমেইল: daruliftapatiya@gmail.com
পেইজলিংক: Facebook.com/Darul-ifta-Jamia-Patiya
পবিত্রতা-তাহারাত
সমস্যা: মুফতি সাহেবের নিকট একটি মাসাআলা জানতে চাই যে, আমাদের বাড়ির নিচের ফ্লোর টাইলস লাগানো। জানার বিষয় হলো, যদি টাইলসের ওপর যদি বাচ্চা প্রস্রাব করে অথবা অন্য কোনো নাপাক পড়ে তাহলে কীভাবে পবিত্র করবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
সমাধান: টাইলস যদি আয়নার মতো সমান হয় এবং নাপাকি ধরে রাখার মতো না হয় তাহলে কাপড় জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে মুছে দিলে পবিত্র হয়ে যাবে। (দুররুল মুখতার ১/৫৬২, আন-নাহরুল ফায়েক ১/১৪৪, ফতওয়ায়ে উসমানী ১/৩১৮)
সমস্য: বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় রাস্তা ঘাটে কাদা হয়ে যায়। জানার বিষয় হলো, হাঁটা চলার পথে রাস্তার কাদা কাপড়ে বা শরীরে লাগলে শরীর এবং কাপড় নাপাক হয়ে যাবে কি না? কাঁদা না ধুয়ে নামাজ পড়া যাবে কি না?
সমাধান: রাস্তার কাঁদা নাপাক নয়। বিশেষত কাঁদায় নাপাকি দেখা না গেলে তা পবিত্র। সুতরাং তা কাপড়ে লাগলে কাপড় অপবিত্র হবে না। তাই এ অবস্থায় নামায পড়লে তা সহীহ হবে। তবে ধোয়ার সুযোগ থাকলে এমন ময়লা কাপড়ে না পড়াই ভালো। (রদ্দুল মুখতার ১/৫৮৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/ ১০৩)
সমস্যা: আজ সকালে অযু করার সময় পাশের এক ব্যক্তি আমাকে বলে যে, আপনার অযু সহীহ হয়নি। কারণ, আপনি দাড়ির আগা পর্যন্ত পানি পৌঁছাননি। তার এ কথা শুনে আমি পুনরায় দাড়ি ধুয়ে নিই এবং দাড়ির আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছাই। জানার বিষয় হলো, উক্ত ব্যক্তির বথা ঠিক ছিল কিনা? লম্বা দাড়ির আগা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো জরুরি কি না? এবং অযুর সময় দাড়ি ধোয়ার বিধান সম্পর্কে জানালে উপকৃত হবো।
নসীম
লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: উক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। লম্বা দাড়ির আগা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। বরং চেহারার সাথে লাগানো অংশটুকু ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট। অযুর সময় দাড়ি ধোয়ার ক্ষেত্রে বিধান হলো, দাড়ি ঘন হলে পানি ভেতরে পৌঁছাতে হবে না। বরং দাড়ির ওপর দিয়ে পানি ভেসে দেওয়াই যথেষ্ট। আর যদি দাড়ি হালকা হয়, নিচের চামড়া দেখা যায় তাহলে দাড়ির গোড়ায় পানি পৌঁছাতে হবে। ওপর দিয়ে ভেসে দেওয়া যথেষ্ট নয়। (আদ–দুররুল মুখতার ১/২২৭, আল–বাহরুর রায়েক ১/২১, হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১/৩৭৭)
হজ–ওমরা
সমস্যা: আমার মামা আমেরিকা প্রবাসী। তার দুটো কিডনিই প্রায় অচল। তাকে একদিন পর পর ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিছুদিন পূর্বে তিনি ওয়ারিসসূত্রে ঢাকায় একটি বাড়ি এবং ২৬ লাখ টাকার মালিক হন। তিনি মোটামুটি সচ্ছল। তবে আগে তার অর্থনৈতিক অবস্থা এমন ছিল না, যার মাধ্যমে হজ আদায় করা যায়।
তিনি জানতে চাচ্ছেন, অসুস্থ হওয়ার পর মিরাসসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের কারণে তার ওপর কি হজ ফরজ হয়ে গিয়েছে? যদি ফরজ হয় তাহলে তার করণীয় কী? কারণ তার বর্তমান অবস্থায় সফর করা সম্ভব নয়। জানিয়ে বাধিত করবেন।
নুরুদ্দীন
বাঁশখালী
সমাধান: হ্যাঁ, ওয়ারিসসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের কারণে আপনার মামার ওপর হজ ফরজ হয়েছে। তবে তিনি যেহেতু নিজে হজ করতে সক্ষম নন তাই তার কর্তব্য হল, কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো। অবশ্য তার যদি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তিনি এখনই বদলি হজ করাবেন না। যখন সুস্থ হবেন তখন নিজেই হজ করে নেবেন। কিন্তু তা সম্ভব না হলে বদলি হজ করানোর অসীয়ত করে যাবেন।
উল্লেখ্য, কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানোর পর তিনি যদি সুস্থ হয়ে যান এবং হজের সামর্থ্য থাকে তাহলে পুনরায় নিজে গিয়ে হজ আদায় করতে হবে।
আরো উল্লেখ্য যে, বদলি হজ সক্রান্ত বিভিন্ন মাসআলা রয়েছে। কাউকে বদলি হজে পাঠাতে হলে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে এ সম্পর্কিত মাসআলা জেনে নিতে হবে। ফতওয়ায়ে খানিয়া: ১/২৮১; ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৩/৬৪৮; আলবাহরুর রায়েক: ২/৩১১; রদ্দুল মুহতার: ২/৪৫৮; মানাসিকে মোল্লা আলী আল–কারী: পৃ. ৬১১
সমস্যা: আমি পেনশনের টাকা দিয়ে হজ করতে চাচ্ছি। টাকাটা উঠানোর পর তা দিয়ে জমি বন্ধক রাখতে পারছি না, আবার গরু কিনে বর্গাও দিতে পারছি না। কারণ উভয়টাই নাকি নাজায়েয। আমি কি সংরক্ষণের জন্য টাকাটা ব্যাংকে রাখতে পারবো? যদি পারা যায় তাহলে কোন ধরনের হিসাবে রাখা জায়েয হবে জানালে অনেক উপকার হয়।
যোবাইর
চুনতী
সমাধান: হ্যাঁ, হেফাজতের উদ্দেশ্যে ব্যাংকের সুদবিহীন কারেন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা যাবে। তবে মুনাফা ভোগের উদ্দেশ্যে সেভিংস কিংবা ফিক্স-ডিপোজিট ইত্যাদি অ্যাকাউন্ট খোলা এবং তা থেকে মুনাফা ভোগ করা যাবে না। আর কোনো কারণে যদি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব না হয় এবং সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে বাধ্য হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ইসলামী নামের ব্যাংকগুলোতে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। তবে তার থেকে প্রাপ্ত মুনাফা নিজে ভোগ না করে সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে। মাজাল্লাতু মাজমায়িল ফিকহিল ইসলামী: ৯, ১/৯৭১; মাওসূআতু ফতওয়াল মুআমালাতিল মালিয়া: ১২/২৯
মানত-কসম
সমস্যা: আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে একদিন আমি রাগ করে বলে ফেলি তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। তোমার বাড়ির উঠান ডিঙানো আমার জন্য হারাম। এরপর প্রায় সপ্তাহ খানেক পর তার বাড়ির উঠানের ওপর দিয়ে পাশের বাড়িতে যাই। তখন তারা বলল, তুমি না কসম করেছিলে? আমি এখন চিন্তিত। শরীয়তমতে আমার কী করণীয়?
জায়েদ
রাঙ্গামাটি
সমাধান: তোমার বাড়ির উঠান ডিঙানো আমার জন্য হারাম একথাটি দ্বারা কসম সাব্যস্ত হয়েছে। আর এরপর তার বাড়ির উঠানে যাওয়ার কারণে আপনার কসম ভেঙে গেছে। এখন সেই কসমের কাফ্ফারা দেওয়া জরুরি। কাফ্ফারা হল, দশজন মিসকিনের প্রত্যেককে দু-বেলা পূর্ণ তৃপ্তিসহ খানা খাওয়ানো। বা প্রত্যেককে এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া। আর এগুলোর কোনোটি করা সম্ভব না হলে ধারাবাহিকভাবে তিনটি রোজা রাখতে হবে। আহকামুল কুরআন জাসসাস: ৩/৬৯৬; আলবাহরুর রায়েক: ৪/৪৯২; রদ্দুল মুহতার: ৩/৭২৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক: ৩/৪৩২; ফতওয়ায়ে সিরাজিয়া: ৫৪
সমস্যা: আমাদের দেশের সাধারণ লোকজন এভাবে কসম করে থাকে, আমি আল্লাহর কালাম কুরআন মাজীদের কসম করে বলছি, আমি অমুক কাজ করব না। অনেকে কুরআন শরীফ মাথায় নিয়ে বা হাতে স্পর্শ করে বলে, আমি কুরআন শরীফ মাথায় নিয়ে বা হাতে স্পর্শ করে বলছি, আমি অমুক কাজ করব না। হুযুরের কাছে জানতে চাই, কুরআন শরীফের কসম করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন? উপর্যুক্ত বাক্যগুলো দ্বারা কসম করলে কি তা সংঘটিত হবে? হলে সেক্ষেত্রে করণীয় কী?
মানসূর
রাজবাড়ি
সমাধান: কুরআন শরীফের কসম করা জায়েয নয়। হযরত সাহাম ইবনে মিনজাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের কোনো একটি সূরার কসম করবে সে ওই সূরার প্রত্যেকটি আয়াতের বদলায় একটি করে গুনাহ নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা হাদীস ১২৩৬০ অবশ্য নাজায়েয হলেও কেউ যদি বলে, আমি কুরআন শরীফের কসম করে বলছি, তাহলে এর দ্বারা কসম সংঘটিত হয়ে যাবে। এ শপথ ভঙ্গ করলে কাফ্ফারাও ওয়াজিব হবে। আর যদি কসম শব্দ না বলে শুধু বলে যে, কুরআন শরীফ ছুঁয়ে কিংবা মাথায় নিয়ে বলছি, তবে এর দ্বারা কসম সংঘটিত হবে না। ফাতহুল কাদীর: ৪/৩৫৬; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার: ৩/৭১৩; ইমদাদুল আহকাম: ৩/৩৮
নিকাহ-তালাক
সমস্যা: আমাদের গ্রামে এক দম্পতি পরস্পর ঝগড়া বিবাদ করে। ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রী রাগান্বিত হয়ে বলল, ‘তোমার ভাত আমি খাব না। তোমার ভাত খাওয়া আমার জন্য হারাম।’ একথার পর তাদের ভেতর আবার হৃদ্যতা হয়। তারা এখন একত্রেই আছে। ওই কথার কারণে তাদের মাঝে কোনো তালাক হয়েছে কি না?
নকীব
চকরিয়া
সমাধান: স্ত্রীর ওই কথার কারণে তার ওপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। তবে কথাটা কসমে পরিণত হয়েছে। ঘটনার পর স্বামীর দেওয়া খাবার ও জিনিসপত্র গ্রহণ করার দ্বারা কসমটি ভেঙে গেছে। এখন স্ত্রীর ওপর ওই কসমের কাফ্ফারা আদায় করা জরুরি। কসমের কাফ্ফারা হল, দশজন প্রাপ্তবয়স্ক মিসকীনকে পূর্ণ তৃপ্তির সাথে দুবেলা খাবার খাওয়ানো কিংবা তাদের প্রত্যেককে এক জোড়া করে পরিধেয়ে বস্ত্র দেওয়া। সামর্থ্য না থাকলে তিনটি রোজা রাখবে।
উল্লেখ্য, হালাল বস্তু নিজের ওপর হারাম করা গুনাহ। তাই এ ধরনের কথা থেকে বিরত থাকা জরুরি। আহকামুল কুরআন জাসসাস: ৩/৪৬৪, খুলাসাতুল ফাতওয়া: ২/১৫৩, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৫৫, আল-বাহরুর রায়েক: ৪/৩১৯
ওয়াক্ফ
সমস্যা: মসজিদে ‘শের’ (কবিতা) পাঠ করা যাবে কি না? পাঠ করা গেলে কী ধরনের ‘শের’ পাঠ করা যাবে?
আরীফুল ইসলাম
লোহাগাড়া
সমাধান: মসজিদে যেমন দীনি কথা ও ভালো কথা বলার অবকাশ আছে তেমনি শরীয়তসম্মত ভালো অর্থবোধক কবিতা বা ‘শের’ বলাও জায়েয। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন এর কারণে কোনো মুসল্লীর ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে। আর অশ্লীল কবিতা কিংবা অন্য কারণে শরীয়ত বিরোধী কবিতা তো মসজিদের বাইরেও বলা জায়েয নয়। সুতরাং মসজিদের ভেতরে এসব কবিতা আবৃতি করা যে আরো মারাত্মক গুনাহ তাতো সহজেই অনুমেয়। সহীহ বুখারী: ১/ ৬৪, মুসান্নাফে আবদুর রযযাক: ১/ ৪৩৭, ফাতহুল বারী: ১/৪৫৪, শরহুল মনিয়া: ৬১০
সমস্যা: আমাদের মসজিদের অযুখানাটি খুবই ছোট ও সংকীর্ণ। নামাজের সময় খুব ভিড় হয়। এদিকে মসজিদ সংলগ্ন একটি পারিবারিক কবরস্থান আছে। আমরা চাচ্ছি, কবরস্থানের ওপর ছাদ দিয়ে অযুখানা নির্মাণ করতে। জানতে চাই, পারিবারিক কবরস্থানের ওপর অযুখানা নির্মাণের কোনো সুযোগ আছে কি?
সাদেকুর রহমান
আযীযনগর, লোহাগাড়া
সমাধান: পারিবারিক কবরস্থানের ওপরও ছাদ বা তলা বৃদ্ধি করে অযুখানা বানানো জায়েয হবে না। কেননা কবরের ওপর ছাদ দেওয়া বা ভবন নির্মাণ করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ থেকে সুস্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য কবরস্থানটি যদি ওয়াকফিয়া না হয়; বরং ব্যক্তি মালিকানাধীন হয় আর কবরস্থানের যে অংশের ওপর অযুখানা বানাতে চাচ্ছে সেখানে কোনো কবর না থাকে বা সেখানের কবর পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে জায়গার মালিকের অনুমতিক্রমে কবরকে নিশ্চিহ্ন করে সেখানে অযুখানা বানানো যাবে। আর কবরস্থান ওয়াকফকৃত হলে সেখানে কোথাও-চাই কবর থাক বা না থাক-অযুখানা বানানো জায়েয হবে না। সহীহ মুসলিম: ৯৭০; উমদাতুল কারী: ৪/১৭৪, ১৭৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক: ১/৫৮৯; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৬৭
মুআমালা-লেনদেন
সমস্যা: আমি একটি কোম্পানির শোরুম থেকে একটি ওয়াশিং মেশিন ৫৫ হাজার টাকায় খরিদ করি। কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করব। মোট বার কিস্তিতে আমাকে এ মূল্য পরিশোধ করতে হবে। শুনেছি নির্দিষ্ট সময়ের আগে তথা ৯/১০ মাসের বকেয়া টাকা পরিশোধ করলে দোকানদার কিছু মূল্য ছাড় দিয়ে থাকে। জানতে চাই, এ ছাড় গ্রহণ করা আমার জন্য জায়েয হবে কি না? এতে চুক্তি ক্রুটিযুক্ত হবে কি না?
নযীরুল ইসলাম
খুলশী, চট্টগ্রাম
সমাধান: কিস্তি বিক্রির চুক্তির সময় এমন শর্ত করা যে, কিস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মূল্য পরিশোধ করে দিলে নির্ধারিত মূল্য থেকে কম নেওয়া হবে এমন চুক্তি বৈধ নয় এবং চুক্তির সময় এমন শর্ত করলে কারবার নাজায়েয হয়ে যাবে। অবশ্য কোনো প্রকার শর্ত করা ছাড়া কিস্তির টাকা অগ্রিম আদায় করে দিলে বিক্রেতার জন্য সে অনুপাতে মূল্য ছাড় দিয়ে দেওয়াই উত্তম। এক্ষেত্রে ক্রেতার জন্যও মূল্য ছাড় গ্রহণ করা জায়েয। উল্লেখ্য, সকল কিস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর অনাদায়ি মূল্য দ্রুত আদায়ের শর্তে মূল্য থেকে ছাড় দেওয়া জায়েয। মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ: ৭৬৮, আওজাযুল মাসালিক: ১১/ ৩২৭, বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়া মুআসারা: ১১/ ২১
বর্গা ও বন্ধক
সমস্যা: আমি একজনের কাছে একটি গরু বর্গা দিলাম এ শর্তে যে, পালার পর যে দামে বিক্রি করা হবে তা থেকে আমার মূল টাকা নিয়ে নিব। এরপর যা থাকবে তা থেকে অর্ধেক আমার আর অর্ধেক যে পালবে তার। এভাবে বর্গা দেওয়া জায়েয কি না? অনেকে বলে জায়েয আবার অনেকে বলে জায়েয নেই। যদি জায়েয না হয় তাহলে করণীয় কী?
ওয়াহীদুযযামান
কেরানীগঞ্জ
সমাধান: প্রশ্নোক্ত গরুবর্গা পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত নয়। তাই উক্ত পন্থায় কেউ গরু বর্গা দিয়ে থাকলে তাতে যদি লাভ আসে বা বর্গা দেওয়া গরু বাচ্চা দেয় তাহলে তা মূল মালিকেরই হবে। আর যে গরু পালবে সে শুধু গরুর খরচ এবং তার পারিশ্রমিক পাবে। আল–মুহীতুল বুরহানী: ৮/৩৯৯; রদ্দুল মুহতার: ৪/৩২৭; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৩৩৫
সমস্যা: গত রোজায় প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। অসহনীয় গরমের কারণে আমাদের পাড়ার মসজিদটিতে কেউ ইতিকাফ করতে চাচ্ছিল না। গরমে মুআযযিন সাহেব আগের থেকে অসুস্থ ছিলেন। তাই আমি একাই আল্লাহর ওপর ভরসা করে ইতিকাফে বসে পড়ি। ইতিকাফে থাকা অবস্থায় পাড়ার তিন ভদ্রলোক বৈরী আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। ফলে যথাক্রমে ২৩, ২৪, ২৫ রমজানে মসজিদের পূর্ব পাশের উঠানে জানাযা পড়াই। কারণ আমাদের পাড়ার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজ করে। হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, এ পরিস্থিতির মাঝেও কি জানাযা পড়ানোর কারণে উক্ত তিন দিনের ইতিকাফ ভেঙে গেছে?
উল্লেখ্য, ২৫ রমজানে জানাযা পড়ানোর পর ইস্তিসকার নামাজও পড়ানো হয়। সংবাদ আসছিল, বিভিন্ন এলাকায় সালাতুল ইস্তিসকা পড়া হচ্ছে। তাই আমরা আগের থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলাম যে, জানাযার পর ইস্তিসকার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
নবী হোসাইন
রংপুর
সমাধান: ইতিকাফ অবস্থায় শরীয়ত অনুমোদিত নির্ধারিত কিছু ক্ষেত্র ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া নিষেধ। এই নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলো ছাড়া অন্য কাজে মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। আর জানাযার নামাজ ওই নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। হাদীস শরীফে এসেছে,
السُّنَّةُ عَلَى الْـمُعْتَكِفِ: أَنْ لَا يَعُوْدَ مَرِيْضًا، وَلَا يَشْهَدَ جَنَازَةً، وَلَا يَمَسّ امْرَأَةً، وَلَا يُبَاشِرَهَا، وَلَا يَخْرُجَ لِـحَاجَةٍ، إِلَّا لِـمَا لَا بُدَّ مِنْهُ.
অর্থাৎ ইতিকাফকারীর নিয়ম হল, সে কোনো রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না। স্ত্রীকে (কামভাবে) স্পর্শ করবে না, সহবাস করবে না। একান্ত প্রয়োজন (যেমন- অযু, ইস্তিঞ্জা ইত্যাদি) ছাড়া বের হবে না। (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৭৩)
অতএব প্রথম দিন জানাযা পড়ানোর জন্য বের হওয়ার দ্বারাই আপনার সুন্নত ইতিকাফটি ভেঙে গেছে। আপনি যে কোনো দিন রোজাসহ পূর্ণ এক দিনের ইতিকাফ কাযা করে নেবেন। অবশিষ্ট দিনগুলো নফল ইতিকাফের মধ্যে গণ্য হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই জানাযা ও ইস্তিসকার নামাজ পড়ানোর সুযোগ ছিল। তাই পরবর্তী দিনগুলোর জন্য কিছুই করতে হবে না। [শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ২/৪৭৩; ফতওয়ায়ে ওয়ালওয়ালিজিয়া: ১/২৪১; ফাতহুল কদীর: ২/৩১১; ফতওয়ায়ে খানিয়া: ১/৩২২; তাবয়ীনুল হাকায়েক: ২/২২৮; রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪৭]