বুধবার-২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সমস্যা ও সমাধান

সমস্যা-সমাধান ফতওয়া বিভাগ- আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া,চট্টগ্রাম

সমস্যা সমাধান

ফতওয়া বিভাগ…………….

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া,চট্টগ্রাম

মোবাইল-            01856-618367

ইমেইল-               daruliftapatiya@gmail.com,

ফেবু-পেজ-         fb.com/islamiclaw.patiya

আকীদা-বিশ্বাস

সমস্যা: হিন্দু ধর্মালম্বীদের সাথে তাদের বাড়িতে খানা খাওয়া জায়েয হবে কি?

মুহিব্বুল্লাহ

সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: হিন্দু বা বিধর্মীদের সাথে হৃদ্যতা, অন্তরঙ্গতা ও বন্ধুত্ব হারাম। এটি কুরআন মজীদের সুস্পষ্ট বিধান, তাই প্রয়োজন ছাড়া তাদের বাড়িতে খানা খাওয়ার অবকাশ নেই। তবে হিন্দু বা বিধর্মীদের ঘরে প্রয়োজনে খানা জায়েয, শর্ত হল তৈরিকৃত খাবার হালাল হতে হবে। তাদের জবাইকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম। হিন্দু বা বিধর্মীদের থালা-প্লেট খাওয়ার আগে ধুয়ে নেওয়া দরকার। কারণ তাতে নাপাকি থাকার সম্ভাবনাই বেশি, ধোয়া ব্যতীত তাদের প্লেটে খাবার খাওয়া মাকরুহ। তাতারখানিয়া ১৮/১৬৬; মাহমুদিয়া ২৭/৬৪

সমস্যা: সাক্ষাতের সময় মাতা-পিতার পদচুম্বন বৈধ হবে কি? আর সুন্নাত তরিকা কী?

সানজিদ সজল

ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: কদমবুছি বা পদচুম্বন একাধিক হাদীসে রয়েছে এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)-এর আমল থেকেও প্রমাণিত। আল্লামা শামী (রহ.)ও পদচুম্বন বৈধ হওয়ার মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাই সতর্কতার সহিত মাতা-পিতার পদচুম্বন বৈধ হবে।

সুন্নাত তরীকা: পদচুম্বন এমনভাবে করতে হবে যেন সিজদার আকৃতি না হয় কেননা সিজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য। সাধারণ জনগণ যেহেতু পরিপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করে না বরং অনেকক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করে ফেলে এবং সিজদার মতো পড়ে যায় তাই তাদেরকে সতর্কতামূলক পদচুম্বন এর অনুমতি না দেওয়াই উত্তম। আলমগীরী ৫/৩৬৯; এমদাদুল আহকাম ১/১৩৫

তাহারাত-পবিত্রতা

সমস্যা: একদিন ভাত খাওয়ার সময় আমি টিউবওয়েলে পানি আনতে যাই। সে সুযোগে কুকুর ভিতরে প্রবেশ করে আমার খাবারের থালায় মুখ দেয়। এখন জানার বিষয় হল, ওই খাবারগুলো এবং পাত্রটি কি নাপাক হয়ে যাবে? যদি নাপাক হয়, তাহলে পাক করার পদ্ধতি কী হবে?

আবদুল্লাহ

টেকনাফ, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: ইসলামি শরীয়তে কুকুরের উচ্ছ্বিষ্ট নাজাসাতে গালীযা বা বড় নাপাকি। এজন্য প্রশ্নে উল্লিখিত পাত্রের খাবার ও পাত্র উভয়টাই নাপাক হয়ে গেছে। এখন খাবারগুলো ফেলে দিতে হবে। আর পাত্রটি পাক করার পদ্ধতি হল, সেটাকে ৩বার ধুইতে হবে। তবে ৭বার ধোয়া ও একবার মাটি দ্বারা পরিষ্কার করা মুস্তাহাব। ইলাউস সুনান ১/২৮১; মাআরিফুস সুনান ১/৩২৩; আহসানুল ফতাওয়া ২/১০০

সমস্যা: শরীয়তের পরিভাষায় মোজা কাকে বলে? আমাদের দেশে ব্যবহৃত কাপড়ের পাতলা বা মোটা মোজার ওপর মাসেহ করা জায়েয হবে কি না? বিস্তরিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

আবদুর রহমান

চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: শরয়ী পরিভাষায় মোজার সংজ্ঞা: মোজা এমন একটি বস্তু যা চামড়া বা চামড়ার মত বস্তু দ্বারা তৈরি এবং পায়ের মাঝে টাখনুর ওপর পর্যন্ত ঘিরে রাখে। মোজার ওপর মাসেহ জায়েয হওয়ার জন্য ফুকাহায়ে কেরাম কিছু শর্তারোপ করেছেন, যেমনÑ ১. মোজাটা চামড়া বা চামড়া জাতীয় এমন বস্তু দ্বারা তৈরিকৃত হতে হবে যা পানি চোষণ করে না; ২. শুধুমাত্র মোজা পরিধান করে লাগাতার হেঁটে ৩/৪ মাইল চলা সম্ভবপর হতে হবে; ৩. কোনো কিছু দ্বারা বাঁধা ব্যতীত পায়ের সাথে মিশে থাকতে হবে। আমাদের দেশের প্রচলিত কাপড়ের পাতলা ও মোটা মোজার মধ্যে যেহেতু শরয়ী মোজার গুণাবলি একসাথে পাওয়া যায় না, তাই তার ওপর মাসেহ করা বৈধ হবে না। মারাকিল ফালাহ পৃ. ১২৯-১৩১; ফাতাওয়া উসমানী ১/৩৪৭

সমস্যা: কোন ব্যক্তি (পুরষ বা মহিলা) যদি মাথার চুল কাটে অথবা বগলের লোম কাটে বা নাভির নিচের লোম কাটে। কাটার পর কি গোসল করতে হবে?

রহিমুল্লাহ কুতুবী

উখিয়া, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখা উচিত যে, ইসলামি শরীয়তে শরীরের যেসব লোম কাটার বিধান রয়েছে সেসব কাটার পর গোসল বা অযু করা জরুরি নয়। ওসব কাটার পূর্বে যদি কারো অযু থাকে তবে লোমগুলো কাটার পরও ওই অযু বহাল থাকবে। কেননা এগুলো কাটার পরও অযুভঙ্গ হয় না। আল-আসবা পৃ. ৩৩

সালাত-নামায

সমস্যা: আমি প্রায় চট্টগ্রাম থেকে বাস যোগে টেকনাফে গিয়ে থাকি। সরাসরি বাস হওয়ার কারণে পথে কোথাও বাস থামে না। শুধুমাত্র একবার হোটেল বিরতি দিয়ে থাকে। পথে ওয়াক্ত হয়ে গেলে হোটেল বিরতির সময় আমি নামায পড়ে নেই। কিন্তু কোনো কোনো সময় এমন হয় যে, হোটেল বিরতির আগে বা পরে আছর ও মাগরিবের সময় শুরু হয়ে শেষ হয়ে যায়। ড্রাইভারকে বললেও গাড়ি থামায় না। এ অবস্থায় আমার অযু ও নামাযের হুকুম কী হবে জানিয়ে বাধিত করবেন।

সিদ্দীকুল্লাহ

হালিশহর, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: ইসলামে নামাযের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এজন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে বাস থামিয়ে নামায পড়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে ড্রাইভারকে বাধ্য করতে হবে। অথবা নামাযের সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে বাসে উঠতে হবে। প্রয়োজনে সরাসরি বাসে না উঠে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে লোকাল বাসে করে ভেঙে ভেঙে আপনি টেকনাফ যাবেন যাতে সময় মত আপনি নামায পড়তে পারেন। কোনো অবস্থায় নামায কাযা করা যাবে না। আর যদি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা অসম্ভব বা কষ্টকর হয়, তাহলে বাস থামাতে না পারলে কেবলা ঠিক রেখে রুকু সিজদা করে বাসেই নামায পড়ে নিতে হবে। যদি নিজের কাছে অযু করার জন্য পর্যাপ্ত পানি না থাকে, অন্যের কাছ থেকে পানি ক্রয় করে হলেও অযু করতে হবে। রুকু সিজদা করে কেবলা ঠিক রেখে পরিপূর্ণ নামায পড়তে পারলে নামায আদায় হয়ে যাবে। পরে আর আদায় করতে হবে না। আর যদি কেবলা ঠিক রাখা না যায় বা রুকু সিজদা করা সম্ভব না হয়, তাহলে সিটে বসে ইশারা করে নামায পড়তে হবে। তবে পরবর্তীতে এ নামায পুনরায় আদায় করে দিতে হবে। মাআরিফুস সুনান ৩/৩৯৪-৩৯৫; আহসানুল ফতাওয়া ৪/৮৮-৮৯; কাসেমিয়া ৫/৭৬৫

সমস্যা: আমাদের এলাকার অধিকাংশ লোক ফজরের আযানের পর তাহিয়াতুল অযু এবং তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করে থাকে। তারা দলিল হিসেবে বলে যে হাদীসে আছে,

إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْـمَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ.

এখন আমার প্রশ্ন হল, ফজরের আযানের পর সুন্নাতের পূর্বে কোনো নফল নামায পড়া যাবে কি? এবং তিনটি মাকরুহ ওয়াক্ত ব্যতীত আরো মকরুহ ওয়াক্ত আছে কি না? যদি থাকে দলিলসহকারে শরীয়ত অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত দিলে চিরকৃতজ্ঞ হবো।

হাফেজ আহমদ

গোবিন্দার খিল, পটিয়া, চট্টগাম

শরয়ী সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে সুবেহ সাদেকের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত ফজরের দু রাকাত সুন্নত ব্যতীত অন্য কোনো নফল নামায পড়া মাকরুহ। সুতরাং ফজরের আযানের পর তাহিয়াতুল মসজিদ বা তাহিয়াতুল অযু ইত্যাদি পড়া মাকরুহ হবে। তার থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। হাদীস শরীফ ও বিশ্বস্ত ফিকাহ ফতওয়ার কিতাবাদি থেকে এটাই বোঝা যায়। প্রশ্নে যে হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে সে হাদীস মাকরুহ ওয়াক্তসমূহ এবং ফজরের সময় ব্যতীত অন্য সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। কেননা ইবাহত ও তাহরীমের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে তাহরিম এর হাদীস প্রধান্য পায়। অবশ্য নতুন ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করে যদি ফজরের দুইরাকাত সুন্নাত পড়ে তবে তাহিয়্যাতুল অযু ও তাহিয়াতুল মসজিদ উভয়ের সুন্নত আদায় হয়ে যায়। সহীহ আল-বুখারী ১/৮২; আলমগীরী ১/৫১

সমস্যা: আমাদের মহল্লায় অনেক দিন ধরে একটি প্রথা চলে আসছে যে, তারা তারাবীহের নামাযে প্রতি চার রাকাত পর পর মুনাজাত উচ্চৈঃস্বরে নিম্নবর্ণিত দোয়া পড়ার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছিল।

سُبْحَانَ ذِي الْـمُلْكِ وَالْـمَلَكُوْتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْـهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَآءِ وَالْـجَبَرُوْتِ. سُبْحَانَ الْـمَلِكُ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ أَبَدًا أَبَدًا، سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ الْـمَلَآئِكَةِ وَالرُّوْحِ.

গত বছর আমরা এই দীর্ঘদিনের প্রথা বাদ দিয়ে দেই এবং শুধুমাত্র চার রাকাতের পর অল্পক্ষণ বসা এবং তারাবির শেষে মুনাজাতের ব্যবস্থা করি এখন আমার জানার বিষয় হল প্রতি চার রাকাত পর তারাবির নামাযে কোন আমলটা উত্তম?

মুহাম্মদ রফিক

সীতাকু-, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: তারাবীর নামাযে প্রতি চার রাকাতের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যে বিরতি দেয়া হয় তার মধ্যে কোন নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করে উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া ও মুনাজাত করা কুরআন, হাদীস ও বিশ্বস্ত ফিকাহ ফতওয়ার কিতাবাদিতে উল্লেখ নেই। সুতরাং তারাবির নামাযের প্রতি ৪ রাকআতের পর অন্য কোন যিক্র তাসবীহ দোয়া ইত্যাদি না পড়ে শুধু নির্দিষ্টভাবে একটা দোয়া পাঠ করা এবং তাকে জরুরি মনে করা বিদআত বা শরীয়তবহির্ভূত কাজ। যার কোন প্রমাণ সাহাবায়ে কেরাম এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের স্বর্ণযুগে ছিল না। বর্তমান প্রচলিত উক্ত দোয়াটি বিশুদ্ধ হাদীসের গ্রন্থাদিতে কোথাও উল্লেখ নেই। বরং ইসলামী শরীয়ত মতে তারাবীহের নামাযের চার রাকআতের পর বিরতির মধ্যে যে কোন যিক্র তাসবীহ, দরুদ ইত্যাদি পাঠ করার এখতিয়ার থাকায় আসল সুন্নত যা সমস্ত বিশ্বস্ত কিতাবাদিতে উল্লেখ রয়েছে। নিজ পক্ষ থেকে কোন দোয়া ও যিক্রকে নির্দিষ্ট করে নেওয়া মনগড়া ও শরীয়ত বহির্ভূত কাজ যা বর্জন করা দরকার। সূরা আল-হাশার আয়াত: ৭; মিশকাত শরীফ ১/২৭; ফতহুল কদীর ১/৩৩৪

সমস্যা: কোন ব্যক্তি নামাযের মধ্যে ভুল করছে বা ওয়াজিব ছুটে গেছে এবং সিজদায়ে সাহু করেছে। অত:পর আবার ভুল করেছে অর্থাৎ তাশাহুদের জায়গায় ফাতিহা পড়েছে, তাহলে আবার সিজদায়ে সাহু করতে হবে কি? না তার নামায পুনরায় পড়তে হবে। জানালে খুব খুশি হবো।

মুহিবুর রহমান

ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখা উচিৎ যে, যদি নামাযের মধ্যে এমন ভুল হয় যার দ্বারা নামাযের কোন ওয়াজিব ছুটে যায় বা নামাযের কোন ফরজ বা রোকন আদায় করতে তিন তাছবিহ পরিমাণ বিলম্ব হয় সে ধরনের ভুলের কারণে নামাযে সিজদা সাহু করতে হবে। এবং এই ধরনের ভুল সিজদায়ে সাহুর আগে হোক বা পরে হোক উভয় প্রকার ভুলের জন্য একবারই সিজদায়ে সাহু করতে হবে। সুতরাং উল্লিখিত প্রশ্নে দ্বিতীয় বার সিজদায়ে সাহু করতে হবে না এবং নামাযও পুনরায় পড়তে হবে না। মিশকাত শরীফ ১/৯২; শামী ২/৪০

সমস্যা: ৪ রাকাআত বিশিষ্ট নামাযে প্রথম বৈঠকে ইমাম সাহেব তাশাহুদ পড়ার সময় কোনো ব্যক্তি ইমামের সাথে জামাতে শরীক হল। ওই ব্যক্তি তাশাহুদ শেষ করার আগে ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। এমতাবস্থায় মাসবুক ব্যক্তি তাশাহুদ পুরা পড়বে, না ইমামের সাথে তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে?

তারেকুল ইসলাম

খুরুশকুল, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: ৪ রাকাআত বিশিষ্ট নামাযে প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব। তাই প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় মাসবুক ব্যক্তি তাশাহুদ পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। আর যদি তাশাহুদ শেষ না করেও দাঁড়িয়ে যায়, তখনও নামায আদায় হয়ে যাবে। তবে তা মাকরুহ হবে। রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬; কাযীখান ১/৯৬, হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩০৯

জানাযা-দাফন

সমস্যা: আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামাযের বিধান কী? আত্মহত্যাকারীর জন্য সওয়াব পৌঁছানো এবং মাগফিরাতের দোয়া করা জায়েয হবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

সাইফুল ইসলাম

নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান

শরয়ী সমাধান: আত্মহত্যা কবিরা গোনাহ ও নিকৃষ্ট কাজ। তবে আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামায পড়াও ফরযে কেফায়াহ। কিন্তু অন্যরা যেন এই পাপকাজ না করে সেজন্য ধর্মীয় মুরব্বীদের আত্মহত্যাকারীর জানাযায় অংশগ্রহণ না করাই উত্তম। আত্মহত্যাকারীর জন্য সওয়াব পৌঁছানো ও মাগফিরাতের দোয়া করা জায়েয আছে। সূরা আন-নিসা: ২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৭; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/২০৬

নিকাহ-তালাক

সমস্যা: তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যতদিন ইদ্দত পালন করে, ততদিনের খোরপোশের দায়িত্ব কি তালাকদাতা স্বামীর ওপর বর্তাবে? যদি বর্তায়, তাহলে কেন? আর কী পরিমাণে খোরপোশ দিতে হবে?

মুহাম্মদ রেজাউল করীম

মিরসরাই, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যতদিন ইদ্দত পালনরত অবস্থায় থাকে, তার খোরপোশের দায়িত্ব স্বামীর ওপর থাকবে। কারণ ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পরিপূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয় না। তাই ইদ্দত অবস্থায় স্ত্রীর বোনকে বিবাহ করা যায় না। এজন্য তার খোরপোশের দায়িত্ব স্বামীকেই নিতে হবে। খোরপোশের পরিমাণ হবে তালাকের পূর্বে সাধারণভাবে স্ত্রীর জন্য যে পরিমাণে ও যে মানের খোরপোশের ব্যবস্থা করা হত, অনুরূপ ইদ্দতের সময়েও ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বামীর আর্থিক অবস্থার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। তার সাধ্যের বাইরে চাপ দেওয়া যাবে না। আলমগীরী ১/৫৫৭; খানিয়া ১/৪৪০; কাসেমিয়া ১৬/৬২৭

সমস্যা: যুবতী মেয়ে আর মা বিছানায় শুয়ে ছিল। এমতাবস্থায় পিতা কামোত্তেজনার সাথে বিছানায় উঠল এবং যুবতী মেয়ের ওপর হাত পড়ল। এতেই কি স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাবে?

ওয়ায়েজুদ্দীন

লাকশাম, কুমিল্লা

শরয়ী সমাধান: হানাফী মাযহাব মতে পিতা তার মেয়ের সাথে যেনা করলে বা উত্তেজনার সাথে স্পর্শ করলে যার দ্বারা উষ্ণতা অনুভব হয় চাই তা ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছায়, তার ওপর তার স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। তারা আর কখনো স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করতে পারবে না। সুতরাং প্রশ্নে উল্লিখিত অবস্থায় পিতা তার যুবতী মেয়েকে কামোত্তেজনার সহিত ছোঁয়ার দ্বারা যদি তার বা মেয়ের শরীরে উষ্ণতা অনুভব হয়ে থাকে তাহলে পিতার জন্য তার স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে গেছে। ফেকাহের পরিভাষায় এটাকে হুরমতে মুছাহারাত বলে। হুরমতে মুছাহারাত হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত আছে। ১. ছোঁয়ার সময় এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা বা আবরণ না থাকা যা শরীরের উষ্ণতা অনুভবে বাধা সৃষ্টি করে। ২. ছোঁয়াটা কামোত্তেজনার সহিত হওয়া। ৩. মেয়ে যুবতী হওয়া, বর্তমান যুগে সাত-নয় বছর বয়সী হলেই যথেষ্ট। মাজমাউল আনহুর ১/১৬৪; বেনায়া ৫/২৬-২৭; কিফায়াতুল মুফতি ৫/১৮৬

মুআমালা-লেনদেন

সমস্যা: আমাদের এলাকায় নতুন এক প্রকারের ব্যবসা চালু হয়েছে। নতুন ব্যবসাটির ধরনটা ঠিক এমন যে, ৩০০ টাকা মূল্যে শর্তসম্বলিত অ৪ সাইজের ফরম বিক্রি করা হচ্ছে এবং উক্ত ফরম-ক্রেতাদেরকে ব্যবসায়ীরা ঋণবাবত ১০০০/২০০০ টাকা এক মাসের জন্য এই শর্তে দিচ্ছে যে, মাস শেষে উক্ত টাকা পরিশোধ করে দেবে। এখন আমার জানার বিষয় হল, ফরমের মূল্য বাবত যে ৩০০ টাকা নেওয়া হয়েছে তা সুদ হবে কি না?

শহীদুল ইসলাম

চকরিয়া, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: প্রশ্নে ঋণ দেওয়ার যে পদ্ধতি লিখা হয়েছে সে পদ্ধতিতে ঋণ গ্রহণের সময় ফরম বিক্রি বাবত যে ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে ওই ৩০০ টাকা আসল ঋণের অতিরিক্ত মুনাফা হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং তা পরিষ্কার সুদ এবং তা সুদ হওয়ার মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা ইসলামি শরীয়তের মধ্যে ঋণ দিয়ে যা মুনাফা ভোগ করা হয় তা পরিষ্কার সুদ হিসেবে গণ্য হয়। তই ফরম বিক্রির মাধ্যমে যে ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে, তা পরিষ্কার হারাম ও নাজায়েয। তাতারখানিয়া ৯/৩৮৮; রদ্দুল মুহতার ৫/২৯১; আলমগীরী ৩/১১৭

সমস্যা: আমি কিতাবের মধ্যে পড়েছি যে, ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ইজাব কবুল মাজী তথা অতীত কালের ক্রিয়া হতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ লেনদেনে ভাই অমুক মালটা দেন টাইপের আদেশসূচক বাক্য বলা হয়। সুতরাং এ ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হবে কি না?

রিফাতুল ইসলাম

সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: দোকানে গিয়ে কেউ যখন বলে, ভাই অমুক মালটা দেন এবং বিক্রেতা তা দিয়ে দেয়। ক্রেতাও মূল্য জেনে তা আদায় করে পণ্য নিয়ে নেয়, তাহলে এই লেনদেন সহীহ ও শরীয়তসম্মত। এখানে প্রথম কথাটা বাহ্যত আদেশসূচক হলেও আমাদের সমাজ ও ভাষারীতি অনুযায়ী এটা ইজাব তথা ক্রয়ের প্রস্তাব। অতএব এ নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ নেই। ফতহুল কদীর ৫/৪৫৮

বিবিধ

সমস্যা: আঙুর ও খেজুর ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু দ্বারা যে মাদক তৈরি হয় এবং বর্তমানে বিভিন্ন বস্তুতে (যেমন কোমল পানীয়, সেন্ট, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ইত্যাদিতে) যে এলকোহল ব্যবহার করা হয়, তার শরয়ী হুকুম কী?

আফছার কামাল

সাবরাং, টেকনাফ

শরয়ী সমাধান: আঙুর আর খেজুর ব্যতীত অন্যান্য বস্তু দ্বারা যে নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্য তৈরি করা হয়, সেগুলো নাপাক ও হারাম। কম বা বেশি হওয়ার মধ্যে কোন তফাৎ নেই। আর বিভিন্ন বস্তুতে যে এলকোহল ব্যবহার করা হয়, তা যদি আঙুর ও খেজুর থেকে তৈরিকৃত হয়, তাহলে নিংসন্দেহে হারাম ও নাপাক হবে। আর যদি অন্যান্য বস্তু থেকে তৈরিকৃত হয়, তাহলে পাক ও হালাল হবে। যদি বেশি পরিমাণের হয়, তখন অন্যান্য বস্তু দ্বার তৈরি এলকোহলও হারাম ও নাপাক হবে। গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, বিভিন্ন বস্তুতে যে এলকোহল মিশ্রণ করা হয়, তা আঙুর ও খেজুর থেকে তৈরি করা নয়। এজন্য এলকোহল মিশ্রিত খাবার, ওষুধ ও সেন্ট ইত্যাদি খাওয়া ও ব্যবহার করা বৈধ। তবে সর্ববস্থায় বেঁচে থাকা ও সতর্কতা অবলম্বন করা উত্তম। তাকমিলায়ে ফতহুল মুলহিম ৩/৬০৮; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৪৮২

বিভাগীয় নোটিশ

দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল- ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ