জামিয়া পটিয়ায় কিতাব মেলা
আমাদের প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশা
জীবন! সে তো পদ্ম পাতার শিশির বিন্দু। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে একটু একটু করে প্রখর হওয়া ভোরের প্রথম আলোকরশ্মি কিংবা শীতের রাতে টিনের চালের টুপ-টাপ শব্দ—এই তো জীবন। স্বল্পায়ত, কিন্তু বড্ড বেশিই বৈচিত্র্যময়। বিয়ের আসরে সদ্য পা রাখা নববধূটির মত ‘জীবন’টাকেও সাজানোর জন্য কত প্রয়াস, কত ব্যস্ততা। এর মাঝেও ফেলে আসা মুহূর্তগুলোর জন্য একবার হলেও সবাই পিছনে তাকায় আর অবাক হয়ে আবিষ্কার করে স্মৃতির অ্যালবাম সাজিয়ে বসে থাকা সুবিন্যস্ত অপেক্ষমান স্মৃতিগুলোকে। সেই স্মৃতির দিকে তাকিয়ে আমরা অনুধাবন করি, মেঠো পথের ধুলো মাখা গায়ে গাঁয়ের দক্ষিণ পাশে ছোট ছোট পুকুর গুলোতে লাফ দিয়ে সাঁতার কাটা আঁকা বাঁকা খাল গুলিতে বাঁধ দিয়ে সেচ করে মাছ ধরার সেই দিনগুলো শেষ করে আমাদের জীবন বেঁধে ছিলো মক্তব থেকে নুরানি, হিফজখানা শেষ করে মাদরাসায়। মাদরাসায় এসে রীতি অনুযায়ী কিতাবের সাথে পরিচয়পর্ব সারতো ঠিকই। কিন্তু কিতাবের সাথে আমাদের সামঞ্জস্যতার দিকে তাকালে আটলান্টিকের নীল আর বুড়িগঙ্গার কালো পানির পার্থক্য ছিল। পদ্মার ঢেউয়ের মতো ঢেউ বয়ে যায় মেঘনায় যমুনায়। উজান-ভাটির কোনো সংগ্রামী যা চকচকে আভিজাত্যে লোকিং গ্লাসের পেছনের মানুষটা কিংবা মাসের শেষে হিশেব মিলাতে না পারা মধ্যবিত্ত বাবার ছেলে উজানের মধুর মিলন কিংবা ভাটির ঠংকে আবহমানকাল থেকে জেলের জালের মতো জড়িয়ে রাখে একটা উন্মাদনা। সেই উন্মাদনা বইপড়ার উন্মাদনা। যা ছিলো একেবারেই বিরল। কিন্তু এখন আল-হামদু লিল্লাহ, এসব কেটে ওঠা শুরু করেছে। ছাত্ররা বই পড়তে মনোনিবেশকারীর কাতারে।
মেধার বিস্তার ঘটাতে প্রচুর বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে সারাবছর পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই বুঁদ হয়ে থাকতে হয়। ভালো রেজাল্ট করার বেপরোয়া গতিতে তারা পাঠ্যপুস্তকের গন্ডির বাইরে বিচরণ করার ফুসরত পায় না। ক্লাসের বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা আয়ত্ব করে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানের জন্য বাইরের কোনো কিতাবে অনেকেই হাত দেয় না। নিছক হাত দেয়না বললে ভুল হবে। হাত দেওয়ার সুযোগ পায় না। অথচ একজন প্রকৃত শিক্ষিত ও জ্ঞানী মানুষ হওয়ার জন্য অনেক অনেক বেশি কিতাবাদি ও বই পড়া আবশ্যক। সাহিত্য বোঝার সক্ষমতা না থাকলে মানুষের জীবনে রসবোধ থাকে না। জীবন হয়ে ওঠে যান্ত্রিক। একজন শিক্ষার্থী সারা শিক্ষাজীবন অনেক পরিশ্রম করে ক্যারিয়ারের জন্য পড়াশোনা করে যদি সাহিত্য না বোঝে তাহলে তার বাস্তব জীবন আনন্দময় হয় না। সুখের সন্ধানে ছুটলেও সে খুঁজে পায় না সেই আত্মার সুখের অচিন পাখিকে। এ সমস্যা নিরসনের পথে রোশনি ছড়ায় বইমেলা নামক মস্তবড় জ্ঞানাঙ্কুরের বাগিচা। বইমেলায় সাহিত্যের সকল ভান্ডার একেবারে হাতের নাগালে পাওয়া যায়। এতে করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের পড়ার বাইরে অন্য বই সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ পায়। তাদের চিন্তায় জ্ঞানের নতুন তৃষ্ণার জন্ম হয়। ক্রমে তারা মেতে উঠতে পারে জ্ঞান-সমুদ্রের সীমাহীন জ্ঞানাহরণে। ফলে একটি জ্ঞানী, সুশিক্ষিত ও মেধাসম্পন্ন জাতি তৈরি হওয়ার পথ সুগম হয়। বইমেলার প্রভাবে মেধার বিস্তার ঘটে।
একটি জাতির মেধা ও মননের আঁতুড়ঘর হলো তার কিতাবের জগৎ বা লাইব্রেরি। একই সাথে দেশের সকল মেধার সংগ্রহশালাও হলো এই লাইব্রেরি। সময়ের প্রয়োজনে যদি এই সংগ্রহশালাকে মেলার মধ্য দিয়ে প্রদর্শন ও প্রচার করা হয়। এতে এই বিশাল জ্ঞানের ভান্ডার চলে আসে সকলের হাতের নাগালে। এর মাধ্যমে আবালবৃদ্ধবনিতা এই বিশাল জ্ঞান-সমুদের সাথে পরিচিত হওয়ার একটি বড় সুযোগ পায়। যে জাতির বই-পুস্তক সংখ্যা যত বেশি তার মেধাগত সমৃদ্ধিও তত বেশি। তাই জাতীয় মেধা ও মনন গঠনের মাইলফলক এই বইমেলার সমৃদ্ধি ও অংশগ্রহণের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি কাম্য।
এধরণের বইমেলার অভিজ্ঞতায় লেখক তৈরি ও লেখার মনোভাব জাগে। একজন লেখক হলেন মেধার পরিবেশক। পাঠকই ক্রমান্বয়ে লেখক হয়ে ওঠেন। পাঠের মাধ্যমে লেখার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয় বিষয়ের অভাবকে তিনি আবিষ্কার করেন। ফলে তিনিও তার নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা শুরু করেন। আর এভাবেই জন্ম নেয় নতুন লেখক।
আমাদের জামিয়া পটিয়ায়ও এ বছর মাহফিল উপলক্ষ্যে কিতাব মেলা হয়েছে আল-হামদু লিল্লাহ। এ কিতাব মেলা যে আমাদের জন্য কতটা ফলপ্রসূ, তা প্রিয় তালিবুল ইলমদের ভরপুরতা, উপচে পড়া ভিড় আর কিতাব বিক্রির দিকে দৃষ্টিগোচর করলেই বুঝা যায়। অপরের দেখায় কিতাবে অনিষ্ট ছেলেটিও কিনতে আগ্রহী হচ্ছে। কিতাব অধ্যয়নে অভ্যস্ত হচ্ছে। সমস্ত ছাত্র ভাইয়েরা এর দ্বারা প্রভাবিত, আলোকিত হচ্ছে।
তবে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে তাকালে তথ্যপ্রযুক্তি ও ভার্চুয়াল সময়ে এসেও আমাদের বই কেনা-বেচা কমেনি ঠিকই। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, যে পরিমাণ বইপিপাসু লোক বই পড়ছেন, তাতে কি আমাদের মনন বা বোধের জায়গাটা অনেক সুদৃঢ় হয়েছে? যদি তাই হতো তবে ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে নিছক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্ট্যাটাস দেখে কেন আমাদের ক্রোধ এতো বাড়ছে? কেন তরুণরা ছোট বিষয় নিয়ে নিজেদের কলহে লিপ্ত করে খুনে মেতে ওঠছে? কেন সহনশীলতার মাত্রা আমাদের মধ্যে কমে যাচ্ছে? এ প্রশ্নগুলো আমাদের প্রতিনিয়ত ভাবায়। এর অর্থ দাঁড়ায়, আমাদের শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত সবার মননের জায়গাটা এখনও উন্নত হয়নি, আরও উন্নত করতে হবে। তা হবে কিভাবে! উপায় কি?
যদি আমরা গোটা বছরকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দিয়ে ভাগ করে তা প্রতিটি জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে দিতে পারি, তবেই এ থেকে উত্তরণ পাওয়া যাবে।
যদি প্রতিটি জেলা শহরে এ ধরনের কিতাব মেলার মতো বড় আয়োজন হয় এবং এ মেলার পাশাপাশি দীনী তালিম, আরবি-বাংলা সাহিত্যচর্চার মুহলত হয়। তাতে করে সবার মধ্যে নতুন বোধ জাগ্রত হবে।
এর থেকে এও আঁচ করা যায় যে, বইমেলার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম এবং জাগতিক মানসিক উভয় দিকেই ফলপ্রসূ। জাতিগতভাবে আমরা আরাম ও প্রমোদপ্রিয়। জ্ঞানান্বেষনের উদ্দেশ্যে লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়া ও বই সংগ্রহ করার ইচ্ছা ও সুযোগ অনেকেরই হয় না। মেলা উপলক্ষ্যে প্রমোদ ও বই কেনা দুটোই একসাথে হয়ে যায়। মেলায় যেসব দুর্লভ বই হাতের নাগালে পাওয়া যায় অন্য অনেক সময়েই তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। মানুষকে বইমুখী করে তোলার জন্য বইমেলার রয়েছে এক অনবদ্য অবদান। সকল বয়সের মানুষের জন্য এখানে থাকে উপযুক্ত বইয়ের পর্যাপ্ত কালেকশন। শিশুরা পরিচিত হতে পারে নতুন নতুন বইয়ের সাথে। বয়সীরাও খুঁজে পান তাদের মনের খোরাকসমৃদ্ধ বইটি। প্রিয় তালিবুল ইলম ভাইয়েরাও ব্যাক্তিগত লাইব্রেরিকে পরিপূর্ণতার আলো দিতে সামনে অগ্রসর হয়।
এমন ফলপ্রসূ বীজ নিজেদের বাগানে বপন হোক কে না চাইবে! অতএব প্রিয় জামিয়ার পিতৃতুল্য আসাতাযায়ে কেরামের নিকট বিনিত নিবেদন এই যে, সামনে থেকে কিতাব মেলার মতো মানসিক, জাগতিক ফলপ্রসূ বীজ বপন করে আপনাদের স্নেহময় তালিবুল ইলমদেরকে জ্ঞানের সাগরে নিমজ্জন করে ভবিষ্যতের একেকজন থানবী, কাশ্মীরী, মাদানী (রহ.) বের করে আনবেন, ইনশাআল্লাহ।
মুহাম্মদ নাহিন
জামায়াতে পঞ্জুম, জামিয়া পটিয়া চট্টগ্রাম
উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস
প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশেও এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ এই দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ৫ বছর পর পর মানবাধিকার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক পুরস্কার ও নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। বর্তমান বিশ্বে নিপীড়ন নির্যাতন একটি মানবিক সমস্যা। মানুষকে শাসক কর্তৃক নিঃস্ব করে দেওয়া বড় সমস্যা। মানবিক সমস্যার মধ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া একটি অন্যতম সমস্যা। ক্ষমতার মোহে প্রতিবেশী এবং সহকর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন নিপীড়ন বস্তচ্যুত করা বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক সমস্যা।
দুনিয়াব্যাপী বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন সরকার নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন ব্যাভিচার করে লাখ লাখ মানুষকে বাড়ি-ভিটাহারা করছে। বাংলাদেশের জন্য জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গারা বার্মার জন্মগতভাবে স্বাধীন নাগরিক ছিল। তারা সেখানে ভোট দিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাদের প্রতিনিধি সে এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধিও ছিল। শত বছর যাবত তারা রোহিঙ্গায় বার্মা সরকারের অধীনে থাকলেও সে দেশের সেনাশাসিত সরকার তাদেরকে বলপূর্বক বস্তচ্যুত করে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে পুশব্যাক করে। তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার চালানো হয়। যা পৃথিবীর সব সচেতন সংস্থা সংগঠন অবগত আছে।
২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগণ বাংলাদেশের বোঝা হয়ে আছে। এ লেখায় রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে বলার বিষয় না। মানবাধিকার দিবসে মানবাধিকারের ওপর আলোচনায় মুখ্য উদ্দেশ্য। রোহিঙ্গাদের ন্যায় পৃথিবীর আরও বহুদেশ নানাভাবে তাদের জনগণের ওপর চরমভাবে নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে। একজন মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি।
মানুষ তার অধিকার পাওয়ার জন্য আন্দোলন করবে। সংগঠন করবে, ঐক্যবদ্ধ হবে। মিছিল-মিটিং, র্যালি করবে। সে লিখবে প্রকাশ করবে তার মনের দুঃখ, ব্যাথা, বেদনা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তার থাকতে হবে। একজন নাগরিক সে তার প্রাপ্য নাগরিক অধিকার পাওয়ার জন্য সে গণতান্ত্রিকভাবে কথা বলতেই পারে। কিন্তু যদি সেখানে সে প্রতিবাদ করতে না পারে তার প্রাপ্য নাগরিক অধিকারের দাবির পক্ষে মিটিং-মিছিল আবেদন নিবেদন অনুরোধ করতে না পারে, তাহলে সেটাও মানবাধিকারের বড় ধরনের লঙ্ঘন।
আজকের পৃথিবী ব্যাপী ক্ষমতার পর্যালোচনা করলে দেখতে পাওয়া যায়, অনেক দেশে দেশে জনগণের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। জনগণকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো জরুরি মানবিক সেবাও নাগরিকরা সঠিকভাবে পাচ্ছে না। অহরহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও সারা পৃথিবী ১০ ডিসেম্বর আসলে মানবাধিকার দিবস পালন করে। সে দিবসে অনেক আলোচনা সমালোচনা মিছিল-মিটিং-র্যালি সরকারি এবং বেসরকারিভাবে পালিত হয়। পত্রিকা মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে মানবাধিকারের ওপর লেখালেখি আর্টিকেল আলোচনা প্রবন্ধ নিবন্ধ ছাপা হয়। কিন্তু কই? মানবাধিকার রক্ষার কোনো পরিবর্তন পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষ পাচ্ছে না। প্রতিদিন পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত মানবতার আর্তচিৎকার শুনতে পাওয়া যায়। কত দায়িত্বশীল সংগঠন, বিশ্ব শান্তি সংস্থা, জাতিসংঘসহ যারাই মানবতার শান্তির জন্য সংগঠিত হয়েছে তাদের কোনো আওয়াজ নেই।
মানবতাবাদী নিরীহ মানুষ শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার আর নির্যাতনে পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। কই কেউতো এসে তাদের পাশে দাঁড়াতে দেখছি না। জুলুম, নির্যাতন আর নিস্পেষণ অত্যাচারে মানবতাবাদি জনগণ জালিমের জুলুমের শিকার। তাহলে প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস এতো ঝাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করার কি যুক্তি থাকে। দারিদ্রতা ও বঞ্চনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সমস্যা। আটকাদেশ রাজনৈতিক মক ট্রায়াল এবং পরবর্তীতে জেল প্রদান সব মানবাধিকার লঙ্ঘন।
যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়—সামরিক শাসন এবং একনায়কতন্ত্র, বন্দীমুক্তি না দেওয়া, মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করা, মিছিল ভঙ্গ করে দেওয়া, মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়া, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হলে, সকলে সর্বত্র ও সমানভাবে মানবাধিকার ভোগ করার সুযোগ না পেলে, আমাদের স্বাধীনতা আমাদের মুক্তি আমাদের অধিকারের সঙ্গে আশা-ভরসা ও মানবতা সমানভাবে গৃহীত না হলে।
অন্যান্য মানবাধিকারসমূহ বিয়ে, সন্তানলাভ ও পরিবার গঠন, নিজের মত চাওয়া পূরণ, মুক্ত চিন্তাভাবনা করা, সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, জনসমাবেশ করা ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করা, গণতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত হওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান শ্রমিকের কাজের অধিকার প্রদান, খাদ্য ও বাসস্থান প্রাপ্তি, সবার খেলাধুলার অধিকার, শিক্ষার অধিকার সবার, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, মানবাধিকার মৌলিক অধিকার, সমাজে সমতা ও মানবিকতার আরেক নাম রক্ষা করাই মানবাধিকার, ভোটাধিকার, কথা বলার অধিকার, ফেয়ার ট্রায়াল, বিনামূল্যে শিক্ষা, গোত্রের সমতা, যার যার ধর্ম তার তার, ছুটি কাটানোর অধিকার, শিশুশ্রম বন্ধ করা, শিক্ষা সমতা, মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া, মানবপাচার, জোর করে শ্রমিক বানানো, যৌন হয়রানি, জোর করে বিয়ে দেওয়া, মানব অঙ্গ বিক্রয়।
আজকের মানবাধিকার দিবসে আসুন আমরা সবার জন্য সর্বত্র মানবাধিকার রক্ষায় সহায়তা করি। সাথে সাথে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলি। এই হোক দিবসের প্রত্যাশা। হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করি।
মাহমুদুল হক আনসারী
লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট