জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ

বাংলাভাষায় দক্ষতা অর্জন করুন

মানুষ জন্মের কয়েক বছর পর থেকে কথা বলতে শিখে। সর্বপ্রথম তার মায়ের ভাষাই কথা বলে। মায়ের ভাষায় কথা বলা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মাতৃভাষা মহান আল্লাহর অপার দান। এ ভাষা দিয়ে মানুষ নিজের মনেরভাব প্রকাশ করে। তাই ইসলাম মায়ের প্রতি যেমন অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি মাতৃভাষার প্রতিও অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهٖ لِيُبَيِّنَ لَهُمْؕ ۰۰۴

‘আমি রাসূলগণকে তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তাদের (দীন) স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন।’

(সূরা ইবরাহীম: ৪)

এ আয়াত থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রস্ফুটিত হওয়ার সাথে সাথে দীনের পথে আহ্বানকারী দা’য়ীদের জন্য মাতৃভাষায় পারদর্শিতা অর্জনের নির্দেশনাও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

اُدْعُ اِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ؕ ۰۰۱۲۵

‘আপনি আপনার রবের পথে দাওয়াত দিন কৌশল ও উত্তম ভাষণের মাধ্যমে।’ (সূরা আন-নাহল: ১২৫)

কুরআনের এসব বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, স্বাজাতিকে উত্তম ভাষণের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়ার জন্য বিশুদ্ধ মাতৃভাষার ওপর পারদর্শিতা অর্জন অনিবার্য। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন,

«أَنَا أَفْصَحُ الْعَرَبِ».

‘আমি আরবদের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষী।’

(শারহুস সুন্নাহ: ৪/২০২)

রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বাণী থেকে প্রমাণিত হয়, বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল মাতৃভাষায় কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ।

বাংলাভাষার গুরুত্ব ইতিকথা

ভাষাসংখ্যার বিচারে বাংলা এখন পৃথিবীর সপ্তম ভাষা। এর স্থান কেবল চীনা, ইংরেজি, হিন্দি-উর্দু, স্প্যানিশ, আরবি ও পর্তুগিজের পরে। আর বাংলাই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র ভাষা, যার প্রতি ভালবাসা ও মর্যাদাবোধ থেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি যখন বাংলাভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তাদের এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে বাংলাভাষাভাষীরা গণআন্দোলন গড়ে তুলেন। বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেন রাজপথ। এই দুর্বার আন্দোলনে শামিল হয়ে মায়ের ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করেন এদেশের বহু ছাত্র-জনতা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংগ্রামরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন বরকত, সালাম, জব্বার, শফিক ও রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেক বীর সন্তানেরা। এভাবে মাতৃভাষার জন্য রক্তদান বা শাহাদত বরণের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রক্তে রঞ্জিত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় ভূষিত হয়। মূলত এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা সৃষ্টিতে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনই প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। আমরা মনে করি, ভাষা আন্দোলনের এই গৌরবময় রক্তিম ইতিহাস জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে যুগ যুগে।

বাংলাভাষার নেতৃত্ব গ্রহণ করুন!

প্রিয় তালিবুল ইলম! আজ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তা হলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। বাংলাভাষাকে অন্তরের মমতা দিয়ে গ্রহণ করুন এবং মেধা ও প্রতিভা দিয়ে বাংলা সাহিত্য চর্চা করুন। অনেকেই মনে করে বাংলাভাষা হিন্দুদের ভাষা। বাংলাভাষা ও সাহিত্যচর্চায় কোন পুণ্য নেই। পুণ্য শুধু আরবি-উর্দু ভাষা চর্চায় নিহিত আছে। এটি একটি ভ্রান্ত ও আত্মঘাতী ধারণা। এটা অজ্ঞতা, এটা মূর্খতা। আগামীদিনের জন্য এর পরিণতি বড় ভয়াবহ।

মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা আবুল হাসান আলী নদবী (রহ.)-এর ভাষায় ‘এ যুগে ভাষা ও সাহিত হলো চিন্তার বাহন, হয় কল্যাণের চিন্তা, নয় ধ্বংসের চিন্তা। বাংলাভাষা ও সাহিত্যকে আপনারা শুভ ও কল্যাণের এবং ঈমান ও বিশ্বাসের বাহনরূপে ব্যবহার করুন। অন্যথায় শত্রুরা একে ধ্বংস ও বরবাদির এবং শিরক ও কুফুরির বাহনরূপে ব্যবহার করবে। সাহিত্যের অঙ্গনে আপনাদেরকে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অধিকার করতে হবে।

আপনাদের হতে হবে আলোড়ন সৃষ্টিকারী লেখক-সাহিত্যিক ও বাগ্মী বক্তা। ভাষা ও সাহিত্যের সকল শাখায় আপনাদের থাকতে হবে দৃপ্ত পদচারণা। আপনাদের লেখা হবে শিল্পসম্মত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত। আপনাদের লেখনী হবে জাদুময়ী ও অগ্নিগর্ভা, যেন আজকের ধর্মবিমুখ শিক্ষিত সমাজ অমুসলিম ও নামধারী মুসলিম লেখক-সাহিত্যিকদের ছেড়ে আপনাদের সাহিত্য নিয়েই মেতে ওঠে এবং আপনাদের কলম-জাদুতেই আচ্ছন্ন থাকে।

দেখুন একথা আপনারা লখনৌর অধিবাসী, উর্দুভাষার প্রতিষ্ঠিত লেখক এবং আরবিভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী ব্যক্তির মুখ থেকে শুনছেন। আল-হামদু লিল্লাহ, আমার বিগত জীবন কেটেছে আরবিভাষার সেবায় এবং আল্লাহ চাহে তো আগামী জীবনও আরবিভাষারই সেবায় হবে নিবেদিত। আরবিভাষা আমাদের নিজেদের ভাষা, বরং আমি মনে করি যে, আমাদের মাতৃভাষা। আমাদের কথা থাকুক, আল্লাহর শোকর আমার খান্দানের অনেক সদস্যের এবং আমার ছাত্রদের অনেকের সাহিত্য প্রতিভা খোদ আরব সাহিত্যিকদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আরবরাও নিঃসংকোচে স্বীকার করে।

বন্ধুগণ! উর্দুভাষার পরিবেশে যে চোখ মেলেছে, আরবি সাহিত্যের সেবায় যার জীবন-যৌবন নিঃশেষ হয়েছে সে আজ তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণ দায়িত্ব সচেতনতার সাথে বলছে, বাংলাভাষা ও সাহিত্যকে ইসলাম বিরোধী শক্তির রহম করমের ওপর ছেড়ে দিও না। ওরা লিখবে, তোমরা পড়বে এ অবস্থা কিছুতেই বরদাশত করা উচিত নয়। মনে রেখো, লেখা ও লেখনীর রয়েছে অদ্ভুত প্রভাবক শক্তি যে, এর মাধ্যমে লেখকের ভাব-অনুভূতি, এমনকি তার হৃদয়ের স্পন্দনও পাঠকের মাঝে সংক্রমিত হয়। অনেক সময় পাঠক নিজেও তা অনুভব করতে পারে না। অবচেত মনে চলে তার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া। ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান লেখকের লেখনী পাঠকের অন্তরেও সৃষ্টি করে ঈমানের বিদ্যুত প্রবাহ। হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী (রহ) বলতেন-‘পত্রযোগেও মুরীদের প্রতি তাওয়াজ্জুহ আত্মসংযোগ নিবদ্ধ করা যায়। শায়খ তাওয়াজ্জুহসহকারে মুরীদের উদ্দেশ্যে যখন পত্র লেখেন তখন সে পত্রের হরফে হরফে থাকে এক অত্যাশ্চর্য প্রভাবশক্তি।’

(জীবন পথের পাথেয়, পৃ. ২১৭-১৯)

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও রয়েছে। আমাদের মহান পূর্ববর্তীদের রচনাসম্ভার আজো বিদ্যমান রয়েছে। পড়ে দেখুন, আপনার ছালাতের প্রকৃতি বদলে যাবে। হয়ত পঠিত বিষয়ের সঙ্গে সালাতের কোন সম্পর্ক নেই, কিন্তু লেখার সময় হয়ত সেদিকে তার তাওয়াজ্জুহ নিবদ্ধ ছিলো। এখন সে লেখা পড়ে গিয়ে সালাত আদায় করুন, হৃদয় জীবন্ত এবং অনুভূতি জাগ্রত হলে ” অবশ্যই আপনি উপলদ্ধি করবেন যে, আপনার ছালতের রূপ ও প্রকৃতি বদলে গেছে, তাতে রূহ ও রূহানিয়াত সৃষ্টি হয়েছে। এ অভিজ্ঞতা আমার বহুবার হয়েছে। আপনি অমুসলিম লেখকে সাহিত্য পাঠ করবেন, তাদের রচিত গল্প-উপন্যাস ও কাব্যের রস উপভোগ করবেন, তাদের লিখিত ইতিহাস গলাধঃকরণ করবেন অথচ আপনার হৃদয়ে তা রেখাপাত করবে না, আপনার চিন্তা-চেতনাকে তা আচ্ছন্ন করবে না, এটা কী করে হতে পারে? আগুন জ্বালাবে না এবং বিষ তার ক্রিয়া করবে না, এটা কীভাবে বিশ্বাস করা চলে? চেতন মনে আপনি অঙ্গীকার করুন, কিন্তু আপনার অবচেতন মনে লেখা ও লেখনী তার নিজস্ব প্রস্তাব বিস্তার করবেই। আমি মনে করি আপনাদের জন্য এটা বড়ই লজ্জার কথা। বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত না হলে আমার কিছুতেই বিশ্বাস হতো না যে, যে দেশে যে ভাষায় লক্ষ লক্ষ দক্ষ আলিম জন্ম হয়েছে সে দেশে সে ভাষায় কুরআনের প্রথম অনুবাদকারী হলেন একজন হিন্দু সাহিত্যিক।

এ দেশের মুসলিম সাহিত্যিকদের আপনার ‘বিশ্বের দরবারে তুলে ধরুন। নজরুল ও ফখরুলকে তুলে ধরুন। সাহিত্যের অঙ্গনে তাদেরও যে অবিস্মরণীয় কীর্তি ও কৃতিত্ব রয়েছে তা বিশ্বকে অবহিত করুন। নিবিষ্টচিত্ত ও গবেষক দৃষ্টি নিয়ে তাদের সাহিত্য অধ্যয়ন করুন, অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করুন এবং সম্ভব আরবি ভাষায়ও তাদের সাহিত্য তুলে ধরুন। কত শত আলোড়ন সৃষ্টিকারী মুসলিম সাহিত্য-প্রতিভার জন্ম এ দেশে হয়েছে তাদের কথা লিখুন। বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে তাদের তুলে আনুন।

আল্লাহর রহমতে এমন কোন যোগ্যতা নেই যা কুদরতের পক্ষ হতে আপনাদের দেওয়া হয় নি। হিন্দুস্তানে আমাদের মাদরাসাগুলোতে এমন অনেক বাঙ্গালী ছাত্র আমি দেখেছি যাদের মেধা ও প্রতিভার কথা মনে হলে এখনো ঈর্ষা জাগে। পরীক্ষায় ও প্রতিযোগিতায় তাদের মোকাবেলায় ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের ছাত্ররা অনেক পিছনে থাকতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে মানপত্র দেওয়া হয়েছে। আমাদের ধারণাই ছিলো না যে, এত সুন্দর আরবি লেখার লোকও এখানে রয়েছে। কখনো হীনস্মন্যতার শিকার হবেন না। সব রকম যোগ্যতাই আল্লাহ আপনাদের দান করেছেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় এগুলোর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না।

বাংলাভাষার নেতৃত্বকে দুটি অশক্তির হাত থেকে ছিনিয়ে আনতে হবে

আমার কথা মনে রাখবেন। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নিতে হবে। দুটি শক্তির হাত থেকে নেতৃত্ব ছিনিয়ে আনতে হবে। অমুসলিম শক্তির হাত থেকে এবং অনৈসলামি শক্তির হাত থেকে। অনৈসলামি শক্তি অর্থ সেসব নামধারী মুসলিম লেখক-সাহিত্যিক যাদের মন-মস্তিষ্ক ও চিন্তা-চেতনা ইসলামি নয়। ক্ষতি ও দুস্কৃতির ক্ষেত্রে এরা অমুসলিম লেখকদের চেয়েও ভয়ংকর। মোটকথা, এ উভয় শক্তির হাত থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের নেতৃত্ব ছিনিয়ে আনতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করুন এবং এমন অনবদ্য সাহিত্য সৃষ্টি করুন যেন অন্য দিকে কেউ ফিরেও না তাকায়। আল-হামদু লিল্লাহ! আমাদের হিন্দুস্তানী আলিম সমাজ প্রথম থেকেই এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলেন। ফলে সাহিত্য, কাব্য, সমালোচনা, ইতিহাস- এক কথায় সাহিত্যের শাখায় এখন আলিমদের রয়েছে দৃপ্ত পদচারণা। তাঁদের উজ্জ্বল প্রতিভার সামনে সাহিত্যের বড় বড় দাবিদাররাও নিষ্প্রভ। একবার একটি জনপ্রিয় উর্দু সাহিত্যসাময়িকীর পক্ষ হতে একটি সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিলো। প্রতিযোগীদের দায়িত্ব ছিলো উর্দুভাষার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক নির্বাচন। বিচারকদের রায়ে তিনিই পুরস্কার লাভ করেছেন যিনি মাওলানা শিবলী নোমানীকে উর্দু সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ পুরুষ প্রমাণ করেছিলেন। উর্দু ভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক কোন সম্মেলন বা সেমিনার হলে সভাপতিত্বের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হতো মাওলানা সৈয়দ সোলায়মান নদবী, মাওলানা আবদুসসালাম নদবী, মাওলানা হাবীবুর রহমান খান শিরওয়ানী, কিংবা মাওলানা আবদুল মাজেদ দরয়াবাদীকে। উর্দু কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসের ওপর দুটি বই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। একটি হলো মওলভী মুহাম্মদ হোসাইন আযাদ কৃত আবে হায়াত, দ্বিতীয়টি আমার মরহুম পিতা মাওলানা আবদুল হাই কৃত গুলে লালা (কোমল গোলাপ)।

মোটকথা হিন্দুস্তানে উর্দু সাহিত্যকে আমরা অন্যের নিয়ন্ত্রণে যেতে দেইনি। তাই আল্লাহর রহমতে সেখানে কেউ এ কথা বলতে পারে না যে, মাওলানা উর্দু জানে না, কিংবা টাকশালী উর্দুতে তাদের হাত নেই। এখনো হিন্দুস্তানি আলিমদের মাঝে এমন লেখক, সাহিত্যিক ও অনলবর্ষী বক্তা রয়েছেন যাদের রসামনে দাঁড়াতেও অন্যদের সংকোচ বোধ হবে। ঠিক এ কাজটাই আপনাদের করতে হবে বাংলাদেশে। আমার কথা আপনার লিখে রাখুন। দীর্ঘ জীবনের লদ্ধঅভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন, কিংবা বিমাতাসুলভ আচরণ এ দেশের আলিম সমাজের জন্য জাতীয় আত্মহত্যারই নামান্তর হবে। (জীবন পথের পাথেয়, পৃ. ২২০)

১৪ মার্চ ১৯৮৪ ইংরেজি তারিখে কিশোরগঞ্জের জামিয়া এমদাদিয়া প্রাঙ্গনে বিশিষ্ট আলিম, ইসলামি বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেছিলেন, আমার মূল বক্তব্য হলো, যে কোন মূল্যে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেয়া। আর তা বাংলাভাষা ও সাহিত্যে পূর্ণ অধিকার এবং সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন ছাড়া কখনো সম্ভব নয়। আমার খুবই আফসোস হচ্ছে যে, আপনাদের সাথে আমি বাংলাভাষায় কথা বলতে সক্ষম নই। যদি আমি আপনাদের ভাষায় আপনাদেরকে m‡¤^vab করতে পারতাম তাহলে আজ আমার আনন্দের কোন সীমা থাকতো না। ইসলামের দৃষ্টিতে কোন ভাষাই পর নয়, বিদেশি নয়। পৃথিবীর সকল ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি এবং প্রত্যেক ভাষারই রয়েছে নিজস্ব কিছু গুণ ও বৈশিষ্ট্য। ভাষা বিদ্বেষ হলো জাহেলিয়াতের উত্তরাধিকার। কোন ভাষা যেমন পূজনীয় নয়, তেমনি ঘৃণা-বিদ্বেষেরও পাত্র নয়। একমাত্র আরবিভাষাই পেতে পারে পবিত্র ভাষার মর্যাদা। এছাড়া পৃথিবীর আর সব ভাষাই সমমর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন এবং যুগে যুগে মানুষের মুখের ভাষা উন্নতি ও সমৃদ্ধির বিভিন্ন সোপান অতিক্রম করে বর্তমান রূপ ও আকৃতিতে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। মুসলমান প্রতিটি ভাষাকেই শ্রদ্ধা ও মর্যাদার চোখে দেখে। কেননা ভাষা আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর দান এবং মনের ভাব প্রকাশে সব ভাষাই মানুষকে সাহায্য করে। তাই প্রয়োজনে যে কোন ভাষা শিক্ষা করা ইসলামেরই নির্দেশ। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রাযি.)-কে হিব্রু ভাষা শেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ হিব্রু হচ্ছে নির্ভেজাল ইহুদি ভাষা। মাতৃভাষা ও সাহিত্যের প্রতি যদি আমরা উদাসীন থাকি তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তা চলে যাবে বাতিল শক্তির নিয়ন্ত্রণে। ফলে যে ভাষা ও সাহিত্য হতে পারতো ইসলামের শিক্ষা ও দীক্ষা প্রচারের কার্যকর মাধ্যম, সেটাই হয়ে দাঁড়াবে শয়তান ও শয়তানিয়াতের বাহন। আপনাদের এখানে কলকাতা থেকে বিরুদ্ধ সংস্কৃতির সাহিত্য আসছে। সাহিত্যের ছদ্মাবরণে ইসলামবিরোধী বাদ-মতবাদ এবং চরিত্রবিধ্বংসী সংস্কৃতির প্রচার চলছে। তাতে ইসলামি মূল্যবোধ ধ্বংসের মালমশলা মেশানো হচ্ছে, আর সরলমনা তরুণ সমাজ গোগ্রাসে তাই গিলছে। এর পরিণতি কখনো শুভ হতে পারে না। আপনারা তিরমিযি, মিশকাত, কিংবা মীযানের শরাহ লিখতে চাইলে আরবি-উর্দুতে লিখুন, আমার আপত্তি নেই। কিন্তু জনগণকে বোঝাতে হলে জনগণের ভাষায় কথা বলতে হবে। যুগে যুগে আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূলকে তাদের কওমের ভাষায় কথা বলতে হয়েছে। নায়েবে রাসূলুল্লাহ হিসেবে আপনাদেরও একই তরীকা অনুসরণ করতে হবে।

আমি আপনাদের খিদমতে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই পাক-ভারত উপমহাদেশে হাদীছ, তাফসীর, ফিকহ ও উসুল শাস্ত্রের ওপর এ পর্যন্ত অনেক কাজ হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যাখ্যা ও টীকাগ্রন্থও লেখা হয়ে গেছে। তাতে নতুন সংযোজনের বিশেষ কিছু নেই। আপনাদের সামনে এখন পড়ে আছে কর্মের নতুন ও বিস্তৃত এক ময়দান। দেশ ও জাতির ওপর আপনাদের নিয়ন্ত্রণ। যেন শিথিল হতে না পারে। মানুষ যেন মনে না করে যে, দেশে থেকেও আপনারা পরদেশি। স্বদেশের মাটিতে এই প্রবাস-জীবন অবশ্যই আপনাদের ত্যাগ করতে হবে। মনে রাখবেন, এ দেশেই আপনাদের থাকতে হবে এবং এ দেশের সমাজেই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ আঞ্জাম দিতে হবে। এদেশের সাথেই আপনাদের ভাগ্য ও ভবিষ্যত জড়িত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,

«إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِيْ شَهْرِكُمْ هَذَا، فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا، فَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ».

‘হে মুসলমানগণ! তোমাদের জান এবং তোমাদের মাল এবং তোমাদের আবরু-ইজ্জত পরস্পরের জন্য হারাম ও পবিত্র। যেমন এই মাসের এই দিনটি তোমাদের জন্য হারাম ও পবিত্র। যারা উপস্থিত তারা আমার বাণী পৌঁছে দাও সেই লোকদের কাছে যারা অনুপস্থিত।’

(সহীহ মুসলিম: ১৬৭৯)

সুতরাং ভাষাগত পার্থক্যের কারণে কোন মুসলমান ভাইকে অপমান করা, তার ইজ্জত-আবরু লুণ্ঠন করা, কিংবা তাকে হত্যা করা হবে চরম জুলম ও অবিচার। আল্লাহ বলেছেন,

قَدْ جَعَلَ اللّٰهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا۰۰۳

‘প্রতিটি বস্তুর জন্য আল্লাহ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ও স্তর নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (সূরা আত-তালাক: ৩)

কোন মুসলমানের জন্য সে সীমালঙ্ঘন করা বৈধ নয়। মাতৃভাষা ও সাহিত্যকে ভালবাসো। চর্চা-সাধনায় আত্মনিয়োগ করো। তোমার সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটাও, কাব্যের রস উপভোগ করো, কিন্তু অতিরঞ্জনও সীমা লঙ্ঘন করো না। কুরআন শরীফকেও যদি কেউ পূজা করা শুরু করে এবং উপাস্যজ্ঞানে সাজদা করে তবে সে মুশরিক হয়ে যাবে। কেননা ইবাদত শুধু আল্লাহর প্রাপ্য। তবে সব ভাষাকে স্ব স্ব মর্যাদায় বহাল রেখে মাতৃভাষাকে ভালবাসা এবং স্বীয় অবদানে তাকে সমৃদ্ধ করে তোলা শুধু প্রশংসনীয়ই নয়, অপরিহার্য কর্তব্যও বটে।

বন্ধুগণ! আমি বিদেশি মুসাফির। দুদিনের জন্য এসেছি তোমাদের দেশে তোমাদের মেহমান হয়ে। তোমাদের কল্যাণ কামনায় নিবেদিত হয়ে «الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ» এই হাদীসের ওপর আমল করে তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে গেলাম। যদি পরদেশি মুসাফির ভাইয়ের এ দরদভরা আওয়ায তোমাদের মনে থাকে তাহলে একদিন না একদিন অবশ্যই এর গুরুত্ব তোমরা উপলব্ধি করতে পারবে। কিন্তু তা যেন সময় পার হয়ে যাওয়ার পর এবং পানি মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার পর না হয়। একদিন তোমরা অবশ্যই বোঝবে, আমি কী বলেছিলাম এবং কেন বলেছিলাম।

فَسَتَذْكُرُوْنَ۠ مَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ١ؕ وَاُفَوِّضُ اَمْرِيْۤ اِلَى اللّٰهِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ بَصِيْرٌۢ بِالْعِبَادِ۰۰۴۴

‘তোমাদের যা বলছি, অচিরেই তোমরা তা স্মরণ করবে। আমি আমার যাবতীয় বিষয় আল্লাহর হাতে সোপর্দ করছি। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সবকিছু দেখেন।’

(সূরা গাফির: ৪৪)

আসমানের ফেরেশতারা যেন সাক্ষী থাকে, কিরামান কাতিবীন যেন লিখে রাখে যে, প্রতিবেশী ভাইদের প্রতি আমি আমার দায়িত্ব পূর্ণ করেছি। আমি আবার বলছি- শেষবারের মত বলছি, তোমরা যদি এ দেশের মাটিতে বাঁচতে চাও; যদি এখানে ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চাও তাহলে এটাই হচ্ছে একমাত্র পথ। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন। আমীন।

বন্ধুরা, আজ মুফাক্কেরে ইসলাম মাওলানা আলী মিয়া নদবী (রহ.)-এর বাণী দিয়ে লেখা সমাপ্ত করলাম। বাংলাভাষায় কিভাবে দক্ষতা অর্জন করবেন তা নিয়ে অন্য কোন সময় লিখব, ইন শা আল্লাহ। ভালো থাকুন। সুস্থ্য থাকুন। সুখে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী

শিক্ষা পরামর্শ

উত্তর দিচ্ছেন: সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী

প্রশ্ন: বর্তমানে আমি হিদায়াতুন নাহব পড়ছি। আরবি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করতে খুবই আগ্রহী। তবে এখনো পর্যন্ত মনেরভাব ভালোভাবে আরবি ভাষায় লিখতে ও বলতে পারি না। আরবি ভাষায় বলার ও লেখার দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়? সেক্ষেত্রে কোন কোন কিতাব সহায়ক হবে? এবং কিভাবে তা পড়তে হবে? বিস্তারিত জানালে চির কৃতজ্ঞ হবো। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন, আমীন।

ইতি

ইয়াছিন আরফাত (রাইহান)

শিক্ষার্থী

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

উত্তর: আরবি বলা ও লিখার দক্ষতা অর্জনের জন্য পড়ার চেয়ে অনুশীলন ও তামরীনের প্রয়োজনই বেশি। তাছাড়া পড়ার বিভিন্ন ধরণ রয়েছে; বুঝে শুনে পড়া, বারবার পড়া, লিখা ও বলার যোগ্যতা অর্জনের উদ্দেশ্যে পড়া ইত্যাদি। কিন্তু আরবি বলা ও লেখার যোগ্যতা অর্জনের জন্য শুধু পড়লে হবে না, তামরীন-অনুশীলনও করতে হবে। বলার অনুশীলনের জন্য কোন উস্তাদের তত্ত্বাবধানে আপনারা কয়েকজন সহপাঠি সংকল্পবদ্ধ হোন যে, দৈনিক আধা ঘণ্টা আরবিতে কথা বলব, এবং অধ্যবসয়ের সাথে এর ওপর আমল করব।

আর লেখার ব্যাপারে কয়েক কাজ করতে হবে। যথা-

প্রথমত: আরবি বাক্যাংশ মুরাক্কাবে নাকাসে, তারকীবে ইযাফী ও তারকীবে তাওসিফীর গঠনপ্রণালী জেনে নির্বাচিত শব্দাবলি দ্বারা তা অনুশীলন করা।

দ্বিতীয়ত: ছোট ছোট আরবি বাক্য- জুমলায়ে খবরিয়া ও জুমলায়ে ইনশায়িয়া তৈরি করে তামরীন করা। আস্তে আস্তে বড় বড় আরবি বাক্য গঠন করার চেষ্টা করা।

তৃতীয়ত: যে কোন একটি বিষয় নির্ধারণ করে ওই বিষয়ে বাক্যগঠনের অনুশীলন করা। যেমন- জামিয়ার মসজিদ সম্পর্কে দশটি বাক্য গঠন করো। এটি জামিয়ার মসজিদ, মসজিদটি সুন্দর ও বড়। মসজিদের দরজায় একটি সুন্দর গ্লাস আছে। মসজিদের উঁচু মিনারায় চারটি মাইক আছে। মসজিদের নতুন হাউজে অনেক পানি আছে। মসজিদের ইমাম একজন দক্ষ আলেম ও কারী ইত্যাদি।

চতুর্থত প্রতিদিন আরবিতে রোজনামচা লেখা অথবা একদিন বাংলায় লিখুন, পরের দিন আরবিতে লিখুন। রোজনামচা মানে ডায়রি। রোজনামচা বা ডায়েরি লেখার অর্থ হলো প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনা ও মনের চিন্তা-ভাবনা সেই দিনের সন-তারিখসহ খাতার পৃষ্ঠায় সহজ সরল ভাষায় লিখে রাখা। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ঘটনা, সামাজিক ও জাতীয় ঘটনা, এমনকি আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীও নিজের চিন্তা-ভাবনা ও অনুভব- অনুভূতির আলোকে লেখা যেতে পারে। নিয়মিত রোজনামচা লিখলে অতিতাড়াতাড়ি লিখায় হাত এসে যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে মনে রাখবে, অনুশীলনের সূচনা সহজ বিষয়াদির মাধ্যমে হওয়া উচিত। কঠিন ও উচ্চাঙ্গের বিষয়াদি লিখতে যাবেন না।

আরেকটি জরুরি কাজ হলো, আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী একটি কিতাব নির্বাচন করুন। যেমন- আল-কিরাআতুর রাশিদা কিতাবটি গ্রহণ করতে পারেন। সেখান থেকে একটি পাঠ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তারপর তা বাংলায় অনুবাদ করুন। অতঃপর তার সারসংক্ষেপ আরবিতে নিজের ভাষায় লিখুন এবং তার অনুকরণে অনুরূপ একটি বিষয়ে প্রথমে বাংলায় অতঃপর আরবিতে লিখুন। যেমন, সেখানে প্রথম পাঠ দেওয়া আছে, كيف أقضي يومي؟ এটি ভালো করে পাঠ করুন। অতঃপর আপনি আপনার দিন কিভাবে অতিবাহিত করেন, তা বাংলায় লিখে আরবি করুন। এভাবে মেহনত চালিয়ে যান। তবে মনে রাখবেন, তামরীনের এই ধারাটির ব্যাপারে আসল নিয়ম হল, ভাষা ও সাহিত্যের রুচিসম্পন্ন কোন উস্তাদের তত্ত্বাবধানে এবং তার নিদের্শনা মতো চালিয়ে যাওয়া। যদি এই সুযোগ না হয়, তাহলে আদর্শবান, সৎ চরিত্রের অধিকারী পারদর্শী কোন বড় ভাইয়ের অনুকূল শীতল ছায়াতলে মেহনত করা। অন্যথায় ব্যক্তিগত ভাবে হলেও মেহনত চালিয়ে গেলে অনেক ফায়েদা হবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন: তা’লিমী মুরব্বীর প্রয়োজনীয়তা ও তাঁর কাছ থেকে উপকৃত হওয়ার পথ-পন্থা জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।

ইতি

মোহাম্মদ আরফাত রহমান

শিক্ষার্থী, জামায়াতে পঞ্জুম

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

উত্তর: আদর্শ ছাত্রজীবনের বিশেষ কর্তব্য হচ্ছে, একজন তা’লীমী মুরব্বী নির্ধারণ করে তার পরামর্শ ও নেগরানিতে চলা। এতে স্বাধীনতা নষ্ট হবে ভেবে নিজের খেয়াল-খুশিতে যখন তখন প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে, মাঝে মাঝে শ্রেণি বাদ দিয়ে, অথবা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিয়ে, কিংবা নানা সমিতি ও সংঘের সাথে জড়িয়ে, মোবাইল আর ইন্টেরনেটের পিছনে পড়ে বহু ছাত্র যে বিপথগামী হচ্ছে তা দেখে বড়ই আফসোস হয়। এমন নাযুক সময়ে এ বিষয়টিকে খুবই গুরূত্ব দেওয়া উচিত।

শিক্ষকমণ্ডলীর সঙ্গে স্থায়ী ও দৃঢ় সম্পর্ক রাখা এবং তাঁদের দীর্ঘ ও বিশেষ সোহবত গ্রহণ করা ইলমের গুরুত্বপূর্ণ আদব। উস্তাযের সঙ্গে কেবল দরসের সম্পর্ক বা সাময়িক ও নিয়মসর্বস্ব সম্পর্ক যথেষ্ট নয়। দৃঢ় সম্পর্ক অর্থ হল, সম্পর্কটি কেবল দরসগাহের সম্পর্ক না হওয়া, দরসের বাইরে এবং উস্তাযের নিকট থেকে চলে আসার পর কর্মজীবনেও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, নির্দেশনা গ্রহণ করা, ইলমী সমস্যাবলির সমাধানের জন্য তাঁর শরণাপন্ন হওয়া এবং দুআ লাভ করা ইত্যাদি বিষয়ে একজন তালিবে ইলমকে সবসময়ই সজাগ-সচেতন থাকা উচিত।

বস্তুত আমাদের কওমি মাদরাসাসমূহে কেবলমাত্র কুরআন-হাদীসের জ্ঞানই শিক্ষা দেওয়া হয় না, বরং শিক্ষার্থীদেরকে সত্যিকারের মানুষ বানিয়ে দেওয়া হয়। আল-হামদু লিল্লাহ, আমাদের প্রতিষ্ঠানসমূহে ইলম শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি ছাত্রদের আমল-আখলাক ও তারবিয়তের দিকেও খেয়াল রাখা হয়। এটাই কওমি মাদরাসর মূলনীতি। সুতরাং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ইলমি এবং আমলি জীবন গঠন করার প্রতি যত্মবান হতে হবে। একজন তালিমি মুরব্বি নির্বাচন করে তার পরামর্শ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জীবন পরিচালনা করতে হবে। ছাত্র জীবনে তালিমী মুরব্বির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সকলের নিকট সমাদৃত। সবাই এ কথাটি ভালোভাবে জানেন যে অভিভাবক ছাড়া কোন কাজে পূর্ণ সফলতা আশা করা যায় না। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে শুধুমাত্র কিতাব পাঠাননি বরং কিতাবের সাথেসাথে একজন শিক্ষককে পাঠিয়েছেন। তিনি আমাদের প্রিয় রাসূল ও শিক্ষক হযরত মোহাম্মদ (সা.)। সুতরাং আমাদের সকলকে অভিভাবক মেনে চলতে হবে, এটা আল্লাহ তাআলার নীতি ও পদ্ধতি।

নিঃসন্দেহে একজন শিক্ষার্থী তার প্রাথমিক জীবনে তালিমী মুরব্বি ব্যতীত সঠিক পথ নির্ণয় করতে পারে না। নিজের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ভুল পথে জীবন পরিচালিত করে। তাতে অনেকে অকালে ঝরে পড়ে। তা’লিমী মুরব্বির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আমাদের আকাবির পূর্বসূরিগণ সকলেই কোন কোন উস্তাদকে নিজের মুশীর (পরামর্শক) নির্বাচন করেছেন। এ কারণে তারা নিজেরাও আকাবির হতে পেরেছেন। বর্তমানে সেই প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ এখন অকালে ঝরে পড়ার উপাদান অনেক বেশি। সুতরাং বর্তমানে কেউ যদি সত্যিকারের মানুষ এবং ভালো আলেম হতে চান তবে তা’লিমী মুরব্বি নির্বাচন করা আবশ্যক। অবশ্যই তালিমী মুরব্বি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যেই উস্তাদকে আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে এবং যিনি ইলমে বিশেষ পান্ডিত্য রাখেন এবং আমলের প্রতি যত্মবান- তাকে তালিমে মুরব্বি হিসেবে বাছাই করবেন। তাহলে জীবনকে সফলকাম বানানো সহজ হবে।

তা’লিমী মুরব্বির কাছ থেকে উপকৃত হওয়ার পথ হচ্ছে, উস্তাযকে মুশীরে হায়াত হিসেবে গ্রহণ করা। নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে না করা, বরং নিজেকে উস্তাযের হাতে সোপর্দ করা। এটা হচ্ছে খোদরায়ী (স্বেচ্ছাসারী) থেকে নিরাপদ থাকার সহজ উপায়। তাঁকে সর্বোচ্চ বিশ্বাস করা, মনে প্রাণে ভালবাসা এবং তাঁর সিদ্ধান্তকে নিজের জন্য কল্যাণকর মনে করে তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা। পছন্দ-অপছন্দ সবকিছুর ক্ষেত্রে তাঁর রুচিকেই প্রধান্য দেওয়া। সকল সমস্যা তাঁর সামনে পেশ করে তার সমাধান চাওয়া এবং তাঁর সমাধানকে অকুণ্ঠচিত্তে মেনে নেওয়া। তাঁর অজান্তে কোন কিছু না করা। তাহলেই তালিমী মুরব্বি থেকে সত্যকারের উপকৃত হওয়া সম্ভব হবে, আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন, আমীন।

প্রশ্ন: ছাত্র জীবনে কতটুকু পরিমাণ সুন্নাত ও নফল ইবাদতের পাবন্দ হওয়া জরুরি? কোনো কোনো আকাবির ওলামায়ে কিরাম বলেন, ছাত্র যমানায় নফল ইবাদত শোভা পায় না। তার চেয়ে মুতালাআয় (অধ্যয়নে) মগ্ন থাকা অতিউত্তম। অথচ হাদীস শরীফে এসেছে, ইলম অনুযায়ী আমল করা অতীব জরুরি এবং বিবেকের দাবিও তাই। কেননা, জানার পর যদি মানা না হয়; তাহলে জেনে কী ফায়েদা? উল্লিখিত বিষয়ে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

ইতি

মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান

শিক্ষার্থী, জামায়াতে পঞ্জুম

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

উত্তর: শিক্ষাকালীন সময়ে আমলের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য উচিত। যেন ইলমি যোগ্যতার সাথে সাথে আমলি শক্তিও বৃদ্ধি পায়। আমলের ক্ষেত্রে অবহেলা করা যাবে না। কেননা আজ করবো, কাল করবো, বলতে বলতে জীবন শেষ হয়ে যাবে, আমলের সুযোগ হবে না। ইমাম গাযালী (রহ.) ফাতিহাতুল উলুম গ্রন্থে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

«إنَّ الشيطانَ ربما يُسوِّفُكم بالعِلمِ»، فقيل: يا رسولَ اللهِ وكيف ذلك ؟ قال يقول : «اطلبِ العلمَ ولا تعمل حتى تعلمَه كله، فلا يزالُ في العِلمِ قائلًا، وللعملِ مُسوِّفًا حتىٰ يموتَ وما عمل». رواه أنس بن مالك ، نقله العراقي في تخريج الإحياء، وحكم عنه بأنه : إسناده ضعيف.

‘শয়তান অনেক সময় তোমাদেরকে ইলমদার উপকৃত হতে বিলম্বিত করে দেয়।’ বলা হলো, এটি কিভাবে? তিনি বলেন, সে বলে, ইলম অর্জন করো, আমল করো না। যখন সব ইলম অর্জিত হয়ে যাবে, তখন আমল করবে। এদিকে মানুষ ইলম অর্জনে ব্যস্ত থাকে, আমলের ক্ষেত্রে অবহেলা করে, এ অবস্থায় তার মৃত্যু উপস্থিত হয়ে যায়। তখন সে বে-আমল হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে যায়।’

(ফাতিহাতুল উলুম, পৃ. ১৯)

শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহ.) নিজের ছাত্র জীবনের কথা এভাবে লিখেন যে, ইলম অর্জনে অতিব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও নফল নামায, রাত্রি জাগা এবং আল্লাহর দরবারে কান্না-কাটির ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখতাম। ফলে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে বড় মাপের আলেম হওয়ার সাথে সাথে বড় মাপের শায়খে কামেলও বানিয়েছেন। তিনি তখন থেকেই স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে বেশ কয়েকবার সাক্ষাত লাভে ধন্য হন। আবার মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আশিআতুল লমাআত, মাদারিজুন নুবুওয়াতহাদীন নাজিরীন ইত্যাদি মূল্যবান কিতাবাদি রচনা করে গেছেন। (তুহফাত তুলাবা ওয়াল ওলামা, পৃ. ৪৪৮)

আল্লামা আবদুল ওয়াহ্‌হাব আশ-শা’রানী (রহ.) আদ-দুররুল মানদুদ গ্রন্থে লিখেন, আমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে যে, যে ছাত্রের মধ্যে আমলের ব্যপারে অবহেলার সন্দেহ হবে তাকে পড়া-লেখা থেকে বিরত রাখবে। কারণ, বে-আমলকে পড়ানোর অর্থ তার বিপক্ষে আল্লাহর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করা, এছাড়া অন্য কোন ফায়েদা নেই। তার উদহারণ হলো নোনা মাটিতে চাষ করা, বৈ কিছু নয়।

অবশ্যই মনে রাখবেন, একজন তালিবে ইলমের জন্য ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায়ের পর প্রধান কাজ ও ব্যস্ততা হলো ইলম চর্চা অর্থাৎ দরস, মুতালাআ, তাকরার ও তামরীনে নিমগ্ন থাকা। এতে কোনো বিঘ্ন ঘটানো উচিত নয়। সুতরাং তলবে ইলমের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এত অধিক পরিমাণে নফল ইবাদত বন্দেগী যিকির ও ওয়াযিফায় মশগুল হওয়া তালিবে ইলমের জন্য মুনাসিব নয়।

কিন্তু একথার অর্থ এই নয় যে, তালিবে ইলম কোনো নফল ইবাদতই করবে না। বরং কিছু কিছু নফল আমল তাকেও করতে হবে। আমলের ক্ষেত্রে মেহনতের প্রথম পর্যায় হল ফরয-ওয়াজিব ও সুন্নতে মুওয়াক্কাদাসমূহ যত্নের সঙ্গে আদায় করা। এগুলোতে ইখলাস পয়দা করা, রূহ পয়দা করা এবং সুন্নাত মোতাবেক আদায় করতে সচেষ্ট হওয়া।

দ্বিতীয় পর্যায় হল, নিয়মিত কুরআনে করীমের তেলাওয়াত ও আদইয়ায়ে মাছুরাহ-এর ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার সাথে সাথে শেষ রাতে জাগা সম্ভব হলে কয়েক রাকআত তাহাজ্জুদ পড়া আর কোনো ওজরের কারণে শেষ রাতে জাগা সম্ভব না হলে শোয়ার আগে কিয়ামুল লাইলের নিয়তে দুই চার রাকআত নামায পড়ে নেওয়া। দিনের শুরুতে দুই রাকআত করে চার রাকআত চাশত ও ইশরাকের নামায এবং মাগরিবের পরে দুই-চার রাকআত যা সম্ভব হয় আদায় করা। মসজিদে আসা-যাওয়ার পথে ২০বার ইস্তিগফার ও দরূদ শরীফ পাঠ করা, যা পাঁচ ওয়াক্তে পাঠ করলে দৈনিক ১০০ বার ইস্তিগফার ও ১০০ দরুদ শরীফ পাঠ করা হয়ে যায়।

এই সামান্য পরিমাণ নফল এবং সাথে অল্প পরিমাণে সহজ কিছু যিক্‌রের আমল এমন কিছু বেশি কাজ নয়, যা তলবে ইলমের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। বরং তিলাওয়াত, নাওয়াফেল, আযকার ও আদইয়ায়ে মাছুরাহ এর মাধ্যমে অন্তরের পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়, যা ইলমী ও আমলী উভয় ধরনের উন্নতি ও অগ্রগতির পক্ষেই সহায়ক। উল্লেখ্য, কোনো তালিবে ইলমের বিশেষ অবস্থার বিবেচনায় যদি তাকে তার তা’লীমী মুরববী নাওয়াফেল থেকে বিরত থেকে পুরো সময় ইলমের চর্চায় মগ্ন থাকতে বলেন তবে তা ভিন্ন কথা। অবশ্যই, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা এবং তাকওয়া ও তাহারাত অর্জনে সচেষ্ট হওয়া তো সবার জন্য সর্ব অবস্থায় জরুরি।

কিছু কিছু আকাবির যে বলেন, ‘ছাত্র যামানায় নফল ইবাদত শোভা পায় না’ তা মূলত অধিক পরিমাণে নাওয়াফেল ও আযকারে মশগুল থাকার ব্যাপারে। অর্থাৎ তলবে ইলমের ক্ষেত্রে অবহেলা করে ইবাদত-বন্দেগীকে জীবনের একমাত্র লক্ষবস্তু বানিয়ে সারা দিনরাত এই এক কাজেই ব্যস্ত থাকা; তালেবুল ইলমের জন্য শোভা পায় না। অন্যথায় ইলম ও আমল উভয়টি সমান গুরুত্বের দাবি রাখে। সুতরাং একজন আদর্শ শিক্ষার্থীকে ইলম ও আমল উভয়কে সাথে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। আমলের ক্ষেত্রে যেন কোনো গাফিলতি না হয় সেদিকে সযত্ন দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।

আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, কোনো আমলের গুরুত্ব শুধু সওয়াবের বিবেচনায় হয় না, ওই আমলের উপকারিতা ও ফলাফলও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিছক আইনী দৃষ্টিভঙ্গি যদিও এই রায় দেয় যে, নাওয়াফেল, আযকার- আদইয়া পরিত্যাগ করায় কোনো গোনাহ নেই। আযকার ও খুব বেশি হলে কিছু সওয়াব হাতছাড়া হবে। (একথাটাও সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। দেখুন-আলময়াফাকাত, শাতবী খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৭০) কিন্তু ভেবে দেখা প্রয়োজন যে, এ ধরনের নেতিবাচক মানসিকতার কারণে আমরা কত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সবচেয়ে বড় ক্ষতি এই হচ্ছে যে, এসব আমলের মাধ্যমে আমাদের ঈমান, আমল, ইলম, ফাহম এবং জীবন ও চরিত্রের ওপর যে উপকারী প্রভাব ছায়া বিস্তার করত তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

(তালিবানে ইলম: পথ পাথেয়, পৃ. ২০৬)

হ্যাঁ, আমাদের আকাবিরগণ ছাত্র জীবনে তাকরার-মুতালাআ, পাঠ-পুনর্পাঠ বাদ দিয়ে লম্বা-ছৌড়া নফল পড়াকে ভালো মনে করেন না। আমাদের জামিয়া পটিয়ার সাবেক মুফতি ও মুহাদ্দিস আল্লামা মুজাফফর আহমদ (রহ.) বলতেন, আমি একদিন মাগরিবের নামাযে জামায়াতে অংশ গ্রহণ করতে পারিনি। জামায়াত শেষ হওয়ার পর সকল তালেবে ইলম মসজিদ থেকে বের হয়ে গেছে। আমি মসজিদে এসে একাকি নামায পড়ছি। হঠাৎ দেখি জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আযীযুল হক (রহ.) আমার পিছনে দাঁড়ানো। তিনি মনে করেছেন, আমি নফল নামাযে মশগুল আছি। তাই, কোন কথা জিজ্ঞাসা না করে আমার পিঠে ঝোরে একটি চড় বসিয়ে দিলেন এবং ধমক দিয়ে বললেন, ছাত্র যামানায় অত বেশি নফল পড়তে হয় না। যাও, তাড়াতাড়ি গিয়ে তাকরারে বসো! তাকরার ও অধ্যয়ন বাদ দিয়ে, দরস ও পাঠ ফাঁকি দিয়ে নফলের প্রতি ঝোঁকে পড়া ছাত্রজীবনে মোটেও উচিত নয়। শিক্ষাজীবনে লম্বা-ছৌড়া আযকারে মশগুল হয়ে পড়া একেবারেই অনুচিত।

এ বিষয়ে মাসিক আল-কাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা আবদুল মালিক (হাফিযাহুল্লাহ) আল্লামা হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী (মৃত্যু ৭৪৮ হি.)-এর বিখ্যাত গ্রন্থ সিয়ারু আলামিন নুবালা (৭/১৬৭)-এ মিসআর ইবনে কিদাম আল-কুফী (রহ.)-এর জীবনী থেকে একটি চমৎকার মন্তব্য উল্লেখ করেছেন,

قُلْتُ: هَذِهِ مَسْأَلَةٌ مُخْتَلَفٌ فِيْهَا: هَلْ طَلَبُ العِلْمِ أَفْضَلُ، أَوْ صَلَاةُ النَّافِلَةِ وَالتِّلَاوَةُ وَالذِّكرُ؟ فَأَمَّا مَنْ كَانَ مُخلِصًا للهِ فِيْ طَلَبِ الْعِلْمِ، وَذِهنُهُ جَيِّدٌ، فَالعِلْمُ أَوْلَىٰ، وَلَكِنْ مَعَ حَظٍّ مِنْ صَلَاةٍ وَتَعَبُّدٍ، فَإِنْ رَأَيتَه مُجِدًّا فِيْ طَلَبِ الْعِلْمِ لَا حظَّ لَهُ فِي الْقُرُبَاتِ، فَهَذَا كَسلَانُ مَهِيْنٌ، وَلَيْسَ هُوَ بِصَادِقٍ فِيْ حُسنِ نِيَّتِه، وَأَمَّا مَنْ كَانَ طَلَبُه الْـحَدِيْثَ وَالْفِقْهَ غِيَّةً وَمَحبَّةً نَفْسَانِيَّةً، فَالعِبَادَةُ فِي حَقِّه أَفْضَلُ، بَلْ مَا بَيْنَهُمَا أَفْعَلُ تَفْضِيلٍ، وَهَذَا تَقسِيْمٌ فِيْ الْـجُمْلَةِ، فَقَلَّ وَاللهِ مَنْ رَأَيتُه مُخلِصاً فِيْ طَلَبِ الْعِلْمِ. دَعْنَا مِنْ هَذَا كُلِّه.

তিনি বলেন, এরপর আল্লামা যাহাবী (রহ.) ইলম ও আমলের অধঃপতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। আগ্রহী পাঠক তা পড়ে দেখতে পারেন।

ঘোষণা

(সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা)

শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনাদের সহযোগিতা দিক-নির্দেশনার লক্ষ্যে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপত্র, ইসলামী গবেষণা সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা মাসিক আত-তাওহীদে নিয়মিত বিভাগ ‘শিক্ষার্থীদের পাতা শিক্ষা পমার্শ চালু করা হয়েছে। উক্ত বিভাগে একদিকে থাকবে আপনাদের জন্য নিয়মিত দিক-নির্দেশনামূলক প্রবন্ধ। অপরদিকে থাকবে আপনাদের সমস্যা-সমাধান নিয়ে শিক্ষা পরামর্শ।

অতএব এখন থেকে সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাবো উন্নতি সমৃদ্ধির পথে। সুতরাং শিক্ষা বিষয়ক যে কোন সমস্যা আমাদের নিকট লিখুন এবং টেনশানমুক্ত জীবন গড়ুন। আমরা আপনার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকবো এবং অতিদ্রুত সময়ে যথার্থ সমাধান পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহই তাওফীকদাতা।

যোগাযোগের ঠিকানা

বিভাগীয় সম্পাদক

শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ

মাসিক আত-তাওহীদ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

ই-মেইল: hmsalimuddin22@gamil.com

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ