রামাযান মাসে কুরআনচর্চা: প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি
আবিদুর রহমান তালুকদার
রামাযান মাস মহিমান্বিত কুরআন নাযিলের বরকতময় মাস। এ মাসের আগমনে কুরআনের চর্চা বেড়ে যায় অধিকমাত্রায়। কুরআনচর্চার নিমিত্তে এ মাসে তারাবিহ নামাযে পবিত্র কুরআন একবার খতম করা সুন্নাত। রামাযান মাসে রাসুল (সা.) জিবরিল (আ.)-এর সঙ্গে কুরআনের দাওর করতেন। আল-কুরআনের তিলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ও মৌলিক ইবাদত। অন্যের নিকট থেকে কুরআন শুনেও তিলাওয়াতের সমান সওয়াব লাভ করা যায়। তিলাওয়াত শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। নিছক তিলাওয়াত বা আক্ষরিক পাঠ কুরআন নাযিলের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। শুধুমাত্র শব্দ-পঠনে এ উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। আল-কুরআনের পূর্ণাঙ্গ চর্চার মাধ্যমেই এ লক্ষ্য অর্জিত হয়।
কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য
কুরআন নাযিলের নানাবিধ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আল-কুরআনেই বিবৃত হয়েছে সুনিপুণ উপস্থাপনায়। এটি মানুষের হেদায়ত ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপন করে। কুরআন নাযিলের লক্ষ্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
كِتٰبٌ اَنْزَلْنٰهُ اِلَيْكَ مُبٰرَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْۤا اٰيٰتِهٖ ۰۰۲۹
‘এটি এমন এক বরকতময় কিতাব, যা আপনার ওপর নাযিল করেছি, যাতে তারা আল্লাহর আয়াতসমূহে চিন্তা-গবেষণা করতে পারে।’[1]
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
وَمِنْهُمْ اُمِّيُّوْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ الْكِتٰبَ اِلَّاۤ اَمَانِيَّ وَ اِنْ هُمْ اِلَّا يَظُنُّوْنَ۰۰۷۸
‘কিছু নিরক্ষর মানুষ শুধুমাত্র কুরআনের নিরেট তিলাওয়াত সম্পর্কে অবগত। তারা কেবলমাত্র অনুমানের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়।’[2]
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ۰۰۴۴
‘আমি আপনার নিকট আল-কুরআন নাযিল করেছি, যাতে মানুষের জন্য নাযিলকৃত এ কুরআন তাদের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন এবং তারা এতে চিন্তা-গবেষণা করতে পারে।’[3]
কুরআনচর্চার পদ্ধতি
তিলাওয়াত ছাড়াও কুরআনচর্চার বিধিবদ্ধ কিছু পরিভাষা রয়েছে। এসব পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে কুরআন নাযিলের বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধিত হয়। কিরাআত, তারতিল, হিফয, দরস, তাফাক্কুর ও তাদাব্বুর কয়েকটি কুরআনিক পরিভাষা। আল-কুরআনের চত্রে চত্রে এ সকল পদ্ধতি বারবার আলোচনা করা হয়েছে।
কিরাআতুল কুরআন
কিরাআতুল কুরআন কুরআনচর্চার একটি অন্যতম পদ্ধতি। আল-কুরআনে কিরাআত শব্দটি দ্বি-বিধ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এক. নিছক পাঠ করে শোনানো। যেখানে আমল করা উদ্দেশ্য হয় না। শ্রোতাকে শোনানোই এখানে প্রধান লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاُمِرْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَۙ۰۰۹۱ وَاَنْ اَتْلُوَا الْقُرْاٰنَۚ ۰۰۹۲
‘আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে, যেনো আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হই এবং কুরআন তিলাওয়াত করি।’[4]
কাফিরদের উদ্দেশ করে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এ নির্দেশ পালনার্থে রাসুল (সা.) কাফিরদের সামনে আল-কুরআন তিলাওয়াত করতেন। যাতে আমল উদ্দেশ্য ছিল না। কাফিরদের সামনে কুরআনের মু’জিযা প্রদর্শন ও তার প্রভাব বিস্তারই ছিল এ তিলাওয়াতের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
قُلْ لَّوْ شَآءَ اللّٰهُ مَا تَلَوْتُهٗ عَلَيْكُمْ وَلَاۤ اَدْرٰىكُمْ بِهٖ١ۖٞ ۰۰۱۶
‘বলুন, আল্লাহ চাইলে আমি তোমাদের সামনে কুরআন তিলাওয়াত করব না এবং তোমাদেরকে এ বিষয়ে জ্ঞাতও করবো না।’[5]
দুই. কিরাআতুল কুরআনের দ্বিতীয় অর্থ হলো, কুরআনের বিধান অনুযায়ী আমল করা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) (يَتْلُوْنَهٗ حَقَّ تِلَاوَتِهٖؕ ۰۰۱۲۱)[6] এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে বলেন,
«يَتَّبِعُوْنَهُ حَقَّ اتِّبَاعِهِ».
‘কুরআনের হুকুম আহকাম যথাযথ অনুসরণ করে।’[7]
তারতিলুল কুরআন
তারতিল শব্দের অর্থ হলো, তাজভিদের বিধি অনুসরণপূর্বক এতো ধীরে-সুস্থে কুরআন পাঠ করা, যাতে পাঠক ও শ্রোতা উভয়ের নিকট কুরআনের অন্তর্নিহিত ভাবধারা বোধগম্য হয়। আল্লহ তাআলা স্বয়ং তাঁর নবীকে কুরআন শিক্ষার পদ্ধতি বর্ণনা করে বলেন,
وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًاؕ۰۰۴
‘আপনি তারতিল সহকারে কুরআন তিলাওয়াত করুন।’[8]
অন্যত্র বলা হয়েছে,
وَقُرْاٰنًا فَرَقْنٰهُ لِتَقْرَاَهٗ عَلَى النَّاسِ عَلٰى مُكْثٍ وَّنَزَّلْنٰهُ تَنْزِيْلًا۰۰۱۰۶
‘এ কুরআন আপনার প্রতি এজন্য নাযিল করেছি, যাতে তা মানুষের জন্য ধীর-স্থিরভাবে পাঠ করেন।’[9]
দরসুল কুরআন
দলবদ্ধভাবে কুরআনের পাঠ গ্রহণ করা কুরআনচর্চার একটি সুন্দর পদ্ধতি। এ পদ্ধতির অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসের বিভিন্ন গ্রন্থে। মুসলিম শরিফে বর্ণিত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «… مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِيْ بَيْتٍ مِنْ بُيُوْتِ اللهِ، يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُوْنَهُ بَيْنَهُمْ، إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِيْنَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْـمَلَائِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ».
‘হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কুরআনের তিলাওয়াত ও দরসগ্রহণের লক্ষ্যে মসজিদে কোনো দল একত্রিত হলে, তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাগণ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে। তাদের কথা আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নিকট আলোচনা করেন।’[10]
হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাযি.) রাসুল (সা.)-এর কুরআন তিলাওয়াতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَافْتَتَحَ الْبَقَرَةَ، فَقُلْتُ: يَرْكَعُ عِنْدَ الْـمِائَةِ، ثُمَّ مَضَىٰ، فَقُلْتُ: يُصَلِّيْ بِهَا فِيْ رَكْعَةٍ، فَمَضَىٰ، فَقُلْتُ: يَرْكَعُ بِهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ النِّسَاءَ، فَقَرَأَهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ، فَقَرَأَهَا، يَقْرَأُ مُتَرَسِّلًا، إِذَا مَرَّ بِآيَةٍ فِيْهَا تَسْبِيْحٌ سَبَّحَ، وَإِذَا مَرَّ بِسُؤَالٍ سَأَلَ، وَإِذَا مَرَّ بِتَعَوُّذٍ تَعَوَّذَ.
‘এক রাতে আমি রাসুল (সা.)-এর পেছনে নামায আদায় করলাম। তিনি সুরা বাকারা দিয়ে নামায শুরু করলেন, আমার ধারণা ছিল, একশত আয়াত তিলাওয়াতের পর তিনি রুকু করবেন। তিনি কিরাআত অব্যাহত রাখলেন। আমি মনে করলাম, এক রাকাতে হয়তো এ সুরা সমাপ্ত করবেন। তিনি কিরাআত অব্যাহত রাখলেন এবং সুরা আলে ইমরান ও নিসা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তিনি খুব ধীর-স্থিরভাবে তিলাওয়াত করতেন। প্রার্থনামূলক কোনো আয়াতে পৌঁছলে আল্লাহর নিকট দুআ করতেন। তাসবিহ সংবলিত কোনো আয়াত আসলে তাসবিহ পাঠ করতেন। আশ্রয় প্রর্থনার কোনো আয়াত আসলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।’[11]
اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنٰهُمُ الْكِتٰبَ يَتْلُوْنَهٗ حَقَّ تِلَاوَتِهٖؕ ۰۰۱۲۱ (যাদের নিকট আমি কুরআন নাযিল করেছি, তারা এটির যথাযথ তিলাওয়াত করে)[12] এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) বলেন,
«وَالذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنَّ [حَقَّ تِلَاوَتِهٖؕ ۰۰۱۲۱] أَنْ يُحِلَّ حَلَالَهُ، وَيُحَرِّمَ حَرَامَهُ، وَيَقْرَأَهُ كَمَا أَنْزَلَهُ اللهُ، وَلَا يُحَرِّفَ الْكَلِمَ عَنْ مَوَاضِعِهِ، وَلَا يَتَأَوَّلَ مِنْهُ شَيْئًا عَلَىٰ غَيْرِ تَأْوِيلِهِ».
‘আল্লাহর কসম! কুরআন তিলাওয়াতের হক হচ্ছে হালালকে হালাল বলে মনে করা এবং হারামকে হারাম হিসেবে মান্য করা। যেভাবে এটি নাযিল হয়েছে সেভাবে তিলাওয়াত করা। কুরআনের শব্দাবলির স্থান পরিবর্তন না করা। বাস্তব অর্থের বিপরীত ব্যাখা-বিশ্লেষণ না করা।’[13]
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নিকট আল-কুরআনের শব্দাবলি মুখস্ত করা কঠিন হলেও সেমতে আমল করা সহজ। আমাদের পরবর্তী যুগের মানুষের জন্য আল-কুরআন হিফয করা সহজ, কিন্তু সেমতে আমল করা হবে কঠিন।’[14]
তাদাব্বুরুল কুরআন
তাদাব্বুর কুরআনচর্চার একটি অন্যতম পরিভাষা। এ পদ্ধতিতে কুরআনচর্চার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে। কুরআনের বিধি-বিধান মতে নিজের আমল আখলাক সংশোধনের নাম হলো তাদাব্বুর। তাদাব্বুর এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম হাসান আল-বাসারী (রহ.) বলেন,
«وَاللهِ مَا تَدَبَّرَهُ بِحِفْظِ حُرُوفِهِ وَإِضَاعَةِ حُدُودِهِ حَتَّىٰ إِنَّ أَحَدَهُمْ لَيَقُولُ قَرَأْتُ الْقُرْآنَ كُلَّهُ مَا يُرَىٰ لَهُ الْقُرْآنُ فِي خُلُقٍ وَلَا عَمَلٍ».
‘আল্লাহর কসম! কুরআনের শব্দাবলি মুখস্ত করার নাম তাদাব্বুর নয়। আমল আখলাক সংশোধন না করে সমগ্র কুরআন মুখস্ত জানার কোনো সার্থকতা নেই।’[15]
তাফাক্কুরুল কুরআন
আল-কুরআন নাযিলের একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো, এতে চিন্তা-গবেষণা করা। সুষ্টু মস্তিষ্কের সঠিক চিন্তা সার্বাঙ্গীন সাফল্যের চাবিকাটি। মানবতার চুড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা আল-কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় তাফাক্কুর এর প্রসঙ্গ টেনেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) বর্ণিত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য:
«لَقَدْ نَزَلَتْ عَلَيَّ اللَّيْلَةَ آيَةٌ وَيْلٌ لِمَنْ قَرَأَهَا وَلَمْ يَتَفَكَّرْ فِيهَا: [اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ ۚۙ۰۰۱۹۰] الآية كلها {آل عمران: 190}».
‘এ রাতে আমার ওপর এমন একটি আয়াত নাযিল হয়েছে, যে ব্যক্তি এটি পাঠ করে তাতে চিন্তা-গবেষণা করবে না তার জন্য দুর্ভোগ। আয়াতটি হচ্ছে, اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيٰتٍ لِّاُولِي الْاَلْبَابِۚۙ۰۰۱۹۰|[16]
নামাযে কুরআন তিলাওয়াতের ফযিলত
কুরআন তিলাওয়াতের বহুবিধ ফযিলতের বর্ণনা রয়েছে হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে। অবস্থাভেদে এটির সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। নামাযে কুরআন তিলাওয়াত ও তা শোনার মাধ্যমে সর্বাধিক সওয়াব লাভ করা যায়। আরবের সব চেয়ে মূল্যবান সস্পদ লাল উটের চেয়েও যার মর্যাদা বেশি। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,
«أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ إِذَا رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ أَنْ يَجِدَ فِيهِ ثَلَاثَ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ؟» قُلْنَا: نَعَمْ، قَالَ: «فَثَلَاثُ آيَاتٍ يَقْرَأُ بِهِنَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاتِهِ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثِ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ».
‘বাড়িতে ফিরে মোটাসোটা হৃষ্ট-পুষ্ট তিনিটি উট লাভ করলে কি তোমরা খুশি হবে না? সাহাবায়ে কেরাম জবাব দিলেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, নামাযে দাড়িয়ে তিনটি আয়াত তিলাওয়াত করা হৃষ্ট-পুষ্ট তিনিটি মোটা উট লাভ করার চেয়েও উত্তম।’[17]
অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে,
«مَنْ حَافَظَ عَلَى هَؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ الْـمَكْتُوْبَاتِ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِيْنَ، وَمَنْ قَرَأَ فِيْ لَيْلَةٍ مِائَةَ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ الْقَانِتِيْنَ».
‘যে ব্যক্তি ফরয নামাযসমূহ যত্ন সহকারে আদায় করবে, সে অলসদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। আর যে ব্যক্তি রাত্রিকালীন নামাযে দাঁড়িয়ে একশত আয়াত তিলাওয়াত করবে তার নাম আনুগত্যশীলদের তালিকাভূক্ত হবে।’[18]
রাসুল (সা.) যেভাবে কুরআনচর্চা করতেন
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন রাসুল (সা.)-এর কুরআন তিলাওয়াতের বাস্তব প্রতিভূ। তিনি চারজন বিশিষ্ট সাহাবী থেকে কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তারা হলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.), হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাযি.), হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাযি.) ও হযরত আবু হুযাইফা (রাযি.)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম (রাযি.)। তাঁদের তিলাওয়াত এতো মনোমুগ্ধকর ছিল যে, স্বয়ং রাসুল (সা.) তাঁদের নিকট থেকে তিলাওয়াত শুনতেন। হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাযি.) ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। একদিন রাসুল (সা.) তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন,
«إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ»، قَالَ: آللَّهُ سَمَّانِي لَكَ؟ قَالَ: «اللهُ سَمَّاكَ لِي»، قَالَ: فَجَعَلَ أُبَيٌّ يَبْكِي.
‘আল্লাহ তাআলা আমাকে আপনার নিকট থেকে কুরআন শুনতে আদেশ দিয়েছেন। হযরত উবাই (রাযি.) বললেন, আল্লাহ কি আমার নাম নিয়ে বলেছেন? রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ।’ আল্লাহ এ ব্যাপারে আপনার নাম নিয়ে বলেছেন। এ কথা শুনে উবাই (রাযি.) কেঁদে ফেললেন।’[19]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ﷺ، قَالَ: قَالَ لِي النَّبِيُّ ﷺ: «اقْرَأْ عَلَيَّ» قُلْتُ: أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ، قَالَ: «إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي»، قَالَ: فَقَرَأَ عَلَيْهِ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ النِّسَاءِ إِلَى قَوْلِهِ: [فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا٢ؕؐ۰۰۴۱] {النساء: 41}، فَبَكَىٰ.
‘একদিন রাসুল (সা.) আমাকে কুরআন শোনাতে বললেন, আমি বললাম, কুরআন আপনার ওপরই নাযিল হয়েছে। আর আপনি অমার নিকট থেকে তা শুনবেন? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি অন্যের নিকট নিকট থেকে তা শুনতে পছন্দ করি।’ তিনি সুরা আন নিসা পাঠ শুরু করলেন, فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا٢ؕؐ۰۰۴۱ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছার পর রাসুল (সা.) বললেন, ‘এবার থামো।’ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) তাকিয়ে দেখলেন, রাসুল (সা.)-এর চোখ দুটি অশ্রুসজল হয়ে উঠেছে।’[20]
কুরআনচর্চায় সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত নীতি
আল-কুরআনের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত নীতি বর্ণনা প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) বলেন,
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ، قَالَ: «كَانَ الرَّجُلُ مِنَّا إِذَا تَعَلَّمَ عَشْرَ آيَاتٍ، لَمْ يُجَاوِزْهُنَّ حَتَّىٰ يُعْرَفَ مَعَانِيَهُنَّ وَالْعَمَلَ بِهِنَّ».
‘সাহাবায়ে কেরাম দশটি আয়াত শেখার পর তার অর্থ অনুধাবন করে তদানুযায়ী আমল করা পর্যন্ত সামনের দিকে অগ্রসর হতেন না।’[21]
কুরআনের অর্থ অনুধাবন করার লক্ষ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবেন আমর ইবনুল আস (রাযি.)-কে রাসুল (সা.) তিনদিনের কমে আল-কুরআন শেষ করতে বারণ করেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.)-এর সুরা আল-বাকারা শিখতে আট বছর সময় লেগেছিল। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, তাঁর পিতা হযরত ওমর (রাযি.) বারো বছরে সুরা আল-বাকারার পাঠ সমাপ্ত করেন। এটি শেষ করে তিনি একটি উট যবাই করেন।[22]
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) কুরআনচর্চার পদ্ধতি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,
«لَا تَهُذُّوا الْقُرْآنَ، كَهَذِّ الشِّعْرِ، وَلَا تَنْثُرُوهُ نَثْرَ الدَّقَلِ، وَقِفُوا عِنْدَ عَجَائِبِهِ، وَحَرِّكُوا بِهِ الْقُلُوبَ».
‘কবিতা আবৃত্তির মতো কুরআন তিলাওয়াত করো না। নষ্ট খেজুরের মতো এটিকে বিক্ষিপ্তভাবে ফেলে রাখো না। কুরআনের বিস্ময়কর আলোচনার সময় থামো, এটি দ্বারা অন্তরকে নাড়া দাও, সুরাটি শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যেনো তোমাদের লক্ষ্য না হয়।’[23]
রামাযান মাসে কুরআনচর্চা
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِۚ ۰۰۱۸۵
‘মানুষের হেদায়তের জন্য রামাযান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। যাতে রয়েছে হেদায়তের সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্য।’[24]
সহিহ আল-বুখারী শরিফে বর্ণিত আছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُوْنُ فِيْ رَمَضَانَ حِيْنَ يَلْقَاهُ جِبْرِيْلُ، وَكَانَ يَلْقَاهُ فِيْ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ الْقُرْآنَ، فَلَرَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَجْوَدُ بِالْـخَيْرِ مِنَ الرِّيْحِ الْـمُرْسَلَةِ».
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি রামাযান মাসে হতেন অধিক দানশীল। যখন জিবরিল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতি রাতে কুরআনের দাওর করতেন। রাসুল (সা.) ছিলেন কল্যাণকর কাজে প্রবাহমান বায়ূর চেয়েও অধিক বদান্য।’[25]
ইমাম ইবনে রজব আল-হাম্বলী (রহ.) বলেন, উপর্যুক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা রামাযান মাসে কুরআনের দরস দেওয়া, দরসের জন্য সমবেত হওয়া ও কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ব্যক্তির নিকট কুরআন শোনানো মুসতাহাব প্রমাণিত হয়। তবে অর্থ না বুঝে কুরআনের নিছক তিলাওয়াতপূর্বক বারবার কুরআন খতম করা সালাফের নীতি ছিল না। এ সম্পর্কে আয়িশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত,
عَنْ مُسْلِمِ بْنِ مِخْرَاقٍ قَالَ: قُلْتُ لِعَائِشَةَ: إِنَّ رِجَالًا يَقْرَأُ أَحَدُهُمُ الْقُرْآنَ فِيْ لَيْلَةٍ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا فَقَالَتْ: قَرَؤُوْا وَلَـمْ يَقْرَؤُوْا كُنْتُ أَقُوْمُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ لَيْلَةَ التَّمَامِ فَيَقْرَأُ بِالْبَقَرَةِ وَآلِ عِمْرَانَ وَالنِّسَاءِ فَلَا يَمُرُّ بِآيَةٍ فِيْهَا اسْتِبْشَارٌ إِلَّا دَعَا وَرَغِبَ وَلَا بِآيَةٍ فِيْهَا تَخْوِيْفٌ إِلَّا دَعَا وَاسْتَعَاذَ.
‘মুসলিম ইবনে মিখরাখ থেকে বির্ণত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়িশা (রাযি.)-কে প্রশ্ন করলাম, রাতের বেলায় কয়েকবার আল-কুরআন খতম করার ব্যাপরে আপনার মতো কি? তিনি উত্তর দিলেন, তারা কুরআন তিলাওয়াত করেও করেনি। আমি রামাযান মাসে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কিয়ামুল লাইল করতাম। তিনি সুরা বাকারা, আলে ইমরান ও নিসা পাঠ করতেন। যখন সুসংবাদ সংবলিত কোনো আয়াত আসতো, তিনি দু‘আ করতেন এবং আগ্রহী হতেন। ভয়-ভীতি সংবলিত কোনো আয়াত আসলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রর্থনা করতেন।’[26]
আল-কুরআন একটি প্রভাব বিস্তারকারী কিতাব
আল-কুরআন একটি প্রভাবশালী আসমানি কিতাব। যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। নাযিল হবার সময়কাল থেকে অদ্যাবধি এটি সমানভাবে ক্রিয়াশীল। মুমিনের ওপর তার প্রভাব সম্পর্কে আল-কুরআন বলেন,
اَللّٰهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتٰبًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ١ۖۗ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُوْدُ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ١ۚ ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَ قُلُوْبُهُمْ اِلٰى ذِكْرِ اللّٰهِؕ ۰۰۲۳
‘আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম বাণীসম্পন্ন একটি কিতাব নাযিল করেছেন। যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ ও বারবার পঠিত। যারা আল্লাহকে ভয় করে কুরআনের প্রভাবে তাদের ত্বকের পশম খাড়া হয়ে যায় ও অন্তর নরম হয়।’[27]
অমুসলিমদের ওপরও এ কুরআন সমানভাবে ক্রিয়াশীল। হাদিস ও সিরাতের বিভিন্ন গ্রন্থে এ ধরনের অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে। কুরআন ও রাসুলের সাথে শত বিরোধিতা সত্ত্বেও তারা আল-কুরআনের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
মক্কার কুরাইশ নেতারা দিনের বেলায় রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বিরোধিতায় মগ্ন থাকলেও রাতের বেলায় চুপিসারে তাঁর কুরআনের তিলাওয়াত শুনে নিজেদের আত্মা শীতল করতো। এ প্রসঙ্গে ইবনে ইসহাক (রহ.)-এর বর্ণনাটি প্রণিধানযোগ্য:
عَنِ الزُّهْرِيِّ قَالَ: حُدِّثْتُ أَنَّ أَبَا جَهْلٍ وَأَبَا سُفْيَانَ وَالْأَخْنَسَ بْنَ شَرِيْقٍ خَرَجُوْا لَيْلَةً لِيَسْتَمِعُوْا مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَهُوَ يُصَلِّي بِاللَّيْلِ فِيْ بَيْتِهِ، وَأَخَذَ كُلُّ رَجُلٍ مِنْهُمْ مَجْلِسًا لِيَسْتَمِعَ فِيْهِ، وَكُلٌّ لَا يَعْلَمُ بِمَكَانِ صَاحِبِهِ، فَبَاتُوْا يَسْتَمِعُونَ لَهُ حَتَّىٰ إِذَا أَصْبَحُوْا أَوْ طَلَعَ الْفَجْرُ تَفَرَّقُوْا، فَجَمَعَتْهُمُ الطَّرِيْقُ فَتَلَاوَمُوْا، وَقَالَ: بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: لَا تُعَوِّدُوْنَ فَلَوْ رَآكُمْ بَعْضُ سُفَهَائِكُمْ لَأَوقَعْتُمْ فِيْ نَفْسِهِ شَيْئًا, ثُمَّ انْصَرَفُوْا حَتَّىٰ إِذَا كَانَتِ اللَّيْلَةُ الثَّانِيَةُ عَادَ كُلُّ رَجُلٍ مِنْهُمْ إِلَىٰ مَجْلِسِهِ، فَبَاتُوا يَسْتَمِعُونَ لَهُ حَتَّىٰ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ تَفَرَّقُوْا، فَجَمَعَتْهُمُ الطَّرِيْقُ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ مِثْلَ مَا قَالُوْا أَوَّلَ مَرَّةٍ. , ثُمَّ انْصَرَفُوْا فَلَمَّا كَانَتِ اللَّيْلَةُ الثَّالِثَةُ أَخَذَ كُلُّ رَجُلٍ مِنْهُمْ مَجْلِسَهُ، فَبَاتُوْا يَسْتَمِعُوْنَ لَهُ حَتَّىٰ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ تَفَرَّقُوْا، فَجَمَعَتْهُمُ الطَّرِيْقُ، فَقَالُوا: لَا نَبْرَحُ حَتَّىٰ نَتَعَاهَدَ لَا نَعُوْدُ، فَتَعَاهَدُوْا عَلَىٰ ذَلِكَ، ثُمَّ تَفَرَّقُوا فَلَمَّا أَصْبَحَ الْأَخْنَسُ بْنُ شَرِيْقٍ أَخَذَ عَصَاهُ, ثُمَّ خَرَجَ حَتَّىٰ أَتَىٰ أَبَا سُفْيَانَ فِي بَيْتِهِ فَقَالَ: حَدَّثَنِيْ يَا أَبَا حَنْظَلَةَ عَنْ رَأْيِكَ فِيمَا سَمِعْتَ مِنْ مُحَمَّدٍ فَقَالَ: يَا أَبَا ثَعْلَبَةَ وَاللهِ لَقَدْ سَمِعْتُ أَشْيَاءَ أَعْرِفُهَا وَأَعْرِفُ مَا يُرَادُ بِهَا، وَأَشْيَاءٌ مَا أَعْرِفُ مَعْنَاهَا وَلَا مَا يُرَادُ بِهَا، فَقَالَ الْأَخْنَسُ: وَأَنَا وَالَّذِي حَلَفْتُ لَهُ, ثُمَّ خَرَجَ مِنْ عِنْدِهِ حَتَّىٰ أَتَىٰ أَبَا جَهْلٍ، فَدَخَلَ عَلَيْهِ بَيْتَهُ فَقَالَ: يَا أَبَا الْـحَكَمِ مَا رَأْيُكَ فِيمَا سَمِعْتَ مِنْ مُحَمَّدٍ؟ فَقَالَ: مَاذَا سَمِعْتَ؟ تَنَازَعْنَا نَحْنُ وَبَنُوْ عَبْدِ مَنَافٍ الشَّرَفَ؛ أَطْعَمُوْا فَأَطْعَمْنَا، وَحَمَلُوْا فَحَمَلْنَا، وَأَعْطَوْا فَأَعْطَيْنَا حَتَّىٰ إِذَا تَجَاثَيْنَا عَلَى الرُّكَبِ وَكُنَّا كَفَرَسَيْ رِهَانٍ قَالُوْا: مِنَّا نَبِيٌّ يَأْتِيْهِ الْوَحْيُ مِنَ السَّمَاءِ، فَمَتَى نُدْرِكُ هَذِهِ؟ وَاللهِ لَا نُؤْمِنُ بِهِ أَبَدًا، وَلَا نُصَدِّقُهُ، فَقَامَ عَنْهُ الْأَخْنَسُ بْنُ شَرِيقٍ.
‘ইমাম যুহরী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, আবু জাহাল, আবু সুফয়ান ও আখনাস ইবনে শরিক একদিন বিচ্ছিন্নভাবে রাসুল (সা.)-এর রাত্রিকালীন নামাযের তিলাওয়াত শোনার নিমিত্তে তাঁর ঘরের চারপাশে অবস্থান নেয়। সকাল বেলা ফিরতি পথে কাকতালীয়ভাবে তাদের পারস্পরিক সাক্ষাৎ হয়ে যায়। এমন গর্হিত কাজে লিপ্ত থাকার জন্য তারা একে অপরকে ভর্ৎসনা করে এবং এ কাজের পুনরাবৃত্তি না করার শপথ গ্রহণ করে নিজ নিজ বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে। কেননা এতে তাদের অধীনস্ত অনুসারীদের মনে তাদের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও তারা বিচ্ছিন্নভাবে (গোপনীয়ভাবে) আবারো কুরআন শুনতে অবস্থান নেয় এবং সকাল বেলা পুনরায় তাদের পারস্পরিক সাক্ষাৎ ঘটে যায়। তারা গত রাতের মতো আবারো ওয়াদাবদ্ধ হয়ে ঘরে ফিরে যায়। তৃতীয় দিনেও একই ঘটনা ঘটে। এবার তারা চূড়ান্ত ওয়াদা করে বাড়ির পথ ধরে। তারা পারস্পরিক আলোচনায় আল-কুরআনের অলৌকিকতা ও তার অপরিসীম প্রভাবের কথা স্বীকার করে।’[28]
লেখক: পিএইচ-ডি. গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতি, জাগৃতি লেখক ফোরাম
[1] আল-কুরআন, সুরা সুওয়াদ, ৩৮:২৯
[2] আল-কুরআন, সুরা আল-বাকারা, ২:৭৮
[3] আল-কুরআন, সুরা আন-নাহল, ১৬:৪৪
[4] আল-কুরআন, সুরা আন-নামাল, ২৭:৯১-৯২
[5] আল-কুরআন, সুরা ইউনুস, ১০:১৬
[6] আল-কুরআন, সুরা আল-বাকারা, ২:১২১
[7] ইবনে জরীর আত-তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তাওয়ীলিল কুরআন, দারু হিজর, কায়রো, মিসর (১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৪৮৮
[8] আল-কুরআন, সুরা আল-মুয্যাম্মিল, ৭৩:৪
[9] আল-কুরআন, সুরা আল-ইসরা, ১৭:১০৬
[10] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ৪, পৃ. ২০৭৪, হাদীস: ২৬৯৯
[11] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৫৩৬, হাদীস: ৭৭২
[12] আল-কুরআন, সুরা আল-বাকারা, ২:১২১
[13] ইবনে কসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৯ হি. = ১৯৯৮ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ২৮২
[14] আল-কুরতুবী, আল-জামি লি-আহকামিল কুরআন, দারুল কুতুব আল-মিসরিয়া, কায়রো, মিসর (১৩৮৪ হি. = ১৯৬৪ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৩৯
[15] ইবনে কসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, খ. ৭, পৃ. ৫৪
[16] ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪১৪ হি. = ১৯৯৩ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৩৮৭, হাদীস: ৬২০, হযরত আয়িশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[17] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫৫২, হাদীস: ৮০২, হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[18] আল-বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, মাকতাবাতুর রাশাদ, রিয়াদ, সউদী আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৩ হি. = ২০০৩ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. ৪৯২, হাদীস: ২০০২, হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[19] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫৫০, হাদীস: ৭৯৯, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[20] (ক) আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ৬, পৃ. ১৯৭, হাদীস: ৫০৫৬; (খ) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫৫১, হাদীস: ৮০০
[21] ইবনে জরীর আত-তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তাওয়ীলিল কুরআন, দারু হিজর, কায়রো, মিসর (১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৭৪
[22] মুহাম্মদ হাসান আকীল মুসা, নুযহাতুল ফুযালা তাহযীবু সিয়ারি আ’লামিন নুবালা, দারুল উনদুলুস আল-খাযরা, জিদ্দা, সউদী আরব, খ. ১, পৃ. ৩৫
[23] ইবনে আবু শায়বা, আল-মুসান্নাফ ফিল আহাদীস ওয়াল আসার, মাকতাবাতুর রাশাদ, রিয়াদ, সউদী আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪০৯ হি. = ১৯৮৯ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ২৫৬, হাদীস: ৮৭৩৩
[24] আল-কুরআন, সুরা আল-বাকারা, ২:১৮৫
[25] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৮, হাদীস: ৬
[26] আস-সুয়ুতী, আল-ইতকান ফি উলুমিল কুরআন, আল-হাইয়াতুল মিসরিয়া আল-আম্মা, কায়রো, মিসর (১৩৯৪ হি. = ১৯৭৪ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৩৬০
[27] আল-কুরআন, সুরা আয-যুমার, ৩৯:২৩
[28] ইবনে ইসহাক, আস-সিয়ার ওয়াল মাগাযী, দারুল ফিকর, বয়রুত, লেবনান (১৩৯৮ হি. = ১৯৭৮ খ্রি.), পৃ. ১৭৯