জামেয়া ওয়েবসাইট

মঙ্গলবার-১০ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যা ও সমাধান -ফতওয়া বিভাগ-আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

প্রশ্নোত্তর-ফতওয়া বিভাগ-আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া

সমস্যা সমাধান

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail.com, পেইজলিংক: fb.com/islamiclaw.patiya

 

 

আকীদা-বিশ্বাস

সমস্যা: আমরা জানি, নবী-রাসূল ও ফেরেশতাগণের মধ্য থেকে কারো নাম উচ্চারণ করলে নামের শেষে আলাইহিস সালাম বলতে হয়। তবে ইমাম মাহদি যিনি নবীও নন রাসূলও নন, সাধরণত মানুষ তাঁর নামের শেষেও আলাইহিস সালাম বলে থাকে। এক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হলো, ইমাম মাহদি আলাইহিস সালাম বলা যাবে কি না? জানালে উপকৃত হবো।

মু. হারুন

বরিশাল

শরয়ী সমাধান: যেহেতু এটা নবী-রাসূল ও ফেরেশতাগণের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় এবং উক্ত বাক্যটি যেহেতু সাধারণত নবী-রাসূল বা ফেরেশতা হওয়ার প্রমাণ বহন করে বিধায় পৃথকভাবে ইমাম মাহদি আলাইহিস-সালাম না বলাই ভালো। যাতে সাধারণ জনগণ তাঁকে নবী-রাসূল বা ফেরেশতা ধারণা করে না বসে। শামী: ৬/৩৯৬, খায়রুল ফাতাওয়া: ১/১৪৭, আহসানুল ফাতাওয়া: ১/২০১

সমস্যা: আমাদের দেশে বিশেষ করে যেসব মানুষ ধর্মীয় জ্ঞান রাখে না তাদের অনেককেই দেখা যায়, যখন তারা কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় স্ব স্ব আস্থা অনুসারে বিভিন্ন মাযারে গিয়ে মৃত বা জীবিত অলী থেকে সমস্যার সমাধান এবং বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য প্রার্থনা করে। অনেক সময় দূর থেকেও বিভিন্ন পীর সাহেবের নাম ধরে এধরণের প্রার্থনা করতে দেখা যায়। সম্মানিত মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমি জানতে চাই যে, হক্কানী পীর হোক বা ভণ্ড-পীর কারো কাছে সমস্যার সমাধান বা বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করা জায়েয আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

আবদুল হামিদ

শাহ জালাল, সিলেট

শরয়ী সমাধান: মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট (হক্কানী পীর হোক বা ভণ্ড পীর) উদ্দেশ্য পূরণ ও সাহায্যের প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ। যদি আওলিয়ায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য পূরণকারী, বিপদ-আপদ থেকে মুক্তিদানকারী এবং দূর থেকে প্রার্থনাকে শ্রবণকারী মনে করে এধরনের প্রার্থনা করা হয়, তখন এধরণের আকীদা-বিশ্বাস ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী এবং শিরকের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কবরবাসীর নিকট প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। শামী: ২/৪৩৯, আল-বাহরুর রায়েক: ২/২৯৮, মাহমূদিয়া: ৩/১১৯

সমস্যা: যদি কোন ব্যক্তি রাসূল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি বা অবমাননামূলক কথা বলে, তখন তার ঈমান এবং বিয়েবন্ধন বহাল থাকবে কি? যদি না থাকে তখন তার জন্য করণীয় কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

মু. হাসান মাহমুদ

বসুন্ধরা, ঢাকা

শরয়ী সমাধান: রাসূল সম্পর্কে যদি কোন লোক কটূক্তি বা অসম্মানজনক কোন কথা বলে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে এবং বিবাহিত হলে তার বিয়েবন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে। তাকে নতুনভাবে ইসলাম গ্রহণ করে খাঁটি তাওবা করতে হবে এবং বিয়েকে নবায়ন করতে হবে। শামী: ৩/৪০১, ফাতাওয়া দারুল উলূম: ১২/৩৩৮

সমস্যা: আমাদের দেশের মাযারসমূহে সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বার্ষিক যে সমস্ত ওরশ অনুষ্ঠিত হয় সেই ওরশসমূহে অংশগ্রহণ করা যাবে কি? এবং ইসলামের সোনালি যুগে এধরণের ওরশের প্রথা ছিল কি না? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

বোরহানুদ্দীন

কচুয়া, চাঁদপুর

শরয়ী সমাধান: আমাদের দেশের মাযারসমূহে যেসব ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বিদ’আত ও নাজায়েয এবং ইসলামের সোনালি যুগে এধরণের ওরশের প্রথা ছিল না; বরং স্বয়ং নবী করীম (সা.) ইন্তেকালের পূর্বে তাঁর মাযারে অনুষ্ঠান করা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেন। সুতরাং ওইসব ওরশে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। তিরমীযী: ৩২০, মাহমূদিয়া: ১/২১৬, কিতাবুন নাওয়াযেল: ১/৬৬৫

তাহারাত-পবিত্রতা

সমস্যা: আমার শরীরে বিষাক্ত ফোঁড়া ওঠার কারণে অযু করার সময় এই অংশ পানি দিয়ে ধোয়া সম্ভব নয়। এমনকি তার ওপর কোন ব্যান্ডেজ লাগানো ও সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় অযু করার সময় করণীয় কি? শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

মাহফুজুর রহমান

রেকাবুদ্দীন, মুন্সিগঞ্জ

শরয়ী সমাধান: শরীরের যে অংশে ফোঁড়া ওঠেছে, সে অংশকে যদি পানি দ্বারা ধোয়াতে ক্ষতি হয়, তখন সে অংশের ওপর পানি দ্বারা মাসেহ করবে। যদি তাও সম্ভব না হয় সে অংশের ওপর ব্যান্ডেজ রেখে তার ওপর মাছেহ করবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তখন তার আশ-পাশ ধৌত করবে। ফোঁড়ার অংশটা ধোয়া এবং মাসেহ করা কোনটা আবশ্যক নয়। সূরা বাকারা ১৮৫, মিসকাত শরীফ ১/৫৫, আল-মুহীতুল বুরহানী: ১/৩৫, ফতওয়ায়ে কাযীখান: ১/২৯, রদ্দুলমুহতার: ১/২১৭

সমস্যা: বিনীত নিবেদন এই যে, নাজাসাতে গলীযা এবং খফীফা কতটুকু পরিমাণ কাপড়ে বা শরীরে লাগা অবস্থায় নামায পড়া যায়। বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

মু. মারুফ

চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: সাধারণত নাপাকী দুই প্রকার ১. গলীযা অর্থাৎ বিধান গত দিক থেকে যার হুকুম কঠোর। ২. খফীফা অর্থাৎ বিধানগত দিক থেকে যার মধ্যে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। নাজাসাতে গলীযা এক দেরহাম পরিমাণ থেকে বেশি কাপড়ে বা শরীরে লাগা অবস্থায় নামায পড়া যাবে না। এক দেরহামের কম হলে তা নিয়ে নামায পড়া যাবে। তবে ধুয়ে নেওয়া উত্তম। এক দেরহাম পরিমাণ গাঢ় নাপাকির বর্তমান পরিমাপ ১ মিসকাল= ৫মাশা= ৪.৮৬ গ্রাম। তরল নাপাকির বর্তমান পরিমাপ: ১.১ ইঞ্চি= ২.৭৫ সেন্টিমিটার নাজাসাতে খফীফা কাপড়ে বা শরীরের যে অংশ লাগে তার এক চতুর্থাংশ বা এর চেয়ে কম হলে নামায পড়া যাবে। মাবসুতে সারাখসী: ১/১৭৫, হিদায়া ১/৭৪, আল-বাহরুর রায়েক ১/২২৮, আন নাহরুল ফায়েক ১/১৪২

সমস্যা: চামড়ার মৌজা যদি এ পরিমাণ পাতলা হয়, যা চেইন লাগানো ছাড়া পায়ের সাথে লেগে থাকে না। অযুর মধ্যে এরকম মৌজার উপর মাসেহ করা জায়েয হবে কি? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হবো।

আবু হানিফ

ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: উল্লিখিত মৌজার উপর মাসেহ করা জায়েয। কেননা, চামড়ার মৌজার উপর মাসেহ হাদিসে মুতাওয়াতির তথা অবিচ্ছেদ্য সূত্রে বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং মৌজার উপর মাসেহ জায়েয হওয়ার জন্য যে তিনটি শর্ত রয়েছে তা এখানে পাওয়া যায়। সহীহুল বুখারী ১/৩৩, সহীহুল মুসলিম ১/১৩৩, হিদায়া ১/৬১, মাজমাউল আনহুর: ১/৬৬কিফায়াতুল মুফতি ১/১৮৮ নাওয়াজেল ৩/১৩৩

সমস্যা: একজন মহিলার বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর অবিরাম বিশদিন রক্ত আসে। এরপর ষোল দিন পর্যন্ত কোন রক্ত দেখা যায়নি। ষোলদিন পর পুনরায় রক্ত বের হওয়া শুরু হয়ে দশ দিন পর্যন্ত অবিরাম রক্ত দেখা যায়। উক্ত মহিলার কয়দিন তুহুর বা পবিত্রতার দিন? এবং কয়দিন নেফাস? এবং কয়দিন মসিক (ঋতুস্রাব) হিসেবে গণ্য হবে?

মারিয়া খাতুন

ঠাকুরগাঁও

শরয়ী সমাধান: উল্লিখিত অবস্থায় সে মহিলার যদি ইতঃপূর্বেও বাচ্চা প্রসব হয়ে থাকে এবং তখনকার নেফাসের সময় তার মনে থাকে তাহলে সে অনুযায়ী নেফাস গণ্য হবে, বাকিটা ইস্তেহাযা তথা রোগজনিত রক্তক্ষরণ বলে গণ্য করা হবে। আর যদি সে মহিলার এটা প্রথম বাচ্চা হয় তখন চল্লিশদিন নেফাস হিসেবে গণ্য হবে এবং বাকি ছয় দিন ইস্তেহাযা বা রোগজনিত রক্তক্ষরণ বলে গণ্য হবে। জামেউত তিরমিযী ১/৩৬ তাতার খানিয়া: ১/৫৩৯, মাজমাউল আনহুর: ২৮ আল-বিনায়া: ১/৫৫৭,

সালাত-নামায

সমস্যা: মহিলাদের নামাযের ক্ষেত্রে সতরের পরিমাণ কতটুকু? বিশেষ করে তাদের মাথার চুল যদি অধিক j¤^v হয় তখন সবগুলো ঢাকা কি ফরয? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

আবদুস সুবহান

কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

শরয়ী সমাধান: মহিলাদের জন্য মুখমণ্ডল ও দু’হাতের কব্জি এবং দু’পায়ের পাতা থেকে টাখনু পর্যন্ত নামাযে ঢাকা ফরয নয়; আর বাকি অংশ ঢাকা ফরয এবং চুল ঢাকাও ফরয। তবে, চুল অধিক লম্বা হলে পুরোটাই সতরের অন্তর্ভুক্ত কি না? এব্যাপারে কিছুটা মতানৈক্য থাকলেও আমাদের হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মত হলো, তাও সতরের অন্তর্ভূক্ত। তাই পুরোটাই ঢাকতে হবে। সুনানে আবি দাউদ: ২/৫৬৭, তাতার খানিয়া: ২/২৩, আদ্দুরুল মুখতার: ১/৭৭, বাহরে রায়েক: ১/২৬৯গুনয়াতুল মুসতামলি ২১০

সমস্যা: আমরা জানি পাগড়ি পরিধান করা রাসুল (সা.) ও অন্যান্য নবীগণের সুন্নাত। জানার বিষয় হলো নামাযে পাগড়ি পরিধান করার বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি? অনেকে বলে থাকেন পাগড়ি পরে নামায আদায় করলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়; এমনকি অনেকে ২৫ গুণ ৭০ গুণ পর্যন্ত বেশি সাওয়াবের কথা বলে থাকেন। এব্যাপারে সঠিক সমাধান কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

মিজানুর রহমান

কুয়াকাটা, বরিশাল

শরয়ী সমাধান: এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, পাগড়ি নবীজীর সুন্নাত, ফেরেশতাগণের নিদর্শন, মুমিনদের জন্য সম্মানের কারণ এবং এই উম্মতের বৈশিষ্ট। ফকীহগণ একথায় ঐক্যমত পোষণ করেন যে, নামাযে পাগড়ি বাঁধা মুস্তাহাব এবং মুস্তাহাব কাজে সাওয়াব পাওয়াতে ও কোন সন্দেহ নেই। তবে, যে সমস্ত বর্ণনাতে পঁচিশ বা সত্তর গুণ সাওয়াবের কথা উল্লেখ রয়েছে সে সমস্ত বর্ণনাকে অনেক হাদিস বিশারদগণ মাওযু বা জাল হাদিস বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাই সাওয়াবের নির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নির্ধারিত করা ঠিক নয়। পাগড়ি যেহেতু দায়েমী সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত তাই নামাযেও তা পরিধান করা উত্তম ও মুস্তাহাব। মুসনদে আহমদ: ২৩/৩৫০, মিশকাতুল মাসাবীহ: ২/৩৭৪, রদ্দুলমুহতার: ২/৪৪৬, মাযমাউল আনহুর: ১/২০৭

সমস্যা: সফর অবস্থায় গাড়িতে কিবলামুখী হয়ে নামায শুরু করার পর মুসল্লির অজান্তে যদি নামাযের ভিতর কিবলা ফিরে যায় এবং অন্য দিকে ফিরা অবস্থায় নামায শেষ করে ফেলে, তখন নামায শুদ্ধ হবে কি? না পুনরায় নামায আদায় করতে হবে?

শিব্বির আহমদ

সিরাজগঞ্জ

শরয়ী সমাধান: উল্লিখিত অবস্থায় যদি তিনি পরেও নাজানেন যে, তার কিবলা টিক ছিল না, তখন তা মাফ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি পরে জানতে পারেন যে, নামাযের মধ্যেই কিবলা পরিবর্তন হয়ে গেছে এবং তিনি কিবলা থেকে পরিপূর্ণ ফিরে থাকা অবস্থায় তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় বা তার ছেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন, তখন তা পুনরায় পড়ে দিতে হবে। মুসনদে আহমদ: ২২/১৭২, রদ্দুল মুহতার: ১/৫৬২, বাহরে রায়েক: ১/১৯১, নাহরে ফায়েক১/১৯১

 

যাকাত-সাদাকা

সমস্যা: মুহতারাম! কোন দরিদ্র ব্যক্তিকে যাকাতের টাকা হস্তান্তর না করে যদি তাকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়, তখন যাকাত আদায় হবে কি?

আবদুল হালিম

আনোয়ারা, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, যাকতের মধ্যে ‘তামলীক’ তথা অন্যকে মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। যাকাত যে জিনিষ দিয়ে দেওয়া হোকনা কেন, চাই তা টাকা হোক বা অন্য কোন বস্তু, তা দেওয়ার সময় গ্রহীতাকে মালিক বানিয়ে দেওয়া আবশ্যক। তাই প্রশ্নে উল্লিখিত দরিদ্র ব্যক্তিকে টাকা অপচয় করার সম্ভাবনার কারণে যাকাতের টাকা হস্তান্তর না করে ওই টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণ করে তা সেই ব্যক্তিকে রেজেস্ট্রির মাধ্যমে যাকাত আদায়ের নিয়তে মালিক করে দিলে তা ফুকাহায়ে কেরামের উক্তি মতে যাকাত হিসেবে গণ্য হবে। মাজমাউল আনহুর ১/৩১৮, আল-বাহরুর রায়েক ২/৩৫২, শরহুন নিকায়াহ ১/৫৩৫, রদ্দুল মুহতার ৩/১৭১

সমস্যা: কুরআনে বর্ণিত যাকাতের খাতসমূহ থেকে وفي سبيل الله (আল্লাহর রাস্তা)-এর উদ্দেশ্য কি? আল্লাহর রাস্তায় কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের যাবতীয় খরচাদি যাকাত ফান্ড থেকে ব্যয় করা যাবে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

আবদুল আজীজ

রামু, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, কুরআনে বর্ণিত যাকাতের সকল খাতের ক্ষেত্রে তামলিক তথা অন্যকে মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। তাই যাকাত যাকেই দেওয়া হোক না কেন মালিক বানিয়ে দিতে হবে। প্রশ্নে উল্লিখিত في سبيل الله-এর উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে ফুকাহায়ে কেরামগণ বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ মত অনুসারে في سبيل الله থেকে কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদকারীদেরকে সহযোগিতার জন্য যাকাত দেওয়া উদ্দেশ্য। কিন্তু শর্ত হলো, মুজাহিদকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে, অথবা এমন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যাদের উপর এই দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, তারা তা মুজাহিদদেরকেই মালিক বানিয়ে দিবে এবং ওই টাকা বা মালের ওপর মুজাহিদদের সম্পূর্ণ খরছের অধিকার থাকবে। তাহলে যাকাত আদায় হবে অন্যথায় আদায় হবে না। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, হানাফী মাযহাব মতে যে মুজাহিদকে যাকাত দেওয়া হচ্ছে সে গরীব হওয়া জরুরি, যদি সে ধনী হয় তাহলে যাকাত আদায় হবে না। তবে, যদি জিহাদের সফর অবস্থায় তার কাছে টাকা না থাকে তখন তাকেও দেওয়া যাবে। ফতওয়া তাতার খানিয়া ৩/২০৪, আল-বাহরুর রায়েক: ২/৩৫২, রদ্দুল মুহতার ৩/২৮৯, ২৯১; মাআ’রিফুল কুরআন ৩/৪৬৮

সমস্যা: সবিনয় আরজ এই যে, কুরআনে করীমে বর্ণিত মাছারেফে যাকাত বা যাকাতের খাতসমূহ থেকে মুআ’ল্লিফাতে কুলুব থেকে উদ্দেশ্য কি? বর্তমান যুগে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে যাকাত দেওয়া জায়েয হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

জুনাইদ সাওদাগর

চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: কুরআনে করীমে মহান আল্লাহ তায়ালা আট প্রকার ব্যক্তিকে যাকাতের খাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন, মুআল্লেফাতে কুলুব তাদের অন্যতম। অর্থাৎ সেসব মুসলিম কিংবা কাফের লোক যাদের মনতুষ্টির জন্য রাসুল (সা.) যাকাত দিতেন। আল্লামা শামী (রহ.) সেসবলোককে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন ১. সেসব মুসলমান যাদের ঈমান দুর্বল। তবে যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মনতুষ্টি করা হলে তারা মজবুত ও পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হওয়ার আশা করা যেত। ২. সেসকল কাফের যাদের মনতুষ্টি করলে মুসলমান হওয়ার আশা করা যেত। ৩. সেসব কাফের যাদেরকে যাকাত দিলে তাদের ফিতনা-ফাসাদ থেকে মুসলমান নিরাপদে থাকতে পারে। রাসুল (সা.) এর ইন্তেকালের পর ইসলাম ধর্ম স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী হয়ে যাওয়ায় সেসব লোকের মনতুষ্টির আর প্রয়োজন নেই। তাই হযরত আবু বকর (রাযি.)-এর যামানায় ওই খাতে যাকাত না দেওয়ার উপর সকল সাহাবায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেন। তাই প্রশ্নোক্ত বর্ণনা মতে বর্তমান যুগে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিন প্রকারের মধ্যে থেকে কোন ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া জায়েয হবে না এবং তাদেরকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। আল-জামে লি আহকামিল কুরআন ৮/১৫৫, তাফসীরুল কুরআনিল আজিম ২/৪৫২, ফতহুল কদীর ২/২০১ রদ্দুল মুহতার ৩/২৮৭

 

নিকাহ-তালাক

সমস্যা: আমি একজন কুমন্ত্রণাগ্রস্ত ব্যক্তি। আমার মনে সবসময় যে কোন কাজে কুল্লামা তালাকের কল্পনার উদয় হয়। যেমন- আমি কোন একটা গাড়ি দেখলে কুল্লামা তালাকের কথা মনে পড়ায় তাতে আর উঠতে পারি না। তেমনিভাবে সববিষয়ে ওই খেয়াল যে কোন কাজে আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আরেকদিন মনে মনে বলি যে, জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হলে তা করবো, তখন কুল্লামা তালাকের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় আমার মনে হয়েছে যে, ‘আমি জন্মনিয়ন্ত্রণ করলে আমার বউ তালাক’ এমন কথা বলেছি এবং একজন আলেমকে আমি কুল্লামা তালাক সরাসরি বলে ফেলেছি বলে স্বীকার করেছি। কিন্তু আসলে আমি সরাসরি কোন কুল্লামা তালাকের কথা বলিনি। তেমনিভাবে আরো অনেক সময় এধরণের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, আমি এমন কথা বলেছি কি বলিনি। এই পর্যন্ত কোন বন্ধু-বান্ধবদের সামনে বা অন্য কারো সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে কুল্লামা তালাকের কথা বলিনি। শুধু কল্পনায় চলে আসে। এখন আমার জানার বিষয় হলো- এই রকম কল্পনা আসার দ্বারা আমার কোন রকম ক্ষতি হবে কি না? এবং মনে মনে অনিচ্ছাকৃতভাবে অনেক সময় এমন কুমন্ত্রণার সৃষ্টি হয়, এর দ্বারা আমার বিয়ে শাদি করার মধ্যে কোন বাধা হবে কী না? আরেকদিন একজন মনোবিজ্ঞানি ডাক্তারের কাছে আমি গেলে তখন ওনাকে কুল্লামা তালাকের কথা বারবার কল্পনা আসার কথা বললে তখন ওনি আমাকে বলেন, তুমি কুল্লামা তালাক বল, তাই আমি কুল্লামা তালাক বলি। এর দ্বারা কোন কিছু হবে কি না? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

তারেকুল ইসলাম

লৌহজন, মুন্সিগঞ্জ

শরয়ী সমাধান: প্রশ্নের বর্ণনানুযায়ী আপনি যেহেতু কুমন্ত্রণাগ্রস্ত ব্যক্তি তাই যে কোন কাজ করার পূর্বে আপনার মনে মনে কুল্লামা তালাকের কথা কল্পনায় আসলেও তার দ্বারা কোন তালাক পতিত হবে না। কেননা, হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের অন্তরের কুমন্ত্রণা গুলো মাফ করে দেন। আর আপনার মনে যে সবসময় মুখ দিয়ে কুল্লামা তালাক বলেছেন কি না এ ব্যাপারে সন্দেহের উদ্রেক হয়, এর দ্বারা কোন তালাক পতিত হবে না। কেননা ফিক্‌হ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ মূলনীতি অনুসারে সন্দেহের দ্বারা ইয়াকীন তথা দৃঢ়তা দূর হয় না। সুতরাং এই রকম কল্পনা বিয়ে করার মধ্যে আপনার জন্য কোন ধরণের বাধা হবে না। আর আপনি যে একজন আলেমকে কুল্লামা তালাক বলছেন বলে অবগত করছেন, কিন্তু বাস্তবে বলেননি, তাহলে এটাও আপনার মনের সন্দেহ হিসেবে গণ্য হবে এবং মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়ার পর আপনি ওনাকে এ ব্যাপারে বলার পর তিনি আপনাকে কুল্লামা তালাক বলতে বলে এবং আপনিও তার কথায় এইরকম বলেছেন। এর দ্বারা কুল্লামা তালাক পতিত হবে না। কেননা, এটা তালকীনের অন্তর্ভূক্ত । যেহেতু আপনার কুল্লামা তালাক দেওয়ার কোন উদ্দেশ্য ছিল না। উল্লেখ্য যে, আপনার মনে কল্পনা আসলেও ওই দিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না; বরং সাথে সাথে আল্লাহু আকবার, আল-হামদুলিল্লাহ বেশি বেশি পড়বেন। মিশকাত ১/১৮, মিরকাত: ১/২২৪, আল-আশবাহ ১০৫

সমস্যা: একটি মেয়ের সাথে আমার বিবাহের কথা চলছে। তার সাথে আমার কিছুটা আত্মীয়তার সম্পর্ক ও রয়েছে। অর্থাৎ আমার দাদা তার দাদার ফুফিকে বিয়ে করেছেন। সেই হিসেবে সে আমার ভাতিজী হয়। এ অবস্থায় আমার উক্ত সম্পর্কিত ভাতিজীর সাথে আমার বৈবাহিক সম্পর্ক শুদ্ধ হবে কি না? শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

আহমাদুল্লাহ

মানিকছড়ি

শরয়ী সমাধান: প্রশ্নে উল্লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত মহিলা আপনার দূরসম্পর্কীয় ভাতিজী হিসেবে গণ্য হয়েছে। আপনার নিকটবর্তী কোন ভাতিজী নয়। তাই উক্ত মহিলার সাথে আপনার বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মধ্যে ইসলামী শরীয়তে কোন বাধা নেই। বাদায়েউস সানায়ে: ৩/৪১১, মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৪/২৮৬, বিনায়া: ৫/২২

বিবিধ প্রসঙ্গ

সমস্যা: আমাদের এলাকায় জনৈক আলেম বলেন যে, গোল জামা পরিধান করা নবী করীম (সা.)-এর নিয়মিত সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং সকল মুসলমানের জন্য গোলজামা পরিধান করা সুন্নাত। গোলজামা ব্যতীত অন্য কোন জামা পরিধান করা সুন্নাত পরিপন্থী হওয়ায় সুন্নাতের সাওয়াব পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হলো, সে আলেমের কথা কতটুকু বাস্তবসম্মত? জানালে কৃতজ্ঞ হবো।

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, শেগাফবন্ধ গোল জামা পরিধান করা নবী কারীম (সা.)-এর নিয়মিত সুন্নত ছিল না। কেননা রাসুল (সা.) অনেক সময় ইজার (লুঙ্গি) ও চাদর বাবহার করেছেন। আর অনেক সময় শামী-জুব্বা ব্যবহার করেছেন। আর কোন কোন সময় গোল জামা ব্যবহার করেছেন। তাই গোল জামা ব্যবহার না করলে সন্নতের পরিপন্থী হওয়ার কথা ঠিক নয়। যদিও টাখনুর উপর গোল জামা ব্যবহার করা উত্তম। তাই তা নিয়ে উপহাস করা জায়েয হবে না।

সমস্যা: আমি কয়েক বছর পূর্বে আমার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দিই। তার ইদ্দত চলাকালে আমি তার বৈমাত্রেয় বোনকে বিয়ে করি এবং তার গর্ভে আমার ঔরসে একটি ছেলেও জন্মলাভ করে। কিছুদিন পূর্বে জনৈক আলেম আমাকে বলে যে আপনার ওই বিয়ে শুদ্ধ হয়নি, বরং তা ইসলামী শরীয়তে নিকাহে ফাসেদের অন্তর্ভুক্ত। সম্মানিত মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার বিনীত নিবেদন এই যে, ওই আলেমের কথা কতটুকু শরীয়ত সমর্থিত? তার কথা সঠিক হলে ওই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া সন্তানের শরয়ী হুকুম কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

মাসুম বিল্লাহ

বসুন্ধরা, ঢাকা

শরয়ী সমাধান: ইসলামী শরীয়তের মধ্যে তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দত চলাকালীন তার বৈমাত্রেয় বোনকে বিয়ে করা নাজায়েয ও হারাম। যেমন- স্ত্রীর নিজ বোনকে বিয়ে করা হারাম। ইসলামী শরীয়তের মধ্যে এ রকম নিকাহ নিকাহে ফাসেদ হিসেবে গণ্য হয় এবং নিকাহে ফাসেদের দ্বারা স্ত্রী যদি গর্ভবতী হয় এবং তার থেকে সন্তান-সন্ততি জন্মলাভ করলে তা স্বামীর সন্তান-সন্ততি হিসেবে গণ্য হবে এবং তার থেকে বংশ সাব্যস্ত হবে। কিন্তু অতি শীঘ্রই আপনাদের বিয়ে নবায়ন করতে হবে এবং অতীতে যা তাদের অবৈধ সম্পর্ক হয়েছে তার জন্য আল্লাহ তাআ’লার নিকট লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে খাঁটি তওবা করে নিতে হবে। সূরায়ে নিসা: ২৩; ছফওয়াতুত তাফাসীর: ১/২৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৭৬/৫৫০

সমস্যা: সম্প্রতি আমাদের এলাকায় কবরের শিথানে স্মৃতি-ফলক স্থাপন ব্যাপক প্রচলনের রূপ নিয়েছে। কিছু মানুষ মৃত ব্যক্তির ফায়দার উদ্দেশ্যে স্মৃতি-ফলকের শুরুতে কয়েকটি কুরআনের আয়াত ও লিখে দেয়। এখন আমার জানার বিষয় হলো, কবরে স্মৃতি-ফলক স্থাপন করা কি জায়েয? এবং স্মৃতি-ফলকে কুরআনের আয়াত লিখাতে ময়্যতের কোন ধরণের ফায়দা নিহিত কি না? শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

মু. মুতাছিম বিল্লাহ

কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

শরয়ী সমাধান: কবরের শিথানে স্মৃতি-ফলক স্থাপন করা কেবল এ উদ্দেশ্যে জায়েয আছে যে, উক্ত কবর যাতে নিঃশ্চিহ্ন হয়ে না যায় এবং পদদলিত না হয়। তাই এক্ষেত্রেও শুধু নাম-ঠিকানা লিখার অনুমতি আছে। আর যদি এরূপ আশংকা না থাকে, তাহলে স্মৃতি-ফলক স্থাপন করা জায়েয হবে না। কারণ সেক্ষেত্রে এটা অপচয় বলে গণ্য হবে।

স্মৃতি-ফলকের ওপর কোন আয়াত লিখে দিলে আয়াতের বেহুরমতির আশংকা প্রবল, তাই তা মাকরূহ হবে এবং তা করার দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোন ফায়দা হওয়ার কথা কুরআন-হাদিসের কোথাও পাওয় যায় না। শামী: ২/২৩৭, খাইরুল ফাতাওয়া

 

বিভাগীয় নোটিশ

দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল- ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ