ঈমান-আকীদা
সমস্যা: মুরব্বিদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা যাবে কি না? কিছু আলেম বলে থাকেন, মুরব্বিদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা যাবে, আর কিছু আলেম বলে থাকেন মুরব্বিদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা যাবে না। এখন আমার জানার বিষয় হল, শরীয়তের মধ্যে এর হুকুম কী? আর যদি চাপের মুখে পড়ে এ রকম কদমবুচি করতে হয়, তাহলে এর হুকুম কী? ইসলামি শরীয়তের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
জসিমুদ্দীন
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, কারো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা ইসলামিক পদ্ধতি নয় বরং বিজাতীয় পদ্ধতি ও হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি। তাই তার থেকে দূরে থাকা একান্ত জরুরি। অবশ্য চাপের মুখে পড়ে করতে বাধ্য হলে মাথা নিচু না বরং মাথা উঁচু করে রাখবে। তাহলে গোনাহ না হওয়ার আশা করা যায়। তারপরও আল্লাহ তায়ালার নিকট তওবা করে নেওয়া উচিত।
তিরমিযী শরীফ ২/১০২, ফতওয়ায়ে আলমগিরী ৫/৩৬৯, আদ-দুররুল মুখতার ৬/৮৩, রদ্দুল মুহতার ৯/৫৫০
সমস্যা: প্রচলিত অনুষ্ঠান যা মৃত ব্যক্তির বাড়িতে করা হয়, যেমন চতুর্থ দিনে, চল্লিশতম দিনে এবং বছরের প্রথম দিনে নির্দিষ্টভাবে বা অনির্দিষ্টভাবে করা হয়, তা শরীয়তসম্মত কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
সাদ্দাম হুসাইন
চকরিয়া, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: শরীয়তে যে সমস্ত ইবাদতের জন্য কোনো সময় বা তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়নি, ওই সকল ইবাদতের জন্য নিজের পক্ষ থেকে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা বিদআত। সুতরাং প্রশ্নোল্লিখিত প্রচলিত যে আয়োজন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে করা হয়, তা বিদআত হবে। কেননা এখানে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে থাকে। তবে যদি দিন তারিখ নির্দিষ্ট না করে মৃত ব্যক্তির ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র এতিম গরিবদের জন্য খানার আয়োজন করা হয় এবং উক্ত আয়োজনে নাবালেগ ও এতিমের টাকা না থাকে তাহলে জায়েয হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে এ ধরনের অনুষ্ঠানে ব্যাপকভাবে শরীয়তের বিধান লঙ্ঘন করা হয় বিধায় তা করা যাবে না। বরং ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে মসজিদ ও মাদরাসায় দান করা বা এতিম গরিবদেরকে নগদ অর্থ প্রদান করা সবচেয়ে উত্তম পন্থা।
মিশকাত শরীফ ১/২৭-৩০, মুসলিম শরীফ ১/৩৬১, ইবনে মাজাহ হাদিস: ১৬৮০, রদ্দুল মুহতার ৩/১২৯, মারাকিল ফালাহ ৩৩৯, আল ফিকহুল ইসলামী ২/৫৪৯
সমস্যা: আমাদের দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি অমুসলিম সম্প্রদায় তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে হরেক রকমের জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে, তাতে অনেক লোকসমাগম হয়। ইদানিং অনেক মুসলমানকেও সেখানে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এখন জানার বিষয় হল, অমুসলিমদের এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুসলমানদের যাওয়া ও তাতে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য কতটুকু বৈধ, শরয়ী আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
আফজাল হুসাইন
পটিয়া, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা উৎসব ও অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব তাদের নিজস্ব আচার ও সংস্কৃতি। অতএব কোন মুসলমান তাতে অংশগ্রহণ করার অর্থ হলো তাদের সংস্কৃতি তথা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা। আর তা কুরআন ও হাদীসে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে। সুতারাং তাদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় যেহেতু তাদেরকে সংখ্যার দিক দিয়ে সহযোগিতা ও তাদেরকে কুফরি কাজে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে, তাই এমন অনুষ্ঠানে যাওয়া ও তাতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।
সূরা মায়েদা:২, কানযুল উম্মাল ৫/১৮৪
তাহারাত-পবিত্রতা
সমস্যা: কোনো কোনো সময় প্রস্রাব করে দুই এক কদম চলে আসার পর সন্দেহ হয় যেন দুই এক ফোঁটা প্রস্রাব বের হয়ে এসেছে, কিন্তু প্রস্রাবের পর পানি ব্যবহার করার কারণে লুঙ্গিতে পূর্ব থেকে কিছু ভেজা থাকে, তাই প্রস্রাবের ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়া যায় না। অনেক সময় অযু করার পরেও এ সমস্যা দেখা দেয়। এ অবস্থায় আমার জানার বিষয় হল, আমার অযু ও কাপড়ের পবিত্রতার হুকুম কী হবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
এহসানুল করিম
লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: উপর্যুক্ত পরিস্থিতি যদি আপনার জীবনে প্রথমবার হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে নতুন করে অযু করতে হবে। আর যদি বার বার হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে পুনরায় অযু করতে হবে না, ওই অযু ও কাপড় দিয়ে নামায আদায় করে নিবেন। মনে করবেন, এটা ওয়াসওয়াসা (প্ররোচণা) যা শয়তানের পক্ষ থেকে হচ্ছে। তবে যদি আপনি নিশ্চিত হন যে, এগুলো প্রস্রাব, তাহলে আপনাকে পুনরায় অযু করতে হবে এবং নাপাকির স্থানের কাপড়টুকু ধুয়ে পবিত্র করে নামায আদায় করতে হবে।
সূরা আল-বাকারা: ২৫৬, বুখারী ১/২০, আলমগীরী ১/১৩
সমস্যা: আমি ঘুমে স্বপ্নদোষ হতে দেখেছি, কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর ও কাপড়ের কোথাও ভেজা বা নাপাকির আলামত দেখতে পাইনি। এ অবস্থায় আমার ওপর গোসল ফরয হবে কি?
আবদুল কুদ্দুস
গোপালঞ্জ
শরয়ী সমাধান: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঘুমে স্বপ্নদোষ হতে দেখলেও ঘুম থেকে ওঠার পর আপনি যেহেতু কোনো ভেজা বা নাপাকির আলামত দেখতে পাননি, তাই আপনার ওপর গোসল ফরয হয়নি। শুধু স্বপ্নের কারণে আপনাকে গোসল করতে হবে না।
ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১/১৫, এমদাদুল ফাতাওয়া ১/২১
সালাত-নামায
সমস্যা: সিজদা অবস্থায় কোনো ব্যক্তির পা যদি মাটি থেকে উঠে যায়, তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে কি না দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
মায়মুন করীম
উখিয়া, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, সিজদার সময় মাটিতে পা রাখা ফরজ। তাই নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য কমপক্ষে এক পা বা তার কিছু আঙ্গুল মাটিতে লেগে থাকা শর্ত, তবে উভয় পায়ের কোনো অংশ যদি মাটিতে লাগা অবস্থায় না থাকে, তাহলে তার সেজদা হবে না এবং নামাযও শুদ্ধ হবে না।
ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১/৭০, শামী ২/১৩৫
জানাযা-দাফন
সমস্যা: আমার এলাকায় এক বৃদ্ধা গত মাসে ইন্তেকাল করেছেন। আমরা তাকে দাদি ডাকতাম। তিনি আমাকে খুব আদর করতেন। মারা যাওয়ার পূর্বে তিনি তার ছেলেদের ওসিয়ত করে বলেছিলেন, তার জানাযা আমাকে দিয়ে পড়াতে। কিন্তু তার সন্তানরা আমাকে দিয়ে জানাযা না পড়িয়ে অন্যকে দিয়ে জানাযা পড়িয়েছেন। এটা ঠিক হয়েছে কি না?
হাফেজ আসলাম
জাদিমোরা, টেকনাফ
শরয়ী সমাধান: জানাযার নামায পড়ানোর হকদার মৃতের ওলীগণ। তারা চাইলে মৃত ব্যক্তি যার ব্যপারে জানাযা পড়ানোর ওসিয়ত করেছে তাকে দিয়েও জানাযা পড়াতে পারবে আর চাইলে ওসিয়তকৃত ব্যক্তি ছাড়া অন্যকে দিয়ে কিংবা নিজেরাও জানাযা পড়াতে পারবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে দিয়ে জানাযা না পড়ানোর কারণে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে মরহুমা বৃদ্ধার সন্তানরা কোনো ভুল বা বেঠিক কাজ করেনি।
খুলাছাতুল ফাতাওয়া ১/২২২,
ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৫৫,
শরহুল মুনইয়া ৬০৬
সমস্যা: আমাদের গ্রামে একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিং বিধ্বস্ত হলে কর্মরত পাঁচজন শ্রমিক মারা যান। তাদেকে একসাথে জানাযা পড়ানোর জন্য উপস্থিত করা হলে লোকদের মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়ে যায়। কেউ প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা জানাযা পড়তে চাইল, আর কেউ সবার জন্য একবার পড়তে চাইল। আমাদের গ্রামের বৃদ্ধ ইমাম সাহেব প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা জানাযা পড়ার পক্ষে ছিলেন। পক্ষান্তরে তার ছেলে মাদরাসাপড়–য়া ছাত্র তার বিরোধিতা করে বলল, মাসআলা হল সবার ওপর একবার জানাযা পড়া। এখন আমার জানার বিষয় হল, এ ধরনের একাধিক জানাযা একসাথে উপস্থিত হলে করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
আবদুল হামিদ
ঠাকুরগাঁও
শরয়ী সমাধান: একাধিক জানাযা উপস্থিত হলে প্রত্যেক মাইয়্যিতের জন্য আলাদা আলাদা জানাযা পড়া উত্তম। তবে সকলের জন্য একত্রে জানাযা পড়াও জায়েয আছে।
আল মুহীতুল বুরহানী ৩/৭৭, হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকি ৩২
ওয়াকফ-মসজিদ
সমস্যা: মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে অমুসলিমদের দান গ্রহণ করা যাবে কি না? এবং যে সকল মুসলিম হারাম টাকা উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের দান গ্রহণ করা যাবে কি না? শরীয়তের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
মুসা কালিম
চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা
শরয়ী সমাধান: অমুসলিমদের মসজিদ নির্মাণে টাকা ইত্যাদি দেওয়া মসজিদের জন্য তাদের অসিয়ত কিংবা মসজিদের জন্য কিছু ওয়াকফ করার সমতুল্য। আর তারা যদি এমন জিনিসের অসিয়ত করে যা তাদের নিকটও পুণ্যের কাজ আর আমাদের নিকটও পুণ্যের কাজ, তাহলে তাদের এই অসিয়ত এবং ওয়াকফ সহীহ এবং জায়েয আছে। সুতরাং কোনো অমুসলিম যদি মসজিদ করাকে সওয়াব এবং পুণ্যের কাজ মনে করে, তাহলে তার দান গ্রহণ করা যাবে। তবে এতে যদি কোনো ক্ষতির দিক থাকে, যেমন ভবিষ্যতে ফেতনার আশংকা থাকে, কিংবা পরে সে মালিকানা দাবি করতে পারে অথবা মুসলমানের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে- এরকম আশংকা থাকলে তার দান গ্রহণ করা যাবে না। তবে কোনো অমুসলিম যদি মসজিদে দান করতে চায় এবং উল্লিখিত এমন ক্ষতির সম্ভাবনাও না থাকে তখন উত্তম হল প্রথমে সে কোনো মুসলিমকে মালিক বানিয়ে দিবে আর সে মসজিদে তা দান করে দেবে।
কোনো ব্যক্তির আয়ের উৎস যদি হারাম হয়, তাহলে তার দান নেওয়া যাবে না। কেননা মসজিদের কাজে হারাম মাল ব্যবহার করা মাকরুহে তাহরীমী, যা হারামের নামান্তর। তবে সে যদি অন্য কারো থেকে হালাল টাকা ধার করে দেয়, সেগুলো নেওয়া যাবে। আর যদি তার টাকায় হালাল হারাম মিশ্রিত থাকে, তাহলে অধিকাংশ যদি হালাল হয়, নেওয়া যাবে। আর যদি অধিকাংশ হারাম হয়, নেওয়া যাবে না।
আদ-দুররুল মুখতার-শামী ২/৪৩১, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৬/১৩১, বাদায়েউস সানায়ে ৭/৩৪১
সমস্যা: আজ থেকে প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ বছর পূর্বে টিলা পাড়া গ্রামবাসী একটি মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করলে আমার আব্বা মরহুম জনাব গোলামবারী হাজী মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি দেন এবং সকলের সহযোগিতায় মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত সেই মসজিদে ৫ ওয়াক্ত নামায ও জুমার নামায চালু আছে। কিন্তু উক্ত জমি মসজিদের জন্য লিখিতভাবে বা কাগজে-পত্রে ওয়াকফ হয়নি। এখন আমরা ওয়ারিসগণ উক্ত জমি মসজিদের জন্য লিখিতভাবে বা কাগজে-পত্রে ওয়াকফ করে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় হেফযখানা নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করছি।
অতএব আমার জানার বিষয় হলো, যদি আমরা ওয়ারিশগণ লিখিতভাবে বা কাগজে পত্রে উক্ত জমি মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় হেফযখানা করি তা পারব কি না? শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহাম্মদ আমানত উল্লাহ
রামু, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, ইসলামি শরীয়তের মধ্যে কোনো জায়গার আসল মালিক তার মালিকানাধীন কোন জায়গাকে মৌখিকভাবে মসজিদের জন্য দিয়ে দিলে এবং তার মধ্যে ৫ ওয়াক্ত নামায ও জুমার নামায ইত্যাদি চালু হয়ে গেলে সেই জায়গা ও মসজিদটি শরয়ী মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। লিখিতভাবে মসজিদের জন্য ওয়াকফ করা জরুরি হয় না। সুতরাং প্রশ্নে উল্লিখিত মসজিদটি যখন মসজিদের জায়গার আসল মালিক মৌখিকভাবে মসজিদের জন্য দিয়ে দিয়েছেন এবং অনেক বছর থেকে তার মধ্যে জামাত সহকারে নামায চালু আছে, তখন উক্ত মসজিদ শরয়ী মসজিদ হিসেবে পরিগণিত হয়ে গেছে। তাই পরবর্তীতে মসজিদের জন্য জমিদাতার ওয়ারিশগণের পক্ষে উক্ত মসজিদের ওপর হেফজখানা বা অন্য কোনো দীনী প্রতিষ্ঠান করা জায়েয ও বৈধ হবে না। কেননা উক্ত মসজিদটি যখন শরয়ী মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়ে গেছে, তখন পাতাল থেকে আকাশ পর্যন্ত সেই জায়গাকে মসজিদ হিসেবে বহাল রাখতে হবে। মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো কিছু করা জায়েয হবে না।
সূরা জিন: ১৮, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ২/৪৫৪, ফতোয়ায়ে শামী ৬/৫৪৪
সাওম-রোযা
সমস্যা: এক ব্যক্তি চোখের অসুস্থতার কারণে ড্রপ ব্যবহার করে এবং ওষুধের তিক্ততা গলায় অনুভব করে। প্রশ্ন হল, রোযা অবস্থায় এ ধরনের ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা ভেঙে যাবে কি? দয়া করে জানাবেন।
মুনিরুল্লাহ
লামা, বান্দরবান
শরয়ী সমাধান: না, রোযা অবস্থায় চোখের ড্রপ ব্যবহার করার কারণে গলায় ওষুধের তিক্ততা অনুভূত হলেও রোযা নষ্ট হয় না। সুতরাং রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। কোনো সমস্যা নেই।
তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯, রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫, বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪, হিন্দিয়া ১/২০৩
মুআমালা-লেনদেন
সমস্যা: বর্তমানে বাজারে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লাকি কুপন ছাড়া হয়। ক্রেতা নির্দিষ্ট পরিমাণ কিনলে তাকে একটা কুপন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে লটারির মাধ্যমে বিজয়ীদের পুরষ্কৃত করা হয়। প্রশ্ন হল, এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা-বেচা করা জায়েয হবে? লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করা যাবে কি?
মুঈনুদ্দিন
ছাগলনাইয়া, ফেনী
শরয়ী সমাধান: যদি পুরস্কারের কুপন ছাড়ার কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা না হয় কিংবা এর কারণে ক্রেতাদেরকে কোনোরূপ ধোঁকা দেওয়ার অভিপ্রায় না থাকে যথা নিম্নমানের মাল চালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি এবং ক্রেতা শুধু পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যে ক্রয় করে না থাকে, তাহলে এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাবেচা করা এবং লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করা জায়েয হবে। এটি মূলত মূল্যছাড়েরই একটা পদ্ধতি। উল্লেখ্য, পণ্যের অধিক প্রচারের জন্য এভাবে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা পছন্দনীয় নয়, বরং পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নিয়ম হল, ব্যপকভাবে মূল্যছাড় দেওয়া কিংবা পূর্বের মূল্য বহাল রেখে পণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া কিংবা পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
বুহুস ফি কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরাহ ২/২৩২ ফতাওয়া মুআছিরা ২/৪২০
সমস্যা: বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় এক মাসের ভাড়া অগ্রীম নিয়ে নিয়ে থাকে যা ভাড়া গ্রহীতা চলে যাওয়ার সময় শেষ মাসের ভাড়া হিসেবে কর্তিত হয়। আর এ টাকা বাড়িঅলা নিজের কাজেও ব্যয় করে। শরীয়তে এটা বৈধ কি না?
রায়হান আহমদ
চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: হ্যাঁ, এটা বৈধ। ভাড়াটিয়া সম্মত হলে একমাস বা আরও বেশি সময়ের ভাড়া অগ্রীম নেওয়া জায়েয। আর অগ্রীম ভাড়া নেওয়ার পর পর তার মালিক বাড়িওয়ালা হয়ে যায়। তাই এ টাকা সে নিজ প্রয়োজনে ব্যয় করতে কোনো সমস্যা নেই।
ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৪/৪১৭,
ফাতহুল কদীর ৮/১৩৫
বিবিধ
সমস্যা: আমার একটি সেলুনের দোকান আছে যাতে বিভিন্ন লোকদের সুন্নতপরিপন্থি চুল কাটতে ও দাঁড়ি সেভ করতে হয়, সুতরাং জানার বিষয় হল, সুন্নতপরিপন্থি চুল কাটার টাকা ও দাঁড়ি সেভিং এর টাকা আমার জন্যে হালাল হবে কিনা? শরীয়তের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
নূর আহমদ
আনোয়ারা, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব, একমুষ্টির কমে দাঁড়ি কাটা হারাম ও কবীরা গোনাহ। নাপিতের জন্যে দাঁড়ি সেভ করে টাকা নেওয়া হালাল হবে না, কারণ পাপ কাজের ওপর পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয নয়। তাছাড়া এটা পাপ কাজের সহযোগিতাও বটে। আর পাপ কাজের সহযোগিতা করা জায়েয নেই। তবে চুল কাটার টাকা নেওয়া হালাল হবে, যেহেতু প্রত্যেক সুন্নাতপরিপন্থী কাজ معصيت (গোনাহ)-কে আবশ্যক করে না, তবে সর্বাবস্থায় জীবিকা নির্বাহের জন্য পরিপূর্ণ হালাল পন্থা অবলম্বন করা জরুরি।
সূরা বাকারা: ২০৮, সূরা হাশর: ৭, সূরা মায়েদা: ২, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৭, মাজমাউল আনহুর ৪/১৮৮, আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়া ৩৫/২২৫
সমস্যা: আমার একটা বদ অভ্যাস আছে, তা হল, আমি নখ খুব কম কাটি। তাই প্রায় সময় আমার নখের ভিতর ময়লা জমে থাকে। একজন ব্যাক্তি বললেন, তোমার নখের ভিতর ময়লা থাকার কারণে তোমার অযু শুদ্ধ হয় না, তাই তোমার নামাযও হচ্ছে না। এখন আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। এখন কি আমার আগের সব নামায আবার পড়ে দিতে হবে?
আজিজুল হক
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: নখের ভিতর ময়লা জমে থাকলেও অযুর সময় সে অংশ ভিজে গেলে অযু হয়ে যায়। তাই আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে। তা কাযা করতে হবে না। উল্লেখ্য হাত-পায়ের নখ সপ্তাহে একবার কাটা উত্তম। বর্ণিত আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) প্রতি শুক্রবার মোচ ও নখ কাটতেন।
ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া ১/২৭৮, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১/৬৪
বিভাগীয় নোটিশ
দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল- ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।
একাধিক স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ ও সমতা [২৭ পৃষ্ঠার পর]
আবাসের পৃথক ব্যবস্থা রাখা
শরীয়ত বহু বিয়ের জন্য স্বামীর ওপর এটিও আবশ্যক করেছে যে, প্রত্যেক বধূর জন্য আলাদা আলাদা আবাসের ব্যবস্থা করা। যেন তারা সাবলীলভাবে বসবাস করতে পারেন। তাই একাধিক স্ত্রীকে তাদের সম্মতি ছাড়া একই ঘরে রাখা জায়েয নেই। তবে এতে তারা রাজি থাকলে, তা ভিন্ন কথা।
ভরণপোষণ
বহু বিয়ের জন্য অর্থনৈতিক দিকে দিয়ে স্বামীর সচ্ছলতা থাকা আবশ্যক। যাতে পরিবার-পরিজনের যাবতীয় খরচ ও মহর আদায় করতে সক্ষম হন। যদি এ পরিমাণ সম্পদের সামর্থ্য না রাখেন। তাহলে তার জন্য একের বেশি বিয়ে বৈধ হবে না। এ ব্যাপারে কুরআনে বিধৃত হয়েছে,
وَ لْيَسْتَعْفِفِ الَّذِيْنَ لَا يَجِدُوْنَ نِكَاحًا حَتّٰى يُغْنِيَهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ ۰۰۳۳
‘যারা বিয়ের জন্য সমর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন’ (সূরা আন-নুর: ৩৩)।
অনুরূপ বর্ণনা হাদীসে এসেছে। আল্লাহর নবী (সা.) যুবকদের সমর্থ্যরে শর্তে বিয়ের প্রতি উৎসাহ দান করেছেন। আর সাধ্য না থাকলে তাদেরকে বিয়ে থেকে বিরত থেকে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে,
مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.
‘যে সামর্থ্যের অধিকারী নয়, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা তার জন্য নিবীর্যকরণস্বরপ’ (সহীহ আল-বুখারী: ১৯০৫)।
লেখক: প্রবন্ধকার, মুফতি, দেওপুরা সমনগর আনওয়ারুল উলূম মাদরাসা, পোরশা নওগাঁ
(মাসিক আত তাওহীদ, নভেম্বর ২০১৭)