জামেয়া ওয়েবসাইট

মঙ্গলবার-১০ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভয়াবহ বায়ুদূষণর নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে বিশ্বকে

ভয়াবহ বায়ুদূষণর নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে বিশ্বকে

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

বিশ্বের ১১৭টি দেশ-অঞ্চলের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। মূলত বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর পরিমাণ দেখে তালিকাটি করা হয়েছে।

২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৭৬.৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটারে যা থাকার কথা ১০-এর কম। বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পরে রয়েছে চাদ, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, ভারত, ওমান, কিরগিজস্তান, বাহরাইন, ইরাক ও নেপালের নাম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর নয়াদিল্লি (ভারত)। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। দূষিত বায়ুর শীর্ষ ১০ রাজধানী শহরের মধ্যে নয়াদিল্লি ও ঢাকার পরে রয়েছে এনজামেনা (চাদ), দুশানবে (তাজিকিস্তান), মাসকট (ওমান), কাঠমন্ডু (নেপাল), মানামা (বাহরাইন), বাগদাদ (ইরাক), বিশকেক (কিরগিজস্তান) ও তাশখন্দ (উজবেকিস্তান)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণ এখন বিশ্বের বৃহত্তম পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। হাঁপানি, ক্যানসার, হৃদরোগ, ফুসফুসের অসুখসহ অনেক রোগের কারণ বায়ুদূষণ। এ রোগ বৃদ্ধির জন্যও বায়ুদূষণ দায়ী। বায়ুদূষণের দৈনিক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা মোট বিশ্ব উৎপাদনের ৩ থেকে ৪ শতাংশ। বায়ুদূষণ তাদেরই বেশি প্রভাবিত করে, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।২০২১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যু সরাসরি পিএম ২.৫-জনিত বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুর মান সবচেয়ে খারাপ ছিল। বিশ্বের ৫০টি সবচেয়ে দূষিত শহরের মধ্যে ৪৬টিই এই অঞ্চলে অবস্থিত।

আইকিউএয়ার বায়ুর মান বৃদ্ধিতে সহায়ক প্রযুক্তিপণ্য তৈরি করে থাকে। একই সঙ্গে তারা বিশ্বব্যাপী বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে। সে অনুযায়ী প্রতিবছর বায়ুমান সূচক প্রকাশ করে।

বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা সুইজারল্যান্ডের প্রযুক্তি কোম্পানি আইকিউএয়ারের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ ছিল বাংলাদেশ। ২০২০ সালেও বাংলাদেশ এই তালিকায় শীর্ষে ছিল।

আর ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর রাজধানী শহর ছিল ভারতের নতুন দিল্লি। এর পরেই আছে ঢাকা।

‘২০২১ ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ১১৭টি দেশের ছয় হাজার ৪৭৫টি শহরের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এক ঘনমিটার বাতাসে বছরে পিএম২.৫-এর (বায়ুবাহিত ছোট ও বিপজ্জনক পার্টিকল) উপস্থিতির গড় পাঁচ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আইকিউএয়ারের রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশের বাতাসে পিএম২.৫-এর উপস্থিতির গড় ছিল ৭৬.৯। এরপরেই আছে আফ্রিকার দেশ চাদ (৭৫.৯)। পাকিস্তান (৬৬.৮) ও ভারত (৫৮.১) আছে তিন ও পাঁচ নম্বরে। এই তালিকায় জার্মানির অবস্থান ৮৯ নম্বরে (১০.৬)।

আইকিউএয়ার জানিয়েছে, ২০২১ সালে কোনো দেশেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারণ করে দেওয়া মানের (পাঁচ মাইক্রোগ্রামের কম পিএম২.৫) বাতাস ছিল না। তবে তিনটি শহর বা অঞ্চলে সেই মানের বাতাস পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো ফ্রান্সের অধীনে থাকা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিউ ক্যালেডোনিয়া (৩.৮), ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডস (৪.৫) এবং পুয়ের্টো রিকো (৪.৮)।

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর রাজধানী শহর হয়েছে ভারতের নতুন দিল্লি (৮৫)। আগের বছরের তালিকাতেও দিল্লি শীর্ষে ছিল। সর্বশেষ তালিকার দুই নম্বরে আছে ঢাকা (৭৮.১)। ছয় নম্বরে আছে নেপালের কাঠমান্ডু (৫০.৯), ১১ নম্বরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ (৪১.১) এবং ১৬ নম্বরে আছে চীনের বেইজিং (৩৪.৪)।

আইকিউএয়ারের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হয়েছে ভারতের রাজস্থানের ভিওয়াড়ি (১০৬.২) ও উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ (১০২)।

সারা পৃথিবী ভয়াবহ বায়ু দূষণের শিকার। পৃথিবীর কোনো দেশই বায়ু দূষণ মুক্ত নয়। কম বেশি সব দেশেই বায়ু দূষণ হচ্ছে। বায়ু দূষণের হার কমাবার উদ্যোগ গ্রহণ করছেনা কোনো দেশেই। বাংলাদেশ বায়ু দূষণের মধ্যে পৃথিবীর অপরাপর দেশের তুলনায় বহুগুণ এগিয়ে। নানাভাবে বায়ু দূষণ বাংলাদেশে বেড়েই চলছে। শহর, নগর, গ্রাম সবখানেই বায়ু দূষণের শিকার সব বয়সের মানুষ। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বায়ু দূষণ বেশি হচ্ছে। বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানবজাতির নানাবিধ রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং শিশুদের আক্রান্তের হার বেশি।

বায়ু দূষণের হার থেকে দেশবাসীকে রক্ষার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনি বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণকে সচেতন করে বায়ু দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বায়ু দূষণ যেনো বৃদ্ধি না পায় সে ব্যবস্থা পরিকল্পনায় রাখতে হবে। বায়ু দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে আরো গতিশীল করতে হবে। সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ চাই।

মাহমুদুল হক আনসারী

লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ