আস্থার জায়গায় আঘাত হানা হচ্ছে
পরিমিতিবোধ সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। সহিষ্ণুতার স্থান দখল করে নিচ্ছে চরমপন্থা। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধার মাত্রা হ্রাস পাওয়ায় উগ্রতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এটা সমাজের জন্য রীতিমত অশনিসংকেত। নবীন আলিম ও তালাবাদের মধ্যে এ সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে অধিকার হারে।
নির্ধারিত ফিল্ডে ৩০/৪০ বছর কেউ খেদমত করলে গণমানুষের আস্থা তৈরি হয়। মানুষ তাঁকে ভালবাসে, পছন্দ করে। তাঁর কথা মেনে চলে। এটা বিরাট ব্যাপার। সামান্য ব্যাপারে উত্তেজিত হয়ে ওই ব্যক্তিকে গালমন্দ করা, চরিত্র হনন করা এবং ফেসবুকে অশালীন মন্তব্য করা কেবল দুঃখজনক নয়, লজ্জাজনকও বটে। কেবল নিজেদের প্লাটফর্মের বাইরে থাকায় তাঁর ওপর হামলে পড়াটা ধর্মীয় ও নৈতিকতার মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
যেকোনো বিষয়ে ভিন্নমত বা একাধিক মত থাকা মোটেই দোষের নয়। এটা ইজতিহাদের অন্তর্ভুক্ত। অতীতেও ছিল, এখনো আছে। নিজের মতের বাইরের মানুষকে শত্রু ভাবা, তাগুত নামে অভিহিত করা বা তাকফীর করা জঘন্যতম ফিতনা। ফিতনার আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাই হওয়ার উপক্রম মুসলিম সমাজ।
নিজেদের মধ্যে লড়াই করে আমরা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি, শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মুরোদ কই এবং ফুরসতও বা কই। মুসলমানরা যখন নিজেদের মধ্যে সঙ্ঘাতের অভিঘাতে বিধ্বস্ত, তখন ইহুদি-অক্ষশক্তির এজেন্টরা মুখ টিপে হাসছে।
ইসলামি রাষ্ট্র বা খিলাফতে ইসলামি আমাদের সকলের কাম্য ও ঈপ্সিত লক্ষ্য। কিভাবে বা কি পদ্ধতিতে এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে তা নিয়ে ইখতিলাফ থাকতে পারে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। এটা ফেসবুকে বিতর্কের বিষয় নয়। সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে হোক বা জিহাদের মাধ্যমে হোক বা নির্বাচনের মাধ্যমে হোক জনগণের সহযোগিতা ছাড়া ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম হবে না।
হুকুম আল্লাহর, হুকুমত জনগণের। আল্লাহ তাআলা তাঁর হুকুমকে মানুষের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেন। আল্লাহর আইন, রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ ও তাআম্মুলে সাহাবা হচ্ছে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলনীতি। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞ ফকিহদের ইজতিহাদের প্রয়োজনীয়তাও বিবেচনায় আনতে হবে গুরুত্বের সাথে।
এটা মনে রাখতে হবে যে, উগ্র ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, কমিউনিস্ট, পাশ্চাত্য শক্তি ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সহ্য করে না। শক্তিশালী ইহুদি লবি কোনো দিন ইসলামি খিলাফতকে মেনে নেবে না। কারণ ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য খিলাফত ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জ স্বরূপ।
সুতরাং খিলাফত প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত সবাইকে আত্মসমালোচনা করতে হবে, ভিন্নতা সত্ত্বেও কাছাকাছি আসার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, হৃদয়ের বদ্ধ কপাট খুলতে হবে।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন