বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযিলত
আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ আবদুল হালীম বুখারী (দা. বা.)
[[বাংলাদেশ তাহফীযুল কুরআন সংস্থা আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক সংস্থা। স্বল্প সময়ে পবিত্র কুরআন হিফয করার জন্য শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে তাজবিদ তথা বিশুদ্ধ পাঠভিত্তিক হিফযশিক্ষার সম্প্রসারণ ও পবিত্র কুরআনের সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বিগত ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১-২ মার্চ (বুধ, বৃহস্পতি ও জুমাবার) সংস্থার উদ্যোগে ৩ দিনব্যাপী ৩৯তম হিফযুল কুরআন শিক্ষাপ্রতিযোগিতা এবং জুমাবার ৯ম হিফযুল হাদিসপ্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় প্রতিযোগীতায় বিজয়ী প্রতিযোগীদেরকে প্রায় দু’লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করা হয়। উক্ত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সংস্থার সভাপতি আল্লামা মুফতি আবদুল হালীম বোখারী (দা. বা.)-এর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যটি পাঠকদের জন্য উল্লেখ করা হল।—সম্পাদক]
نَحْمُدُهُ وَنُصَلِّيْ عَلَىٰ رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ، أَمَّا بَعْدُ! فَأَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ: [خَلَقَ الْاِنْسَانَۙ۰۰۳ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ۰۰۴] {الرحمٰن: 3 – 4} صَدَقَ اللهُ الْعَظِيْمِ، وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «رب قاري قرأ القرآن والقرآن يلعنه»، أَوْ كَمَا قَالَ m.
সম্মানিত হুফফাযে কেরাম ও প্রতিযোগী শিক্ষার্থীরা!
বিগত তিনদিন যাবৎ পবিত্র কুরআনের হিফয প্রতিযোগিতা চলেছে। আল-হামদু লিল্লাহ, আজ তা সমাপ্ত হয়েছে এবং একদিন হিফযুল হাদিস প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখনই উভয় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেরকে পুরস্কৃত করা হবে ইন শা আল্লাহ।
প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য
এ ধরণের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য প্রদর্শনী বা লোকদেখানো লৌকিকতা প্রদর্শন নয়। বরং এ প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হচ্ছে পবিত্র কুরআনের সহিহ ও বিশুদ্ধ তিলাওয়াত সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া। বিশুদ্ধ তিলাওয়াত না হলে নামাযও শুদ্ধ হবে না। যেমন ইমাম আবু হামিদ আল-গাযালী (রহ.) ইয়াহইয়াউ উলুমিদ্দীন গ্রন্থে উল্লেখ করেন,
قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ: «رُبَّ تَالٍ لِلْقُرْآنِ وَالْقُرْآنُ يَلْعَنُهُ».
‘অনেক তিলাওয়াতকারী কুরআন তিলাওয়াত করে কিন্তু অশুদ্ধ হওয়ার কারণে রহমতের পরিবর্তে কুরআন তাদেরকে লানত করে।’[1]
তাই আমাদের মুরব্বিগণ সারা দেশে বিশুদ্ধ ও সহিহ তিলাওয়াত, আরবী সূরে, মাখরাজ-সিফাত আদায় করে তারতীলের সাথে কুরআনম জীদের হিফয এবং কুরআনের পাঠ-পঠন ব্যাপক করার উদ্দেশ্যই এ তাহফিযুল কুরআন সংস্থা বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। বিগত ৩৯ বছর ধরে হিফযুল কুরআন প্রতিযোগিতা চলে আসছে এবং তিনদিন যাবৎ প্রতিযোগিতা চলেছে এবং অত্যন্ত সুষ্ট ও নিরেপক্ষভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পরীক্ষকগণের মাধ্যমে নম্বর দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরণের পক্ষপাতিত্বের এখানে কোনো সুযোগ নেই।
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিযোগীদের করণীয়
এখন কেউ পুরস্কার পাবে আর কেউ সনদ পাবে। আবার কেউ হয়ত পুরস্কারও পাবে না, সনদও পাবে না। যারা পুরস্কার পাবে, সনদ পাবে, তারা অহংকার করবে না, শুকরিয়া আদায় করবে। কারণ অংহকার পতনের মূল। অহংকার কেবলমাত্র আল্লাহর চাদর। এ নিয়ে কেউ টানাটানি করলে আল্লাহ তাকে লাঞ্চিত করেন। তাই সদা আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ রাখবে। তিনি যদি দয়া না করতেন তাহলে হাজারো চেষ্টা করলেও কামিয়াব হতে পারতে না। আল্লাহর দয়ার কথা স্মরণ করে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। তাতে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত ও অনুগ্রহ আরও বৃদ্ধি করে দেবেন এবং সদা আল্লাহর দরবারে দুআ করতে থাকবে যেন আল্লাহ তাঁর প্রদত্ত এ নেয়ামত কেঁড়ে নিয়ে না যান। রাসুল (সা.) দুআ করতেন,
«اللَّهُمَّ لَا تَنْزِعْ مِنِّيْ صَالِحَ مَا أَعْطَيْتَنِيْ».
‘হে আল্লাহ! আপনি যে কল্যাণ আমাকে দিয়েছেন তা ছিনেয়ে নেবেন না।’[2]
যারা পুরস্কার পাবে না তাদের করণীয়
আর যারা পুরস্কারও পাবে না, সনদও পাবে না তাদেরও শিক্ষা লাভ করতে হবে, আমরা ভাই পুরস্কার পেল, সনদ পেল, আমি পেলাম না। আমাকে আরও অনেক বেশি মেহনত করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে আমিও পুরস্কার পাই। আল্লাহ কারো মেহনতকে নষ্ট করেন না। তবে মনে রাখবে, পুরস্কার পাওয়া, সনদ পাওয়া বড় জিনিস নয়। তুমি পুরস্কার না পেলেও অন্তত তাহফিযুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছ। এটিই তোমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। কারণ এটাকে উপলক্ষ্য করে তোমার কুরআনের তিলাওয়াত তো সহিহ হয়েছে। এটিই হল প্রতিযোগিতার মুখ্য উদ্দেশ্য।
বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের ফযিলত
কুরআন আল্লাহর বাণী। কুরআন শব্দের অর্থ: পাঠ করা বা যা পাঠ করা হয়। আর শরিয়তের ভাষায়: আল্লাহ তাআলা জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মানবজাতির হেদায়াতের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তার নাম আল-কুরআন। মানুষের মুখ থেকে যা কিছু উচ্চারিত হয় তার মধ্যে কুরআন পাঠই সর্বাধিক উত্তম। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتٰبَ اللّٰهِ وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَۙ۰۰۲۹ لِيُوَفِّيَهُمْ اُجُوْرَهُمْ وَيَزِيْدَهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ١ؕ اِنَّهٗ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ۰۰۳۰
‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিয্ক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনোক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণপ্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’[3]
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
«مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالْـحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِـهَا، لَا أَقُولُ: [الٓمّٓۚ۰۰۱] حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيْمٌ حَرْفٌ».
‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।’[4]
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
«اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيْعًا لِأَصْحَابِهِ».
‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’[5]
কুরআন মুখস্থ করার ফযিলত
নবী করীম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে এবং তা মুখস্থ করবে এবং (বিধি-বিধানের) প্রতি যত্নবান হবে, সে উচ্চ-সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কুরআন পাঠ করবে এবং তার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে সে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে।’[6]
مَا رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ: عَنْ عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: «مَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ، وَهُوَ حَافِظٌ لَهُ مَعَ السَّفَرَةِ الكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَمَثَلُ الَّذِيْ يَقْرَأُ، وَهُوَ يَتَعَاهَدُهُ، وَهُوَ عَلَيْهِ شَدِيْدٌ فَلَهُ أَجْرَانِ».
অন্যত্র তিনি আরও বলেন, ‘কিয়ামত-দিবসে কুরআন অধ্যয়কারীকে বলা হবে, কুরআন পড় এবং উপরে উঠো। যেভাবে দুনিয়াতে তারতিলের সাথে কুরআন পড়তে সেভাবে পড়। যেখানে তোমার আয়াত পাঠ করা শেষ হবে, জান্নাতের সেই সুউচ্চস্থানে হবে তোমার বাসস্থান।’[7]
فَقَدْ رَوَى التِّرْمِذِيُّ وَأَبُوْ دَاوُدَ: عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: «يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ: اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَأُ بِهَا».
ইমাম খাত্তাবী (রহ.) বলেন,
جَاءَ فِي الْأَثَرِ: «أَنَّ عَدَدَ آيِ الْقُرْآنِ عَلَىٰ قَدْرِ دَرَجِ الْـجَنَّةِ، يُقَالُ لِلْقَارِئِ: ارْقَ فِي الدَّرَجِ عَلَىٰ قَدْرِ مَا كُنْتَ تَقْرَأَ مِنْ آيِ الْقُرْآنِ فَمَنِ اسْتَوْفَىٰ قِرَاءَةَ جَمِيْعِ الْقُرْآنِ اسْتَوْلَىٰ عَلَى أَقْصَىٰ دَرَجِ الْـجَنَّةِ وَمَنْ قَرَأَ جُزْءًا مِنْهَا كَانَ رُقِيُّهُ فِي الدَّرَجِ عَلَى قَدْرِ ذَلِكَ، فَيَكُوْنُ مُنْتَهَى الثَّوَابِ عِنْدَ مُنْتَهَى الْقِرَاءَةِ.
‘হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতের সিঁড়ির সংখ্যা হচ্ছে কুআনের আয়াতের সংখ্যাপরিমাণ। কুরআনের পাঠককে বলা হবে, তুমি যতটুকু কুরআন পড়েছ ততটি সিঁড়ি বেয়েউপরে ওঠ। যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছে, সে আখেরাতে জান্নাতের সর্বশেষ সিঁড়ির ধাপে উঠে যাবে। যে ব্যক্তি কুরআনের কিছু অংশ পড়েছে সে ততটুকু উপরে উঠবে। অর্থাৎ যেখানে তার পড়া শেষ হবে সেখানে তার সওয়ারের শেষ সীমানা হবে।’[8]
সন্তানকে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেওয়ার প্রতিদান
নবী করীম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে, শিক্ষা করবে ও সে অনুযায়ী আমল করবে তার পিতা-মাতাকে দুটি পোশাক পরিধান করানো হবে যা দুনিয়ার সকল বস্তুর চেয়ে অধিক মূল্যবান। তারা বলবে, কোন আমলের কারণে আমাদেরকে এত মূল্যবান পোশাক পরানো হয়েছে? বলা হবে, তোমাদের সন্তানের কুরআন গ্রহণ করার কারণে।’[9]
فَقَدْ رَوَىٰ أَبُوْ دَاوُدَ وَالْـحَكِمُ: عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذٍ الْـجُهَنِيِّ، عَنْ أَبِيْهِ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: «مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَعَمِلَ بِمَا فِيْهِ، أُلْبِسَ وَالِدَاهُ تَاجًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ضَوْءُهُ أَحْسَنُ مِنْ ضَوْءِ الشَّمْسِ فِيْ بُيُوْتِ الدُّنْيَا لَوْ كَانَتْ فِيْكُمْ، فَمَا ظَنُّكُمْ بِالَّذِيْ عَمِلَ بِهَذَا»؟
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।’[10]
فَقَدْ رَوَىٰ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلَ وَالْـحَكِمُ: عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو: أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: «الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يَقُولُ الصِّيَامُ: أَيْ رَبِّ، مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ، فَشَفِّعْنِي فِيهِ، وَيَقُولُ الْقُرْآنُ: مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ، فَشَفِّعْنِيْ فِيْهِ»، قَالَ: «فَيُشَفَّعَانِ».
কুরআন পড়া বা শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করারঅন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
«أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَىٰ بُطْحَانَ، أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ، فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِي غَيْرِ إِثْمٍ، وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ؟»، فَقُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللهِ نُحِبُّ ذَلِكَ، قَالَ: «أَفَلَا يَغْدُوْ أَحَدُكُمْ إِلَى الْـمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ، أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ b، خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ، وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ، وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ، وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِلِ».
‘তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কুরআন হতে দুটি আয়াত পড়ে নাবা শিক্ষা দেয় না? তাহলে সেটি তার জন্য দুটি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়ত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম।’[11]
কুরআন পাঠ করার পদ্ধতি
‘হযরত আনাস ইবন মালিক (রাযি.)-কে রাসুল (সা.)-এর কুরআনপাঠের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, তিনি টেনে টেনে পড়তেন। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম‘ পাঠ করার সময় বিসমিল্লাহ‘ টেনে পড়তেন, একইভাবে আর-রাহমান টেনে পড়তেন, আর-রাহীম টেনে পড়তেন।’[12]
رَوَى الْبُخَارِيُّ: عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ: سُئِلَ أَنَسٌ كَيْفَ كَانَتْ قِرَاءَةُ النَّبِيِّ ﷺ؟ فَقَالَ: «كَانَتْ مَدًّا»، ثُمَّ قَرَأَ: بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِْ، يَمُدُّ بِبِسْمِ اللهِ، وَيَمُدُّ بِالرَّحْمٰنِ، وَيَمُدُّ بِالرَّحِيْمِ.
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
সংকলন:
মুহাম্মদ সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
[1] আল-গাযালী, ইয়াহইয়াউ উলূমিদ্দীন, দারুল মারিফা, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ২৭৪
[2] আল-হায়সামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, মাকতাবাতুল কুদসী, কায়রো, মিসর (১৪১৪ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ১০, পৃ. ১৮১, হাদীস: ১৭৪০৯, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[3] আল-কুরআন, সুরা ফাতির, ৩৫:২৯-৩০
[4] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর, খ. ৫, পৃ. ১৭৫, হাদীস: ২৯১০, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[5] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৫৫৩, হাদীস: ৮০৪, হযরত আবু উমামা আল-বাহিলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[6] আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ৬, পৃ. ১৬৬, হাদীস: ৪৯৩৭
[7] (ক) আবু দাউদ, আস-সুনান, আল-মাকতাবাতুল আসরিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৭৩, হাদীস: ১৪৬৪; (খ) আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর, খ. ৫, পৃ. ১৭৭, হাদীস: ২৯১৪
[8] আল-খাত্তাবী, মা‘আলিমুস সুনান, আল-মাতবাআতুল ইলমিয়া, হলব, সিরিয়া (প্রথম সংস্করণ: ১৩৫১ হি. = ১৯৩২ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ২৮৯-২৯০
[9] ((ক) আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৭০, হাদীস: ১৪৫৩; (খ) আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহাঈন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১১ হি. = ১৯৯০ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৭৫৬, হাদীস: ২০৮৫
[10] (ক) আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ১১, পৃ. ১৯৯, হাদীস: ৬৬২৬; (খ) আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহাঈন, খ. ১, পৃ. ৭৪০, হাদীস: ২০৩৬
[11] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫৫২, হাদীস: ৮০৩, হযরত উকবা ইবনে আমির (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[12] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৬, পৃ. ১৯৫, হাদীস: ৫০৪৬