জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি-২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ-১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ছোটদের বিজ্ঞান: আলোর গতি

ছোটদের বিজ্ঞান: আলোর গতি

খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ

 

ছোট্ট বন্ধুরা! তোমরা কি জানো যে, আলোর নির্দিষ্ট গতিবেগ আছে এবং এক স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে আলোরও সময়ের প্রয়োজন হয়? হ্যাঁ, তাই। একথা সর্বপ্রথম বলেছিলেন মুসলিম বিজ্ঞানী আবু রায়হান মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল-বিরুনী (৯৭৩-১০৪৮)। বিজ্ঞানী ইবনে সীনাও এ বিষয়ে অনেক কাজ করেন। তবে সে সময় আজকের মত এত যন্ত্রপাতি ছিল না বলে তারা সুনির্দিষ্টভাবে আলোর গতি নির্ণয় করতে পারেননি। বর্তমানে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে আলোর গতি নির্ণয় করার কারণে আলোর গতির আবিষ্কারক বলা হচ্ছে আলবার্ট আব্রাহাম মাইকেলসনকে (১৮৫২-৯৩১)। আবার অনেকে বলেন বিজ্ঞানী রোমার (১৬৪৪-১৭১০) আলোর গতিবেগ নির্ণয় করেছিলেন।

ছোট্ট বন্ধুরা! তোমরা হয়ত জানো যে, আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল। অর্থাৎ তিন লাখ কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে প্রায় ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। আর ১ সেকেন্ডে আলো পৃথিবীর চার দিকে ৭ বার ঘুরে আসতে পারে। চাঁদ থেকে পৃথিবীতে আলো পৌঁছাতে সময় লাগে ১.৩ সেকেন্ড। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৩৯৯ কিলোমিটার (প্রায় ২৩৮.৮৫৫ মাইল)।

কোনো বস্তু থেকে আলো এসে আমাদের চোখে পড়লে তবেই আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই, অন্যথায় নয়। একথা সর্বপ্রথম বলেছিলেন মুসলিম বিজ্ঞানী আবু আলী আল-হাসান ইবনুল হাসান ইবনে আল-হাইসাম (৯৬৫-১০৩৯)। যা ইদানিং আধুনিক বিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে প্রমাণিত। তিনি ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, এবং দার্শনিক। তার উল্লেখযোগ্য অবদানগুলোর মধ্যে আছে আলোকবিদ্যার মূলনীতি, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, আবহাওয়াবিজ্ঞান, চাক্ষুষ বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক নীতি। তিনি সর্বপ্রথম ক্যামেরার মূলনীতি আবিষ্কার করেন, যার উপর ভর করে আজকের আধুনিক ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে। পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা এখনো তার কাছে ঋণী।

বস্তু থেকে আলো এসে আমাদের চোখে পড়লে আমরা বস্তুটি দেখতে পাই। সেই আলো বস্তুর নিজস্ব হতে পারে, যেমন সূর্য, বিভিন্ন নক্ষত্র, বাতি ইত্যাদি। আবার প্রতিফলিত আলোও হতে পরে, যেমন চাঁদ এবং অন্যান্য বস্তু, যার নিজস্ব আলো নেই, তবুও অন্য আলোর সাহায্যে আমরা সেইসব বস্তু দেখি। এখানে বলে রাখা ভাল যে, আমাদের চোখে যে আলোটা এসে পরে এটা আসলে মহাবিশ্বে থাকা বিশাল একটা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন এর ক্ষুদ্রতম অংশ। যার অধিকাংশই আমরা দেখি না। তাই এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অধিকাংশ বস্তুই আমরা দেখতে পাই না। এমনকি আমাদের আশেপাশে থাকা কোটি কোটি বস্তুর সামান্য অংশই শুধু আমরা দেখতে পাই। তবে উন্নতমানের ক্যামেরা আমাদের চেয়ে বেশি দেখতে পারে।

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের থিউরি বলছে কোনো বস্তুর গতি আলোর গতির চেয়ে বেশি হতে পারে না। তবে এখন আমরা কাল্পনিকভাবে আলোর গতিতে বা তার চেয়েও বেশি গতিতে ভ্রমণ করলে কী হবে সেটা দেখব।

বিজ্ঞান বলছে আলোর গতিতে যদি ভ্রমণ করা হয়, তাহলে সময় স্থির হয়ে যায়। আর কাল্পনিকভাবেও যদি আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিতে ভ্রমণ করা হয়, তাহলে সময় পেছনের দিকে চলতে থাকবে। কীভাবে? সেটা এখন আমরা বুঝার চেষ্টা করব।

মনে কর তোমার পড়ার টেবিলে একটি ঘড়ি আছে। সেই ঘড়ির ওপর আছে একটি ক্রিকেট বল। ঘড়িটিতে ১২ টার এলার্ম বেজে উঠার সাথে সাথে বলটি পড়ে গেল। আর সেটি তুমি দেখেছ কারণ ঘড়ি আর বল থেকে প্রতিফলিত আলো এসে তোমার চোখে পড়ছে। এখন মনে কর ঘড়িতে এলার্ম বাজা আর বল পড়ে যাওয়ার ঘটনাটি তুমি দেখার সাথে সাথে এক মুহূর্তে এমন দূরত্বে চলে গেলে, যেখানে ঘড়ি আর বল থেকে আলো পৌঁছাতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। সেখানে গিয়ে তুমি দেখতে পাবে যে, ঘড়িতে ১২ টা বাজতে আরো এক ঘণ্টা সময় বাকি আছে এবং বলটা এখনো ঘড়ির উপরেই আছে। বাস্তবে ঘড়িতে ১২টা বেজে গেছে এবং বলটাও পড়ে গেছে। কিন্তু সেই ঘটনা ঘটার মুহূর্তের আলো তোমার চোখ পর্যন্ত পৌঁছাতে এখনো ১ ঘণ্টা বাকি আছে। তাই তুমি দেখতে পাচ্ছ এখনও সেই ঘড়িতে মাত্র ১১টা বেজেছে।

আবার মনে করো যেই মুহূর্তে ঘড়িতে ১২টা বাজল এবং বল পড়ে গেল ঠিক সেই মুহূর্তেই যদি তুমি আলোর গতিতে ছুটতে থাক আর উন্নতমানের কোনো ক্যামেরা নিয়ে ঘড়ির দিকে দেখতে থাক, তাহলে দেখতে পাবে যে, ঘড়ির কাটা এবং বলটির পড়ার দৃশ্য যেন স্থির হয়ে আছে। কারণ ঘটনা ঘটার প্রথম মুহূর্তের আলোকবিন্দুগুলো যেই গতিতে দূরে চলে যাচ্ছে ঠিক সেই গতিতে তুমিও দূরে চলে যাচ্ছ। তাই ঘটনা ঘটার স্থানে সব কিছু স্থির দেখা যাবে। আবার যেদিকে তুমি যাচ্ছ সেদিকে যদি তাকাও তাহলে দেখতে পাবে সেখানে সবকিছু খুব দ্রুত চলছে।

একইভাবে ১০ আলোকবর্ষ দূরে কোনো সুপারনোভা বিস্ফোরণের দৃশ্য যদি বিজ্ঞানীরা ২০১৯ সালে দেখেন, তার মানে হবে সেই ঘটনা ঘটেছে আরো ১০ বছর আগে। কিন্তু দেখতে মনে হবে ঘটনাটি যেন এখনই ঘটল।

আলো আর অন্ধকার দুটোই আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ বলেন,

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمٰتِ وَالنُّوْرَ١ؕ۬ ثُمَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُوْنَ۰۰۱

‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর তিনি তৈরি করেছেন অন্ধকার ও আলো। তবু যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা তাদের প্রভুর সাথে দাঁড় করায় সমকক্ষ।’[1]

[1] আল-কুরআন, সুরা আল-আনআম, ৬:১

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ