বুধবার-২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলামই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম

আল্লামা কারী নুরুল্লাহ

نحمده ونصلي على رسوله الكريم، أمابعد! فأعوذ بالله من الشيطانا لرجيم، بسم الله الرحمن الرحيم: [يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَآفَّةً۪ ۰۰۲۰۸] {البقرة: 2}، قال رسول الله ﷺ: «الْـمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْـمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ» {رواه البخاري: 10}، «‌الدِّيْنُ ‌النَّصِيْحَةُ، قُلْنَا: لِـمَنْ؟ قَالَ: لِلهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْـمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ».

আজ জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সালানা জলসা এটি একটি মকবুল দীনী শিক্ষাকেন্দ্র। এটি প্রতিষ্ঠার পর হযরত মুফতি আজিজুল হক (রহ.) মুনাজাতের দোয়া করেছেন সবগুলো আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণভাবে কবুল করেছেন, সেই দোয়া যে কবুল হয়েছে এর নিদর্শন দেখা যাচ্ছে, এই যে আমি আর সকলেই আল্লাহ পাকের নির্বাচিত, এ জামিয়ার মুহতামিম থেকে নিয়ে সকল শিক্ষক এবং কর্মচারী আসহাবে ইলম, সকলেই আল্লাহ পাকের নির্বাচিত বান্দা। আমি খুতবা এবং দরুদ, এরপর আল্লাহ পাকের দয়া ও অনুগ্রহে কুরআনের একটি আয়াত ও একটি হাদীস শরীফ পাঠ করেছি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে আমি কিছু আলোচনা করার প্রয়াস চালাবো ইনশাআল্লাহ।

একমাত্র ধর্ম

দুনিয়ার মধ্যে যত রকমের ধর্ম রয়েছে সব ধর্ম যে আল্লাহ তাআলা আসমান থেকে নাযিল করেছেন এমনটা না, বহু ধর্ম দুনিয়াতে প্রচলিত আছে যার অধিকাংশ ধর্মই মানুষের বানানো। ধর্ম মানুষের জীবনের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস। ধর্মহীন মানুষ বিশৃঙ্খল, যার মধ্যে ধর্ম থাকে তার জীবন সুশৃঙ্খল হয়, বিশেষ করে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত ধর্ম যার ভেতর থাকবে তার জীবন সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল হবে।

বর্তমান দুনিয়ার বুকে যত ধর্ম আছে সব ধর্মের মধ্যে একমাত্র আল্লাহ তাআলার মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম এবং কিয়ামত দিবসে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি দিতে পারবে এ ধর্ম। দুনিয়ার মধ্যে যত ধর্মালম্বী মানুষ আছে সবমানুষেই কিন্তু নিজ নিজ ধর্ম নিয়ে গর্ববোধ করে অথচ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের মানুষ আছে ইহকালীন জগতে যদিও আপন ধর্ম নিয়ে খুশি হয়ে থাকে, কিন্তু ইন্তেকালের সময় বুঝতে পারবে যে সে নিজে যে ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তা বাস্তবে সঠিক ছিল নাকি বেঠিক ছিল।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللّٰهِ الْاِسْلَامُ۫ ۰۰۱۹[1]

وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ ۰۰۸۵[2]

অর্থাৎ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মকে যে অন্বেষণ করবে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না, আখেরাতের মধ্যে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নবী করীম (সা.) শপথ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমি নবীর আগমনের সংবাদ পেয়েছে তার জন্য অতি প্রয়োজন হল আমার আনীত ধর্মের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে ইসলাম গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে তার জীবন-মৃত্যু, কবর-হাশর সবই ভালো হবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের অধিবাসী হবে। অপরদিকে যে ব্যক্তি এর ব্যতিক্রম করবে তার মৃত্যু পরকাল হাশর কেয়ামত সব জায়গায় সে ব্যর্থ হবে এবং সে যে ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকুক না কেন পরকালে নাজাতপ্রাপ্ত হবে না, বরং চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকতে হবে।’

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

«وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِيْ أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ، ثُمَّ يَمُوتُ وَلَـمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِيْ أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ».[3]

সুতরাং ইসলামই একমাত্র পরকালের মুক্তির গ্যারান্টি দিতে পারে, এ হাদীস শরীফে শুধুমাত্র ইহুদি ও নাসারা ধর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে কেন? কারণ ইসলামের পূর্বে সারা পৃথিবীতে এ দুই ধর্মের সত্য ধর্ম হিসেবে ছিল, ইহুদি হরত মুসা (আ.)-এর ধর্ম এবং ঈসায়ী ধর্ম হযরত ঈসা (আ.)-এর ধর্ম, এসব ধর্ম হক এবং সত্য ছিল। সে সময়ে যারা এ দুই ধর্মকে অনুসরণ করে চলেছেন তারা নাজাতপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছেন, কিন্তু শেষনবীর আগমনের সাথে সাথে আগের কার সকল ধর্ম সকল কিতাব আল্লাহ তাআলা রহিত করে দিয়েছেন। যেহেতু আমাদের নবীকে সকল যুগের সমস্ত মানুষের এবং গোটা বিশ্বের জন্যহেদায়েতস্বরূপ আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছেন তাই পূর্ববর্তী সকল ধর্ম এবং কিতাব রহিত হয়ে গেছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا ۰۰۲۸

অর্থাৎ মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াত কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে এবং তাঁকে যে কিতাব দ্বারা প্রেরণ করা হয়েছে সেই কিতাবও কেয়ামত পর্যন্ত দুনিয়াবি এবং রবি সকল সমস্যার সমাধান দিতে থাকবে।[4] আর এ কিতাবকে হেফাজত করার দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই নিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন,

اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ۰۰۹

অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী আসবে না এবং নতুন কোনো শরীয়তও আসবে না।[5] যেমন নবীকরীম (সা.) বলেছেন,

«أَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ»[6]

যেহেতু ইসলামের আগমনের আগে ইহুদি ধর্ম খ্রিস্টান ধর্মের মত আগেকার সত্য ধর্মগুলো রহিত হয়ে গেছে তাহলে ইসলামের মাধ্যমে মানুষের বানানো সকল ধর্ম অবশ্যই রহিত হয়ে যাবে। যেমন হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মই ত্যাদি। সুতরাং ইসলাম আগমনের পরও যারা বিরোধী এবং খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বন করবে তারা পরকালে নাজাত পাবে না এটা হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেল তাহলে যারা বান্দার বানানো ধর্মের ওপর থাকবে তাদের সম্পর্কে নাজাতের কিভাবে আশা করা যায়?

তাহলে ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ও চূড়ান্ত ধর্ম হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে এবং কেয়ামত দিবসে নাজাতের পথ সুগম করতে পারবে। কিন্তু একথা সুনিশ্চিতভাবে জেনে রাখা দরকার শুধু ইসলাম মানলে হবে না এবং নাজাতের আশা করা যাবে না যতক্ষণ না আমরা ইসলামের সকল বিধি-বিধান দ্রুততার সাথে আঁকড়ে ধরি। আমরা যদি ইসলামের সকল বিধি-বিধান মানতে পারি তখনই আমরা পরিপূর্ণ মুসলমান বলে দাবি করতে পারব, ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম কিন্তু সেটা তখনই হবে যখন আমরা আল্লাহর দেয়া সকল আদেশ-নিষেধ মানবো।

এখন মুসলমানদের মধ্যে পরস্পর অশান্তি, ঝগড়া-বিবাদ দেখা যাচ্ছে এর দ্বারা বুঝা যায় যে আমরা মুসলমানরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের বিধি-বিধানগুলো আঁকড়ে ধরতে পারিনি অর্থাৎ আমরা কেবলমাত্র নামের মুসলমান, প্রকৃত মুসলমান হতে পারিনি। কারণ একজন ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান হলে সে কোনো দিন অপর মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। আগের যুগের মুসলমানদের চলাফেরা ও চরিত্র দেখে তাদের নম্রতা, শালীনতা, কোমলতা ও মানবতা দেখে অন্যান্য বিধর্মীরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। পক্ষান্তরে বর্তমানে মুসলমানদের মাঝে হানাহানি ও ঝগড়া-বিবাদ দেখে তাদের অমানবিক আচরণ ও অশালীনতা দেখে অনেক মুসলমান পর্যন্ত ইসলাম ত্যাগ করছে নাউযু বিল্লাহ, অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণ করা তো দূরের কথা।

এক সাহাবীর ঘটনা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক অনেক বড় আলেম এবং যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন। তার বাড়ির পাশে একজন ইহুদি প্রতিবেশী ছিলেন, সেই ইহুদি তাঁর চরিত্র সম্পর্কে অবগত ছিল। একবার সে তার বাড়িঘর বিক্রি করছিল মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল 10 হাজার দিনার, তখন ক্রেতা বিক্রেতাকে বলল, বর্তমান মৌজা রেট হিসেবে আপনার বাড়ির মূল্য তো 5000 দিনার‌ও হবে না আর আপনি 10 হাজার দিনার মূল্য চেয়ে বসলেন। তখন সেই ইহুদি বলল, ভাই তোমার কথা ঠিক, অবশ্যই আমার বাড়ি-ঘরের মূল্য বর্তমান রেট হিসেবে ৫ হাজার দিনারের থেকেও কম। কিন্তু আমি 10000 দিনার মূল্য নির্ধারণ করেছি। কারণ আমার বাড়ির পাশে যে প্রতিবেশী রয়েছেন তার কারণে, কেননা তাঁর চরিত্র আর চলাফেরা অনন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ۰۰۱۰۲

‘তোমরা মৃত্যু বরণ করো না যতক্ষণ না পরিপূর্ণ মুসলমান হও।’[7]

সুতরাং আমাদের সবসময় মৃত্যুর কথা স্মরণ রাখা উচিত। কারণ মৃত্যুর সময় নির্ধারিত নেই। কবি বলেন,

موت کو مت دورسمجھو موت ہےہر دم۔

আল্লাহ তাআলা বলেন,

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَآفَّةً١۪ وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّيْطٰنِ١ؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ۰۰۲۰۸

‘তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো হে ঈমানদারগণ! এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তো তোমাদের স্পষ্ট শত্রু।’[8]

একজন ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈমানদার হলে একে অপরকে কোনো কষ্ট দিতে পারে না। অপরকে কষ্ট ও মুসলিমদের প্রতি ঠেলে দিতে পারে না। মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ ইসলাম না থাকলে কোনো শান্তির আশা করা যায় না, আজকে যে সকলের মুখে অশান্তির ধ্বনি মুখরিত হচ্ছে তার একমাত্র কারণ হল ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে আঁকড়ে না ধরা।

একই পরিবারের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মেজাজের মানুষ বসবাস করে। অথচ স্বামীর মেজাজ স্ত্রীর মেজাজের সাথে মিল নেই, ভাইয়ের মেজাজ আরেক ভাইয়ের মেজাজের সাথে মিল নেই, ছেলের মেজাজ বাবার মেজাজের সাথে মিল নেই। এটা ইসলাম ছাড়া কোনো দিন সম্ভব হতে পারে না, ইসলাম মানুষের শরীরের রুহের মতো, রুহ থাকলে যেমন অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুগত থাকে এক অংশ ব্যতীত হলে অন্যান্য অঙ্গ ব্যথিত হয় তেমনিভাবে ইসলাম থাকলে ভিন্ন ভিন্ন মেজাজের সকল মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হবে।

হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘যে মুমিনরা এক ব্যক্তির মতো, যদি কোনো ব্যক্তির চোখ ব্যথিত হয় তাহলে তার অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যথিত হয় যদি তার মাথা ব্যথিত হয় তাহলে তার অন্যান্য অঙ্গ ব্যথিত হয়।’

যে ব্যক্তি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসবে সে কোনো অমানবিক হতে পারে না, সে কোনোদিন অশ্লীল কাজে পতিত হতে পারে না, সে কোনোদিন অপর মুসলমান ভাইকে কষ্ট দিতে পারে না। মানুষের মধ্যে ইসলাম থাকলে সে পিতা-মাতার অনুগত হয় ইসলাম থাকলে সে তার মাকে চুম্বন করবে পিতা-মাতার হক অনুভব করবে পিতা-মাতাকে কোনোদিন কষ্ট দেবে না। অপর দিকে ইসলাম না থাকলে সন্তান পিতা-মাতার অবাধ্য হয় পিতা-মাতার চেয়ে বন্ধু-বান্ধব প্রাধান্য পায়।

একটি ঘটনা

একবার আমেরিকার মধ্যে মা আপন সন্তানের বিরুদ্ধে নালিশ দিল যে, আমারই সন্তান আমার কথা মতো চলে না, সে আমার কোনো সেবা-যত্ন করে না। অথচ আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি, তাকে আমি আমার বুকের দুধ পান করে বড় করেছি। এখন সে আমার কাছেও আসে না, সর্বদা কুকুরের পাশে থাকে এবং কুকুরের সেবায় নিয়োজিত। তখন বিচারক এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, সেই কুকুরকে যেহেতু সে অর্থ দিয়ে ক্রয় করেছে, তাই তাকে লালন-পালন করা তার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সন্তানের ওপর মা-বাবার কোনো অধিকার নেই। কারণ সে তার মা-বাবাকে টাকা দিয়ে ক্রয় করেনি। অথচ ইসলাম মা-বাবাকে কতই না সম্মান দিয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের পিতা-মাতার সাথে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করো।’ ইসলাম সন্তানের ওপর মা-বাবার অনেক হক নির্ধারণ করেছেন। এমনকি মৃত্যুর পরও সন্তানের ওপর মা-বাবার হক রয়েছে। যেমন- পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা, তাদের কবর জিয়ারত করা, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করা, তাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলা ইত্যাদি।

হাদীস শরীফে আছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘সেই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, সেই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, সেই ব্যক্তি ধ্বংস হোক।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! কোন ব্যক্তি ধ্বংস হবে? রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা কোনো একজনকে বার্ধক্যের অবস্থায় পেল, কিন্তু তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না এবং মসজিদে গিয়ে বাবা-মার মৃত্যুর পর বসে বসে দোয়া করে না, হে আল্লাহ আমার পিতা-মাতাকে রহম করুন যেভাবে তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন-পালন করেছেন।’ রসুল বলেন, ‘যে সন্তান শুক্রবার কবরস্থানে গিয়ে পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করবে তাদেরকে নেককারদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

ইসলামকে মনমানবতার ধর্ম। ইসলাম মানুষের অধিকার আদায় করতে শেখায়। শুধু তাই নয়, এমনকি পশুপাখি, গরু-ছাগল, কুকুর ও বিড়ালের অধিকারের কথাও ইসলাম বলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হল, তারা নিজের ওপর অপরকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যদিও তাদের মধ্যে প্রয়োজন থাকে।’ সুতরাং পরিপূর্ণ ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে পারিবারিক জীবনে সামাজিক জীবনে রাষ্ট্রীয় জীবনে এমনকি আন্তর্জাতিক জীবনেও ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো ‘ পরিপূর্ণভাবে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করার জন্য পাঁচটি মৌলিক বিষয় প্রয়োজন। এক. বিশুদ্ধ আকিদা, শিরক ও বিদআতমুক্ত আকীদা পোষণ করতে হবে।

দুই. ইবাদত, আল্লাহ তাআলার ইবাদত ইখলাসের সাথে করতে হবে যা রসুলের বানানো পদ্ধতি অনুযায়ী হবে।

তিন. মুয়ামালাত পারস্পারিক লেনদেন ঠিক রাখতে হবে। চার. মোয়াশারাত অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে উঠাবসা, আচার-আচরণ সুন্দর হতে হবে।

পাঁচ. আখলাক সুন্দর হতে হবে।

সুতরাং ইসলাম ঈমানের ও ইবাদতের পাশাপাশি সুন্দর চরিত্র গঠন ও সুন্দর মুয়ামালাত এবং সুন্দর মোয়াশারাতের হুকুম দিয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ইসলাম বিধর্মীদের সাথেও সুন্দর আচরণ ও সুন্দর ব্যবহার করার কথা বলেছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি যার ভাষা ও হাত থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকে, অর্থাৎ যার দ্বারা অন্য কোনো মুসলমান কষ্ট পায় না। আর এ

(এরপর পৃ. ৩৮-এর ২য় কলামে দেখুন)

[1] আল-কুরআন, সুরা আলে ইমরান, ৩:১৯

[2] আল-কুরআন, সুরা আলে ইমরান, ৩:85

[3] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৩৭৪ হি. = ১৯৫৫ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ১34, হাদীস: 153

[4] আল-কুরআন, সুরা সাবা, ৩৪:২৮

[5] আল-কুরআন, সুরা আল-হিজর, ১৫:৯

[6] আত-তিরমিযী, আল-জামিউস সহীহ = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৩৯৫ হি. = ১৯৭৫ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ৪৯৯, হাদীস: ২২১৯

[7] আল-কুরআন, সুরা আলে ইমরান, ৩:১০২

[8] আল-কুরআন, সুরা আল-বাকারা, ২:২০৮

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ