কিশোর গ্যাং ও তাদের উৎপাত
মাহমুদুল হক আনসারী
কিশোর গ্যাং সমাজে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। কিশোর গ্যাং নিয়ে অনেক লেখালেখি পত্রিকায় প্রতিদিন নজরে আসে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত কিশোর গ্যাং এখন ছড়িয়ে পড়ছে। পাড়ায়-মহল্লায় অলিতে-গলিতে তাদের উৎপাত চোখে পড়ছে। সাতজন এগারোজন সংখ্যায় এমন ধরনের গ্যাং পার্টি দেখতে পাওয়া যায়। এসব গ্যাংয়ে শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত সামান্য পড়ালেখা জানা যুবকদেরকেও দেখা যায়। এসব গ্যাংয়ের মধ্যে চারিত্রিকভাবে অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির যুবকদের বেশি দেখা যায়। তারা সমাজের নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কারণে চরিত্রবান শান্ত-সুশৃঙ্খল যুবকরা সমাজে চলতে-ফিরতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এসব গ্যাং পার্টির অত্যাচারে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও মানহানির শিকার হচ্ছে সহজ সরল শিক্ষার্থীরা।
স্কুল পড়ুয়া যুবক যুবতীরা রাস্তায় চলাচলের সময় ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট অভিযোগ দেওয়ার মতো সাহস ও অনেকেই রাখে না। এসব গ্যাংয়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রকৃতির যুবকের সমাবেশ। তারা ছোট-খাটো চুরি, জমি ও বাড়ি-ভিটা দখল কাউকে অপমান অপদস্ত করাসহ নানা কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাদেরকে সমাজের একশ্রেণির মোড়ল বা রাজনৈতিক নেতারা ব্যবহার করতে দেখা যায়। বাস্তবে তাদের মধ্যে প্রকৃতভাবে রাজনৈতিক কোনো পরিচয়ে পাওয়া যায় না। তাদেরকেও কোনো দল রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে গ্রহণ করতে এগিয়ে আসে না। রাজনৈতিক মাঠে তারা শুধু অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে। নেতার পেছনে স্লোগান দেওয়া লোকজন একত্রিত করার দায়িত্বে এসব যুবকদের পাওয়া যায়।
এভাবে করে এসব গ্যাং পার্টি সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তার করছে। তাদের অপরাধের সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক লিডারদের ছত্রছায়া দেখা যায়। ফলে তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এগিয়ে আসে না। ভুক্তভোগী কোনো মানুষ আইনের আশ্রয়ের জন্য সাহায্য চাইলেও সময়মতো পাওয়া যায় না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে উচ্ছৃঙ্খল ওই গ্যাংদের সাথে একটা যোগাযোগ দেখা যায়। তারা কাউকেই পরোয়া করে না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ঘটিয়ে পরিবারের কাছে তারা উচ্ছৃঙ্খল একজন যুবক। পরিবারের সদস্য মাতা-পিতা বড়জনদের প্রতি তাদের কোনো আনুগত্য পাওয়া যায় না। সমাজ এবং পরিবারে তারা এক আতঙ্কের নাম। মাতা-পিতা বড়জনদের সাথে হরহামেশা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে দেখা যায়। কারো কোনো আদেশ নির্দেশ মানার তোয়াক্কা তাদের মধ্যে নেই।
তাদের চালচলন বেশভূষা কোনো চরিত্রের মধ্যে পড়ে না। একজন আরেকজনকে সংস্পর্শে নিয়ে ধীরে ধীরে যুবসমাজকে তারা ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে নেশার ব্যবহার, মাদক পাচার ও বেচা-বিক্রি লক্ষ্য করা যায়। এ গ্যাং পার্টি সমাজ এবং পরিবারকে উচ্ছৃঙ্খলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। সমাজের জন্য তারা ক্যান্সার। এসব গ্রুপে যারাই একবার ঢুকে পড়েছে তারা আর বের হওয়ার দরজা পাচ্ছে না। একদিনেই এসব গ্রুপের সৃষ্টি হয়নি। নানা কারণে-অকারণে সুযোগ বুঝে পরিবারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের তাদের সৃষ্টি। অতিআদর, অতিযত্ন ও ভালোবাসার ফসল এসব গ্রুপ। কিশোর গ্যাং থেকে নানা নামের গ্রুপের সৃষ্টি হচ্ছে বাংলার প্রতিটি গাঁ গ্রামে।
সমাজ বিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রের সুচিন্তিত বুদ্ধিজীবিদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যেভাবে সমাজকে ধীরে ধীরে কলুষিত করছে একদিন এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সে সময় আশার পূর্বেই দেশের সব ধরনের ক্লাব ও সমিতি নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। কোন ক্লাব, কোন সমিতি কি কি কাজ করছে? যুবসমাজকে কী ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে? তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিনিয়ত তদারকির মধ্যে রাখতে হবে।
কিশোর ছাত্র-যুবক তাদের গ্রুপিং অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পরিবার-সমাজ থেকে কিশোর গ্যাংসহ অপরাপর সব ধরনের অপরাধমূলক সংগঠনসমূহকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। রাত ১০ টার পর গ্রাম শহরের অলি-গলিতে আড্ডারত যুবকদের চিহ্নিত করতে হবে। এসব আড্ডা আইনের মাধ্যমে বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি মহল্লায় ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সর্বশ্রেণির পেশার লোকজন নিয়ে কিশোর অপরাধবিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে।
জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নচেৎ যেভাবে কিশোর গ্যাং পার্টি তাদের উৎপাত বৃদ্ধি করেছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রের জন্য কঠিন হবে। সময় থাকতে পরিবার ও সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।