ধর্ম নিয়ে কটূক্তির বিকৃত সংস্কৃতি
সাম্প্রতিক সময়ে ভোলার বুরহানুদ্দিনে ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির জের ধরে পুলিশের গুলিতে ৪ জনের প্রাণ হারানোর ঘটনায় পুরো দেশ উত্তপ্ত ও প্রতিবাদমুখর। তদন্ত শুরু হয়েছে তবে পুলিশী তদন্ত যথেষ্ট নয়। পুলিশ এখানে পক্ষ। বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা গেলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসতো। তদন্ত শেষে জানা যেতো আসলে আইডি হ্যাক হয়েছিল কিনা? কারা আর পেছনে সক্রিয়? আন্দোলনরত জনতার প্রতি পুলিশ গুলি না ছুঁড়ে কাঁদানে গ্যাস বা ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বা অন্য কোন উপায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যেত কিনা এটাও খতিয়ে দেখতে হবে। তদন্ত শেষে অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে বিচারের কাটগড়ায় তুলতে হবে এবং কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যেনতেন প্রকারের তদন্ত বা ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার প্রয়াস আগামী দিনে ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে উৎসাহ জোগাবে। কক্সবাজারের রামু ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ধর্মীয় সহিংস ঘটনার বিচার হয়নি। দেশে ধর্ম-অবমাননার শাস্তির জন্য আইন (অপর্যাপ্ত) আছে ঠিকই তবে, এর বাস্তবায়ন সচরাচর আমাদের নজরে আসে না। পুলিশি হেফাজত এবং কিছুদিন কারাভোগের খবরই আমরা পাই কেবল। আইনের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ থাকলে অপরাধীরা কিছুটা হলেও নিবৃত্ত হত।
২০১৩ পরবর্তী সময়ে অনলাইনে আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম, উম্মাহাতুল মুমিনীন ও সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে কূরুচিপূর্ণ কটূক্তি এবং ধর্মানুভূতিতে আঘাতের ঘটনা কিছুদিন ঝিমিয়ে থাকলেও আবার তা বেড়ে যাচ্ছে। থেমে থেমে কিছুদিন পরপর অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে রাসূলকে অবমাননার ব্যাপারটিকে বড় কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমরা আশঙ্কা করি। দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার কারা এদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ব্যঙ্গ, কটূক্তি ও উপহাস করে বক্তব্য প্রদান, নাটক প্রচার ও শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান পর্দার বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো ফ্যাসনে পরিণত হয়েছে। ইসলাম ও মহানবী (সা.) ওলামায়ে কেরাম, মাদরাসা, ইসলামী ঐতিহ্য-সভ্যতা ও নির্দশন নিয়ে যেভাবে ঠাট্টা-বিদ্রুপ শুরু হয়েছে তাতে দেশের সাধারণ জনগণ শঙ্কিত। এসব মন্তব্য অতি পুরনো ও বস্তপঁচা। ইবলিশের শেখানো বুলি মাত্র। অসুরতাড়িত অসূয়াপর চিন্তার ফসল। এ সব কথা যারা বলে ও বিশ্বাস করে তারা চরম সামপ্রদায়িক, আজন্ম অন্ধ ও সাংঘাতিক কপট। যুগে যুগে ধর্মাশ্রিত মনীষীগণ এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। সামপ্রদায়িকতাদুষ্ট এ অসুস্থ প্রবণতাকে রোধ করা না গেলে আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমপ্রীতির পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে আইন প্রণয়ন করে ধর্মাবমাননা বন্ধ করা আশু প্রয়োজন। ১৬ কোটি নবীপ্রেমিক মুসলমানের প্রিয় মাতৃভূমিতে হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর শানে যারা বারবার বেয়াদবী করে যাচ্ছে, তাদের যদি আমরা বিচারের মুখোমুখী দাঁড় করাতে ব্যর্থ হই তাহলে পুরো জাতির ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ব্যাপক গজব ও ভয়াবহ শাস্তি নেমে আসবে। কোন দুর্ভাগা ব্যক্তি যখন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের সাথে ঠাট্টা, মস্করা ও উপহাস করে তখন সে কৃতঘ্ন ও বেআদবকে শাস্তি দিতে তিনি (আল্লাহ তায়ালা) এক মুহূর্ত বিলম্ব করেন না। ইতিহাসে তাঁর দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। যে দেশে জনপ্রিয় জাতীয় কোন রাজনৈতিক নেতা নিয়ে অশালীন মন্তব্য করলে জেলে যেতে হয়, দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়, সে দেশে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে পার পেয়ে যাবে সেটা হয় না এবং হতে পারে না।
গুটি কয়েক ব্লগার, ফেসবুক আইডি হোল্ডার ও নেটওয়ার্ক অ্যাক্টিভিস্ট ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ তায়ালা, ইসলাম, মহানবী (সা.) নামায, রোযা, তাহাজ্জদ, হিজাব ও সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে জঘন্যতম আপত্তিকর ভাষায় কুৎসা, বিদ্বেষ ও কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য করে চলেছে। ২০১২ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্লগার, ফেসবুক আইডি হোল্ডার ও নেটওয়ার্ক এক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে তাদের আস্ফালন ও বেয়াদবী সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা মনে করি কেবল ইসলাম নয় যে কোন ধর্ম, ধর্মীয় গ্রন্থ ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি বিষোদগার নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিটি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রর্দশন অপরিহার্য পূর্বশর্ত।
আল্লাহ তায়ালা, ইসলাম, মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম কোন দল বিশেষের নয়। প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের লালিত ধন। রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় আদর্শ কিন্তু এক ও অভিন্ন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মিদের মধ্যে নামাযী-কালামীর মানুষের সংখ্যা রয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। রাজনৈতিক বিবেচনায় ধর্মকে টার্গেট করা কেবল ভুল নয়, আত্মঘাতি পদক্ষেপ। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনক্রমেই ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ নয়। বহু মুক্তিযোদ্ধা ধর্মপরায়ণ ও মহানবী (সা.)-এর ভালবাসায় তাদের তনু-মন সিক্ত ও উদ্বেলিত। তাঁদের জীবনাচারে ধর্মের প্রভাব সুগভীর। ধর্মবিশ্বাস যদি কারো না থাকে, না থাকুক কিন্তু তিনি ধর্মের প্রতি উপহাস, ব্যঙ্গ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয় আহত হয়। আহত ও সংক্ষুদ্ধ হৃদয় হতে প্রতিবাদী চিৎকার উৎসারিত হওয়া কেবল স্বাভাবিক নয়, যৌক্তিকও বটে।
রাজনীতি চিরকাল পরিবর্তনশীল। আজকে যারা শত্রু কিছুকাল আগেও তাঁরা ছিল ঘনিষ্ট মিত্র, আর আজ যারা ঘনিষ্ট মিত্র কয়েক দশক আগে তাঁরা ছিল ঘোর শত্রু। জোট বাঁধা ও জোট ত্যাগ করা রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দাবি, দাওয়া, সমাবেশ, বিচার পক্ষে বিপক্ষে আন্দোলন চলতে থাকুক, এতে কোন বাধা নেই। রাজনীতির ছত্রছায়ায় আল্লাহ তায়ালা, ইসলাম, মহানবী (সা.), নামায, রোযা ও সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে কটাক্ষ ও ব্যঙ্গ অব্যাহত থাকলে সাধারণ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাস প্রমাণ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, পালাবদলের মাধ্যমে এর গতিপথ নির্ধারিত হয়। সমাজবিজ্ঞানী ইবন খালদুনের মতে উত্থানের মধ্যে পতনের বীজ নিহিত। নির্যাতিত মানুষ যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরে পায় তা হলে জিঘাংসা প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে দেরী করে না। জিঘাংসা ও প্রতিহিংসার আগুনে পৃথিবীর বহু প্রাণচঞ্চল জনপদ ভস্ম হয়ে গেছে। আমরা যেন কোনক্রমেই নীতি, নৈতিকতা ও মানবিকতার নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন না করি। আবেগ যেন বিবেককে পরাজিত করতে না পারে।
বহুদিন যাবত একশ্রেণির সংবাদপত্র সময়ে সময়ে আলিম ওলামাদের ব্যঙ্গচিত্রসহ কাল্পনিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে অনেকটা Sensation সৃষ্টি করে পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য। এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে পীর-মাশায়েখদেরকে এবং আহত করা হচ্ছে ধর্মীয় মূল্যবোধকে। কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলের এ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবেদক ও কলামিস্টগণ এ মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
দুয়েকটি জাতীয় দৈনিক তাদের জন্মলগ্ন থেকেই ইসলাম, হযরত মুহাম্মদ (সা.), আলিম-ওলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন, অবমাননাকর কার্টুন অঙ্কন ও জঘন্য মিথ্যাচারের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। ইসলাম ধর্ম তাদের টার্গেট। বারবার ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উদারতাকে তারা দুর্বলতা ভাবছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এক শিক্ষক, যিনি চরম সামপ্রদায়িক, একটি জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে এদেশের মুসলমানদের দাড়ি-টুপি-মিসওয়াক ও আলিমদের নিয়ে বিদ্রুপাত্মক কার্টুন এঁকেছেন অনেকদিন। দাড়ি-টুপি-মিসওয়াক-পাঞ্জাবী এদেশের মুসলমানদের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সংস্কৃতি। যেমন ধুতি-টিকি-ত্রিশুল-শঙ্খবালা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এবং ক্রুশ ও খ্রিস্টমাস ট্রি খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি। তাঁর আঁকা কার্টুনগুলো পরীক্ষা করলে এর সত্যতা মেলবে। এ জাতীয় তথাকথিত বুদ্ধিজীবী হিন্দু-মুসলমান সমপ্রীতির পথে বড় বাধা। বহু দাড়ি-টুপি-মিসওয়াকধারী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কোন মানুষ দাড়ি-টুপি রাখলেই রাজাকার হয় না, যুদ্ধাপরাধী হয় না। একজন শিল্পী ছবি আঁকবেন কিন্তু কোন ধর্ম বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে যেন বিদ্রুপ করা না হয়। ভারতের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হোসেন সরস্বতী দেবীর ছবি এঁকেছিলেন শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। বজরং দল ও আর.এস.এস-এর উগ্র সামপ্রদায়িক কর্মিগণ তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। তাদের বক্তব্য ছিল মকবুল ফিদা হোসেন দেবীকে যৌন অবেদনময়ী রূপে চিত্রায়িত করেছেন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালো। বিজ্ঞ আদালত রায় দিলেন মকবুল ফিদা হোসেন কর্তৃক অঙ্কিত চিত্রটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত বিবরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারপরও এ গুণী শিল্পীর প্রতি প্রাণনাশের হুমকি আসতে থাকে। অবশেষে তিনি প্রিয় মাতৃভূমি ভারত ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমান এবং ওখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করে বিদেশের মাটিতে তাঁকে সমাহিত হতে হয়েছে। পাঠক চিন্তা করে দেখুন বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী কত শান্ত, সহনশীল ও অসামপ্রদায়িক।
চিন্তার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিবেকের স্বাধীনতা সুশীলসমাজের ও সভ্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসব স্বাধীনতা ব্যক্তির সহজাত অধিকার। মত প্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ কিন্তু অন্য ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি অসম্মান ও বিষোদগার নয়। পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতাদর্শ এক নয়। নিজ নিজ ধর্মের প্রচার ও যৌক্তিকতা ভিন্ন মতালম্বীদের নিকট তুলে ধরতে কোন দোষ নেই। যৌক্তিক ও বাস্তব মনে না হলে সে মতাদর্শ প্রত্যাখ্যান করার অধিকার সবার আছে। তবে অপরের লালিত বিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করার হীন প্রচেষ্টা অপরাধ আরো বিশেষভাবে বলতে গেলে তা সন্ত্রাস। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে এ ধরনের অপচেষ্টা মৌলিক মানবীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী। এ দেশে কতিপয় লোক আছেন যারা মারাত্মক সামপ্রদায়িক ও বিদ্বিষ্ট মনোভাবসমপন্ন। ইসলাম ও মুসলমানের নাম শুনলে এদের গায়ে জ্বালা ধরে। বাংলাদেশ তো সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ। কিছু দুর্বৃত্তের কারণে এ সমপ্রীতি নষ্ট হতে দেয়া যায় না।
বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিন্দু ধর্ম, ধর্মীয় গুরু বা শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্ম, ধর্মীয় গুরু নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা হয় না, সমালোচনা করা হয় না। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম। এখানে ইসলাম ধর্ম, মহানবী (সা.) ও ধর্মীয় নেতাদের ব্যঙ্গ ও উপহাস করা রীতিমত রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিদেশি কোন প্রভূর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে তারা কুশিলবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন কিনা এটাও তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের অব্যাহত আগ্রযাত্রার খবরে ঈমানদারগণ যে হারে উৎসাহিত ও প্রণোদিত হন, তার শতগুণ বেশি বিক্ষুদ্ধ ও ক্রোধান্বিত হয় সামপ্রদায়িক, উগ্রবাদী ও বিদ্বেষপরায়ণ কিছু বৃত্তিভোগী অ্যাজেন্ট।
এদেশে প্রতিটি মানুষের ধর্ম অবলম্বন, পালন, প্রচার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ও অধিকার রয়েছে (বাংলাদেশ সংবিধান, ৩য় ভাগ, ৪১ (১), (ক খ), পৃ. ১২)। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামী শরীয়াহ প্রতিপালনে অভ্যস্ত আদর্শবাদী পরিবারের মেয়েদের বোরকা পরার কারণে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যার কোনোটির যথাযথ প্রতিকার না হওয়ায় এই অশুভ প্রবণতা বিনা বাধায় চলে আসছে। ধর্ম, ধর্মীয় নেতা ও ধর্মগ্রন্থ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য ও মন্তব্য প্রকাশ অব্যাহত থাকলে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট হবে; জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে যাবে। কেবল ইসলাম নয় সব ধর্মের ব্যাপারে এ কথা সমান প্রযোজ্য। বোরকা, টুপি পরিধান করে, দাড়ি রেখে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করার সুযোগ অবশ্যই থাকতে হবে। ড্রেসকোড নামে এগুলো বন্ধ করা যাবে না। দাড়ি-টুপিধারী কোন কোন নামাযী শিক্ষার্থীকে বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের কর্মির তকমা লাগিয়ে হেনস্তা করার ঘটনা অহরহ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব। মুসলমানের দেশে ইসলামের বিধি-বিধান অনুসরণের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বাধা এবং উস্কানি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এসব অপতৎপরতা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি পঞ্চদশ অধ্যায়ের ২৯৫ ও ২৯৫/এ ধারায় ইচ্ছাকৃতভাবে কথা, লেখা ও আচরণের মাধ্যমে ধর্ম ও ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করলে বা আহত করার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে (Whoever, with deliberate and malicious intention of outraging the religious feelings of any class of the citizens of Bangladesh, by words, either spoken or written or by visible representations insults or attempt to attempts to insult the religion or the religious beliefs of that class be punished with imprisonment of either description of a term which may extend to two years, or with fine or with both. 16 BLD 140, The Penal Code by Zahirul Haq, 4th ed, 2001, pp.522-524)|
আমরা মনে করি ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ প্রণীত এ দণ্ডবিধি ধর্ম অবমাননাকারীদের শাস্তি প্রদানের জন্য যথেষ্ট নয়। বাস্তবতার নিরিখে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাবাসের মতো কঠোর বিধি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ২০০৯ সালে আয়ারল্যান্ডে প্রণীত ‘মানহানি বিধি’ (Defamation Act 2009), পাকিস্তানে প্রচলিত ‘ধর্মাবমাননা আইন’ (Blasphemy Law)-কেও বিবেচনায় আনা যেতে পারে। কেবল আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।
নবী-রাসূলদের উত্তরসূরি হিসেবে এসব ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত ও তৎপরতার প্রতিবাদ করা হাক্কানি আলিম সমাজের দায়িত্ব। শান্তিপূর্ণ ও বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থায় এই দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। কোনক্রমেই আইন হাতে নেয়া যাবে না এবং আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। তাই বড় ধরনের ধ্বংস ও নৈরাজ্য থেকে সমগ্র দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে রাসূল (সা.)-এর প্রতি কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের হাই কমাণ্ডকে এগিয়ে আসতে হবে। এ দাবির স্বপক্ষে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতাদেরও সহযোগিতামূলক মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। উদার দৃষ্টিভঙ্গিসমপন্ন সব ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ অতীতে ছিল, আগামীতেও বহাল রাখতে হবে।
মন্দির, বাড়ি-ঘর, সহায়-সমপদে হামলা ও অগ্নিসংযোগ ইসলাম কোন দিন অনুমোদন করে না। অনিয়ন্ত্রিত আবেগে যে আগুন জ্বলে তা নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে, আগুনের তেজ কমে আসলে চোখের সামনে ভেসে উঠে ধ্বংসযজ্ঞের উন্মত্ততা। ইসলাম এমন এক সার্বজনীন ধর্ম যেখানে সব মত, পথ ও ধর্মের সহাবস্থানের বিধান রয়েছে। ইসলাম দেড় হাজার বছর ধরে উদারতা, মানবিকতাবোধ, সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ও সহিষ্ণুতার বাণী প্রচার করে আসছে। ফলে আজ বিশ্বব্যাপী ইসলাম জীবন্ত এক জীবনাদর্শ রূপে বহু জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত (Pluralistic Society) সমাজে নিজের ভিত মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.) মদীনায় হিযরত করে ইহুদী-খ্রিস্টানদের নিয়ে যে চুক্তি করেন, তা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান। ‘মদীনা সনদ’ নামে খ্যাত এ সংবিধানে স্পষ্টত উল্লিখিত আছে যে, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। ধর্মীয় ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ করা যাবে না। অপরাধের জন্য ব্যক্তি দায়ী হবে, সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না। মদীনা প্রজাতন্ত্রকে পবিত্র ঘোষণা করা হলো। রক্তপাত ও যুলুম নিষিদ্ধ করা হলো।’
কোন ধর্মকে, ধর্মীয় ব্যক্তিকে কটাক্ষ, অপমান ও ব্যঙ্গ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপসনালয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ইসলামে জায়েয নেই। কোন ঈমানদার ব্যক্তি অমুসলিমদের উপাসনালয়ে হামলা করতে পারে না। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও সদ্ব্যবহার ইসলামের অনুপম শিক্ষা। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা আমাদের প্রতিবেশী। আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা পবিত্র কুরআনের নির্দেশ। মূর্তি ও প্রতিমা ভাংচুর করা তো দুরের কথা, তাদের গালি ও কটাক্ষ না করার জন্য মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম রয়েছে। মহানবী (সা.)-এর ২৩ বছরের নুবুওয়তী জীবনে অমুসলিমদের উপসনালয়ে আক্রমণ বা তাদের বসত বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুকুম দিয়েছেন, এমন কোন নজির ইতিহাসে নেই। বরং রাষ্ট্রদ্রোহী ও সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় এনেছেন।
সহিষ্ণুতা, সমপ্রীতি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। ইসলামের শাশ্বত আদর্শ প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আলিম সমাজ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন আবহমান কাল ধরে। রাজনীতি, ধর্ম ও অর্থনীতিসহ নানা কারণে সন্ত্রাস হয়। সন্ত্রাস সমাজের জন্য একটি ভয়াবহ ক্যান্সারের মত।
ইসলাম তার ঊষালগ্ন থেকেই বৈরী শক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার। দীনে হকের উজ্জ্বল প্রদীপ নির্বাপিত করার বহুমুখী প্রয়াস সব সময় লক্ষণীয়। এক শ্রেণির হীন, পাশবেতর ও অতি নীচু মানসিকতাসম্পন্ন লোক সব কালে সব যুগে ইসলাম, কুরআন ও হাদীসের খুঁত বের করে বিষোদগার করতে আনন্দ পায়। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর মর্যাদাবান সাহাবায়ে কেরামদের প্রতি কটাক্ষ ও বিদ্রুপাত্মক কার্টুন অংকন তাদের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। ক’বছর আগে আরো দুটি উপসর্গ যুক্ত হয়েছে; একটি পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ এবং অপরটি মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক সিনেমা তৈরি। এ ঘৃণ্য অপরাধের সাথে এক শ্রেণির ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বিজড়িত। এরা মানবতার দুশমন; মূল্যবোধ বিবর্জিত বর্বর সন্ত্রাসী। অন্য কোন ধর্ম তাদের টার্গেট নয়, টার্গেট কেবল ইসলাম। এর পেছনে ৪টি কারণ স্পষ্ট।
প্রথমত: ইসলাম বিকাশমান ধর্ম। ইসলাম সারা পৃথিবীতে বিস্তৃতি লাভ করছে ক্রমশ; এমন কি ইউরোপ, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন জনপদ ইসলামের আলোকধারায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে; মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে চোখে পড়ার মত বহু দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। ইসলামের অগ্রযাত্রায় হতাশ হয়ে ওই চক্রের হোতারা বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়ে সাম্পদায়িকতা উস্কে দিচ্ছে।
দ্বিতীয়ত: মিথ্যা, অশালীন ও বিদ্রুপাত্মক বিষোদগারের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে অমুসলমানদের মনে ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা, যাতে তারা এ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট না হয়। ইসলামের নামে বিভ্রান্তি ও আতংক (Islamphobia) সৃষ্টি করে মুমিনদের ইবাদত, কৃষ্টি, জীবনাচার ও দাওয়াতী কর্মপ্রয়াসে শৈথিল্য আনা।
তৃতীয়ত: মুসলমানগণ গভীর ঘুমে অচেতন, না জাগ্রত অতন্দ্রপ্রহরী তা পরখ করা এবং ঈমানী শক্তির প্রচণ্ডতাকে যাচাই করা।
চতুর্থত: প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। ইসলাম ধর্মাবমাননার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সংক্ষুদ্ধ মুসলমানগণ দেশে দেশে বিক্ষোভ ও সহিংস পন্থার যদি আশ্রয় নেয়, তা হলে তাদের দমনের নামে ন্যাটো বা অন্য কোন প্রতিপক্ষ বাহিনী হামলে পড়বে ওইসব দেশে। তারপর শুরু হয়ে যাবে জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনের তাণ্ডব। ষড়ন্ত্রকারীরা কিন্তু একা নয়; এদের পেছনে আছে তাদের স্বধর্মী ও সমগোত্রীয়দের এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশ্বের বহুল পরিচিত ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, ফেইসবুক ও গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিন।
ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নিয়ে উপহাস ও কটাক্ষ করার জন্য ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ (Freedom of Expression)-i বুলিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। আমরা মনে করি মত প্রকাশের স্বাধীনতারও সুনির্দিষ্ট শর্ত ও নীতিমালা থাকা চাই। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র নামে অন্য ধর্ম ও ধর্ম প্রচারকের প্রতি ঘৃণার আগুন ছড়ানো অব্যাহত থাকলে চলমান আন্তঃধর্ম সংলাপ (Inter faith Dialogue) প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হবে এবং অসম্ভব হয়ে উঠবে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্যোগ। হিংসা হিংসা ঢেকে আনে; বিদ্বেষ শত্রুর সংখ্যা বাড়ায়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, নিবর্তন, চক্রান্ত, উচ্ছেদ, হত্যা, ধর্ষণ, ধর্মাবমাননা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ইসলাম ধর্মকে হেয় করার কাজে চক্রান্তকারীদের আস্কারা দেয়ার পরিণতি আগামীতে বুমেরাং হতে পারে।
২০১১-১২ সালে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত চলচ্চিত্র ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ বিশেষ। এটা নির্মাণ করতে ১০০জন ইহুদি ব্যবসায়ী ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছে। ইহূদীরা অভিশপ্ত জাতি। সংঘাত ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ফায়দা লুন্ঠন তাদের আদি কৌশল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলেছে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ ৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের সাময়িকী ‘শার্লি এবদো’-তে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে অবমাননা করে কার্টুন ছাপানোর পর ফরাসি মুসলমানরা আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। সরকার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করেছে। এর আগেও গত ২০১১ সালে মহানবী (সা.)-কে কটাক্ষ করে কার্টুন ছেপেছিল ওই পত্রিকা। সে সময় মুসলমানরা পত্রিকাটির অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্স সরকার পুরোপুরি দ্বিমুখীনীতি অনুসরণ করছে। তারা রাসূলের অবমাননা বাক্-স্বাধীনতা হিসেবে দাবি করলেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে। এ দ্বিমুখীনীতি শান্তি, সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের পথে অন্তরায়।
আল্লাহ না করুন কোন কুলাঙ্গার যদি আল্লাহর নবী হযরত মূসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.), হযরত মরিয়ম (আ.), তাওরিত ও বাইবেলকে উপজীব্য করে বিদ্রুপাত্মক ও কটাক্ষপূর্ণ কোন চলচ্চিত্র নির্মাণ করে ইউটিউবে ছেড়ে দেয়, তখন কী হবে অবস্থা? ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতাÕ-এর থিউরি তখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আমরা অবশ্য অবশ্য এ ঘৃণ্য প্রয়াসকে গভীর ভাষায় নিন্দা জানাবো, কুশিলবের শাস্তি দাবি করবো। ধর্মাবমাননাকে আমরা মহাপাপ বলে বিবেচনা করি।
গোটা পৃথিবীর ৭৫০ কোটি মানুষ বিশেষ কোন ধর্মের অনুসারী হবে, এটা অসম্ভব। নানা ধর্মের মানুষের (Religious Diversity) পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই পৃথিবীর বৈচিত্র্য। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সমাজবদ্ধ জাতিগোষ্ঠীর (Plural Society) মধ্যে সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ধর্মাবমাননার সব পথ বন্ধ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করে ধর্মদ্রোহী কুলাঙ্গারদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় পৃথিবীর পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারবে না। আমরা এ ব্যাপারে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ ও জৈন ধর্মের সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। একে অপরের ধর্মানুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন বিশ্বশান্তির পূর্বশর্ত।
নবী অবমাননার ঘটনা যেহেতু কিছুদিন পরপরই ঘটছে তাই দায়িত্বশীল ওলামা মাশায়েখদের উচিত এ ব্যাপারে কার্যকর ও কৌশলী পদক্ষেপ নেওয়া। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং তার সঠিক ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য শাসনযন্ত্রের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আন্দোলনের পাশাপাশি গোলটেবিল বৈঠকের ব্যবস্থা করাও উচিত। এদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ ধর্মাবমাননার বিকৃত প্রবণতা এবং এটাকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও নৈরাজ্য আর দেখতে চায় না।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ওমর গনি এমইএস ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম