আমীন বিল জাহরের মাসআলা
মূল: শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (রহ.)
তাসহীল ও তারতীব
শায়খুল হাদীস মুফতি সাইদ আহমদ পালনপুরী (রহ.)
মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমীন পালনপুরী
অনুবাদ
মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী
যেসব নামাজে উচ্চস্বরে সূরা ফাতিহার পর জাহরি বা সিররিভাবে (জোরে অথবা আস্তে) আমীন বলা নিয়ে ফুকাহায়ে কেরামের মতামত বিভিন্ন ধরনের। যার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হল:
ফকীহদের বিভিন্ন মাযহাব
- (হানাফী মাযহাব:) হানাফীদের মতে ইমাম ও মুক্তাদী সবার জন্যই আমীন বলা সুন্নত এবং তা সিররিভাবে (আস্তে) বলাও সুন্নত। অর্থাৎ এখানে দুটি সুন্নত পৃথক পৃথক। প্রথমত আমীন বল, দ্বিতীয়ত আস্তে বলা। আদ-দুররুল মুখতারে আছে,
وَالثَّنَاءُ وَالتَّعَوُّذُ وَالتَّسْمِيَةُ وَالتَّأْمِيْنُ وَكَوْنُهُنَّ سِرًّا.
‘আর (নামাজের সুন্নত) হচ্ছে সানা, আঊযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ ও আমীন বলা এবং এ চারটিই অনুচ্চ স্বরে বলা।’[1]
وَكَوْنُهُنَّ سِرًّا-এর ওপর আল্লামা শামী w টীকা লিখেছেন যে,
جَعَلَ سِرًّا خَبَرَ الْكَوْنِ الْـمَحْذُوْفِ، لِيُفِيْدَ أَنَّ الْإِسْرَارَ بِهَا سُنَّةٌ أُخْرَىٰ، فَعَلَىٰ هَذَا سُنِّيَّةُ الْإِتْيَانِ بِهَا تَحْصُلُ وَلَوْ مَعَ الْـجَهْرِ بِهَا.
‘আদ-দুররুল মুখতার প্রণেতা سِرًّا -কে উহ্য كَوْنٌ (كَانَ-এর ক্রিয়ামূল)-এর খবর (বিধেয়) বানিয়েছেন। যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, এই চারটিই আস্তে বলা আরেকটি সুন্নত। সুতরাং এ চারটি বলার সুন্নত আদায় হয়ে যাবে, যদিও জাহরিভাবে (জোরে) বলে। (অবশ্য অনুচ্চ স্বরে বলার সুন্নত আদায় হবে না, যা একটি স্বতন্ত্র সুন্নত)।’[2]
- (মালিকী মাযহাব:) মালিকীদের মুফতা বিহি[3] মাযহাব হচ্ছে যে, আস্তে আমীন বলা মুস্তাহাব। আল্লামা দারদীর w-এর আশ-শারহুস সগীরে আছে,
نُدِبَ الْإِسْرَارُ بِهِ أَيْ بِالتَّأْمِيْنِ لِكُلِّ مُصَلٍّ طُلِبَ مِنْهُ.
‘প্রত্যেক নামাজি যার থেকে আমীন বলা দাবি করা হয়েছে তার জন্য আস্তে আমীন বলা মুস্তাহাব।’[4]
- (হাম্বলী মাযহাব🙂 হাম্বলীদের নিকট ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্য জাহরিভাবে (জোরে) আমীন বলা সুন্নত। ইবনে কুদামা w লিখেছেন,
وَيُسَنُّ أَنْ يَجْهَرَ بِهِ الْإِمَامُ وَالْـمَأْمُوْمُ فِيْمَا يُجْهَرُ فِيْهِ بِالْقِرَاءَةِ، وَإِخْفَاؤُهَا فِيْمَا يُخْفَىٰ فِيْهِ.
‘যেসব নামাজে জোরে কিরাআত পড়া হয় সেসব নামাজে ইমাম ও মুক্তাদীর জোরে আমীন বলা সুন্নত। আর যেসব নামাজে আস্তে কিরাআত পড়া হয় সেখানে আস্তে আমীন বলা সুন্নত।’[5]
- (শাফিয়ী মাযহাব:) ইমাম শাফিয়ী w-এর পুরোনো মত হচ্ছে, জাহরি নামাজে ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্য জোরে আমীন বলা সুন্নত। আর তাঁর নতুন মত হচ্ছে, শুধু ইমামের জন্য জোরে আমীন বলা সুন্নত এবং মুক্তাদীদের জন্য আস্তে আমীন বলা সুন্নত। তবে শাফিয়ীদের কাছে মুফতা বিহি মত পুরোনো মতটিই। হাফিয ইবনে হাজর (আল-আসকলানী) w লিখেছেন, وَعَلَيْهِ الْفَتْوَىٰ (এর ওপরই ফতওয়া)।[6] ইমাম রাফিয়ী wও এটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।[7] নতুন মতের ওপর শাফিয়ীদের কেউই ফতওয়া দেননি।[8]
মাযহাবসমূহের উপর্যুক্ত সবিস্তার আলোচনা থেকে একথা প্রতীয়মান হয়েছে যে, আমীন আস্তে বা উচ্চ আওয়াজে বলার বৈধতা বিষয়ে ব্যাপারে সকলেই একমত। তবে দুই ইমামের নিকট আস্তে বলা উত্তম, অপর দুই ইমামের নিকট জোরে বলা উত্তম। বস্তুত মতপার্থক্য শুধু উত্তম ও অনুত্তম সম্পর্কে, জায়েয ও নাজায়েয সম্পর্কে নয়।
আমীন বিষয়ে রেওয়ায়েতসমূহ
(আমীন বিষয়ে) বিভিন্ন রেওয়ায়েত আছে। আস্তে বলার রেওয়ায়েতও আছে, জোরে বলারও আছে। তবে জোরে আমীন বলার বিষয়ে যেসব রেওয়ায়েত আছে সব সহীহ, কিন্তু সরীহ নয়। আর যেগুলো সরীহ সেগুলো আবার সহীহ নয়। উদারণত সবচেয়ে উচ্চ স্তরের হাদীসটি হচ্ছে,
«إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوْا، فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِيْنُهُ تَأْمِيْنَ الْـمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
‘যখন ইমাম আমীন বলবেন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে তার পেছনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’[9]
এই হাদীসটি সহীহ। আর এটি দিয়েই ইমাম বুখারী w সজোরে আমীন বলা প্রমাণ করেছেন। কিন্তু এ হাদীসটি এ বিষয়ে সরীহ নয়। কেননা মুসলিম শরীফ ও আবু দাউদ শরীফে হাদীসটির বর্ণনাকারী ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী w-এর হাদীসের শেষে একথার উল্লেখ রয়েছে যে, وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ: «آمِيْنَ» (আর হুযুর আকরম D আমীন বলতেন)।[10] যদি হুযুর D জোরে আমীন বলতেন, তাহলে ইমাম যুহরী w-এর তা স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজনীয়তা কেন পড়ল?
এছাড়া সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ হাদীস শরীফের এসব শব্দও বর্ণিত হয়েছে,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «إِذَا قَالَ الْإِمَامُ: [وَلَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷] {الفاتحة: 7}، فَقُوْلُوْا: آمِيْنَ، فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْـمَلَائِكَةِ، غُفِرَ لَهُ». (واللفظ للبخاري)
‘রসুলুল্লাহ h ইরশাদ করেছেন যে, ইমাম যখন وَلَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ বলবেন তখন তোমরা আমীন বলবে। যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে তার গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’[11]
এ হাদীসে মুক্তাদীদের আমীন বলা ইমামের وَلَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ বলার ওপর স্থগিত করা হয়েছে। আর একথা তখনই যুক্তিসংগত হবে যখন ইমাম আমীন সিররিভাবে (আস্তে) বলেন। নতুবা وَلَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ বলার পর আমীন বলাকে স্থগিত করার কোনো অর্থ নেই। আর যখন ইমাম আস্তে আমীন বলা প্রমাণিত, তাহলে মুক্তাদীদেরকে স্বাভাবিকভাবে আস্তে বলতে হবে।
আর এ হাদীসটিও হযরত আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত আছে, যেমনটি উল্লিখিত হাদীসটিও তাঁর থেকেই বর্ণিত হয়েছে। যখন একই হাদীস দুভাবে বর্ণিত হয়; একটিতে আস্তে আমীন বলার ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং দ্বিতীয়টিতে জোরে বলার। তা হলে এটিকে সুস্পষ্ট বলা যায় কী করে?
আর যেসব রেওয়ায়েত সরীহ, কিন্তু সহীহ নয়। যেমন-
- হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর[12] h-এর বর্ণনা:
سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ قَرَأَ: [غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷] {الفاتحة: 7}، فَقَالَ: «آمِيْنَ»، وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ، وفي رواية أبي داود: فَجَهَرَ بِآمِيْنَ، وفي أخرىٰ: قَالَ: «آمِينَ»، وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ.
‘আমি শুনেছি যে, হুযুর আকরম D যখন غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ পড়তেন তখন আমীন বলেছেন এবং আমীন বলার সময় আওয়াজকে টেনেছেন।’[13] দ্বিতীয় এক বর্ণনায় আছে যে, ‘জোরে আমীন বলেছেন।’[14] তৃতীয় এক বর্ণনায় আছে যে, ‘আমীন বলার সময় নিজের আওয়াজকে উচ্চ করেছেন।’[15]
এ সকল শব্দ সুফিয়ান সাওরী w-এর রেওয়ায়েতের। এদিকে তাঁর সঙ্গী ইমাম শু’বা w এই রেওয়ায়েতকে নিম্নোক্ত শব্দে বর্ণনা করেছেন,
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَرَأَ: [غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷] {الفاتحة: 7}، فَقَالَ: «آمِيْنَ» وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ. (رواه أحمد والطيالسي وأبو يعلى الموصلي والطبراني والحاكم)
‘নবী করীম D যখন غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ পড়েন তখন আমীন বলতেন। আমীন বলার সময় তাঁর আওয়াজ ছোট করতেন।’[16]
মতনের (টেক্সট) এ বিভিন্নতা ছাড়াও সুফিয়ান সাওরী (w) ও শু’বা (w)-এর মাঝে হাদীসের সনদ নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে। যার কারণে ইমাম বুখারী (w) ও ইমাম মুসলিম (w) সহীহায়নে এ হাদীসটি নেননি। মুহাদ্দিসগণ যদিও একথায় পুরো জোর দিয়েছেন যে, হযরত সুফিয়ান সাওরী w-এর রেওয়ায়েতকে প্রাধান্য দেবেন। কিন্তু তাঁরা সফলকাম হতে পারেননি। কেননা ইমাম শু’বা w-এর সনদের ওপর যেসব অভিযোগ করা হয়েছে এর যুক্তিযুক্ত জবাব রয়েছে।
- (সুনানে) দারাকুতনীতে হযরত আবু হুরায়রা h-এর হাদীস এসেছে, ‘যখন হুযুর আকরম D সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ করতেন তখন আওয়াজ উচ্চ করতেন এবং আমীন বলতেন।’[17] কিন্তু এ হাদীসটির সনদ বিশুদ্ধ নয়। কেননা এর সনদে ইয়াহইয়া ইবনে উসমান ও তাঁর উস্তায ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আয-যুবায়দী বিতর্কিত রাবী।
- (সুনানে) দারাকুতনীতে (হযরত আবদুল্লাহ) ইবনে ওমর k থেকে একই বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে।[18] কিন্তু সেটিও সহীহ নয়। এর সনদে একজন বাহরুস সাক্কা রাবী আছেন, যিনি যয়ীফ।
- (সুনানে) ইবনে মাজাহে হযরত আলী h-এর হাদীস বর্ণিত আছে।[19] কিন্তু তাও সহীহ নয়। এর সনদে একজন ইবনে আবু লায়লা আস-সগীর রাবী আছেন, যিনি যয়ীফ।
- (সুনানে) ইবনে মাজাহে হযরত আবু হুরায়রা h-এর এ হাদীসটি এসেছে,
تَرَكَ النَّاسُ التَّأْمِيْنَ، وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا قَالَ: [غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷] {الفاتحة: 7}، قَالَ: «آمِيْنَ» حَتَّىٰ يَسْمَعَهَا أَهْلُ الصَّفِّ الْأَوَّلِ، فَيَرْتَجُّ بِهَا الْـمَسْجِدُ.
‘লোকজন আমীন বলা ছেড়ে দিল, অথচ রসুলুল্লাহ D যখন وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ বলতেন তখন আমীন বলতেন। এমনকি প্রথম কাতারের মানুষজন তা শুনতে পেত, এমনকি আমীন বলার কারণে মসজিদে অনুরণন হতো।’[20]
এ হাদীসটিও সহীহ নয়। এ হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা h থেকে তাঁর চাচাতো ভাই আবু আবদুল্লাহ বর্ণনা করেন, যার অবস্থা জানা যায় না। আর তার শিষ্য বিশর ইবনে রাফি’ অত্যন্ত যয়ীফ। (হাফিয) ইবনে হিব্বান (w) তার সম্পর্কে লিখেছেন, يَرْوِى الْـمَوْضُوْعَاتَ (এ ব্যক্তি জাল রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন)।[21]
- উম্মুল হুসাইন h বলেন, তিনি হুযুর আকরম D-এর পেছনে নামাজ পড়েছেন। হুযুর D যখন وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ বললেন তখন আমীন বললেন। তিনি তা শুনেছেন, অথচ তিনি ছিলেন নারীদের কাতারে।[22] এ রেওয়ায়েতটিও সহীহ নয়। কেননা এর সনদে ইসমাইল ইবনে মুসলিম আল-মক্কী, একজন যয়ীফ রাবী।[23]
মোদ্দাকথা আমীন বিল-জাহর সম্পর্কে যতগুলো সরীহ রেওয়ায়েত আছে তার একটাও সহীহ নয়।
পূর্বসূরিদের আমল
রইল পূর্বসূরিদের আমলের কথা। ইমাম তাবারী w সে প্রসঙ্গে বলেন,
إِنَّ أَكْثَرَ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِيْنَ كَانُوْا يُخْفُوْنَ بِهَا.
‘অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিয়ীনে ইযাম আস্তে আমীন বলতেন।’[24]
অবশ্য নবী সাহাবীদের জামানায় বিশেষ করে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র h জোরে আমীন বলার প্রথা চালু করেন। তাঁর রাজধানী ছিল মক্কা। এ কারণে মক্কায়ে মুকাররমায় জোরে আমীন বলার রেওয়াজ চালু ছিল। এজন্যই ইমাম শাফিয়ী w—যাঁর জন্ম হয়েছে মক্কায়—আমীন বিল জাহরকে গ্রহণ করেন। কিন্তু মদীনায়ে মুনাওয়ারার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ইমাম মালিক w—যাঁর কাছে মদীনাবাসীর আমলের যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল—তিনি আস্তে আমীন বলার মত গ্রহণ করেন।
আস্তে আমীন বলার দলিল
(প্রথম দলিল:) আস্তে আমীন বলার সবচেয়ে বড় দলিল হচ্ছে সেই হাদীস শরীফটি যা আগে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের বরাতে উল্লিখিত হয়েছে। যেখানে হুযুর আকরম D মুক্তাদীদের আমীন বলাকে ইমামের وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ বলার ওপর স্থগিত রেখেছেন। এই রেওয়ায়েতের কোনো ব্যাখ্যা করা যায় না। «إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوْا» (যখন ইমাম আমীন বলবেন তোমরাও আমীন বলবে।)[25]-এর ব্যাখ্যা হতে পারে যে, যখন ইমামের আমীন বলার সময় আসে তখন মুক্তাদীও আমীন বলবে।
দ্বিতীয় দলিল: হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর h-এর সেই হাদীস যার রাবী ইমাম শু’বা w। যার শব্দ হচ্ছে, وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ (আমীন বলার সময় তাঁর আওয়াজ ছোট করতেন।)[26]
তৃতীয় দলিল: হযরত সামুরা h ও হযরত ইমরান h-এর ঘটনা। হযরত সামুরা h বলেন, রসুলুল্লাহ D নামাজে তাকবীরে তাহরীমার পর কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন এবং وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷-এর পরও কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। হযরত ইমরান h দ্বিতীয় সাকতা (নীরবতা অবলম্বন)-কে অস্বীকার করেন। শেষে উভয় হযরাত হযরত উবাই ইবনে কা’ব h-এর কাছে সমর্পন করেন। তখন হযরত উবাই h বললেন, সামুরা h-এর স্মরণই যথার্থ। অর্থাৎ হুযুর আকরম D وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷-এর পরও কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। (এ চুপ থাকা আমীন বলার জন্য হত।)[27]
চতুর্থ দলিল: হযরত ইবরাহীম নাখয়ী w-এর এ ইরশাদ যে, ‘পাঁচটি জিনিস ইমাম আস্তে বলবেন, সানা, আঊযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও তাহমীদ।’[28]
আস্তে আমীন বলা মূল আর জোরে বলা শিক্ষার জন্য
একথা এখন চিন্তার বিষয় যে, উপর্যুক্ত উভয় প্রকার বর্ণনার মধ্যে প্রকৃত সুন্নত কোনটি? এটির নির্ধারণে মুজতাহিদীনের মাঝে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। হানাফী ও মালিকীদের মতামত হচ্ছে, আমীন আস্তে বলাই প্রকৃত সুন্নত। কেননা আমীন একটি দোয়া, আর দোয়ায় শ্রেয় হচ্ছে আস্তে করা। আর হুযুর আকরম D যতবারই আমীন জোরে বলেছেন তা মানুষের শিক্ষার জন্য বলেছিলেন।
যেভাবে সিররি নামাজে (যেসব নামে কিরাআত আস্তে পড়া হয়) হুযুর আকরম D মাঝে-মধ্যে দুয়েকটি আয়াত জোরে পড়ে ফেলতেন, যাতে লোকজন জানতে পারেন যে হুযুর D অমুক সূরা পড়ছেন। এভাবে একবার হযরত ওমর h-এর খিলাফতকালে একবার বাইরে থেকে কিছু লোক দীন শিক্ষার উদ্দেশ্যে এলে হযরত ওমর h তাদেরকে শেখানোর জন্য নামাজে জোরে সানা পড়েছিলেন।
আমাদের একথার প্রমাণ মেলে হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর h-এর উপর্যুক্ত হাদীস মুহাদ্দিস আবুল বিশর আদ-দূলাভী তাঁর কিতাবুল আসমা ওয়াল-কুনায় নিম্নোক্ত শব্দে উল্লেখ করেছেন,
فَقَالَ: «آمِيْنَ» يَمُدُّ بِهَا صَوْتَهُ، مَا أَرَاهُ إِلَّا يُعَلِّمُنَا.
‘হুযুর আকরম D আমীন বললেন এবং আমীন বলার সময় তিনি তাঁর আওয়াজকে উচ্চ করতেন। আমি যতটুকু বুঝি, হুযুর D-এর উদ্দেশ্য ছিল আমাদেরকে শেখানো।’[29]
আর ইমাম তাবারানী w আল-মু’জামুল কবীরে হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর h-এর রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন এভাবে,
رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَالَ: «آمِيْنَ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
‘আমি দেখেছি যে, নবী করীম D নামাজ শুরু করেছেন। যখন তিনি সূরা ফাতিহা শেষ করেন তখন তিনবার আমীন বলেন।’[30]
ইবনে হাজার আসকালানী w যিনি শাফিয়ী এবং জোরে আমীন বলার জোরালো বক্তা, তিনি এ হাদীসের তাৎপর্য এই বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ওয়ায়িল h তিন নামাজে হুযুর D-কে জোরে আমীন বলতে শুনেছেন। হাদীসের তাৎপর্য এই নয় যে, একই রকআতে তিনবার আমীন বলেছেন। হাফিয ইবনে হাজর (w)-এর এ বক্তব্য মাওয়াহিবের ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।[31]
এসব রেওয়ায়েত এই ফয়সলায় উপনীত হওয়ার জন্য যথেষ্ট যে, হুযুর আকরম D সবসময়ই জোরে আমীন বলতেন না। কখনো কখনো মানুষকে শেখানোর উদ্দেশ্যে বলতেন।[32] যদি জোরে আমীন হুযুর D-এর (সবসময়ের) আমলই হত তাহলে হযরত ওয়ায়িল h-কে مَا أَرَاهُ إِلَّا يُعَلِّمُنَا (আমি যতটুকু বুঝি, হুযুর D-এর উদ্দেশ্য ছিল আমাদেরকে শেখানো।)[33] ও قَالَ: «آمِيْنَ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ (তিনবার আমীন বলেন।)[34] বলার প্রয়োজন পড়ত না।
সাওরী ও শু’বার
রেওয়ায়েতের সমন্বয়
বাকি থাকল সুফিয়ান সাওরী (w) ও ইমাম শু’বা (w)-এর রেওয়ায়েতসমূহের বিভিন্নতা প্রসঙ্গ। প্রকৃতপক্ষে এতে কোনো বিভিন্নতা নেই, বরং একই অবস্থার বিভিন্ন ব্যাখ্যা এটি। আওয়াজ টানা ও উচ্চ করার তাৎপর্য হচ্ছে, হুযুর আকরম D সেই বিশেষ জায়গায় আমীন আস্তে বলেননি, বরং জোরেই বলেছিলেন। তবে যে কণ্ঠস্বরে তিনি সূরা ফাতিহা পড়েছিলেন সেই কণ্ঠস্বরে তিনি আমীন পড়েননি, বরং আমীন বলার সময় তিনি আওয়াজ ছোট করে দিয়েছিলেন। যেমন নাসায়ী শরীফের রেওয়ায়েতে আছে যে,
فَلَمَّا قَرَأَ [غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷] {الفاتحة: 7} قَالَ: «آمِيْنَ»، فَسَمِعْتُهُ وَأَنَا خَلْفَهُ.
‘হুযুর আকরম D যখন وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ পর্যন্ত পৌঁছুলেন তখন আমীন বললেন, আমি (ওয়ায়িল ইবনে হুযুর) তা শোনলাম, আমি তাঁর পেছনেই ছিলাম।’[35]
অর্থাৎ হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর h সামনের কাতারে হুযুর D-এর একদম পেছনে দাঁড়ানো ছিলেন। যেখানে সাধারণত হযরত আবু বকর h ও হযরত ওমর h দাঁড়াতেন। হয়রত ওয়ায়িল h-কে সম্মান ও শ্রদ্ধার জন্য সেখানে স্থান দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি হুযুর D-কে আমীন বলতে শুনেন। কেননা তাঁকেই শিক্ষা দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল। এজন্য হুযুর D এতটুকু জোরে বলেছেন যতুটুকু প্রয়োজন ছিল (যতটুকু উচ্চ করলে হযরত ওয়ায়িল h শুনতে পান)। এটিই وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ (আমীন বলার সময় তাঁর আওয়াজ ছোট করতেন।)[36]-এর তাৎপর্য।[37]
কিতাবের সারসংক্ষেপ
বিস্তারিত এই আলোচনার পর দ্বিতীয় দফার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হচ্ছে যে, হযরত (শায়খুল হিন্দ) u চ্যালেঞ্জকারীদের কাছে এটা দাবি করছেন যে, যখন অনুচ্চস্বরে আমীনই মূল, আর উচ্চস্বরে বলা একটি সাময়িক কাজ। তবে যে ব্যক্তি সাময়িক বিষয় নিয়ে দাবি পেশ করে তিনি এর বাদী। কাজেই প্রথমে তাকে নিজের দাবি প্রমাণ করতে হবে। অর্থাৎ জোরে আমীন বলা যে সুন্নত তা বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। সাথে দুটি কথার যেকোনো একটি প্রমাণ করা জরুরি। এর ব্যতিরেকে বাদীর দাবি প্রমাণিত হতে পারে না।
প্রথমত অভিযোগকারী একথা প্রমাণ করবেন যে, হুযুর আকরম D সর্বদা জোরে আমীন বলতেন। অর্থাৎ নবী করীম D-এর দৈনন্দিন আমল ছিল জোরে আমীন বলা। একথা প্রমাণ করা ব্যতিরেকে জোরে আমীন বলা প্রকৃত সুন্নত হওয়া প্রমাণ হতে পারে না। কেননা এটা স্রেফ সম্ভাবনা, অথচ বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত যে, (আমীনে) উচ্চস্বর ছিল শেখানোর উদ্দেশ্যেই। সুতরাং সর্বদা সাব্যস্ত করা ব্যতীত দাবি কিভাবে প্রমাণিত হতে পারে?
দ্বিতীয়ত অন্তত এতটুকু প্রমাণ করবেন যে, হুযুর আকরম D জীবনের সর্বশেষ নামাজে জোরে আমীন বলেছেন। যাতে বিলুপ্তির সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। কেননা যদি সর্বশেষ নামাজে জোরে আমীন বলা প্রমাণিত না হয়, তবে বলা যায় যে, পূর্ববর্তী আমল শেষ আমল দ্বারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কাজেই বিলুপ্তির সম্ভাবনা শেষ করার জন্য জরুরি হচ্ছে একদম সর্বশেষ নামাজে জোরে আমীন বলা প্রমাণ করা।
উপর্যুক্ত দুটো বিষয়ের যেকোনো একটি প্রমাণ করা ছাড়া আমীনে উচ্চস্বর না বলবৎ থাকা প্রমাণিত হয়, না বিলুপ্তি, বরং দুটোরই পুরোপুরি সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা আমীনে উচ্চস্বরের রেওয়ায়েতসমূহ উচ্চস্বরের বলবৎ থাকা এবং উচ্চস্বরের বিলুপ্তির ব্যাপারে নীরব। সুতরাং উচ্চস্বরের রেওয়ায়েত ও হাদীসসমূহ অনুচ্চস্বরের বিলুপ্তকারী হতে পারে না। কেননা বিলুপ্তির জন্য প্রথমে সাংঘর্ষিকতা জরুরি। এরপর কোনটি অগ্রগণ্য এবং কোনটি স্থগিত হবে তা প্রমাণিত হওয়া জরুরি। উচ্চস্বরের রেওয়ায়েতসমূহ না অগ্রগণ্য হওয়া প্রমাণিত, না স্থগিত হওয়া। সুতরাং তা অনুচ্চস্বরের হাদীসসমূহের জন্য বিলুপ্তকারী কিভাবে হতে পারে?
বাকি থাকলো অনুচ্চস্বরের হাদীসমূহের প্রসঙ্গ। এসব হাদীস মূল অনুযায়ী রয়েছে, কেননা আস্তে আমীন বলাই আসল। যদি উচ্চস্বরের হাদীসসমূহ না থাকত তাহলে সেগুলোর ওপরই আমল ওয়াজিব হত। যেহেতু উচ্চস্বরের রেওয়ায়েতও আছে সেহেতু অনুচ্চস্বরের হাদীসসমূহের ওপর যদি আমল করা ওয়াজিব না হলেও অন্তত উত্তম ও শ্রেয় হওয়া জরুরি।
যদি কেউ এ আপত্তি উপস্থাপন করেন যে, যেভাবে উচ্চস্বরের রেওয়ায়েতসমূহে উচ্চস্বরের বলবৎ থাকা ও উচ্চস্বরের বিলুপ্তি দুটোরই পরিপূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি অনুচ্চস্বরের রেওয়ায়েতসমূহেও এই দুই সম্ভাবনা পরিপূর্ণ রয়েছে। কাজেই অনুচ্চস্বরের রেওয়ায়েতসমূহও উচ্চস্বরের বিলুপ্তির ওপর নির্দেশনা করে না। কেননা অনুচ্চস্বর না স্থায়ী আমল হওয়া প্রমাণিত, না সর্বশেষ আমল হওয়া প্রমাণিত।
এর জবাব হচ্ছে, অনুচ্চস্বরের রেওয়ায়েতসমূহ উচ্চস্বরের বিলুপ্তির ওপর নির্দেশ করে না বটে, কিন্তু অনুচ্চস্বরের শ্রেষ্ঠত্বের ওপর অবশ্যই নির্দেশ করে। কেননা অনুস্বর মূল। সুতরাং যতক্ষণ এর জন্য কোনো বিলুপ্তকারী না হবে ততক্ষণ মূলের ওপরই আমল করা উত্তম ও শ্রেয়। এছাড়াও আমীন হচ্ছে একটি দোয়া ও মোনাজাত, যা আল্লাহ তাআলার দরবারে পেশ করা হয়। আর আল্লাহ তাআলা না বধির, না অনুপস্থিত। যেমন- বুখারী শরীফের হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে।[38] এজন্য দোয়া আস্তে করা উত্তম আর আমীনও একটি দোয়া, কাজেই এটিও অনুচ্চস্বরে বলা উত্তম এবং উচ্চস্বরে বলা কেবলই জায়েয হবে।
এখন ইনসাফের সাথে বলা যায় যে, যারা আসলের ওপর আমল করে সুন্নাহর অনুসারী হবে, নাকি যেসব লোক শেখানোর উদ্দেশ্যে কখনো কখনো করা আমলের উচ্চস্বরের ওপর আমল করে তারা হাদীসের অনুসারী হবে?
[متن ادلۂ کاملہ]
دفعۂ دوم: آپ ہم سے اِخفاء آمین میں احادیثِ صحیحہ، مُتَّفَقٌ علیہا کے طالب ہیں، جو نَصِّ صریح بھی ہوں، ہم آپ سے نَصِّ صریح، حدیثِ صحیح، دوامِ جہر کے طالب ہیں، اگر ہوں تو لائیے، اور دس کے بدلے بیس لے جائیے! ورنہ پھر یہ بات مُنہ پر نہ لائیے۔
اور زیادہ وُسْعت کی طلب ہے تو آخری وقتِ نبوی ﷺ ہی میں آپؐ سے جہر کا ثبوت دیجیئے، اور دس کے بدلے بیس لیجئے، ورنہ تُم ہی فرماؤ مُتَّبِعِ حدیث کون رہا، ہم یا تم؟
در صورتیکہ احادیثِ جہر، دوامِ جہر پر دال نہیں، اور آخری وقت میں جہر پر کوئی حدیث دلالت نہیں کرتی، تو پھر اصل میں بقاءِ جہر ونسخِ جہر دونوں احتمال برابر ہوئے، اس لئے احادیثِ جہر، احادیثِ اخفاء وترکِ جہر کی مُعارِض نہ ہوئیں، بلکہ بقاء ونسخ دونوں سے ساکت نکلیں، پس عمل اُن پر واجب نہیں تو اولیٰ تو ضرور ہی ہوگا، کیونکہ احادیثِ اخفاء، نسخ جہر پر نہیں تو اَوُلَوِیَّتِ اخفاء پر ضرور ہی دلالت کرتی ہیں۔
خاص کر جب یہ لحاظ کیا جائے کہ «فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا» أَوْ كَمَا قَالَ وغیرہ نصوص اخفاءِ دعا کی افضلیت پر دلالت کرتی ہیں، اس وجہ سے حنفی مُتَّبِعِ حدیث ہوں گے، اور آپ تابع رائے نارسا!
؏ ببیں تفاوت رَہ از کُجاست تا بَکُجا!؟
‘দ্বিতীয় দফা: আপনারা আমাদের কাছে অনুচ্চস্বরে আমীন প্রসঙ্গে সহীহ হাদীস ও মুত্তাফাক আলায়হি হাদীস তলব করছেন, যা সরীহ (সুস্পষ্ট বক্তব্য)ও হতে হবে। আমরা আপনাদের কাছে সর্বদা উচ্চস্বরে আমীন প্রসঙ্গে সহীহ ও সরীহ (সুস্পষ্ট বক্তব্য) হাদীস দাবি করছি। যদি থাকে, নিয়ে আসুন এবং দশের পরিবর্তে ২০ নিয়ে যান। নতুবা একথা আর মুখেও আনবেন না।
আরও প্রশস্ততা প্রয়োজন হলে তবে অন্তত নবীজি D-এর শেষজীবনেই উচ্চস্বরে আমীন বলার প্রমাণ দিন এর এই দশের পরিবর্তে ২০ নিয়ে যান। নতুবা আপনারাই বলুন, হাদীসের প্রকৃত অনুসারী কারা? আমরা না আপনারা?
উচ্চস্বরের হাদীসসমূহ সর্বদা উচ্চস্বরের ওপর নির্দেশক নয় এবং নবীজি D-এর শেষসময়ে উচ্চস্বরের ওপর কোনো হাদীস নির্দেশ করে না। এ অবস্থায় (আমীনে) উচ্চস্বর বলবৎ থাকা ও উচ্চস্বরের বিলুপ্তি উভয়ের পুরোপুরি সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য উচ্চস্বরের হাদীসসমূহ অনুচ্চস্বর ও উচ্চস্বর পরিত্যাগের হাদীসসূহের বিরোধী নয়। বরং বলবৎ থাকা ও বিলুপ্তি উভয় বিষয়ে (বর্ণনাসমূহে) নীরবতা পাওয়া যায়। অতএব এর কোনোটির ওপরই আমল ওয়াজিব নয়, তবে উত্তম তো অবশ্যই হবে। কেননা অনুচ্চ স্বরের হাদীসসমূহ উচ্চস্বরের হাদীসসমূহকে বিলুপ্ত না করলেও অনুচ্চ স্বরের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে অবশ্যই নির্দেশ করে।
বিশেষ করে যখন নবীজি D-এর: «فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا» (তোমরা তো বধির বা দূরবর্তী সত্তাকে ডাকছ না)।[39] ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে অনুচ্চ দোয়ার শ্রেয় নির্দেশ করে। এ কারণে হানাফীরাই প্রকৃতপক্ষে হাদীসের অনুসারী। আর আপনারা হলেন আত্মপূজারি। চরণ: দেখুন তো, আমাদের পথচলার পার্থক্য কোথা থেকে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে?’
হযরত (শায়খুল হিন্দ) u যে হাদীসটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন সেই পূর্ণ হাদীসটি হচ্ছে, হযরত আবু মুসা আশআরী h বলেন, আমরা হুযুর আকরম D-এর সঙ্গে সফর করছিলাম। যখন আমরা কোনো এক ময়দানে পৌঁছুতাম তখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলতাম এবং আমাদের উচ্চ হত। তখন হুযুর আকরম D ইরশাদ করেন,
«يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوْا عَلَىٰ أَنْفُسِكُمْ، فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا إِنَّهُ مَعَكُمْ إِنَّهُ سَمِيعٌ قَرِيبٌ تَبَارَكَ اسْمُهُ وَتَعَالَىٰ جَدُّهُ».
‘হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের ওপর দয়া কর। কেননা তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। নিশ্চিয়ই তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী। আর তাঁর নাম বড়ই বরকতময় এবং তাঁর মর্যাদাও অনেক উঁচুতে।’[40]
আল্লামা আইনী (w) এ হাদীস শরীফের সারসংক্ষেপে বলেছেন যে, উচ্চ আওয়াজে জিকির করা ও দোয়া করা মকরুহ।[41] আর আল্লামা খাত্তাবী (w) বলেন,
يُرِيْدُ أَمْسِكُوْا عَنِ الْـجَهْرِ، وَقِفُوْا عَنْهُ.
‘হুযুর D-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, জোরে বলা থেকে বিরত থাক এবং নীরবতা অবলম্বন করো।’[42]
হাদীস শরীফের এ উদ্দেশ্যও নয় যে, অনুচ্চস্বরে দোয়া ও যিকির করো, যেমনটি মিসবাহুল আদিল্লার রচয়িতা বয়ান করেছেন।
অনুবাদক: লেখক, গবেষক ও পীর সাহেব বায়তুশ শরফ, চট্টগ্রাম
[1] আল-হাসকফী, আদ-দুররুল মুখতার শারহু তানওয়ীরিল আবসার ওয়া জামিয়িল বিহার, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৩ হি. = ২০০২ খ্রি.), পৃ. ৬৫
[2] ইবনে আবিদীন, রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার, খ. ১, পৃ. ৪৭৬
[3] মুফতা বিহি (আরবি: مُفْتَىٰ بِهِ): ফতওয়ার উৎস, প্রামাণ্য ফতওয়া। যার বিশুদ্ধতা বিষয়ে বড় কোনো মুফতি বা একদল মুফতিয়ানে কেরাম ফতওয়া দিয়েছেন।—স. চৌ.
[4] আদ-দারদীর, আশ-শারহুস সাগীর, খ. ১, পৃ. ৩২৭
[5] ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, মাকতাবাতুল কাহিরা, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৩৮৮ হি. = ১৯৬৮ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৩৫৩
[6] ইবনে হাজর আল-আসকলানী, ফাতহুল বারী শরহু সহীহ আল-বুখারী, দারুল মা’রিফা লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৩৭৯ হি. = ১৯৫৯ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ২৬৭
[7] আর-রাফিয়ী, ফাতহুল আযীয বি-শারহিল ওয়াজীয, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৭ হি. = ১৯৯৭ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৪৯২
[8] (ক) ইউসুফ বানূরী, মাআরিফুস সুনান শারহু সুনানিত তিরমিযী, খ. ২, পৃ. ৩৯৭; (খ) আন-নাওয়াওয়ী, আল-মাজমূ’ শারহুল মুহাযযাব, খ. ৩, পৃ. ৩৬৮
[9] (ক) মালিক ইবনে আনাস, আল-মুয়াত্তা, যায়দ ইবনে সুলতান আলে নাহিয়ান ফাউন্ডেশন, আবু যাবী, সংযুক্ত আরব-আমিরাত (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৫ হি. = ২০০৪ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১১৯, হাদীস: ২৮৮/৮০; (খ) আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ১৫৬, হাদীস: ৭৮০; (গ) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৩০৭, হাদীস: ৪১০; (ঘ) ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৭৭, হাদীস: ৮৫২; (ঙ) আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৪৬, হাদীস: ৯৩৬; (চ) আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৩০, হাদীস: ২৫০; (ছ) আন-নাসায়ী, আল-মুজতাবা মিনাস সুনান, খ. ২, পৃ. ১৪৪, হাদীস: ৯২৮, হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত
[10] (ক) মালিক ইবনে আনাস, আল-মুয়াত্তা, খ. ২, পৃ. ১১৯, হাদীস: ২৮৯/৮১; (খ) আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ১৫৬, হাদীস: ৭৮০; (গ) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৩০৭, হাদীস: ৪১০; (ঙ) আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৪৬, হাদীস: ৯৩৬
[11] (ক) মালিক ইবনে আনাস, আল-মুয়াত্তা, খ. ২, পৃ. ১১৯, হাদীস: ২৯০/৮২; (খ) আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ১৫৬, হাদীস: ৭৮২ ও খ. ৬, পৃ. ১৭, হাদীস: ৪৪৭৫; (গ) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৩০৭, হাদীস: ৪১০; (ঘ) আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৪৬, হাদীস: ৯৩৫; (ঙ) আন-নাসায়ী, আল-মুজতাবা মিনাস সুনান, খ. ২, পৃ. ১৪৪, হাদীস: ৯২৯, হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত
[12] হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর h ইয়েমেনর শাহজাদা ছিলেন। প্রথমবার যখন তিনি হুযুর আকরম D-এর হাজির হন তখন হুযুর আকরম D তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান, বরং তাঁর আগমনের আগেই হুযুর D সাহাবায়ে কেরামকে সুসংবাদ শুনিয়েছেন। তিনি কিছুদিন হুযুর D-এর খেদমতে থাকেন এবং দীনের জরুরি শিক্ষা অর্জন করে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
[13] আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ২৭, হাদীস: ২৪৮
[14] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৪৬, হাদীস: ৯৩৩
[15] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৪৬, হাদীস: ৯৩২
[16] (ক) আয-যায়লায়ী, নাসবুর রায়া লি আহাদীসিল হিদায়া, দারুর রাইয়ান, বয়রুত, লেবনান ও দারুল কিবলা লিস-সাকাফাতিল ইসলামিয়া, জিদ্দা, সৌদি আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৮ হি. = ১৯৯৭ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৩৬৯; (খ) আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত-তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ৩১, পৃ. ১৩৮, হাদীস: ১৮৮৪৩; (গ) আবু ইয়া’লা, আল-মুসনাদ, দারুল মামূন লিত-তুরাস, দামেস্ক, সিরিয়া (প্রথম সংস্করণ: ১৪০৪ হি. = ১৯৮৪ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৩৬১, হাদীস: ১১১৭; (ঘ) আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল কবীর, মাকতাবাতু ইবনে তায়মিয়া, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪০৪ হি. = ১৯৮৩ খ্রি.), খ. ২২, পৃ. ৯, হাদীস: ৩; (ঙ) আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহায়ন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১১ হি. = ১৯৯০ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ২৫৩, হাদীস: ২৯১৩
[17] আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, মুআস্সিসাতুর রিসালা লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত-তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৪ হি. = ২০০৪ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১৩৪, হাদীস: ১২৭৪, তিনি বর্ণনা করেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَةِ أُمِّ الْقُرْآنِ رَفَعَ صَوْتَهُ، وَقَالَ: «آمِيْنَ».
‘হযরত আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম D যখন উম্মুল কুরআন তথা সূরা ফাতিহা পাঠ সমাপ্ত করতেন তখন তাঁর কণ্ঠস্বর উঁচু করে আমীন বলতেন।’—স. চৌ.
[18] আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ১৩৩, হাদীস: ১২৭৪, তিনি বর্ণনা করেন,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ إِذَا قَالَ: [وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷] {الفاتحة: 7}، قَالَ: «آمِيْنَ» وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ.
‘হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে ওমর k থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ D যখন وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ বলতেন তখন উচ্চস্বরে আমীন বলতেন।’—স. চৌ.
[19] ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ৩৭৮, হাদীস: ৮৫৪, তিনি বর্ণনা করেন,
عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ إِذَا قَالَ: [وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷] {الفاتحة: 7}، قَالَ «آمِينَ».
‘হযরত আলী h থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ D-কে وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ বলার (পড়ার) পর আমীন বলতে শুনেছি।’—স. চৌ.
[20] ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ৩৭৮, হাদীস: ৮৫৩
[21] ইবনে হিব্বান, আল-মাজরূহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন ওয়ায যুআফা ওয়াল মাতরূকুন, দারুল ওয়া’য়ী আল-আরবী, হলব, সিরিয়া (প্রথম সংস্করণ: ১৩৯৬ হি. = ১৯৭৬ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ১৮৮, ক্রমিক: ১৩২
[22] (ক) আয-যায়লায়ী, নাসবুর রায়া লি আহাদীসিল হিদায়া, খ. ১, পৃ. ৩৭১; (খ) ইসহাক ইবনে রাহাওয়াই, আল-মুসনাদ, মাকতাবাতুল ঈমান, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪১২ হি. = ১৯৯১ খ্রি.), খ. ৫, পৃ. ২৪৪-২৪৫, হাদীস: ২৩৯৬, তিনি বর্ণনা করেন,
عَنِ ابْنِ أُمِّ الْـحُصَيْنِ، عَنْ أُمِّهِ، أَنَّهَا صَلَّتْ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ، فَسَمِعَتْهُ وَهُوَ يَقُوْلُ: [مٰلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِؕ۰۰۳] {الفاتحة: 3}، فَلَمَّا قَرَأَ: [وَلَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷] {الفاتحة: 7}، قَالَ: «آمِيْنَ» حَتَّىٰ سَمِعَتْهُ، وَهِيَ فِيْ صَفِّ النِّسَاءِ.
‘হযরত ইবনে উম্মুল হুসাইন w থেকে বর্ণিত, তিনি মা (হযরত উম্মুল হুসাইন i) বর্ণনা করেন, তিনি রসুলুল্লাহ D-এর পেছনে নামাজ পড়েছেন, তিনি তাঁকে مٰلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِؕ۰۰۳ পড়তে শুনেন, যখন তিনি وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ পাঠ করলেন তখন তিনি আমীন বলতে শুনেছি, অথচ আমি নারীদের কাতারে ছিলাম।’—স. চৌ.
[23] বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন: যফর আহমদ উসমানী, ই’লাউস সুনান, খ. ২, পৃ. ৭৫৩
[24] (ক) যফর আহমদ উসমানী, ই’লাউস সুনান, খ. ২, পৃ. ৭৪৮; (খ) ইবনুত তুরকমানী, আল-জাওহারুন নাকী আলা সুনানিল বায়হাকী, দারুল ফিকর লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৩৫৬ হি. = ১৯৩৭ খ্রি.), খ. 2, পৃ. 58
[25] (ক) যফর আহমদ উসমানী, ই’লাউস সুনান, খ. ২, পৃ. ৭৪০, হাদীস: ৭২৩; (খ) আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ১৫৬, হাদীস: ৭৮০; (গ) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৩০৭, হাদীস: ৪১০, হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত
[26] (ক) যফর আহমদ উসমানী, ই’লাউস সুনান, খ. ২, পৃ. ৭৪৪, হাদীস: ৭২৯; (খ) আয-যায়লায়ী, নাসবুর রায়া লি আহাদীসিল হিদায়া, খ. ১, পৃ. ৩৬৯; (খ) আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহায়ন, খ. ২, পৃ. ২৫৩, হাদীস: ২৯১৩
[27] (ক) যফর আহমদ উসমানী, ই’লাউস সুনান, খ. ২, পৃ. ৭৪১-৭৪২, হাদীস: ৭২৫; (খ) আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, খ. ৩৩, পৃ. ২৬৯, হাদীস: ২০০৮১; (গ) আদ-দারিমী, আস-সুনান, দারুল মুগনী লিন-নাশর ওয়াত তাওযী’, রিয়াদ, সৌদি আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০০ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৭৯১, হাদীস: ১২৭৯; (ঘ) ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৭৫, হাদীস: ৮৪৪; (ঙ) আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২০৭, হাদীস: ৭৭৯; (চ) আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৩০-৩১, হাদীস: ২৫১; (ছ) আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ১৩৪, হাদীস: ১২৭৫, ভাষ্য ইমাম আবু দাউদ w-এর
عَنِ الْـحَسَنِ، أَنَّ سَمُرَةَ بْنَ جُنْدُبٍ، وَعِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ، تَذَاكَرَا فَحَدَّثَ سَمُرَةُ بْنُ جُنْدُبٍ، أَنَّهُ حَفِظَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ سَكْتَتَيْنِ: سَكْتَةً إِذَا كَبَّرَ، وَسَكْتَةً إِذَا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَةِ [غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷] {الفاتحة: 7}، فَحَفِظَ ذَلِكَ سَمُرَةُ وَأَنْكَرَ عَلَيْهِ عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ، فَكَتَبَا فِي ذَلِكَ إِلَىٰ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، فَكَانَ فِيْ كِتَابِهِ إِلَيْهِمَا أَوْ فِيْ رَدِّهِ عَلَيْهِمَا: أَنَّ سَمُرَةَ قَدْ حَفِظَ.
‘হযরত হাসান w হতে বর্ণিত, হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব h ও হযরত ইমরান ইবনে হুসায়ন h পরস্পর আলোচনা প্রসঙ্গে হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব h বর্ণনা করেন যে, তিনি রসুলুল্লাহ D হতে নামাজের মধ্যে যে দুই স্থানে নিশ্চুপ থাকতে হয় তা শিখেছেন। তার প্রথমটি হল তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এবং দ্বিতীয় স্থানটি হল غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّيْنَؒ۰۰۷ পাঠের পর। যসিও হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব h একথা স্মরণ রাখেন, কিন্তু ইমরান ইবনে হুসায়ন h তা অস্বীকার করায় তাঁরা উভয়ে যৌথভাবে এ সম্পর্কে হযরত উবাই ইবনে কা’ব h-এর নিকট পত্র লিখেন। তিনি তাঁদের পত্রের জবাবে জানান যে, সামুরা h এ হাদীস সঠিকভাবে স্মরণ রাখতে সক্ষম হয়েছেন।’—স. চৌ.
[28] (ক) যফর আহমদ উসমানী, ই’লাউস সুনান, খ. ২, পৃ. ৭৪০, হাদীস: ৭২৪; (খ) আবদুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ, আল-মাকতাবুল ইসলামী লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪০৩ হি. = ১৯৮২ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৮৭, হাদীস: ২৫৯৭, তিনি বর্ণনা করেন,
عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، قَالَ: خَمْسٌ يُخْفِيَنَّ: سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَالتَّعَوُّذُ، وَبِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ، وَآمِيْنَ، وَاللّٰهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْـحَمْدُ.
‘হযরত ইবরাহীম (আন-নাখয়ী w) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, পাঁচ বিষয় বলবে, সানা, তাওউয, তাসমিয়া, তামীন ও তাহমীদ।’—স. চৌ.
এসব বর্ণনা (প্রথম-চতুর্থ দলিলের বর্ণনাসমূহ) ই’লাউস সুনানের بَابُ مَا جَاءَ فِيْ سُنِّيَةِ التَّأْمِيْنِ وَالْإِخْفَاءِ بِهَا (খ. ২, পৃ. ৭৩৮-৭৪৪) থেকে গ্রহীত।
[29] (ক) ইউসুফ বানূরী, মাআরিফুস সুনান শারহু সুনানিত তিরমিযী, খ. ২, পৃ. ৪০৬; (খ) আদ-দূলাভী, আল-কুনা ওয়াল আসমা, দারু ইবনি হাযম, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০০ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৬১০, হাদীস: ১০৯০
[30] (ক) ইউসুফ বানূরী, মাআরিফুস সুনান শারহু সুনানিত তিরমিযী, খ. ২, পৃ. ৪০৮-৪০৯; (খ) আল-হায়সামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, মাকতাবাতুল কুদসী, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৪ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১১৩, হাদীস: ২৬৬৭; (গ) আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল কবীর, খ. ২২, পৃ. ২২, হাদীস: ৩৮
[31] (ক) ইউসুফ বানূরী, মাআরিফুস সুনান শারহু সুনানিত তিরমিযী, খ. ২, পৃ. ৪০৯; (খ) আয-যুরকানী, শরহুল মাওয়াহিবুল লুদুনিয়া বিল মানহিল মুহাম্মদিয়া, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৭ হি. = ১৯৯৬ খ্রি.), খ. ১০, পৃ. ৩৩০
[32] আল্লামা ইবনে কাইয়িম হাম্বলীও যাদুল মাআদে জোরে আমীন বলার এটিই কারণ বলে বর্ণনা করেছেন। দেখুন: (ক) যফর আহমদ উসমানী, ই’লাউস সুনান, খ. ২, পৃ. ৭৪৯; (খ) ইবনে কাইয়িম আল-জাওযিয়া, যাদুল মা‘আদ ফী হাদয়ি খায়রিল ইবাদ, মুআস্সাসাতুর রিসালা লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত-তাওযী’, বয়রুত, লেবনান ও মাকতাবাতুল মানার আল-ইসলামিয়া, কুয়েত (সপ্তদশ সংস্করণ: ১৪১৫ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ২৬৬
[33] (ক) ইউসুফ বানূরী, মাআরিফুস সুনান শারহু সুনানিত তিরমিযী, খ. ২, পৃ. ৪০৬; (খ) আদ-দূলাভী, আল-কুনা ওয়াল আসমা, খ. ২, পৃ. ৬১০, হাদীস: ১০৯০
[34] (ক) ইউসুফ বানূরী, মাআরিফুস সুনান শারহু সুনানিত তিরমিযী, খ. ২, পৃ. ৪০৮-৪০৯; (খ) আল-হায়সামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, খ. ২, পৃ. ১১৩, হাদীস: ২৬৬৭; (গ) আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল কবীর, খ. ২২, পৃ. ২২, হাদীস: ৩৮
[35] আন-নাসায়ী, আল-মুজতাবা মিনাস সুনান, খ. ২, পৃ. ১৪৫, হাদীস: ৯৩২, ওয়ায়িল ইবনে হুজর h থেকে বর্ণিত
[36] আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহায়ন, খ. ২, পৃ. ২৫৩, হাদীস: ২৯১৩
[37] আল্লামা ইনবুল হুমাম (w) ফাতহুল কদীরে (সুফিয়ান) সাওরী (w) ও শু’বা (w)-এর রেওয়ায়েতসমূহের এই সামঞ্জস্য বিধানই করেছেন। দেখুন: ইবনুল হুমাম, ফাতহুল কদীর শরহুল হিদায়া, খ. ১, পৃ. 295
[38] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৪, পৃ. ৫৭, হাদীস: ২৯৯২, তিনি বর্ণনা করেন,
عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ h، قَالَ: «كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَكُنَّا إِذَا أَشْرَفْنَا عَلَىٰ وَادٍ هَلَّلْنَا وَكَبَّرْنَا ارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُنَا، فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوْا عَلَىٰ أَنْفُسِكُمْ، فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا إِنَّهُ مَعَكُمْ إِنَّهُ سَمِيعٌ قَرِيبٌ تَبَارَكَ اسْمُهُ وَتَعَالَىٰ جَدُّهُ».
‘হযরত আবু মুসা আল-আশআরী h থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রসুলুল্লাহ D-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন কোনো উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতাম। আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নবী করীম D আমাদেরকে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের ওপর রহম কর। কেননা তোমরা তো বধির বা দূরবর্তী সত্তাকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।’—স. চৌ.
[39] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৪, পৃ. ৫৭, হাদীস: ২৯৯২, হযরত আবু মুসা আল-আশআরী h থেকে বর্ণিত
[40] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৪, পৃ. ৫৭, হাদীস: ২৯৯২
[41] বদরুদ্দীন আল-আইনী, উমদাতুল কারী শরহু সহীহিল বুখারী, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবি, বয়রুত, লেবনান, ক. ১৪, পৃ. ২৪৪
[42] আল-খাত্তাবী, আ’লামুল হাদীস ফী শারহি সহীহ আল-বুখারী, জামিয়া উম্মুল কুরা, মক্কা মুকাররামা, সৌদি আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪০৯ হি. = ১৯৮৮ খ্রি.), খ. 2, পৃ. 1424, হাদীস: ৬৭২/২৯৯২