বাংলা ভাষায় সীরাতচর্চা
নাসির হেলাল
‘সীরাত’ একটি আরবি শব্দ। এ শব্দের বহুবচন হচ্ছে ‘সিয়ার’। এটির মূল শব্দ হচ্ছে ‘সাইরুন’। এর অর্থ চাল-চলন, গতি ইত্যাদি। ‘আল-মুজামুল আযম’ ও ‘মিসবাহুল লুগাত’ নামক বিখ্যাত দুটি আরবি অভিধানে ‘সীরাত’ শব্দের অর্থ করা হয়েছে, ১. যাওয়া, প্রস্থান করা, চলা; ২. গতি, পথ, পদ্ধতি, ধারা; ৩. আকার, আকৃতি, মুখাবয়ব; ৪. চেহারা, আকৃতি; ৫. অবস্থা; ৬. কর্ম-নৈপুণ্য, ঢঙ, চাল; ৭. সুন্নাত; ৮. জীবন চলার ধরণ, প্রকৃতি, কাজকর্ম করার ধরণ, জীবন পরিচালনার ঢঙ, ৯. অভ্যাস; ১০. কাহিনী, পূর্ববর্তীদের গল্প বা কাহিনী এবং ঘটনাবলির বর্ণনা ইত্যাদি।
অপরদিকে ইসলামী বিশ্বকোষ ‘সীরাত’-এর অর্থ লিখেছে ১. যাওয়া, যাত্রা করা, চলা; ২. মাযহাব বা তরিকা; ৩. সুন্নাহ; ৪. আকৃতি; ৫. অবস্থা; ৬. কীর্তি; ৭. কাহিনী, প্রাচীনদের জীবন ও ঘটনাবলির বর্ণনা; ৮. মুহাম্মদ (সা:)-এর গাযওয়ার (যুদ্ধের) বর্ণনা; ৯. অ-মুসলিমগণের সাথে সম্পর্ক, যুদ্ধ এবং শান্তির সময়ে মুহাম্মদ (সা:) যা বৈধ মনে করতেন তার বর্ণনা কিংবা মুহাম্মদ (সা:)-এর জীবন চরিত; সম্প্রসারিত অর্থে বীর পুরুষদের কীর্তির বর্ণনা।
পবিত্র কুরআন মজীদে ‘সীরাত’ শব্দটি শুধুমাত্র একবারই ব্যবহৃত হয়েছে। সুরা তাহার সেই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘খুব হা ওয়ালা তাখাফা’ সান ইদুহা সীরাতাহাল উলা।’ অর্থাৎ তুমি তাকে ধর এবং ভয় পেয়ো না। আমি তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেব, যেরূপ প্রথমে এটি ছিল’। এখানে ‘সীরাত’ শব্দটি আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মোট কথা ‘সীরাত’-এর আভিধানিক অর্থ হলো কোন ভালো মানুষের বা নেককার মানুষের চাল-চলন, ওঠাবসা, কাজ, মেজাজ-মর্জি। এককথায় জীবন পদ্ধতি বা জীবন চরিত।
আর ‘সীরাত’ শব্দের পারিভাষিক অর্থ বোঝান হয়েছে মহানবী (সা:)-এর সার্বিক জীবন চরিতকে। রাসূল (সা:)-এর বিখ্যাত জীবনী গ্রন্থগুলোর নামের সাথে এই ‘সীরাত’ শব্দটি সম্পৃক্ত দেখা যায়। যেমন-সীরাতে ইবনে ইসহাক, সীরাতে ইবনে হিশাম, সীরাতে হালবিয়া, সীরাতে রাসূল, সীরাতে মুগল তোয়াই, সীরাতে খাতিমুল আম্বিয়া, সীরাতে সারওয়ারে আলম, সীরাতে মুহাম্মদিয়া, সীরাতে মুবারক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) সীরাতে মুহসীনে কায়েনাত (সা:), সীরাতুন্নবী, সীরাতে মোস্তফা প্রভৃতি।
সীরাতচর্চায় সাধারণত কুরআন, হাদীস, মাগাযী গ্রন্থাবলি, রাসূল (সা:)-কে নিবেদিত কবিতা, প্রাচীন ইতিহাসমূলক (যেসব মক্কা-মদীনার ইতিহাস), সাহাবীদের শামায়েল প্রভৃতি সহায়ক হিসেবে বিবেচিত।
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সুরায়ে রাসূল (সা:) সম্বন্ধে নানা ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য আছে। অন্যদিকে হাদীসে রাসূল (সা:) জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগের খুঁটিনাটি কথা পর্যন্ত রয়েছে। রাসূল (সা:)-এর সীরাতচর্চার ক্ষেত্রে যেসব সাহাবী, তাবেয়ী, তবে-তাবেয়ীগণ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন (অবশ্য এসব কাজ ছিল বিচ্ছিন্ন, অগোছালো)। তাঁরা হলেন উরওয়া ইবনে যুবায়ের (২৩-৯৪ হি.), আবান ইবন উসমান (২০-১০৫ হি.), ইমাম শা’বী (১০৯ হি.), ওয়াহাব ইবনে মুনাববাহ (১১০ হি.). আসিম ইবনে ওমর (১২১ হি.), সুরাহ বিন ইবন সাদ (১২৩ হি.), আবদুল্লাহ বিন আবু বকর (১৩০ হি.), মুসা ইবন উকবা (১৪১ হি.), হিশাম ইবন উরওয়া (১৪৬ হি.), ইবন শিহাব যুহরী (৫১-১২৪ হি.) আবু আবদুল্লাহ মাহমুদ ইবন ইসহাক (৮৫-১৫১ হি.) প্রমুখ।
ইসলামের পঞ্চম খলীফা হিসেবে খ্যাত হযরত ওমর ইবন আবদুল আযীযের পরামর্শক্রমে রাসূল (সা:)-এর ওফাতের পঁচাশি বছর পর ইমাম শিহাব আল যুহরী (৫১-১২৪ হি.)। সীরাতচর্চা শুরু করেন। তিনি যে সংক্ষেপ্ত জীবনীটি রচনা করেন সেটিই সীরাত বিষয়ক প্রথম গ্রন্থ, যা বহুকাল আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শিহাব যুহরীর প্রিয় ছাত্র মুসা ইবনে উকমা (১৪১ হি.) দ্বিতীয় সীরাত গ্রন্থটি রচনা করেন কিন্তু এ গ্রন্থটিও বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর শিহাব যুহরীর আরও কয়েকজন ছাত্র-ইবন ইসহাক, ওমর ইবন রাশেদ, আবদুর রহমান ইবন আবদুল আযীয, ইবন সালেহ প্রমুখও সীরাত গ্রন্থ রচনা করেন।
তবে প্রথম সীরাতকার হিসেবে বর্তমান বিশ্বে যার নামটি সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয় তিনি হলেন ইবন ইসহাক (৮৫-১৫১ হি.)। রাসূল (সা:)-এর ওফাতের মাত্র ৭৪ বছর পর মদীনায় জন্মগ্রহণকারী ইবন ইসহাকের রচিত ‘সীরাতু রাসূলুল্লাহ’ সীরাত বিষয়ক সর্বাধিক প্রাচীনতম এবং পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্য গ্রন্থ।
এরপর ইবন হিশাম তাঁর পূর্বসূরি ইবন ইসহাক রচিত ‘সীরাতু রাসূলুল্লাহ’ নামক গ্রন্থটির সংশোধিত, পরিমার্জিত, রূপ দিয়ে সংক্ষেপ্তাকারে ‘সীরাতে নবুবিয়্যা’ নামে প্রকাশ করেন যা সীরাতে ইবন হিশাম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। আজ পর্যন্ত এ গ্রন্থটি প্রামাণ্য সীরাত গ্রন্থ হিসেবে সর্বাধিক সমাদৃত।
বাংলা ভাষায় সীরাতচর্চা কবে থেকে শুরু হয়েছে তা সন তারিখ ঠিক করে বলা অবশ্যই দুরূহ ব্যাপার। তবে একথা বলা যায় যে, ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা আমিরুল মুমিনীন হযরত ওমর D-এর খিলাফতকালে যখন বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয় তখন থেকেই মৌখিকভাবে ‘সীরাত’ চর্চার শুরু। অবশ্য লিখিতভাবে ‘খোদা’, ‘মহামদ’, ‘টুপি’, ‘পেকাম্বর’, ‘আদম্ফ’, ‘গাজী’, ‘কাজী’, ‘ফকির’, ‘মলানা’ প্রভৃতি শব্দগুলো ত্রয়োদশ শতাব্দীর কবি রামাই পন্ডিত তার ‘শূন্যপূরান’ কাব্যের ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’ নামক কবিতায় প্রথম ব্যবহার করেন। যেমন-
ধর্ম হৈলা জবনরূপী মাথায়েত কাল টুপি
হাতে শোভে ত্রিকচ কামান
চাপিয়া উত্তম হএ ত্রিভুবনে লাগে ভয়
খোদা এ বলিয়া এক নাম।
……
ব্রহ্মা হৈলা মহামদ বিষ্ণু হৈল্যা পেকাম্বর
আনন্দ হৈল্যা শূলপানি
গনৈশ হৈল্যা গাজী কার্তিক হৈল্যা কাজী
ফকির হৈল্যা যত মুনি।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলমান কবি হলেন শাহ মুহম্মদ সগীর (১৩৩৯-১৪০৯ খ্রি)। তিনি রাসূল প্রশস্তি করে তাঁর কাব্য শুরু করেছেন। ‘ইউসুফ জোলায়খা’ কাব্যে তিনি লিখেছেন,
জিবাত্মা পরমাত্মা মোহাম্মদ নাম
প্রথম প্রকাশ তথা হৈল য়নুপম,
যথ ইতি জিব আদি কৈল ত্রিভোবন
তারপর মোহাম্মদ মাণিক্য সৃজন।
ষোড়শ শতাব্দীতে গৌড়ের সুলতান ইউসুফ শাহের দরবারে কবি জৈনুদ্দীন ও শাহ বিরিদ খান ‘রছুল বিজয়’, নামে আলাদা আলাদা কাব্য রচনা করেছেন, যা আগেই উল্লেখ করেছি। কবি জৈনুদ্দীন লিখেছেন,
তাঁর পাছে মাগে সাজ নবী রাজেশ্বর
মুকুতা মন্ডিত তাজ অতি মনোহর।
লাল যে কাবাই শোভে জিনি দিবাকর
প্রভুর পরম সভা পরম সুন্দর।
শাহ বিরিদ খান তাঁর কাব্য সম্পর্কে লিখেছেন,
সা বিরিদ খান কহে রছুল বিজয়,
শুনি বুধ কর্ণ পুরি সুধা বারি খায়।
১৮০২ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে বাংলা গদ্যে অজ্ঞাত জনৈক লেখকের ‘মহম্মদের বিবরণ’ শিরোনামের একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সম্ভবত এটি মিশনারি ট্রাস্ট সোসাইটি থেকে প্রকাশিত। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলা গদ্যে প্রকাশিত রাসূল (সা:)-এর ওপর প্রথম এ প্রয়াসটি কুৎসাপূর্ণ রচনা অর্থাৎ রাসূল (সা:)-এর বিরুদ্ধে খ্রিস্টান মিশনারিদের অপপ্রচার। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম গদ্য লেখক খোন্দকার শামসুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকীও (১৮০৮-১৮৭০ খ্রি.) রাসূল প্রশস্তি করেছেন। ‘ইউসুফ জোলেখা’ মুসলমান রচিত প্রথম কবিতা গ্রন্থ এবং ‘উচিত শ্রবণ’ (১৮৬০ খ্রি.) মুসলমান লিখিত প্রথম গদ্য গ্রন্থ। অবশ্য এ গ্রন্থে পদ্য ও কিছু আছে। এ রকম একটি পদ্যেই রাসূল প্রশস্তি রচনা করেছেন খোন্দকার শামসুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী।
নবীজীর নূরে সংসার প্রচারে
প্রকাশিল দিবা নিশি
স্বর্গমর্ত্য আর কিরণ তাহার
দেখেছিল রবিশশী।
ছিদ্দিকী অধীনে সে গুণ ব্যাখ্যানে
কেমনেতে পারে বলো।
নবীজী যে স্থানে ব্যাখ্যানিতে গুণে
সাধন অক্ষম হলো।
বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়, মাত্র দুশ বছরের কিন্তু কাব্য সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের। সেই চতুর্দশ শতাব্দীর ‘ইউসুফ জুলেখা’র কবি শাহ মুহম্মদ সগীর থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর এই প্রারম্ভ পর্যন্ত যত বাঙালি কবি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং কাব্য রচনা করেছেন তাদের প্রায় সবাই কোন না কোনভাবে রাসূল প্রশস্তি করেছেন, গদ্য সাহিত্যের ক্ষেত্রে ঐ একই কথা প্রযোজ্য।
যেহেতু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন সেজন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকজন কবির কবিতার কিছু পঙক্তি প্রথমে তুলে ধরছি। পূর্বে শাহ মুহম্মদ সগীর, জৈনুদ্দীন ও শাহ বিরিদ খানের কবিতার পঙক্তি পেশ করছি। এ ধারায় মধ্যযুগের অন্যান্য কবিদের কিছু পঙ&ক্তিমালা:
ষোড়শ শতকের কবি সৈয়দ সুলতান (১৫৫০-১৬৪৮ খ্রি.) রচনা করেন, ‘ওফাতে রসূল’, ‘রসূল বিজয়’, ‘নবী বংশ’, ‘জ্ঞান প্রদীপ’, ‘শবে মিরাজ’, ‘রসূল চরিত’, ‘জয়কুম রাজার লড়াই’, প্রভৃতি কাব্য। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি সৈয়দ সুলতানের কাব্যচর্চার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাসূল (সা:)-এর কর্মময় জীবন ও ইসলামের মর্মকথা জনসমক্ষে তুলে ধরা।
‘নবীবংশ’ কাব্যের ভাষার সৌন্দর্য ও ভাবের মনোহারিত্বের কারণে ড. মুহাম্মদ এনামুল হক কাব্যটিকে ‘ম্যাগনাস ওপাস’ (Magnus Opus) বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘ইহা বিষয়-বৈচিত্র্যে ও আকারে সপ্তকান্ড রামায়ণকেও হার মানাইয়াছে। এই কাব্যটিকে বাংলা মহাকাব্যের একটি আদর্শ বলা চলে।’
সত্যিই সুবিশাল ‘নবী বংশ’ কাব্যটিতে বিভিন্ন নবীর ব্যক্তিসত্তা ও তাঁদের কাহিনীর বর্ণনার চমৎকারিত্ব একদিকে কবির অসাধারণ ধৈর্য, অপরদিকে তার কবিত্ব শক্তির পরিচয় বহন করে।
‘নবীবংশ’-এর দ্বিতীয় খণ্ডে হযরত মুহাম্মদ (সা:) ও হযরত খাদিজা E-এর বিয়ে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে যেন আমাদেরই পরিচিত পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছেন,
সুজনি চাদর দিলা বসিতে বিবিগণ।
হীরা জরি চান্দোয়া যে মাণিক্য পোখম\
চিনি আদি সর্করা আঙ্গুর খোরমান।
ঘৃত মধু দধি দুগ্ধ অমৃত সমান\
খাসী বকরী দুম্বা আর উটযে প্রধান।
মেজায়ানী করিলেন্ত এবাজ সমান\
কবির কবিত্ব শক্তির প্রমাণ মিলে তার ‘শব-ই মিরাজ’ কাব্যে। বোরাকের বর্ণনা দিতে গিয়ে কবি লিখেছেন,
সেই তুরস্কের নাম বোরাক আছিল\
বোরাকের মুখমুন্ড নীরব আকার।
চিকুর লম্বিত অতি নারীর বৈভার\
বোরাকের দুই কর্ণ উটের চরিত\
নরের বচন কহে অতি সুললিত\
অশ্বের আকার পৃষ্ঠ চলন গম্ভীর।
চলিলে বিজুলি যেন রহিতে সুধীর\
নীলা কষা জমরুদের বরণ তাহার।
দেখিতে সুন্দর অতি বড় শোভাকার।
‘জ্ঞান প্রদীপ’ কাব্যের শুরুতে রাসূল প্রশস্তি করেছেন এভাবে,
প্রথমে প্রভুর নাম করি স্মরণ
আঠার হাজার আলম যার সৃজন।
দ্বিতীয় এলই মুস্তফা পয়গম্বর
যার সিফত আছে রোজ মহাশর।
যতন করি ধরি এ রাসূল দুপা এ
আখেরে এড়াইয়া যদি হিসাবের দাএ।
এমনিভাবে তিনি তাঁর কাব্য গ্রন্থগুলোতে কবি কীর্তির ক্ষেত্রে অসাধারণ শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। কবি শেখ চান্দ (১৬৬০-১৭৬৫ খ্রি.) তাঁর ‘রছুল বিজয়’ কাব্যের শুরুতেই লিখেছেন,
‘আল্লাহো গণি মোহাম্মদ নবী
রছূলনামা কিতাব খানি কহিলাম এবে
কা এয়া মন হইয়া সোন করিলাম সবে।’
সপ্তদশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি আলাওল লিখেছেন তাঁর ‘পদ্মবতী’ কাব্যের শুরুতেই-
পূর্বেতে আছিল প্রভু নৈরূপ আকার
ইচ্ছিলেক নিজ সখা করিতে প্রচার\
নিজ সখা মহাম্মদ প্রথমে সৃজিলা।
সেই সে জ্যোতির মূলে ভবন নিরমিলা\
তাহার পিরিতে প্রভু সুজিল সংসার।
আপনে কহিছে প্রভু কোরান মাঝার\
কবি মুহাম্মদ খান ‘মুক্তাল হোসেন’ কাব্যের শুরুতে লিখেছেন,
‘মুহাম্মদ নবী নাম হৃদয়ে গাঁথিয়া।
পাপীগণ পরিণামে যাইবে তরিয়া।
দয়ার আধার নবী কৃপার সাগর।
বাখান করিতে তার সাধ্য আছে কার\
যার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে আপে নিরঞ্জন।
সৃষ্টি স্থিতি করিলেন এ চৌদ্দভুবন।’
সৈয়দ হামজা (১৭৫৫-১৮১৫ খ্রি.) রাসূল প্রশস্তি এভাবে করেছেন-
‘প্রথমে প্রণাম করি প্রভু নিরঞ্জন।
তার পাছে প্রণামিয়ে নবীর চরণ।’
আধুনিক বাংলা কাব্যের প্রথম পাদে রাসূল (সা:)-এর প্রসঙ্গ এসেছে আখ্যান কাব্য, খণ্ড কবিতা, গযল-গান ও দোয়া দরূদ ইত্যাদির মাধ্যমে। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে মীর মশাররফ হোসেনের সম্পাদনায় ‘মৌলুদ শরীফ’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। এতে মীর মশাররফ হোসেন যে রাসূল প্রশস্তি করেছিলেন,
তুমি হে এছলাম রবি
হাবিবুল্লাহ শেষ নবী
নতশিরে তোমার সেবি
মোহাম্মদ এয়া রাছুলুল্লাহ।
ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত মধ্যযুগীয় পর্যায়েই ছিল কবিতা কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসেই বাংলা কবিতা আমূল পরিবর্তিত হয়ে যায়। মাইকেল মধুসূদন, নবীনচন্দ্র, হেমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পাদেই এ পরিবর্তনের সূচনা করেন। বিংশ শতাব্দীর বিশ-এর দশকের শেষদিকে আধুনিক মুসলিম কবির আবির্ভাব ঘটে। এরা হলেন- শাহাদাৎ হোসেন, গোলাম মোস্তফা ও কাজী নজরুল ইসলাম। নিঃসন্দেহে কাজী নজরুল ইসলাম এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তবে আধুনিক বাংলা কাব্যে রাসূল (সা:)-কে নিবেদিত কবিতা শাহাদাৎ হোসেনের ‘হযরৎ মোহাম্মদ (সা:)’ শিরোনামের কবিতাটি। এটি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মে সংখ্যা সওগাতে ছাপা হয়। কয়েকটি পঙ&ক্তি:
তুন্দ হেরার অন্ধ গুহায় মগ্ন রহিয়া গভীর ধ্যানে,
সাক্ষাৎ লাভি স্বর্গ দূতেরে ধরিলে মহান সত্যজ্ঞানে।
পূজ্য নরের মাত্র সেজন জগৎ বিপুল সৃষ্টি যার
জানলে মানবে আল্লা ব্যতীত নাহিক তাহার নম্য আর।
ঘুচিল আঁধার, হাসিল বিশ্ব, নূতন অরুণ-আলোক পাতে,
সত্য মহান ধর্মের জ্যোতি; হেরিল মানব জীবন প্রাতে।
কবি গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪ খ্রি.) সেই সৌভাগ্যবান কবি ব্যক্তিত্ব যার গদ্য পদ্য দু’ধরনের রচনায় বাঙালি মুসলমান মনে রেখেছে এবং আজও সমানভাবে তিনি নন্দিত। ‘বিশ্বনবী’র লেখক কবি গোলাম মোস্তফা রাসূল (সা:)-কে নিবেদন করে চমৎকার গীতিকবিতা রচনা করেছেন। যেমন-
নিখিলের চিরসুন্দর সৃষ্টি
আমার মোহাম্মদ রসূল।
কুলমাখলুকাতের গুলবাগে
যেন একটি ফোটা ফুল।
বাংলা মিলাদ শরীফের ক্ষেত্রে তিনি যে অনন্য সাধারণ সংযোজন করেছেন তার তুলনা বিরল। বর্তমানে বাঙালি মুসলমানের ঘরে ঘরে বা যে কোন স্থানে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হলে সুর করে যে কিয়ামটি পড়া হয় তা গোলাম মোস্তফারই রচনা। যেমন-
ইয়া নবী সালাম আলায়কা
ইয়া রাসূল সালাম আলায়কা।
………….
………….
তুমি যেন নূরের রবি
নিখিলের ধ্যানের ছবি
তুমি না এলে দুনিয়ায়
আঁধারে ডুবিত সবি।
ওই একই সময়ে বাংলা সাহিত্যে সর্বপস্নাবী প্রতিভা নিয়ে আবির্ভূত হন কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রি.)। উল্কার মতো আবির্ভাব হয়ে একের পর এক হামদ, না’ত, ইসলামী গান ও কবিতা রচনা করে এ ক্ষেত্রে নবজাগরণের সৃষ্টি করলেন, সূচিত হলো এক নতুন অধ্যায়ের। মোসলেম ভারতে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় কবিতা ‘খেয়াপারের তরণী।’ লিখলেন,
পুণ্য পথের এ যে যাত্রীরা নিষ্পাপ
ধর্মের বর্মে সুরক্ষেত দিল সাফ।
নহে এরা শঙ্কিত বজ্র নিপাতেও
কান্ডারী আহমদ; তরী ভরা পাথেয়?
সাথে সাথে সাড়া পড়ে গেল চারিদিকে। এরপর ১৯২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর সংখ্যা মোসলেম ভারতে প্রকাশিত হল ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজদহম: আবির্ভাব।’ ঠিক এর এক বছর পর ঐ মোসলেম ভারতেই প্রকাশিত হয় ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজদহম: তিরোভাব, শিরোনামে অসাধারণ দুটি কবিতা। প্রথম কবিতাটি (আবির্ভাব) প্রথম স্তবক এমন:
নাই তা-জ
তাই লা-জ?
ওরে মুসলিম, খর্জুর-শীর্ষে তোরা সাজ।
করে তসলিম হর কুর্ণিশে মোর আ-ওয়াজ
শোন কোন মুজ্দা সে উচ্চারে ‘হেরা’ আজ
ধরা-মাঝ।
উরজ য়্যামন নজ্দ হেফজ তাহামা ইরাক শাম
মেসের ওমান তিহারান-স্মরি কাহার বিরাট নাম,
পড়ে সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম।
চলে আঞ্জাম
দোলে তাঞ্জাম।
খোরে হর-পরী ফিরদৌসের হাম্মাম
টলে কাঁখের কলসে কওসের ভর, হাতে আর জম্ জম্
শোন দামাম্ কামান তামামা সামান
নির্দোষি কার নাম
পড়ে সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লাম।
কবিতাটি সম্বন্ধে বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক শাহাবুদ্দীন আহমদ লিখেছেন, ‘পরবর্তী সময়ে গোলাম মোস্তফাকে ‘বিশ্বনবী’ (১৯৪২ সালে প্রকাশিত) শিরোনামে দীর্ঘ কবিতা লিখতে দেখেছি, আবদুল কাদিরকে ‘হযরত মোহাম্মদ’, ‘মিলাদুন্নবী’, ‘অন্তর্ধান’ লিখতে দেখেছি; এবং ফররুখ আহমদকে লিখতে দেখেছি ‘সিরাজাম মুনীরা’। কিন্তু ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজদহম’-এর উজ্জ্বলতাকে কেউ মস্নান করতে পারেননি; এমনকি নজরুল ইসলামের স্বরচিত ‘মরুভাস্কর’ (অসমাপ্ত) কাব্যগ্রন্থ যাদুকরী বহু পঙক্তি উপহার দিলেও ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজদহম’-এর চোখ ধাঁধানো প্রভাবে আড়াল করতে পারেনি।’
কাজী নজরুলের পর বিপুল প্রতিভা ও মমত্ব নিয়ে যিনি রাসূল (সা:)-এর ওপর কবিতা লিখেছেন তিনি হলেন, ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪ খ্রি.)। তিনি ‘সিরাজাম মুনীরা’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ কাব্য রচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন,
তুমি না আসিলে মধুভান্ডার ধরায় কখনো হত না লুট
তুমি না আসিলে নার্গিস কভু খুলতো না তার পর্ণপুট,
বিচিত্র আশা-মুখর মাশুক খুলতো না তার রুদ্ধদিল,
দিলের প্রহরী দিতো না সরায়ে আবছা আঁধার কালো নিখিল।
অবশ্য ত্রিশের দশকে জসিম উদ্দীন, বেনজীর আহমদ, কাদের নওয়াজ প্রমুখ, চল্লিশের দশকে তালিম হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, রওশন ইয়াজদানী, মুফাখখারুল ইসলাম, আবদুর রশীদ খান, পঞ্চাশের দশকে আবদুস সাত্তার, আল মাহমুদ, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, ফজল শাহাবুদ্দীন, ষাটের দশকে আবদুল মান্নান সৈয়দ, আফজাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হুদা, ফজলে এ খোদা, আবদুল মুকিত চৌধুরী, সত্তরের দশকে আবিদ আজাদ, মুশাররফ করীম, মুস্তাফা মাসুদ, আশির দশকে মতিউর রহমান মল্লিক, রেজাউদ্দিন স্টালিন, মুকুল চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন খান, সোলায়মান আহসান, আসাদ বিন হাফিজ, হাসান আলীম, গাজী রফিক, তমিজ উদ্দীন লোদী, গোলাম মোহাম্মদ, বুলবুল সরওয়ার, শরীফ আবদুল গোফরান, গাজী এনামুল হক, নাসির হেলাল, নববইয়ের দশকে- কামরুজ্জামান, জাকির আবু জাফর, মৃধা আলাউদ্দীন, রফিক মুহাম্মদ, আল হাফিজ, মুহিবুর রহীম প্রমুখ কবি রাসূল প্রশস্তি করেছেন।
এর মধ্যে ষাটের দশকের শ্রেষ্ঠতম কবি, মরহুম কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ ‘সকল প্রশংসা তাঁর’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাব্য রচনা করেছেন। আর আশির দশকের কবি, কবি হাসান আলীম ‘যে নূরে জগত আলো’ নামে একটি এবং নাসির হেলাল ‘ফুলের উপমা’ একটি স্বতন্ত্র কাব্য রচনা করেছেন।
বাংলা গদ্য সাহিত্যে রাসূল (সা:)-কে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন, শেখ আবদুর রহীম (১৮৫৯-১৯৩১ খ্রি.)। গ্রন্থটির নাম ‘হযরত মুহম্মদ (সা:)-এর জীবন চরিত ও ধর্মনীতি’। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ৪০৪ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটির ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘ইহাতে হযরত নূহ 5-এর আধুনিক অবস্থা বিশদরূপে বিবৃত করিতে প্রয়াস পাইয়াছি। হিজরীর প্রথম অব্দ হইতে প্রত্যেক বৎসরের ঘটনাবলি একেকটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে নিয়মিতরূপে লিখিয়াছি। প্রত্যেক সম্বন্ধে কুরআন শরীফের যে যে আয়াত অবতীর্ণ (নাজেল) হইয়াছিল, তাহার প্রকৃত অনুবাদ যথাস্থানে সন্নিবেশিত করিয়াছি, … হযরত মুহাম্মদ তরবারী বলে ইসলাম প্রচার করিয়াছেন বলিয়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বীগণ যে তাহার নামে বৃথা দোষারোপ করিয়া থাকেন এই পুস্তক পাঠ করিলে সে ভ্রম বিদূরিত হইবে।’
এরপর ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে সিলেট থেকে নগরী হরফে মুন্সী বুরহান উল্লা ওরফে চেরাগ আলী রচিত ‘হায়াতুন্নবী’, কুষ্টিয়া থেকে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে আবদুল আজিজ খান (১৮৬৮-১৯০৩ খ্রি.) রচিত ‘সংক্ষেপ্ত মুহম্মদ চরিত;, যশোর থেকে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ডা. সুফী ময়েজউদ্দীন আহমদ (মধুমিয়া) রচিত ‘ত্রিত্বনাশক ও বাইবেলে মোহাম্মদ (সা:), শান্তিপুর, নদীয়া থেকে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে মোজাম্মেল হক রচিত ‘হযরত মোহাম্মদ (সা:)’, যশোর থেকে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে মুনসী মহম্মদ মেহেরউল্লার প্রকাশনায় শেখ ফজলল করীম (১৮৮২-১৯৩৬ খ্রি.) রচিত হযরত পয়গম্বরের জীবনী (নবীজীর যুদ্ধাবলি), কলকাতা থেকে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ডা. সৈয়দ আবুল হোসেন (১৮৬২-১৯২৯ খ্রি.) রচিত মোসলেম পতাকা; হযরত মোহাম্মদ (সা:) জীবনী ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে শেখ মোহাম্মদ জমীর উদ্দীন (১৮৭০-১৯৩০ খ্রি.) রচিত ‘মাসুম মোস্তফা (সা:)’, ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে সারা তায়ফুর রচিত ‘স্বর্গের জ্যোতি’, ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে এয়াকুব আলী চৌধুরী রচিত ‘নূরনবী’ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘মানব মুকুট’, ‘১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে মোবিনুদ্দীন আহমদ জাহাগীর নগরী রচিত ‘নবীশ্রেষ্ঠ’, ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচিত ‘মরু ভাস্কর’, ১‘৯৪২ খ্রিস্টাব্দে চুঁচুড়া থেকে কবি গোলাম মোস্তফা রচিত ‘বিশ্বনবী’, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচিত ‘ছোটদের হযরত মোহাম্মদ’, ওই ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ রচিত ‘শেষ নবী’, ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে মাওলানা আবদুল খালেক রচিত ‘ছাইয়েদুল মুরছালীন (দু’খণ্ড)’, ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ রচিত ‘নবী গৃহ সংবাদ’ ও ১৯৬৩ ‘নয়াজাতি স্রষ্টা হযরত মুহাম্মদ’, ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ তফাজ্জল হোসাইন রচিত ‘হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা:) সমকালীন পরিবেশ ও জীবন’ ছাড়াও কয়েকটি সম্পাদিত সংকলন গ্রন্থ ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে অধ্যাপক আবদুল গফুর সম্পাদিত ‘শাশ্বত নবী’, ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে হাসান আবদুল কাইয়ূম সম্পাদিত অনুপম আদর্শ’, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে ইসলামী বিশ্বকোষ সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত ‘হযরত রসূল করীম (সা:) জীবন ও শিক্ষা’, ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ইসলামী একাডেমি থেকে ইশারফ হোসেনের সম্পাদনায় মহানবী (সা:) স্মরণে নিবেদিত কবিতা, ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রীতি প্রকাশন, ঢাকা থেকে আসাদ বিন হাফিজ ও মুকুল চৌধুরীর যৌথ সম্পাদনায় ‘রাসূলের শানে কবিতা’, শিরোনামের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সংকলনগুলো প্রকাশিত হয়েছে। এবার বাংলা ভাষায় রচিত ও প্রকাশিত একান্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ও সংকলন সম্বন্ধে সামান্য আলোকপাত করছি,
স্বর্গের জ্যোতি:
গ্রন্থটির লেখিকা বেগম সারা তায়ফুর (১৮৯৩)। পুরো নাম হুরায়ূন্নিসা সারা খাতুন। বাংলা সাহিত্যে প্রথম জীবনী লেখিকা সারা তায়ফুর-এর ‘স্বর্গের জ্যোতি’ গ্রন্থটি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। অবশ্য ১৩৭১ বাংলা সনে বাংলা একাডেমি, ঢাকা এর একটি সংস্করণ প্রকাশ করে।
কাব্যিক গদ্যে রচিত এ গ্রন্থের ভাষা সাবলীল। লেখিকা অত্যন্ত দরদ দিয়ে গ্রন্থটি রচনা করেছেন। উল্লেখ্য যে, এ গ্রন্থ প্রকাশের পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিঠি দিয়ে লেখিকাকে অভিনন্দিত করেছিলেন।
নূরনবী:
আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় এয়াকুব আলী চৌধুরী রচিত ‘নূরনবী’-এর তুল্য ছোটদের জন্য তেমন কোন গ্রন্থ রচিত হয়নি। সুললিত ভাষায় রচিত গ্রন্থটি যে কোন বয়সী পাঠককে আকর্ষণ করতে সক্ষম। গ্রন্থটি শুরু হয়েছে এভাবে:
সে অনেক দিনের কথা। তেরশ’ কি তারও আগে,
সেই সাত সমুদ্র পার, তের নদীর ধার, সেই
সোনার হীরার গাছ, আরমুক্ত মনির ফুল
সবাই তখন ভুল।
তখন না ছিল ফুলে ফুলে পরীর মেলা, আর না ছিল সব দেশে দেশে ‘রাজপুত্রের খেলা।
এমনি প্রাণকাড়া ভাষা দিয়ে পুরো বইটি রচনা করা হয়েছে। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একটি সংস্করণ প্রকাশ করেছে।
মানব মুকুট:
মহাপুরুষেরও শৈশব আছে, মানব শিশুর স্বাভাবিক সোহাগ-বিরাগ ও মান-অভিমান তাহারও জীবনে লালায়িত হয়। শৈশব স্মৃতির পুষ্প পরশে তাহার ও প্রাণের কোমল পর্দায় ঝঙ্কার উঠে’ (পৃ. ৩০)।
এয়াকুব আলী চৌধুরীর লেখার স্টাইলই আলাদা। তাঁর ভাষা যেন বহতা নদীর মত তর্ তর্ করে বয়েই চলে।
রাসূল (সা:)-এর জীবন কেন্দ্রিক ৭টি প্রবন্ধ নিয়ে এ গ্রন্থ। লেখক দেখিয়েছেন মুহাম্মদ (সা:) শুধুমাত্র একজন নবীই নন, তিনি মানবতার মুক্তির দিশারী হিসেবে পথ প্রদর্শক হিসেবে এসেছিলেন।
নবী শ্রেষ্ঠ:
ঢাকা জেলার অধিবাসী মোবিনুদ্দীন আহমদ জাঁহাগীর নগরী রচিত ‘নবী শ্রেষ্ঠ’ গ্রন্থটি বাংলা সাহহেত্য একটি অমূল্য সংযোজন। গ্রন্থটির ১৪টি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম থেকে ত্রয়োদশ অধ্যায় পর্যন্ত রাসূল (সা:)-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে। চতুর্দশ অধ্যায়ে রাসূল (সা:)-এর চারিত্রিক গুণাবলি তুলে ধরা হয়েছে, সাথে সাথে গ্রন্থটি সম্পর্কে সমালোচকদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।
সে সময়কার একজন নামকরা সমালোচক শ্রীযুক্ত বাবু গিরিশ চন্দ্র নাগ লিখেছিলেন, ‘আমি মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিতেছি, আপনার গ্রন্থ পাঠে হযরত মুহম্মদের চরিত্র ও শিক্ষা দীক্ষার প্রতি সহস্র গুণে অধিকতর শ্রদ্ধাবান হইয়াছি।’
মোস্তফা চরিত: মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ গ্রন্থটি সম্বন্ধে নিজেই লিখেছেন, ‘এই অসাধ্য সাধন করিতে আমাকে মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর ধরিয়া অবিরাম নিভৃত সাধনায় সমাহিত থাকিতে হইয়াছে। আমার এ সাধনা কতটুকু সিদ্ধি লাভ করিয়াছে, বিজ্ঞ পাঠক তাহার বিচার করিবেন। এই ব্যাপারে আমাকে ইতিহাস, জীবনী, তাফসীর, হাদীস ও তাহার ভাষা প্রভৃতি হযরতের জীবনী সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য অধিকাংশ গ্রন্থ অধ্যয়ন ও আলোচনা করিতে হইয়াছে।’
মহম্মদী বুক এজেন্সি, কলকাতা থেকে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ‘মোস্তফা চরিত’ প্রকাশিত হয়। পন্ডিত আকরাম খাঁ তাঁর জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা:)-এর চরিত্রকে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন। গ্রন্থটি সম্বন্ধে শাহাবুদ্দীন আহমদ লিখেছেন,
‘বাস্তবিকই প্রায় ন’শ পৃষ্ঠার ‘মোস্তফা চরিত’-এর প্রায় তিনভাগের একভাগ নবী করীম (সা:)-এর জীবনী সম্পর্কিত আলোচনায় পরিপূর্ণ। ২২৩ পৃষ্ঠাজুড়ে তিনি যে রসূল চরিত্রের মহিমা প্রদর্শনের পটভূমি রচনা করে তাঁর সমীক্ষাধর্মী মনীষার পরিচয় দিয়েছেন, জীবনী রচনায় তা তুলনারহিত। এতে শুধু হাদীসের সত্যাসত্য নিরূপণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, সমগ্র ইসলামের আবির্ভাবের কারণের মধ্যে এই সমীক্ষা নিপুণ শিল্পীর সৃষ্ট পোট্রেটের বা ল্যান্ড স্কেপের সৌন্দর্যে বিকশিত হয়েছে। এই বিশ্লেষণধর্মী পর্যালোচনায় আকরম খাঁ যে মেধা, পরিশ্রম ও মনীষার পরিচয় দিয়েছেন তা অক্লান্ত সাধনার অধ্যবসায়ের ফল।’
‘মোস্তফা চরিতের বৈশিষ্ট্য’ নামে মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর আরও একটি গ্রন্থ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ওই মহম্মদী বুক এজেন্সি, কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়।
মরু ভাস্কর: প্রখ্যাত সাহিত্যিক মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী (১৮৯৬-১৯৫৪ খ্রি.) রচিত ‘মরু ভাস্কর’ নামের সুলিখিত নবীজীবনীটি মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ বাহারের সুদীর্ঘ ভূমিকাসহ ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে বুলবুল পাবলিশিং হাউস কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়।
গ্রন্থটি সম্পর্কে অধ্যাপক আবদুল গফুর লিখেছেন, ‘বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নবী চরিতসমূহের মধ্যে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর ‘মরু ভাস্কর’ অন্যতম। মননশীল গদ্য লেখক হিসেবে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর খ্যাতি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। স্বচ্ছ চিন্তাধারা এবং ‘সাবলীল ভাষার অধিকারী হিসেবে তার খ্যাতির একটা বড় দলিল এই মরু ভাস্কর।’
‘ছোটদের হযরত মোহাম্মদ’ নামেও কিশোরদের উপযোগী একটি নবীজীবনী তিনি রচনা করেছিলেন। অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় রচিত এ গ্রন্থটি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে দেব সাহিত্য কুটির, কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়।
বিশ্বনবী:
কবি গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৪৬ খ্রি.)-এর অমর সৃষ্টি। নিঃসন্দেহে ‘বিশ্বনবী’ কবি গোলাম মোস্তফার শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কীর্তি। আজও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, কবি গোলাম মোস্তফা যদি ‘বিশ্বনবী’ গ্রন্থটি ছাড়া অন্য কোনকিছু রচনা নাও করতেন তবু যুগের পর যুগ শতাব্দীর পর শতাব্দী, বাঙালি পাঠক তথা বাঙালি মুসলিম পাঠকের কাছে তিনি বেঁচে থাকতেন, শ্রদ্ধার আসনে সমাসীন থাকতেন। ‘বিশ্বনবী’ প্রকাশিত ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে, এরই মধ্যে প্রায় ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু বিশ্বনবীর কদর পাঠকদের কাছে বিন্দুমাত্র কমেনি বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার প্রমাণ ১৯৪২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত অনেকগুলো সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রথম খণ্ডে মোট ৫৮টি পরিচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি পরিচ্ছেদের আলোচনা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত, হৃদয়গ্রাহী ও প্রাঞ্জল। ‘বিশ্বনবী’ নিঃসন্দেহে একটি গবেষণাগ্রন্থ, সর্বসাধারণের বোধগম্যও। এর কোন আলোচনা যুক্তির ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েনি, আবার আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন অযৌক্তিক কিছুকে প্রশ্রয়ও দেওয়া হয়নি।
আমাদের বিশ্বাস এ বিশাল গদ্য কাব্যটি আরও সুদীর্ঘকাল বাঙালি পাঠককে বিমুগ্ধ করে রাখবে।
‘বিশ্বনবী’ ছাড়াও কবি গোলাম মোস্তফা ‘বিশ্বনবীর বৈশিষ্ট্য’ ও ‘মরু দুলাল’ নামে রাসূল (সা:)-এর ওপর আরও দুটি চমৎকার গ্রন্থ রচনা করেছেন।
হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা:) সমকালীন পরিবেশ ও জীবন:
ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ থেকে সৈয়দ একে কামরুল বারী প্রকাশ করেছেন, ‘হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা:) সমকালীন পরিবেশ ও জীবন’ নামে ১০০৮ পৃষ্ঠার বিপুলায়তন একটি গুরুত্বপূর্ণ সীরাতগ্রন্থ। ১৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত এ গ্রন্থটিতে রাসূল (সা:) এর জীবনের নানা দিক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করা হয়েছে। অধ্যায় শুরুর আগে প্রথম ভাগে সমকালীন পরিবেশ শীর্ষক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৮টি পরিচ্ছেদে ৮টি জরুরি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। সেগুলো হলো- রাসূল প্রেরণ, কুরআন-হাদীস সংকলনের ধারা, রাসূল (সা:)-এর আবির্ভাব কালীন বিশ্ব, মহানবী (সা:)-এর আগমনের পূর্বাভাস, শেষ নবীর আবির্ভাব আরবে কেন, মক্কায় ইসমাঈলী বংশের আগমন, কা’বা শরীফের পুনঃসংস্কার ও হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর বংশ পরিচয়।
গ্রন্থটির মাঝে মাঝে বিভিন্ন মূল্যবান চিত্রও সংযোজন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান সময়ে বাংলাভাষায় প্রকাশিত সীরাত গ্রন্থের মধ্যে এটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এ মূল্যবান গবেষণা গ্রন্থটির রচয়িতা শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ তফাজ্জল হোসাইন। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন তারই সুযোগ্য সন্তান ড. এ এম এম মুজতবা হোসাইন। গ্রন্থটি ১৯৯৮ সালে জাতীয় সীরাত কমিটি বাংলাদেশ কর্তৃক গত ১০ বছরে প্রকাশিত বিষয়ে মৌলিক রচনার মধ্যে বিবেচিত হয়ে পুরস্কার লাভ করে।
সাইয়েদুল মুরসালীন (দু’খণ্ড): বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মরহুম মাওলানা আবদুল খালেক রচিত ‘সাইয়েদুল মুরসালীন’ (দু’খণ্ড) বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সংযোজন। মোস্তফা চরিত’, ‘বিশ্বনবী’ পর্যায়ের গ্রন্থ এটি না হলেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে অনেকটা কাছাকাছি। এ গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে। এরপর ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গ্রন্থটির ৪টি সংস্করণ প্রকাশ করেছে। দু’খন্ডে প্রায় দু’হাজার পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটি লেখকের কঠোর পরিশ্রমের ফসল।
নয়া জাতি স্রষ্টা হযরত মুহাম্মদ: ‘পারস্য প্রতিভা’র লেখক মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ রচিত ‘নয়া জাতি স্রষ্টা হযরত মুহাম্মদ’ গ্রন্থটি ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। সীরাত সাহিত্যের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। লেখক কেন গ্রন্থটি লিখলেন তা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘ত্রিশ বৎসর আগের কথা। কতিপয় সাহিত্যামোদি ব্যক্তি আমার পারস্য প্রতিভা পাঠ করার পর আমাকে প্রাঞ্জল ভাষায় একখানি নবী চরিত লিখিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি আত্মজিজ্ঞাসা হইতে উপলব্ধি করিলাম, নবী চরিতের আসল স্বরূপ আমার বোঝা হয়নি। তারপর পড়িয়াছি, যথাসাধ্য এবং শুনিয়াছি বিস্তর কিন্তু এখনও সেই বিরাট ব্যক্তিত্বের সকল দিক সম্যক বুঝিয়াছি এ দাবি করিতে পারি না। বিষয়টি বাস্তবিকই দুরূহ। তবে যতটুকু বুঝিয়াছি। সরলভাবে লিপিবদ্ধ করিলাম।’
এমনিভাবে প্রচুর গ্রন্থ রয়েছে যেগুলো সীরাতচর্চার ক্ষেত্রে মাইলস্টোন হিসেবে বিবেচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিশোরদের জন্য কবি আল মাহমুদ রচিত ‘মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)’ ও কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা রচিত ‘মহানবী’ গ্রন্থ দুটি অনবদ্য হয়েছে। অবশ্য ২০০২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ রচিত ‘বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ও এক অনন্য কিশোর জীবনীগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় প্রতিনিয়ত সীরাতচর্চা ও প্রকাশনা হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে মৌলিক ও অনুবাদগ্রন্থ, পুস্তক-পুস্তিকা মিলে হাজারের ঊর্ধ্বে প্রকাশনা বাংলাভাষায় রয়েছে। আমার এক গবেষণায় মধ্যযুগ থেকে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ১০২৮টি গ্রন্থ নাম, লেখকের নাম, প্রকাশকের নাম-ঠিকানা প্রকাশকাল, পৃষ্ঠা সংখ্যা ও মূল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছি। খুশির খবর প্রতিদিনই বাংলাভাষায় সীরাত বিষয়ক রচনা ও গ্রন্থাবলির নাম সংযোজিত হচ্ছে।
লেখক: কবি, সাংবাদিক