মাওলানা শহীদুল্লাহ ফজলুল বারী
আরবি ভাষা ও সাহিত্য চর্চা বিগত শতাব্দীর নববইয়ের দশক পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরবি বিভাগ এবং কওমী মাদরাসার পাঠ্যসূচির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমান শতাব্দীর সূচনালগ্ন থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্র ও পরিধি বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে এবং এর জন্য পৃথক পাঠ্যসূচি, প্রতিষ্ঠান ও বিভাগ ব্যক্তি পর্যায়ে অথবা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে গড়ে উঠে। এর জন্য এক বছর বা দু’বছর মেয়াদি কোর্সও চালু করা হয়। এসব কোর্সে সাধারণত কওমী মাদরাসার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তকারী ও সনদপ্রাপ্ত ছাত্ররা ভর্তি হয় এবং নতুন করে আরবি ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় আতœনিয়োগ করে। এর ফলে তারা আরবি ভাষার ক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় এবং বলার ও লেখার যোগ্যতাও কমবেশী লাভ করতে সক্ষম হয়।
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি আরবি ভাষা, ব্যাকরণ ও সাহিত্যের পাঠ্যক্রম সমাপ্ত করার পরও ছাত্ররা কেন নতুন করে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের কোর্সে ভর্তি হয় এবং কমপক্ষে এক-দুই বছর ব্যয় করে? এর সহজ উত্তর হল, আমাদের কওমী মাদরাসাগুলোর আরবি পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত লক্ষ্য আরবি ভাষা ও সাহিত্যে পা-িত্য অর্জন নয় বরং এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে:
১. বিশুদ্ধভাবে আরবি ইবারত পাঠ করার দক্ষতা অর্জন।
২. আরবি ভাষায় লিখিত গ্রন্থাদি পাঠ করে এর মর্ম উপলব্ধি করার দক্ষতা অর্জন।
৩. পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অসাধারণ ভাষাগত নৈপুণ্যের সাথে পরিচিতি লাভ।
তবে এটা অনস্বীকার্য যে, কওমী মাদরাসার আরবি পাঠ্যক্রমেও এমন মৌলিক উপাদান রয়েছে যার মাধ্যমে একজন প্রতিভাধর শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত সাধনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে আরবি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জনে সক্ষম হতে পারে। বাস্তবেও এর প্রমাণ লক্ষ্য করা যায়।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া উচিত। সেটা হচ্ছে, ভাষাচর্চা ও সাহিত্যচর্চা কি একই বিষয়? নিরেট সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে কি ব্যবহারিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষিক দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব? এর পরিষ্কার ও যথার্থ উত্তর হল, না। কারণ, যে কোনো ভাষার প্রাচীন সাহিত্যধর্মী গদ্য ও পদ্যের ভাষা হচ্ছে দুর্বোধ্য, দৈনন্দিন জীবনে অব্যবহৃত এবং ব্যবহারিক জীবনের ভাষিক প্রয়োজন পূরণে অক্ষম। এই বাস্তবতা কেবল আরবি ভাষার ক্ষেত্রেই নয় পৃথিবীর জীবন্ত যে কোনো ভাষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ও লক্ষ্যণীয়। তাই আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আরবি সাহিত্যের প্রাচীন পদ্য আস-সাবউল মু‘আল্লাকাত, দিওয়ানুল হামাসা, দিওয়ানুল মুতানাববী এবং প্রাচীন গদ্য বিশেষ করে মাকামাতে হারিরী ইত্যাদি প্রামাণ্য ও উচ্চাঙ্গের সাহিত্য-গ্রন্থাদি পাঠ করে দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারিক ভাষা শিক্ষা করা আদৌ সম্ভবপর নয়। আর এ কারণেই ছাত্ররা এসব গ্রন্থাদি পাঠ করেও ভাষাগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য নতুন করে ভাষাচর্চা করতে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও আরবি সাহিত্যের ছাত্ররা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেও সেই একই কারণে নতুন করে ভাষা কোর্সে ভর্তি হতে বাধ্য হয়।
আদব বা সাহিত্য শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার এবং অনেকটা অপপ্রয়োগের বিষয়টি লক্ষ্যণীয়। বিষয়টি এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, নিছক নাহু-সরফের স্বল্পমেয়াদি কোর্সের নামও দেয়া হয় ‘আরবি আদবের কোর্স’। আবার কোথাও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মানের আরবি গদ্য ও পদ্যের কোর্সকেও ‘আরবি সাহিত্যের কোর্স’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এটাকে ‘যুলম’ বললে অযৌক্তিক হবে না। কারণ যুলম শব্দের অর্থই হচ্ছে,وضع شيء في غير محله غير محله (কোনো কিছুর অপপ্রয়োগ)। আরও লক্ষ্যণীয় যে, এ স্বল্পমেয়াদি ভাষা কোর্সের নাম দেওয়া হয়, تخصص في الأدب অর্থাৎ সাহিত্যের অনার্স কোর্স। অথচ অনার্স কোর্স বা বিশেষায়িত কোর্সের জন্য অন্ততপক্ষে ৪ বছরের প্রয়োজন। অপরদিকে যারা এ কোর্সে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের অনেকেরই নামের আগে الأديب الأريب (সুসাহিত্যিক) শব্দটি যোগ করা হয়। কাজেই আদব শব্দটির পারিভাষিক অর্থ ও এর মূল উপাদান কী সে ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের অবস্থান যথার্থরূপে ও বাস্তবতার ভিত্তিতে নিরূপণ করতে সক্ষম হব।
বলা বাহুল্য যে, আরবিতে ‘আদব’ শব্দের একাধিক সংজ্ঞা রয়েছে। এখানে আমরা কেবল তিনটি সংজ্ঞা তুলে ধরতে চাই। এর দুটো হল সাধারণ সংজ্ঞা, আর অপরটি হল ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি কেন্দ্রিক সংজ্ঞা। আদবের দুটো সাধারণ সংজ্ঞ নিম্নরূপ:
الأدب هو الكلام الإنشائي البليغ الذي يقصد به إلى التأثير في عواطف القراء والسامعين سواء أكان شعرا أم نثرا. (د. شوقي ضيف: تاريخ الأدب العربي)
অর্থ: সাহিত্য হচ্ছে বিরচিত প্রাঞ্জল বক্তব্য সেটা কাব্য হোক অথবা গদ্য যার লক্ষ্য হচ্ছে পাঠক ও শ্রোতাবৃন্দের আবেগকে প্রভাবিত করা।
الأدب إنما هو ألفاظ مختارة وتراكيب متقنة وأساليب مجودة, معان مؤثرة. (د. عبد العزيز بن محمد الفيصل: الأدب العربي وتاريخه)
অর্থ: সুচয়িত শব্দাবলি, বলিষ্ঠ গঠনরীতি, সুষমাম-িত রচনাশৈলী এবং হৃদয়গ্রাহী অর্থমালাই হচ্ছে সাহিত্য।
ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি কেন্দ্রিক আদব বা সাহিত্যের সংজ্ঞা হচ্ছে নিম্নরূপ:
كل شعر أو نثر يؤثر في النفس، ويهذب الخلق، ويدعو إلى الفضيلة، ويبعد عن الرذيلة بأسلوب جميل. (د. عبد العزيز بن محمد الفيصل : الأدب العربي وتاريخه)
অর্থ: সাহিত্য হচ্ছে এমন প্রতিটি কাব্য বা গদ্য যা নান্দনিক প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে হৃদয়ে প্রভাব সৃষ্টি করে, চরিত্রকে পরিশীলিত করে, শালীনতার প্রতি আহবান করে এবং অশালীনতা হতে দূরে রাখে।
উপর্যুক্ত সংজ্ঞা দ্বারা বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সাহিত্য কেবল ব্যাকরণের কিছু নিয়ম কানুন ও হাজার খানেক শব্দ মুখস্থ করার নাম নয় এবং দুর্লভ বর্ণনাভঙ্গি ও কিছু দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করে দুয়েকটা রচনা লেখাও সাহিত্য চর্চা নয়। সাথে সাথে এ বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, লেখক মাত্রই সাহিত্যিক নয়। বরং সাহিত্যিক হতে হলে আরও অনেক ভাষিক গুণ ও প্রতিভার অধিকারী হতে হয়। যে কোনো ভাষায় সাহিত্য চর্চার জন্য প্রাথমিকভাবে যে বিষয়গুলো অপরিহার্য তা হচ্ছে,
১. শব্দমালা (المفردات),
২. ব্যাকরণ (النحو والصرف),
৩. শব্দতত্ত্ব (علم المعاني),
৪. বর্ণনা বিদ্যা (علم البيان),
৫. শব্দালঙ্কার (علم البديع),
৬. ছন্দশাস্ত্র (علم العروض),
৭. কল্পনা (الخيال) ও
৮. আবেগ (العاطفة)।
এ বাস্তবতার আলোকে বলা যায় যে, আমাদের দেশে স্বল্প মেয়াদি যে কোর্সগুলোর আয়োজন করা হয়, তা আদৌ সাহিত্যে (متخصص) বিশেষজ্ঞ হওয়ার কোর্স নয়। বরং তা হচ্ছে প্রাথমিক ভাষা শিক্ষার কোর্স। এই কোর্সের মাধ্যমে ছাত্ররা আরবি ভাষায় বলা, লেখা ও পড়ার যোগ্যতা অর্জনের একটা কার্যকর সুযোগ পায়। এই মৌলিক ভাষিক যোগ্যতা বিশেষ করে পড়া ও বলার যোগ্যতা যথাযথ ও কাক্সিক্ষত মানে অর্জন করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই নিুোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগে যতœবান হতে হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে,
১. উচ্চারণের বিশুদ্ধতা (صحة النطق),
২. শব্দ কাঠামোর বিশুদ্ধতা (صحة الضبط),
৩. ই’রাবের বিশুদ্ধতা (صحة الإعراب),
৪. বাচনভঙ্গির বিশুদ্ধতা (صحة الأداء)।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও যথার্থ বাচনভঙ্গি পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় বলা ও পড়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য অপরিহার্য বলে বিবেচিত। তবে সাধারণ লিখিত আরবি ভাষায় যেহেতু স্বরচিহ্ন বা ধ্বনিচিহ্ন (حركات) থাকে না, সাথে সাথে আরবি ভাষায় এমন অনেক শব্দ আছে যার একাধিক কাঠামো থাকলেও তা একক বানানে লেখা হয় তাই সেগুলো পড়ার সময় বাক্যের পূর্বাপর ও প্রসঙ্গ অনুযায়ী সঠিক কাঠামো নির্ণয় করে তা উচ্চারণ করতে হয়। এ জন্য আরবি শব্দের একাধিক কাঠামো ও কাঠামোভেদে অর্থের পার্থক্যটা বিশেষভাবে জানতে হয়। এর জন্য শিক্ষার্থীদেরকে পরিশ্রম করতে হয় এবং ব্যাপক অনুশীলন করতে হয়। তাই কোনো ছাত্র যদি স্বরচিহ্ন বিহীন কোনো আরবি লেখা বিশুদ্ধ উচ্চারণ, বিশুদ্ধ ই’রাব ও সঠিক শব্দ কাঠামো রক্ষা করে পড়তে পারে তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় সে আরবি ভাষা শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করেছে। কাজেই এ বিষয়ে শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদেরকেও সজাগ থাকতে হবে এবং তাঁদের মাঝেও এ গুণ পরিপূর্ণরূপে না হলেও যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত পর্যায়ের হতে হবে।
আরবি শিক্ষার্থীকে লিখন যোগ্যতা অর্জনের জন্য অবশ্যই আরবি ভাষায় তার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে। বানানের নিয়ম-কানূন শিখতে হবে। ব্যাকরণসম্মত ও অর্থপূর্ণ বাক্যগঠন পদ্ধতি জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী একক বিষয়ভিত্তিক পরস্পর যুক্ত ও সুবিন্যস্ত বাক্য গঠনের অনুশীলন করতে হবে। প্রাথমিক স্তরে ছাত্রদেরকে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ও সরল বাক্য গঠনের অনুশীলন করানো হবে। পর্যায়ক্রমে তাদের মাঝে বিষয়ভিত্তিক ও বিভিন্ন আকার আকৃতির সরল, যৌগিক ও জটিল বাক্য গঠনের যোগ্যতা সৃষ্টি করতে হবে। সাথে সাথে একই বক্তব্য শব্দ পরিবর্তন এবং বাক্য কাঠামো ও বর্ণনাভঙ্গি পরিবর্তন করে ব্যক্ত করার অনুশীলনও করতে হবে। এ লক্ষ্যে ভাষা শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই বিভিন্ন বর্ণনাভঙ্গির (أساليب البيان) সাথে পরিচিত হতে হবে এবং কোন বিষয় বা বক্তব্যের জন্য কোন বর্ণনাভঙ্গি উপযোগী সেটাও ভালো জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী বর্ণনাভঙ্গিতে পরিবর্তন ও বৈচিত্র আনতে হবে। তা না হলে তারা একই ধরনের বাক্য গঠনে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে এবং একই ধরনের বর্ণনাভঙ্গির মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্র কেবল সাহিত্যধর্মী রচনা পড়ে এবং তা অনুকরণ করতে শিখে। তাদের সব বিষয়ের রচনায়ই এই সাহিত্যধর্মী বর্ণনাভঙ্গির সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। এমনকি নিরেট গবেষণাধর্মী ও সাধারণ বিষয়ের লেখাতেও তারা সেই একই সাহিত্যধর্মী বর্ণনাভঙ্গি ব্যবহার করে থাকে, যা অত্যন্ত দোষণীয়। কারণ আরবি প্রবাদবাক্যে সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে, لكل مقام مقال অর্থাৎ অবস্থা ভেদে বক্তব্য হতে হবে। যেমন বিষয় হবে বর্ণনাভঙ্গিও তেমনি হতে হবে। অন্যথায় তা দোষণীয় বলে বিবেচিত হবে।
সমসাময়িক বিষয় ও ব্যবহারিক জীবনের উপযোগী আরবি ভাষা শিখতে হলে অবশ্যই আরবি পত্র-পত্রিকা পড়তে হবে এবং সেখান থেকে শব্দ শিখতে হবে। কারণ পত্রিকা হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যা জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় শব্দ ও পরিভাষা উপস্থাপন করে থাকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র স¤পর্কিত বিভিন্ন সংবাদ ও প্রবন্ধাদি প্রকাশ করার মাধ্যমে। যে কোনো জীবন্ত ও বহুল ব্যবহৃত ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা ভাষাবিজ্ঞানীগণ স্বীকার করেন এবং ব্যবহারিক জীবনের উপযোগী যে কোনো ভাষা শিক্ষার জন্য সেই ভাষার পত্র-পত্রিকা পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই আধুনিক ও ব্যবহারিক আরবি ভাষা শিখতেও এই একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। একটা কথা আমাদের ভালো করেই মনে রাখতে হবে যে, ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেসব আরবি গ্রন্থ সমসাময়িক যুগের লেখকগণ রচনা করেছেন সেগুলো পড়ে বুঝার জন্যও আমাদেরকে এই আধুনিক ও ব্যবহারিক আরবি ভাষা শিখতে হবে। কাজেই আমাদের দেশে আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্সে আরবি সংবাদপত্র পঠন ও অনুধাবনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং এর জন্য যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের ব্যবস্থাও করতে হবে।
পরিশেষে যে বিষয়টির প্রতি আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হল, ভাষিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য আমাদের ভাষা চর্চাটা হতে হবে সামগ্রিক এবং তা অবশ্যই ব্যবহারিক, তাত্ত্বিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং প্রয়োজন পূরণে হতে হবে কার্যকর ও ফলপ্রসূ। আর এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ভাষা চর্চার পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও নিয়মতান্ত্রিক ও বাস্তবভিত্তিক সাধনা ও অনুশীলন। অন্যথায় আমাদের পক্ষে কাঙ্ক্ষিত মানের আরবি ভাষা শিক্ষাও সম্ভব হবে না এবং আরবি সাহিত্য চর্চাও সম্ভব হবে না।
(মাসিক আত তাওহীদ, নভেম্বর ২০১৭)