উম্মাহর প্রত্যাশা: একতা ও হৃদ্যতা
মাওলানা এরফান শাহ
জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি, প্রভাব-প্রতিপত্তি, গ্রহণযোগ্যতা ও আত্মমর্যাদা প্রভৃতি বিবেচনায় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর নাম মুসলিম। অথচ এক সময় আমরাই ছিলাম শ্রেষ্ঠ জাতি। উন্নতির শীর্ষে। নেতৃত্বের আসনে। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে। সর্বক্ষেত্রে অগ্রগামী। সপ্তম শতক হতে ষোড়শ শতক পর্যন্ত প্রায় হাজার বছরের অধিক সময় পুরো পৃথিবীর সামগ্রিক আধিপত্য মুসলিমদের পদানত ছিল। তখন পুরো বিশ্ব মুসলিমদের ইচ্ছায় পরিচালিত হতো। তথ্য-প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে যুগোপযোগী শিক্ষা, হৃদ্যতা ও একতাই ছিল বিশ্বপ্রভাবের অন্যতম কারণ। কিন্তু এখন অবস্থা ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। মূলত জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া এবং নিজেদের অনৈক্যই আমাদের দুরাবস্থার প্রধান কারণ!
এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ৭.০০ বিলিয়ন। তন্মধ্যে খ্রিস্টানের সংখ্যা ২.২ বিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩১.৫০ ভাগ। তবে বিশ্বে তাদের সামগ্রিক প্রভাব ৩২.২১ ভাগ। মুসলিমের সংখ্যা ১.৬ বিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২২.৩২ ভাগ। অথচ বিশ্বে তাদের সামগ্রিক প্রভাব মাত্র ৪.১২ ভাগ। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে অবিশ্বাসীর সংখ্যা ১.২ বিলিয়ন, যা বিশ্বের মোট জনংসখ্যার ১৫.৩৫ ভাগ। বিশ্বে তাদের প্রভাব ১৯.৬৯ ভাগ। পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১.০ বিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৩.৯৫ ভাগ। বিশ্বে তাদের প্রভাব ১১.৮৭ ভাগ। পৃথিবীতে মোট ইহুদির সংখ্যা ১৪.৪ মিলিয়ন, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ০.০২ ভাগ। অথচ বিশ্বে তাদের সামগ্রিক প্রভাব ২২.৩২ ভাগ। বাকি ৯.৭৯ প্রভাব অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ন্ত্রণে। গবেষণায় মাপকাঠি হিসেবে শিক্ষা, সামরিক শক্তি, বিশ্বরাজনীতি প্রভাবিত করার যোগ্যতা, সৃজনশীলতা, আর্ন্তজাতিক সংস্থাসমূহে উপস্থিতি, আর্থিক সংগঠন ও সমৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পাসপোর্টের গুরুত্ব, আর্ন্তজাতিক পুরস্কার, সার্বভৌমত্ব, নিজ ভূখন্ডের ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, নির্ভরশীলতা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থা, প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূল অবস্থায় নিয়ে আসার তথা অভিযোজিত করার সামর্থ, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, বিগত ত্রিশ বছরের আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক, বিগত ত্রিশ বছরের মধ্যে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব, আবিস্কার ও আবিস্কৃত যন্ত্র বা কৌশলের বিস্তৃতি, ধর্মীয় পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাযুয্য, উত্তরণের গতি, অনুসারীদের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা, আত্মোন্নয়নে সম্মিলিত প্রয়াস, একতা, ঐক্য, দেশপ্রেম ও ব্যক্তিচেতনা, গ্রহণযোগ্য মানসিকতা, ধর্মাবলম্বীর অগ্রহায়ণ প্রয়াস, বিশ্বায়নে অবদান, বিশ্বের উন্নয়নে অবদান প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে। গবেষণার ফল এটাই প্রমাণ করে যে, প্রভাব বিস্তারে সংখ্যা দিয়ে কিছু যায় আসে না, গুণগতমানই আসল বিষয়। আধুনিক মিসাইলের যুগে কেউ যদি মধ্যযুগের তলোয়ার দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চায় তাহলে তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? এই গবেষণার সঙ্গে সবাই একমত হবেন, এমন প্রত্যাশা গবেষক করেননি। কোনো গবেষণাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। মত পার্থক্য, মতভেদ ও মত ভিন্নতা নিয়ে গবেষণা। তাই বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলতে পারে।
১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অফিস প্রথম মধ্যপ্রাচ্য নামটি উল্লেখ করে। তবে মার্কিন মেরিন অফিসার Alfred Thayer Mahan১৯০২ খ্রিস্টাব্দে আরব ও ইন্ডিয়ার সীমারেখা চিহ্নিত করার জন্য নামটি ব্যবহার করলে এটি ব্যাপক প্রচার পায়। বাহরাইন, সাইপ্রাস, মিশর, ইরান, ইরাক, ইসরাইল, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, ওমান, প্যালেস্টাইন, কাতার, সৌদি আরব, সিরিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন এই সতেরটি রাষ্ট্র নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য। মধ্যপ্রাচ্যের মোট আয়তন ৭২,০৭,৫৭৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাব মতে, জনসংখ্যা ৩৭৫ মিলিয়ন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে লোক সংখ্যা ৫২। গাণিতিকভাবে রাষ্ট্র ১৭টি হলেও ইসরাইল ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সবকটি দেশের অধিবাসী মুসলিম এবং তাদের ভাষা, বর্ণ, সংষ্কৃতি ও জাতিগত ইতিহাসও প্রায় অভিন্ন। তারপরও তারা একটি রাষ্ট্রের নাগরিকে পরিণত হওয়ার মতো ঐক্যে পৌঁছতে পারেনি। এমন অনৈক্যর মধ্যে থাকা জাতি কীভাবে প্রভাবশালী ও শক্তিশালী হবে? মধ্যপ্রাচ্যের সতেরটি মুসলিম রাষ্ট্রের একটির সঙ্গে অন্যটির সামান্য সদ্ভাবও নেই। সবসময় এক মুসলিম রাষ্ট্র অন্য মুসলিম রাষ্ট্রের ক্ষতির চিন্তায় মশগুল থাকেন এবং ক্ষতি করার জন্য অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছে নিজেদের মর্যাদা বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। প্রয়োজনে চিরশত্রু ইহুদির কাছে মাথা নত করতেও দ্বিধা করেন না। নিজেদের খনিজ সম্পদ দিয়ে স্বধর্মানুসারী ভাইয়ের রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য শত্রু লবির সঙ্গে আঁতাত করেন, কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র কেনেন, যন্ত্র কেনেন। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় পুরো নিরাপত্তা এখন ইহুদি-মার্কিন বলয়ের নিয়ন্ত্রণে।
ভারতের আয়তন ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গকিলোমিটার। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাব মতে, জনসংখ্যা ১৩১১ মিলিয়ন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৩৯২.৬। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ভিন্নতা, বৈচিত্র ও মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যের ৩৪ গুণ অধিক জনসংখ্যার দেশ ভারত, স্বাধীনতার পর হতে একটিমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। প্রকৃত অর্থে একদিনের জন্যও সামরিক শাসন কায়েম হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাও এ প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। নানা জাতি ধর্মের ৫০টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠিত। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ থেকে বিদায় হওয়ার সময় পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে পাকিস্তান নামের একটি রাষ্ট্র গঠন করে দিয়েছিল। এরপর পশ্চিম পাকিস্তানীরা কীভাবে পূর্ববঙ্গের জনগণকে শোষণ করেছিল, তা কমবেশি সবার জানা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে, একটা দিনের জন্যও পাকিস্তান, সামরিক শাসন ছাড়া প্রকৃত অর্থে শাসিত হয়নি। মুসলিম শাসকগণ ক্ষমতা ও আত্মভোগের জন্য সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তায় এত সংকীর্ণমনা হয়ে পড়েছে যে, পুরো জাতিটাই এখন সংকটাপন্ন, সংকীর্ণতা আর অস্তিত্বহীনতার চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে বসেছে।
মধ্যপ্রাচ্য অবস্থিত ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের আয়তন ২০,৭৭০ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৭.৭ মিলিয়ন। এর মধ্যে ১.৪ মিলিয়ন মুসলিম এবং ইহুদি ৬.৩ মিলিয়ন। মধ্যপ্রাচ্যের মোট জনসংখ্যা থেকে ইসরাইলের জনসংখ্যা বাদ দিলে মধ্যপ্রাচ্যের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬৭.৩ মিলিয়ন। ইসরাইল মূলত মুসলিম রাষ্ট্র পরিবেষ্টিত একটি খুদে ভূখণ্ড। তারপরও ৩৬৭.৩ মিলিয়ন জনগণ অধ্যুষিত ৭১,৮৬,৮০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যপ্রাচ্যকে মাত্র ৭.৭ মিলিয়ন অধ্যুষিত ২০,৭৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ইসরাইল পুতুলের ন্যায় ইচ্ছেমতো নাকানি-চুবানি খাইয়ে যাচ্ছে। ইসরালের সঙ্গে সংঘটিত একটি যুদ্ধেও আমরা জয়ী হতে পারিনি। শতাব্দীকাল ধরে ফিলিস্তিনিরা লাঞ্জিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত। নিজ মাতৃভূমিতে তারা আজ পরবাসী। নিজ দেশ তারা আজ পরাধীন। নিজ জন্মভূমিতে তারা আজ শরণার্থী। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার নূন্যতম অধিকারটুকুও তাদের নেই। স্বাধীন ফিলিস্তিন কত দূর! এজন্য আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে? সেই অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে? আর কত রক্ত ঝরলে স্বাধীন ফিলিস্তিন নামক সেই সোনার হরিণের দেখা মিলবে? সেই প্রশ্ন এখন মুসলিম উম্মাহর। পৃথিবীতে মুসলিমের সংখ্যা ১৪০ কোটি কিন্তু ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাব মতে, ইহুদির সংখ্যা মাত্র ১ কোটি ৪৪ লাখ। সারা বিশ্বের ১৭০ কোটি মুসলিম ১ কোটি ৪৪ লাখ ইহুদির কাছে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শৌর্য-বীর্য, প্রভাব-প্রতিপত্তি, মর্যাদা প্রভৃতি বিবেচনায় কত তুচ্ছ! কত নগণ্য! কত দুর্বল! তা মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দিকে নজর দিলে বুঝা যায়।
বাংলাদেশ হতে যেসব প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করতে যায়, তাদের সাথে কোন ধরনের আচরণ করা হয়, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জ্ঞাত। পৃথিবীর প্রায় সবকটি দেশে কমবেশি মুসলিম আছে। মুসলিম সংখ্যাঘরিষ্ঠ অধিকাংশ রাষ্ট্রে অন্তর্কোন্দল ও হানাহানি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তানের দিকে তাকালে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। প্যালেস্টাইন, কাশ্মির ও মিয়ানমারের দিকে চোখ দিলে অনুধাবন করা যায়, মুসলিমদের অবস্থা কত করুণ! তথ্যগতভাবে মুসলিমরা নিজেদের ভাই ভাই বলে ঘোষণা করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ইসরাইল ও মার্কিনলবি অস্ত্র ব্যবসার জন্য মুসলিম বিশে^ যুদ্ধ লাগিয়ে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়ামেন এক এক করে সব মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অথচ মুসলিম শাসকগণ ইহুদীদের ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অজান্তে নিজ পায়ে কুড়াল মারছে। মুসলিম উম্মাহ আজ বিশে^ ভাসমান জাতি তথা শরণার্থীতে পরিণত হতে চলেছে। মুসলমানগণ পাঁচশ’ বছরের অধিক ভারত শাসন করেছে কিন্তু শাসন ক্ষমতা হস্তচ্যুত হওয়ার পর ভারতবর্ষে তাদের প্রায় পুরো অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যায়। কারণ তারা শাসন করেছে, কিন্তু নিজেদের অবস্থানকে স্থায়িত্ব প্রদানের জন্য যা করা আবশ্যক তা করেনি। ফলে, লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে একদল ব্যবসায়ীর হাতে পুরো ভারতবর্ষ তুলে দিতে হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের প্রভাব এবং এই প্রভাব অবসানের কারণ কিন্তু বেশি নয়। অনৈক্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে নিজেদের অভিযোজিত করতে না পারাই মূলত মুসলিম উম্মাহর এমন দুরাবস্থার অন্যতম কারণ। মূলত অনৈক্যই মুসলিম বিশ্বকে পিছিয়ে দিয়েছে। একসময় মুসলিমরা সারা বিশ্বকে শাসন করেছে। তখন তাদের মধ্যে ঐক্য ছিল। যুগোপযোগী শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও গবেষণা ছিল। তৎকালীন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য জয় কিংবা প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব যন্ত্র বা কলা-কৌশল আবশ্যক ছিল, তাতে সমৃদ্ধ ও দক্ষ হওয়ার মতো জ্ঞান ছিল। এখন আমরা যুগোপযোগী জ্ঞান হতে অনেক পিছিয়ে। গবেষণা বিমূখ হয়ে পড়েছি। কেউ যদি মনে করেন, সপ্তম শতকের অস্ত্র দিয়ে বিশ্বকে পদানত করবেন, তাহলে তারাই পদানত হয়ে যাবেন। মুসলিমবিশ্ব ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারলে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণায় মনোযোগ দিলে, নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ। নতুন বছরে মুসলিম উম্মাহর প্রত্যাশা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে কোনো মুসলিম নর-নারী নির্যাতিত হলে মুসলিম উম্মাহ সম্মিলিতভাবে, সমস্বরে এক কন্ঠে এর প্রতিবাদ করবে। মজলুমের পাশে দাঁড়াবে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘সকল মুমুনি পরস্পর ভাই-ভাই, অতএব, তোমরা তোমাদের ভাইদের মাঝে সন্ধি স্থাপন কর, (হুজুরাত: ১০)। হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য ফাউন্ডেশনের ন্যায়। যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে, আকড়ে ধরে (বুখারী ও মুসলিম)। অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সমস্ত মুসলমান একটা শরীর বা দেহের ন্যায়। শরীরের কোনো অঙ্গ পীড়িত হলে সমস্ত শরীরে ব্যাথা ও জ¦র অনুভব হয় (বুখারী ও মুসলিম)।’ অনুরূপভাবে একজন মুসলিম আক্রান্ত হলে সমস্ত মুসলমান তার জন্য ব্যথিত হয় এবং চটপট করে। জঙ্গিবিমান ও বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘরে নিঃপাপ শিশুর আর্তনাদ, অসহায় মুমিন নর-নারীর কান্না, মজলুম মুসলমানদের আহাজারি, মুসলিম উম্মাহ আর দেখতে চায় না। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়ামেন, কাশ্মির ও আরাকানে মৃত্যুর মিছিল যেন আর দীর্ঘায়িত না হয়। মুসলমানদের রক্তে আর কারো হাত যেন রঞ্জিত না হয়। মুসলিমরা যেন আর শরণার্থীতে পরিণত না হয়। আভিজাত্য আরবদের যেন আর ঘর-বাড়ি ছাড়তে না হয়। মুসলিমবিশ^, ওআইসি, মুসলিম দেশ, মুসলিম শাসক, মুসলিম নেতা ও সাধারণ মুসলমানের প্রতি এ হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর বিনীত আহ্বান। ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র ও শত্রুর মোকাবেলা করা হোক। আশার কথা হচ্ছে ইতিমধ্যে জেরুজালেম নিয়ে ইহুদী-মার্কিন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুসলিমবিশ^ সোচ্চার হয়েছে। মুসলিমবিশ^ হুংকার ও চ্যালেঞ্জ ছুড়তে শুরু করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর এক গুয়েমি সিদ্ধান্ত মুসলিমবিশ^ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। বিশে^ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ইনশাআল্লাহ সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে, ভয়-ভীতি ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, মুসলিমবিশ^ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবে। মুসলিমবিশে^ শান্তি ও ঐক্যের স-বাতাশ প্রবাহিত হোক এটিই উম্মাহর প্রত্যাশা। আল্লাহপাক বলেন, তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে তোমরাই জয়ী হবে (১৩৯:৩)।’