জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-২৪শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি-২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেগে উঠুক বিশ্বাসীদের ঐশী কলম

জেগে উঠুক বিশ্বাসীদের ঐশী কলম

জেগে উঠুক বিশ্বাসীদের ঐশী কলম

শফকত হোসাইন চাটগামী

পবিত্র ও মহৎ একটি পেশা সাংবাদিকতা। সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক, জাতির দর্পণ। সৎ সাংবাদিকদের সবাই যেমন সমীহ করে তেমনি শ্রদ্ধা করে। একশ্রেণীর হলুদ সাংবাদিকের কারণে সাংবাদিকতা কলুষিত হলেও তাদের সততার কদর ছিল সর্বকালে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার দৌরাত্ম্যে এই সময়েও প্রকৃত সাংবাদিকতার কদর কমেনি। সাংবাদিকতা খুবই জরুরি এবং অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। লেখালেখির এ ময়দানকে কোনো ক্রমেই অবহেলা করার সুযোগ নেই। নবীন আলেমসহ কওমি ওলামা তোলাবা এমনকি সব ইসলামপন্থীদের আজ মিডিয়া নিয়ে পড়াশোনা করা জরুরি। অন্যরা যে অস্ত্র ব্যবহার করে ইসলামের বেশি ক্ষতি করছে আমাদেরও উচিত সেই বিষয়টি ইসলামের জন্য কাজে লাগান।

আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। মূলত খবর আদান-প্রদান, সংবাদ সরবরাহকে সাংবাদিকতা বলে। তবে সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক একটি সংজ্ঞাও রয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন মতে যারা সংবাদপত্রে প্রতিনিধি বা সংবাদ বাহক হিসেবে কাজ করে তাদেরই শুধু সাংবাদিক বলে। যারা মিডিয়ার সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত তাদেরও সাংবাদিকের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যারা দেশ ও জনগণের স্বার্থে অনলাইনে লেখালেখি করেন সরকারি ভাষায় তারাও সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। সাংবাদিকদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা সরকারিভাবে রাখা হয়েছে তারাও ওই সুবিধাগুলো পাবেন। এমনকি পত্রিকা অফিসে কর্মরত পিয়ন, অফিস সহকারী, প্রেসম্যান, মেশিনম্যান ও পত্রিকা অফিসের কম্পিউটারম্যানকেও সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বর্তমান সরকার। এর আগে শুধু লেখালেখির সঙ্গে জড়িত সাংবাদিক, সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক ও প্রতিনিধি, রিপোর্টারদেরই কেবল সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা হতো।

মোটকথা সাংবাদিকতার সংজ্ঞা এবং পরিধি অনেক বাড়ানো হয়েছে। দেশ এবং জাতির জন্য সাংবাদিকদের যেমন অনেক দায় দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি ইসলামেও সাংবাদিকতার গুরুত্ব রয়েছে। সৎ সাংবাদিকতার কদর রয়েছে সর্বত্র। মানব রাষ্ট্রের বার্তাবাহক হজরত জিবরাইল (আ.) হচ্ছেন সবচেয়ে বড় সাংবাদিক। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহির বাণী তথা আল্লাহ পাকের সংবাদ নিয়ে নবী-রাসূলদের কাছে আসতেন। মিডিয়ায় আজ সৎ সংবাদ সরবরাহের চেয়ে যৌন উদ্দীপক ও ইসলামবিরোধী সংবাদ সাজিয়ে প্রকাশ করার প্রতিযোগিতায় মেতেছে। মিডিয়াকে ব্যবহার করে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে আঘাত হানাই হচ্ছে অবিশ্বাসী চক্রের মূল কাজ। সংবাদমাধ্যম তথা মিডিয়া আজ কে কত বেশি সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী কাজে জাহির করতে পারলেই ওই মিডিয়া এবং ওই সাংবাদিকের মূল্য অবিশ্বাসীদের কাছে হয়ে যায় আকাশচুম্বী। কেউ ধর্মের ওপর আঘাত করে লেখালেখি করলে ইসলাম, মুসলমান ও নবী-রাসূলের অবমাননা করলে তার পাশে দাঁড়ায় অবিশ্বাসীরা। তার নিরাপত্তার জিম্মাদারি নিয়ে নেয় তারা, মুসলমানদের পক্ষে কেউ নেই। প্রায় দুশ’ কোটি মুসলমানের দুনিয়ায় আমরা যারা ইসলাম ও মুসলমানদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে লেখালেখি করছি তাদের পাশে দাঁড়ানোর কোনো শক্তি পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যায় না।

তবে দুনিয়ায় কেউ আমাদের পাশে নেই তাতে কী? দুনিয়া ও আখিরাতের মালিক সব সৃষ্টির স্রষ্টা রাব্বুল আলামিন তো আমাদের পাশে আছেন। তাই ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে লিখতে হবে আমাদের। মুসলমানদের মনে রাখতে হবে কারও ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত করে লেখার অধিকার ইসলাম আমাকে দেয়নি। এ দেশের সংবিধানও তা অনুমোদন করে না। কারও বিরুদ্ধে ইচ্ছামতো লেখার নাম সাহিত্য কিংবা সাংবাদিকতা হতে পারে না। মাদরাসা শিক্ষার্থী বিশেষ করে কওমি আলেম ওলামা ও কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় এগিয়ে আসতে হবে। এ পথ বিনা বাধায় ছেড়ে দিলে আমাদের অবশ্যই আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের অবহেলার কারণেই এ মাঠ আজ অবিশ্বাসীদের দখলে। এভাবে মাঠ ছেড়ে দিয়ে মসজিদ-মাদরাসায় আবদ্ধ থাকা মুমিনের কাজ হতে পারে না। তাই শত্রু যেভাবে আঘাত করে তার মোকাবেলাও সেভাবে করতে হবে। শত্রু সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার মোড়কে এলে আমাদেরও একইভাবে তাদের জবাব দিতে হবে। এ জন্য মসজিদ, মাদরাসা, খানকাহ ও ইসলামী রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য ও সাংবাদিকতার এ ময়দানে সমানভাবে বিচরণ করা ধর্মভাবুকদের নেতিক দায়িত্ব।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ